এ জীবন বৃক্ষের শাখায় যে ফুল ফোটে তাই মনুষ্যত্ব। বৃক্ষের গোড়ায় মালি জল ঢালে ফুল ও ফলকে লক্ষ্য রেখে। শুধু মাত্র মাটির রস টেনে গাছটা মোটা হয়ে উঠবে এই ভেবে কোনো মালীই গাছের গোড়ায় জল ঢালে না। সে তার এই গাছটিতে চমৎকার এক হেসে ওঠা ফুল ও ফলের আশায় যত্নের সাথে লালন করে গাছটিকে। গাছটিও তার প্রতিদান স্বরুপ মালীকে উপহার দেয় চমৎকার সব ফুল ও ফল। মালী তার গাছটিকে সযত্নে নির্দিধায় বেড়ে উঠতে আশেপাশের আগাছাকেও ঝেঁটে ফেলে।
মানুষের জীবন পরিক্রমায় সন্তান হলো আল্লাহর সব থেকে বড় নিয়ামত। আমাদের প্রত্যোকেরই আলাদা কিছু স্বপ্ন আছে, আশা আছে। আমাদের সবার দৃষ্টিভঙ্গি আলাদা। আমরা সমাজে একেকজন একেকরকম করে বেড়ে উঠি। সন্তানদেরও নিজেদের আদর্শে বেড়ে উঠতে চেষ্টা করি। সন্তানের কারনে আমাদের জীবন সংসারকে মরুভূমি বোধ না করে ফুলবাগান বলে মনে হয়। আমরা তখন হয়ে যাই সেই বাগানের মালী। সন্তানরা আমাদের এক একটি বৃক্ষ। এই বৃক্ষকে বেড়ে তুলতে হয় আমাদেরই। হ্যাঁ, অনেক মালী ছাড়া বাগানের বৃক্ষও বেড়ে ওঠে। সেও ফল দেয় ফুল দেয়। হয়ত তা বেশীর ভাগই হয় জংলী ফুল ও ফল। কিছু হয় খাওয়ার যোগ্য কিছু হয় অযোগ্য। কিছু ফুলের গন্ধ নেওয়া যায় কিছু ফুলের গন্ধ নেওয়া যায় না। তবুও সে ফোটে। ফুটতে তাকে হয়ই।
ইদানিং কেন যেন মনে হয়, আমি এখন থেকে একটা কঠিন সময় পার করছি। আমার দুই পরিবারের সবারই ধারনা, আমি খুবই রাগী মানুষ। তবে আমি সত্যি রাগী কিনা জানি না, আমার অসহ্য। আমি আমার দুই ছেলেকে অবশ্যই খুবই ভালবাসি, যা অন্য মায়েরাও ভালবাসে। কারন এটা মাতৃসুলভ ভালবাসা। এই ভালবাসার কোনো পরিমাপ নেই। এক কথায় আমার জীবন, আমার স্বপ্ন সবই আমার দুই সন্তান। আমার কাছে সন্তানের জন্য যতোটা ভালোবাসা আছে, ততোটা কড়া নিয়ম আর শাষনও আছে। নিয়মানুবর্তিতা সব থেকে বড় কথা। আমার কাছে ছাত্র জীবন মানেই পরিশ্রম। সত্যি বলতে কী, বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় সন্তানদের অতিরিক্ত স্বাধীনতা, অতি আধুনিক মনোভাবে আমি ভীত। আমি মেমন রিয়ানকে মোবাইল ফোন ধরতে দেই না। সত্যি বলতে বাচাদের হাতে ফোন দেখলে আমি বিরক্ত বোধ করি। মোবাইলে কোনো বাচ্চাকে গেম খেলতে দেখলে মনে হয়, থাক আর এ প্রসংগ।
কখনো কখনো আমি ভাবি, আসলেও কি আমি নিষ্ঠুর! আমি কি এদের শৈশব কৈশর নষ্ট করে দিচ্ছি? না, তা না। আমি বিকালে দুই এক ঘন্টা অবশ্যই খেলতে পাঠাই। হ্যাঁ, একটা অভ্যাস ইচ্ছে করেই করাইছি। বই পড়ার নেশা ধরাইছি। যেন তারা অন্তত ফোনে ঝুকে না পড়ে।
এখন মেমন ক্লাস সেভেনে পড়। সত্যি আমার কঠিন সময় শুরু হয়েছে। তার সাথে পড়ে সবারই ফেসবুক আইডি আছে। অনেকে ক্রিকেট খেলাতে বাজিও ধরে।
এই আমি কতো কি যে অবান্তর ভাবনা ভাবি এখন! নীলা আপু ঠিকই বলে, প্রত্যোকের মাঝেই অন্য একটা মানুষ আছে। তারও একটা আলাদা ভাবনা আছে। এই ভাবনাতে আমরা আমাদের মনের অজান্তেই কাউকে বেশী কাউকে কম শ্রদ্ধা, সন্মান করে বসি। আমি মেয়েদের চাকরি করাকে সব সময়ই প্রাধান্য দেই। অথচ এই আমিই সেদিন মনের অজান্তে এক চাকরিজীবি মাকে কোনো এক কারনে সেই সন্মানটুকু দিতে পারিনি। কারন তার সন্তান ঠিকমতো মানুষ হতে পারেনি। পরক্ষণে অন্য একজনকে ঠিকই সেই সন্মান ও শ্রদ্ধা দিতে কার্পন্য করিনি। সন্মান শ্রদ্ধা বলতে এখানে আমি, বসতে দেওয়া বা খেতে দেওয়ার কথা বলছি না, আমার মনের ভিতরের যে আচরন তার কথা বলছি। তারমানে বৈষম্য এই অবচেতন মনই তৈরি করে।
সন্তান ঠিকমতো মানুষ না হলে বাবা মাকে সেই গ্লানি বয়ে নিয়ে বেড়াতে হয় মৃত্যু পর্যন্ত। সবার সন্তান বেড়ে উঠুক সঠিক আদর্শে, এই কামনা।
,,,,,,,মৌনতা রিতু।
১৩/১/১৬। কুড়িগ্
১৭টি মন্তব্য
নিহারীকা জান্নাত
একটি নির্দিষ্ট বয়স পর্যন্ত ছেলেমেয়েরা সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। বাস্তবতা বুঝতে পারে না। রংগীন পৃথিবী দেখে ভাসতে চায়, যা একসময় আমরা পার হয়ে এসেছি। এক্ষেত্রে বাবা-মা কে কঠিন হতেই হয়। আর এর সুফল সন্তান একসময় বুঝতে পারে। আবার যারা অতি আদরে সন্তানের মুখের উপর সঠিক সময়ে না বলতে পারেন না, সামর্থ্য আছে বলে যা চায় তাই এনে হাজির করেন, তারা পরে বুঝতে পারেন না বলাটা কত জরুরী ছিলো। এযুগে সন্তান মানুষ করা খুব কঠিন।
সময়োপযোগী লেখা। ভালো লেগেছে আপা।
মৌনতা রিতু
আমি না বলে দেই। খারাপ লাগে। তবু করতে হয়।
অনেক ধন্যবাদ। ভাল থাকবেন।
মিষ্টি জিন
রীতু, একেকজনের সন্তান পালন করার পদ্ধতি একএক রকম। আমি নিজেও খুব তাড়াতাড়ি রাগ হঁয়ে যাই। তাই বলে হুঁশ হারাই না। আমি ও আমার মেয়েদের প্রচুর শাসন করেছি একটা সমঁয় পর্যন্ত । নিজে কষ্ট ও পেয়েছি । মন কে এই বলে বুঝিয়েছি যে যা করঁছি ওদের ভালর জন্যই করঁছি।আমার বোনরা,শশুরবীডীর লোক একটু বিরক্ত হোত আমার উপর।ওরা যে পরিবেশ পেয়েছে তাতে আমি যদি গড্ডালিকায় গা ভাসিয়ে দিতাম তাহলে জানিনা আজ ওরা কোন অবস্হায় থাকতো।
আমি চেষ্টা করেঁছি নোংরামি, অহংকার হিংসা ওদের মাঝে যেন না জন্ম নেয়।
একটা ডাইজের মধ্যে এনে ছেডে দিয়েছি। ওরা ওদের মত জিবন গডবে এখন। পথভ্রষ্ট হওয়ার ভয় নাই আর। আমার শিক্ষার উপর আমার বিশ্বাস আছে।
তুমি তোমার মত করে সন্তান মানুঁষ কর। তবে মনে রেখ অতিরিক্ত শাসন বাচ্চাদের মন ছোট করে দেয়। ভাল থেকো ,অনেক আদর ভালবাসা জেনো।
মৌনতা রিতু
না, আপু অতিরক্ত শাষন অবশ্য করি না। তবে নিয়মের বাইরে গেলে মেজাজ গরম হয়। ওর বাপকে শুদ্ধা ঝেড়ে দেই।
এখন দেখ, তোমার মামনিরা নিজের পায়ে দাঁড়ায়ে গেছে, কতোটা শান্তি পাচ্ছ। আমরাও গর্ব করছি।
ভাল থেকো আপু।
নীলাঞ্জনা নীলা
মৌনতা আপু সন্তানের একমাত্র নিঃস্বার্থ বন্ধু যে বাবা-মা, তা অনেক সন্তানই বুঝতে চায়না। কারণ বাবা-মায়েরা এমনই শাসন করে যে সন্তান ঠিক মেনে নিতে পারেনা। প্রজন্মের ব্যবধানে শুধু দেখো আমরা কি আমাদের বাবা-মায়ের সেই পরিবেশ পেয়ে বড়ো হয়েছি? কিংবা আমাদের সন্তান কি আমাদের সময়কার পরিবেশে বড়ো হচ্ছে? আমরা কিন্তু সাধারণ প্রাথমিক বিদ্যালয়েই পড়েছি, আর এখন আমরা চিন্তা করি সন্তানকে নামী-দামী স্কুলে পড়ানোর। শুধু কি তাই? জীবনে প্রথম সেলফোন ধরেছি মাষ্টার্সের পর, এখন সেলফোনে বাচ্চারা নিজেরাই সেলফি তোলে। ছোট্ট একটা উদাহরণ দেই। আমার ছেলে সেদিন ওর বাবাকে বললো পিএস ৪ কিনে দিতে। আসলে ওর বাবা জিজ্ঞাসা করেছিলো জন্মদিনে কি চায় ও! আমি কিছুতেই রাজি নই, বরং বললাম ছেলের ফোনের দরকার। অনেক দূরে স্কুল বাসে করে যায়। হঠাৎ হঠাৎ দেরী হয়ে যায় জিম থেকে আসে বাস্কেটবল খেলে। আমি ওর বন্ধুকে টেক্সট করে জিজ্ঞাসা করি। যাক একেকজন একেকরকমে সন্তানকে বড়ো করে তুলে। আমি চাই তীর্থ যেনো একটা কিস দিয়েও আমাকে এসে জানায়। আর সেভাবেই বড়ো হচ্ছে। আশা করি আমাকে ফাঁকি দেবেনা।
অনেক বড়ো মন্তব্য হয়ে গেলো। আসলে আপু বই পড়তে দাও আর পড়ালেখাও ঠিকভাবে করুক। কিন্তু যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলতেও দাও। বই পড়ে পড়ে শুধু যেনো বই হয়ে না যায়, কথাটা আমি নিজেই আমাকে বলি। অবশ্য ফেসবুকের সময় এখনও আসেনি। তীর্থ ফেসবুক আইডি করেছে গ্রেড নাইনে। আমি জানি মেমন আর রিয়ান সোনা অনেক বড়ো হবে। যে মায়ের ছায়ায় ওরা আছে, সেই মানুষটির তুলনা হয়না। রাগ কোনো ব্যাপার না, আমি রাগলে মাত্রা ৫ ছাড়িয়ে ৬-৭ এ চলে যায়। তোমার কতো? সর্বোচ্চ ১০ আর সর্বনিম্ন কিন্তু ১। 😀
ভালো থেকো শান্ত-সুন্দরী। -{@
মৌনতা রিতু
অনেক ক্ষেত্রে ফোন লাগে। কিন্তু যখন অতিরিক্ত ফোনে এডেকটেড হয়ে যায় তখনই বিরক্ত লাগে। তুমি তো জানোই স্মার্ট ফোনে ও ইউ টিউবে কি কি থাকে। এটা নিয়ে আলোচনা করে অনেক বাচ্চা ক্লাসে। ভাব একবার! মেমন সবই বলে আমাকে। এই নিয়ে সেদিন টিচারকে বলেছি। ট্যাবে যে ছেলেটি এদের এসব দেখানোর চেষ্টা করেছে সেই ছেলের মা অতি আধুনিক। যথেস্ট কাগজে কলমে শিক্ষিত। একে তুমি কীভাবে বোঝানোর চেষ্টা করবে।
দোয়া করিও আপু। তুমি তো জান না, এখানকার পরিবেশ সম্পূর্ণ আলাদা। ওখানকার বাচ্চারা নোংড়া জিনিস দেখে না। কিন্তু এদের এসবেই আগ্রহ বেশী।
নীলাঞ্জনা নীলা
আপু নেশা এই শব্দটাই আমার পছন্দ নয়। সে সেলফোন বা টিভি বা খেলাধূলা কিংবা খাওয়া-দাওয়া অথবা বেশী মাত্রায় বই পড়া কোনোটাই খুব বেশীমাত্রায় ভালো নয়। যাই হোক আসলে দেশে এতোকিছু নিষিদ্ধ জিনিস আছে যা থেকে বড়োরা নিজেকেও আটকাতে পারেনা, আর শিশুদের কথা তো আলাদাই। মনে আছে আপু সেবা প্রকাশনীর মাসুদ রানা সিরিজ ছিলো প্রাপ্তবয়ষ্কদের জন্য। তুমি বলো তো অপ্রাপ্তবয়ষ্করা কতো % পড়েছে? আসলে যতো নিষিদ্ধ, ততোই আগ্রহ।
এটা ঠিক এখানে একটা ব্যাপার খুব বেশী খুব কম বাচ্চারা মিথ্যে বলে। ওরা যা করে বলে দেয়। ওই যে দেখোনা মেমন সব বলে তোমাকে? এখানে মেমনের মতো বাচ্চাদের সংখ্যাই বেশী।
আপু মেমন অনেক বড়ো হবে। দেখো। মানুষ হবে। আমার আশিষ সবসময়।
ভালো থেকো। 🙂
মৌনতা রিতু
হুম, ঠিক বলেছো। জানি দোয়া করো। তাই তো ভরসা পাই। তোমাদের ভালোবাসাই সব থেকে বড় আশির্বাদ।
ছাইরাছ হেলাল
আপনার সুচিন্তিত মা-ভাবনা ভাল লাগল,
আমি ভাবি আমাদের মায়েরা যেন প্রকৃত শিক্ষায় নিজেকে শিক্ষিত করে সন্তানযত্নে হাত দেন,
আমাদের ভালোবাসা বা শাসন যেন কোমলমতি শিশুর মনোবৈকল্যের কারণ হয়ে না দাঁড়ায় সর্বাগ্রে তা মাথায় রাখতে হবে,
সন্তানেরা থাকুক দুধে ভাতে
তা শুরু হোক মায়ের হাতে,
দুঃখ-সুখের দিনান্তে;
মৌনতা রিতু
শাষনটা করতে হবে নৈতিক দিক বিবেচনা করেই। তাদের নৈতিকতা অবশ্যই শেখাতে হবে।
এবং নৈতিকতা নরম ভাবেই বোঝাতে হবে।
সুখে থাক সব সন্তানরা দুধে ভাতে।
ভাল থাকুন, কুবি ভাই।
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
সোনা মণিরা যেনো বেড়ে উঠে মাতৃ ছায়ায়।সব ঠিক আছে মায়ের মমতা যেমন আছে তেমনি আছে শাষন বাড়ন।এই বাড়নে যদিও কষ্ট লাগে অন্য সব বয়সী ছেলে মেয়েদের অভ্যাসে তাতে কি আমার মতে ডিজিটালের নেশাটা যেনো আরো পরে হয়।সুন্দর অনুভুতি যা প্রত্যেক মা বাবার মনেই থাকে। -{@
মৌনতা রিতু
ধন্যবাদ ভাই। হুম, অতি ডিজিটাল হলেই সমস্যা
সব বাচ্চারাই ভালভাবে বেড়ে উঠুক।
জিসান শা ইকরাম
খুব ভাল একটি পোস্ট। সন্তানের বেড়ে ওঠায় মাকেই ভুমিকা রাখতে হয় বেশি। বাবার তুলনায় মা সন্তানের মন বুঝতে পারেন বেশি।
কিছুটা কঠিন হলেও সন্তান যখন প্রতিষ্ঠিত হয়, তখন সেই উপলব্দি করতে পারবে যে কঠিনতা তাকে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
আপনি একজন সফল মা।
সবার সন্তান যেন সঠিক ভাবে বেড়ে ওঠে।
মৌনতা রিতু
সফল হতে এখনো অনেক বাকি। শুধু দোয়া করবেন ভাইয়া।
মানুষ যেন হয় সঠিক ভাবে। মনুষ্যত্ব নিয়ে।
আবু খায়ের আনিছ
প্রচলিত একটা প্রবাদ আছে, বৃক্ষ তোমার নাম কি? ফলে পরিচয়। যেমন বৃক্ষ রোপন করবেন, ফল তেমনি হবে।
শুভ কামনা।
মৌনতা রিতু
তাই তো প্রথমেই এই কথা বলেছি।
অনেক ধন্যবাদ।
শুভকামনা রইল।
এদের জন্য দোয়া করিয়েন।
আবু খায়ের আনিছ
নিশ্চয়, অনেক অনেক শুভ কামনা।