আজকে চারপাশে হায়েনাদের যে আস্ফালন ঠিক এই রক্তবীজটিই বপিত হয়েছিল একাত্তরের ১৪ই ডিসেম্বর। পরিবেশ পরিস্থিতি বদলে যাওয়ার সাথে পদ্ধতিটা শুধু বদলে গেছে। ১৬ ডিসেম্বরে আমরা শুধু একটা আলাদা মানচিত্র পেয়েছিলাম, দেশের অভ্যন্তর কি সেই মূলমন্ত্রে আজও স্বাধীন হতে পেরেছে? একটি স্বাধীন দেশে স্বাধীনতা মানে কি মানবিক কিংবা অবকাঠামোগত উন্নয়নে পদে পদে বাধা? স্বাধীনতা মানে কি শিল্পে বাধা সাহিত্যে বাধা জ্ঞানে বাধা বিজ্ঞানে বাধা? শিক্ষা- জ্ঞান- বিজ্ঞান- শিল্প- সংস্কৃতি ধ্বংসের পাঁয়তারা কি এখনো চলছে না?

নিজের চোখে দেখা শুধুমাত্র ২০০১ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত এই দুই দশকে লেখার জন্য, ছবি আঁকার জন্য, গানের জন্য, গবেষণার জন্য, রাজাকারদের বিরূদ্ধে সাক্ষ্যদানের জন্য যাদের ওপর আক্রমণ করা হয়েছে, নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে তারা কি দেশদ্রোহী ছিল? অনুভূতিতে আঘাতের নামে পান থেকে চুন খসলেই যাদেরকে ধরে জেলে ঢুকানো হয়েছে তারা কি দেশদ্রোহী?

জন্মের পর থেকে বিকৃত যৌন অঙ্গভঙ্গি, সেক্সুয়্যাল কিংবা অবক্ষয় জনিত কোনো ক্লিপের জন্য কখনো সিনেমা নিষিদ্ধ হতে দেখিনি, অথচ নিষিদ্ধ হতে দেখেছি দেশবিরোধী কোন বিশেষ চরিত্র যদি কোনো বিশেষ শ্রেণির চরিত্র বা পোশাকের সাথে মিলে যায় তখন। শুধু একটি শ্রেণির সন্তুষ্টির জন্য পাঠ্যবই থেকে নির্দিষ্ট লেখকদের নির্দিষ্ট লেখা বাদ দিয়ে দেওয়া, বইমেলায় কোনো এক নির্দিষ্ট কারণে বই নিষিদ্ধ করে দেওয়া, আর ভাস্কর্যের বিরোধীতা করা কি আলাদা কিছু? এই ঘটনাগুলোর উদ্দেশ্যের সাথে কি ১৪ ডিসেম্বরের নির্মম ঘটনা ঘটানোর উদ্দেশ্যের সাথে কি কোথাও মিল নেই? ভিন্ন পদ্ধতিতে আজও কি চলছে না জাতিকে মেধাশূণ্য করার সেই নীল নকশা?

একাত্তরের সেই রাতে যাঁদেরকে ঘর থেকে ধরে ধরে নিয়ে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছিল, যাঁদেরকে বুদ্ধিজীবি পরিচয়ে জাতির সূর্য সন্তান হিসেবে আমরা চিনি তাঁরা কারা ছিল? সাংবাদিক, চিকিৎসক, শিক্ষাবিদ, আইনজীবি, অধ্যাপক, বিজ্ঞানী, শিল্পী, কবি, সুরকার, গীতিকার কেউ বাদ পড়েনি হত্যা হওয়া থেকে সেই ভয়াল দিনটিতে। তাঁদের হত্যার পিছনে কারণ বলতে গেলেই আমরা সবাই জানি দেশটাকে শতবছর পিছিয়ে দেওয়ার জন্য, মেধাশূন্য করার জন্য। তাহলে আজকের দিনে এসে সেই একই শ্রেণির মানুষদের বাকরুদ্ধ করে দিয়ে দেশটা ঠিক কোনদিকে এগিয়ে যাচ্ছে, এখনও কি ভাবার মতো সুযোগ আছে? নাকি সময়ের পিঠ দেয়ালে ঠেকেছে আরো আগেই?

একটি বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী জাতি কখনোই বুঝবে না একাত্তরের এই দিনটিতে জাতি কি হারিয়েছিল।

সকল শহীদদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা চির অম্লান শহীদ স্মৃতি-ভাস্বর, তোমাদের এই ঋণ কোনদিন শোধ হবে না।

0 Shares

৪টি মন্তব্য

  • মোঃ মজিবর রহমান

    আমরা সংকর জাতি। যারা এনেছিল জনতাকে সংগে করে একটি জাতির পরাধীনতাকে থেকে স্বাধীনে। তারঁরাও আজ আখের গোছাচ্ছে দেশে ও জাতিকে ধ্বংস করে। এখন ঐ একটি পুজি করে কতদিনই বা চালিকা চাকায় থাকবে জনতার বাঁধন। সংশোধন হয়ার প্রয়জন সবার। কিছু বললেই কথায় কথায় আওয়ামীলীগ বাচ্চাও হতে হয় রাজাকার বাচ্চা যা অতি জঘন্য কান্ডকারখানার প্রপাগান্ডা।

    বর্তমানে পুকুর চোরেও বেশি করছে এই আওয়ামিলিগের কোন ১৯৭১ এর আদর্শ আছে???? নাই।

  • সুপর্ণা ফাল্গুনী

    চমৎকার প্রশ্ন , চমৎকার জিজ্ঞাসা। জাতি কি হারিয়েছে তা বুঝতেছে না কেউই তখন যদি রাজাকারদের ছাড় দেয়া না হতো তাহলে আমার মতে স্বাধীনতার এতো বড় লজ্জাজনক হার দেখতে হতো না। এখন সবখানেই এদের বীজ ছড়িয়ে গেছে তানা হলে এভাবে গণতন্ত্রের নামে, ধর্মের নামে, শিক্ষার নামে প্রহসন চলে! যারা রক্ত দিল, জীবন দিল, সম্ভ্রম দিল মুক্তির জন্য তাদের ত্যাগের মূল্য কি এই জাতি দিতে পারছে?
    স্বাধীনতার ত্যাগকে আজ রাস্তাঘাটের নর্দমার কীটে পরিণত করেছে। বুদ্ধিজীবী দের হত্যা করে দেশটাকে পঙ্গু করে দিয়েছে। কোথায় সেই আদর্শ যার জন্য এতো এতো রক্ত, ত্যাগ? তখন রাজনীতি হতো এখন হয় পেটনীতি, চৌর্যবৃত্তি।
    অফুরন্ত কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ ভাইয়া। নিরন্তর শুভেচ্ছা ও শুভকামনা

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ