খুব শীত কিম্বা বর্ষার
ঠান্ডা স্যাতস্যেতে রাতে
মাকে দেখতাম বাবার লুঙ্গি আর ফতুয়াটা!
আঁচলের নিচে লুকিয়ে শরীরের ওমে
গরম করে রাখতো!
ঠান্ডায় জড়সড় বাবা ঘরে ফিরতেই
লাজুক হেসে মা ওগুলো এগিয়ে দিতো।
বাবার অবাক চাহনির দিকে তাকিয়ে
মা বলতো বাইরে কি যে ঠান্ডা!
বিছানা বালিশ সব বরফ হয়ে আছে,
তাই ভাবলাম .....
বাবাকে কি যে পরিতৃপ্ত দেখাতো,
মনে হতো সমগ্র ভালবাসার
সাম্রাজ্য জুড়ে বাবাই তখন সম্রাট!

আমাদের ডানদিকের বাড়িটায়
বাপ মা হারা ভাইয়ের বোনটা
বিকেলের তীর্যক রোদে বসে পাহারা দিতো
টিনের চালের উপর নুয়ে পড়া গাছ
থেকে একটা পাখিও যেন চালে না নামে।
শব্দে যদি ভাই এর ভাতঘুমটা ভেঙে যায়!
পরিশ্রান্ত ভাইটা তার দুপুরের পর
একটু গড়িয়ে নিচ্ছে যে!

ওদিককার ঘরে থাকে এক দিদিভাই,
দাদাবাবু বিয়ের পর থেকেই দেশের বাইরে।
যাওয়ার আগে দুটো গোলাপ দিয়ে বলে গেছে,
অপেক্ষায় থেকো!
সেই থেকে দিদিভাই প্রতিদিনই
নিয়ম করে সকাল সন্ধ্যা
বইয়ের ভিতর ফসিল হয়ে যাওয়া
গোলাপ দুটো দেখে আর অপেক্ষায় থাকে।

রাস্তার ধারে ইট ভাঙে যে নারীটা
একমাসের বাচ্চাটাকে কুড়িয়ে পাওয়া
শতটুকরো কাপড়ে মুড়িয়ে শুইয়ে রাখে
কঠিন কংক্রিটের উপর
তবুতো চোখের সামনে থাক!

অদুরেই আরো একজোড়া ভাগ্যাহত বোন
নিয়তি কেড়ে নিয়ে গেছে সব
শুধু বুকজুড়ে ভালবাসাটাই আছে
ক্ষিধের জ্বালায় অস্থির তবু
কোত্থেকে কুড়োনো একপাশ পোড়া
রুটি টুকু মুখে ধরে আছে অসুস্থ বোনটার!
নিজে কি খাবে জানা নেই ওর!

চারপাশ জুড়ে প্রতিটি চরিত্র
প্রতিটি দিনের প্রতিটি ক্ষন
ভালবাসায় এমন জড়ানো যাদের,
তাদের কি আর দরকার বলো!
ভালবাসার একটা বিশেষ দিনের?

0 Shares

২১টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ