জীবন নাকি জীবিকাঃ

শামীম চৌধুরী ৫ মে ২০২০, মঙ্গলবার, ০১:১৭:৩৩পূর্বাহ্ন একান্ত অনুভূতি ১৯ মন্তব্য
পঞ্চম বারে ঘোষনা আসলো ৫ই’মে পর্যন্ত সাধারন ছুটি বাড়ানো হলো। তবে গুলশান বনানীর মতন অভিজাত এলাকা সহ ঢাকা শহরে নামী-দামী হোটেল রেস্তোরা খোলা যাবে। সাথে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলতে হবে।
 
ষষ্ঠ বারে ঘোষনা আসলো আগামী ১৬ই মে পর্যন্ত সাধারন ছুটি বাড়ানো হলো। সাথে প্রজ্ঞাপন জারী হলো ঈদ উপলক্ষে আজ থেকে সীমিত আকারে শপিংমল সহ দোকান পাট খোলা যাবে।গণপরিবহন ঈদের ছুটি পর্যন্ত বন্ধ থাকিবে। তবে স্বাস্থ্য বিধি মেনে দোকান-পাট ব্যবসা বানিজ্য করতে হবে।
 
যে কোন মহামারী বা দূর্যোগে মানুষকে দুটি ঝুঁকির মধ্যে যে কোন একটি ঝুঁকি নিতে হবে। (১) জীবনের ঝুঁকি ও (২) জীবিকার ঝুঁকি। বাঙালী জাতিকে গার্মেন্টস শিল্পের মালিকরা প্রথমেই জীবিকার ঝুঁকি নিতে বাধ্য করলো। অসহায় দিন-মুজুরেরা জীবিকার ঝুঁকি নিয়ে জীবনের মায়া ত্যাগ করে মিছিল সহকারে কর্মস্থলে আসার কাফেলা ধরলো। মাইলের পর মাইল পায়ে হেঁটে শ্রমিকরা একমুঠো ভাতের আশায় বিনা কাফনের কাপড়ে পোষাক শিল্প নামক খাঁচায় প্রবেশ করলো।
 
এদের সাথে সুর মিলিয়ে দাবী তুললো অন্যান্য ব্যবসায়ীরা। তারাও হলফনামায় স্বাক্ষর দিয়ে কসম খেলো আমরাও স্বাস্থ্যবিধি মেনে ব্যবসা করবো। রাষ্ট্র তাদেরও দাবী পূরন করলো। এখানেও দোকান শ্রমিকরা জীবিকার ঝুঁকিতে প্রবেশ করলো। উদ্দেশ্য একটাই একমুঠো ভাত।
 
হয়তো বা সপ্তম বারে ঘোষনা আসবে গন-পরিবহনও রাস্তায় নামানো যাবে তবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। ঈদকে সামনে রেখে সরকার বাহাদুরকে এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করবে। মোটর শ্রমিকরা শ্লোগান দিবে আমরাও জীবিকার ঝুঁকি নিতে প্রস্তুত। আস্তে আস্তে সবই স্বাভাবিক অবস্থায় হয়তো বা চলে আসবে। কারন মানুষ ক্ষুধার কাছে মৃত্যুকে ভয় না করে একমুঠ ভাত খেয়ে বেঁচে থাকার আশা করে।
 
সরকার বাহাদুর এই সিদ্ধান্তগুলি নিতে বাধ্য হয়েছে তার আশে পাশের জনপ্রতিনিধিদের কুকর্মের জন্য। অসহায়,দরিদ্র ও দিনমুজুরদের বরাদ্দকৃত চাউল,তেল যদি জনপ্রতিনিধিদের বিছানার নীচে বা ঘরের মাটির নীচে খাদ্যভান্ডার হয় তখন ক্ষুধার্ত মানুষের জীবিকার ঝুঁকি না নিয়ে উপায় কি? এখানে আমি সরকারের ইচ্ছা ও হতদরিদ্র ছিন্নমূলদের জন্য খাবারের ব্যাবস্থা করাকে শ্রদ্ধা জানাই।
 
যে দেশের মানুষকে জীবিকার ঝুঁকি নিতে বাধ্য করা হয় সেদেশে স্বাস্থ্যবিধি কি?
আর কেনই বা সাধারন মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবে?
 
যারা ব্যবসা করছেন তাদের স্বার্থটা ঠিকই আদায় করে নিচ্ছেন। তার সুফল হয়েতো পাবেন অর্থনৈতিক ভাবে। কিন্তু দেশে মহামারীর আশংকা থেকেই যাচ্ছে। অথচ আমরা যারা সরকারের সকল আদেশ ও স্বাস্থ্য নীতিমালা দীর্ঘ ৪০দিন মেনে চললাম তাদের অবস্থা কোথায়? আমরাতো জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পেটে পাথর বেঁধে দূর্যোগপূর্ন দিনগুলি পার করছিলাম। আর কতদিন আমাদের এভাবে দিন পার করতে হবে? আমাদের প্রশ্নের উত্তর কে দিবে?
 
সর্বশেষে আমাদের দেশে যা হবে বা আমার আশংকা সেটা হলো করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব মহামারীর রূপ নিতে পারে। অসংখ্য মানুষ মারাও যেতে পারে। এই ভাবে করোনার বিরুদ্ধে চলতে চলতে মানুষের ভিতর Herd Immunity তৈরী হয়ে যাবে। তখন হয়তো বা মানুষ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলবে।
আর শ্লোগান ধরবে- ”আমরা করেছি জয়”।
 
0 Shares

১৯টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ