UTUTখালাকে বিশাল শপিং প্লাজার লিফটের পাশে একটি ফাষ্টফুড দোকানে নাস্তার অর্ডার দিয়ে ভাই তার গাড়ী চড়ে চলে গেলেন।যাবার সময় বলে গিয়েছিলেন ফুলী কিছু ক্ষণ সময়ের মধ্যেই ঐ লিফটে নেমে আসবেন,ততক্ষণে সে আরেকটি কাজ শেষ করে এখানে আবার আসবেন।
সেই সকাল থেকে দুপুর গড়িয়ে এলো কৈ ফুলীরতো আসার কোন লক্ষণই দেখছেন না খালা।খুবই চিন্তায় পড়ে গেলেন নিজের মেয়ের মতো ফুলীকে সে আগলে রেখেছিল..ফুলীও তাকে মায়ের মতো ভালবাসে শ্রদ্ধা করেন...ফুলী যখন তার রোজগারের প্রথম টাকাটা খালার হাতে দিলেন, সেই দিন থেকেই খালা ফুলীকে নিজের সন্তানের মতো লালন পালন করতে লাগলেন।তবে ফুলী শর্ত দিয়েছিলেন, খালা যদি তার সাথে থাকতে চান তবে তাকে সমাজে ঘৃণিত পেশা পতিতার সরদারনীগিরি ছাড়তে হবে।সে দিন খালা তার কথা শুনে বদলে গিয়েছিলেন সেই থেকে আজ পর্যন্ত কখনো তাকে অভাব কি চোখে দেখতে হয়নি।সেই ফুলীর দুঃচিন্তায় খালার জান যেন যায় যায়।কিসের ফাষ্ট ফুডের খাবার, পেটে কি তা যায় নাকি!খাবারের ফাকে ফাকে লিফটের দিকে তাকায় সে বার বার।
খাবার সেরে খালা শপিং প্লাজার প্রবেশ পথের বিশালাকার সিড়িতে পায় চারি করছেন আর বার বার তাকাচ্ছিলেন লিফটের দিকে হঠাৎ চোখে পড়ল সেই মেয়েটি যিনি তাদের সাথে এসেছিলেন এবং ফুলীকে নিয়ে বিল্ডিংয়ের উপরে লিফটে গিয়েছিলেন।পরক্ষণে আবার থমকে যান খালা,মেয়েটিতো সালোয়ার কামিজ পড়া ছিল, কাপড় পড়াতো ছিল না কিন্তু... মেয়েটির মুখবয়তো বলে সেই মেয়েটিই এইটি ।দীর্ঘ পথ গাড়ীতে এক সাথে আসা মুখটিতো এতো সহজেই ভূলে যাবার খালা সে নয়।সে দৌড়ে মেয়েটির সামনে গিয়ে দাড়াল।তাকে দেখে মেয়েটি কেমন যেন নারভার্য হয়ে গেলেন।
-এই মেয়ে তুমিইতো সেই মেয়েটিই!
খালা আবারো তার মুখের দিকে ভালো করে তাকায়...হ্যা সে-ইতো তুমি!
-কি আবোল তাবল বলছেন আপনি,...পথ ছাড়ুন আমার কাজ আছে,যেতে হবে দ্রুত।
-হুম!ঠিক আছে,তা ফুলীকে কোথায় রেখে এসেছো?
-কে ফুলী?কোথাকার ফুলী?....ফুলী নামে আমিতো কাউকে চিনি না।
-চিনো না হু,চিনো না...চলো ..তোমারে চিনাচ্ছি।
খালা মেয়েটির কাপড়ের আচলঁ ধরে টান দিলেন।টানে মেয়েটির বক্ষ হতে কাপড় সরে পড়ে।আশে পাশে লোক জন ততক্ষণে জমে হা করে তাকিয়ে তামাশা দেখছেন।অবস্থা করুণ খালা কিছুতেই মেয়েটিকে ছাড়ছেন।মেয়েটিও তার পড়ে যাওয়া কাপড়ের আচলের এক ধরে টানাটানি করছেন খালা পাগলের মতো মেয়েটিকে বকছেন।ভিরের মধ্য হতে এক যুবক বের হয়ে মেয়েটির সামনে এসে নাম ধরে ডাকেন।
-স্বর্না,তুমি!কি হচ্ছে এখানে?
মেয়েটি কেদেঁ দেন অপমানের সকল রাগ যেন তার কণ্ঠ হতে বের হতে থাকে।খালা 'থ খেয়ে যায় তাহলে সে কি চিনতে ভূল করেছেন!আশ্চর্য হন তবে এই যুবকটি তার কি হন।যুবকটি খালার সামনে আসেন ততক্ষণে খালার হাতে মুষ্টিবদ্ধ শাড়ির আচলটি মুষ্টির ভিতর দিয়ে সরে যেতে যেতে মেয়েটির হাতে চলে যায়।
-আপনি ভূল করছেন,সে আমার ওয়াইফ।
খালা এবার পুরাই টাসকি খান।মনে মনে ভাবেন যাক বাবা চোখের জ্যোতি কি তাহলে কমে গেলো!।সে ক্ষমা প্রার্থনার জন্য আমতা আমতা করেন।
-না মানে...বয়স হয়েছেতো তাই হয়তো ভূল হয়ে যায়।
মাথায় হাত দিয়ে উম্মুক্ত সিড়িতেই বসে পড়েন খালা।মেয়েটিও আর কোন কথা বাড়ালেন না ছেলেটির হাত ধরে দ্রুত এখান থেকে প্রস্থান নিলেন।কিছু দূর যাবার পর ছেলেটি মেয়েটিকে চলন্ত অবস্থায় কথা বলছেন।
-সে(ফুলী) এখন কোথায়?
-যায়গা মতো ঘুমের ইংজেকশন পুস করে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে...রাত হলেই পাড়ি জমাবে অন্য দেশে।ভালোই ইনকাম হলো আজ রাতটা কাটবে আনন্দে।
ফোনে রিং বাজছে মেয়েটির রিসিভ করে আনমনা হয়ে পড়েন।বেশ কিছুক্ষণ ফোনে কথা বলে চিন্তিত মনে হাটছেন।ছেলেটি তাকে জিজ্ঞাস করলে সে যা উত্তর দেন তাতে দু'জনের মনের ভিতর ভয় ঢুকে যায়।
-কি, কোন খারাপ সংবাদ?
-হুম!ভাইয়ের বাড়ীর চারপাশে পুলিশের পাহাড়া।
-কেনো?
-ঐ যে... ছয় সাত জন গুম হয়েছিল, তার দায় ভার সব এখন ভাইয়ের উপর পড়েছে।এবার ভাইও মনে হয় ফেসে যাবেন।এলাকার লোকজন যে ভাবে ক্ষেপেছে তাতে শেষ রক্ষা পাবেন বলে মনে হয় না।
-কোন সমস্যা নেই, এই দু'চার দিন...তারপর সব ঠান্ডা হয়ে যাবে।নতুবা এক জন অপরাধীকে বাচাতে পুলিশ কেনো তার বাড়ী পাহাড়া দিবে...এটাই ক্ষমতা...বুঝলে?
gugফুলীর ঘুম ভাঙ্গে নদীর স্রোতের গর্জনে।ধীরে ধীরে চোখ খোলে চার দিক তাকাতে চোখে ঝাপসা ঝাপসা দেখছিল তার চার পাশে জড়ো হয়ে বসে আছেন বেশ কয়েকজন সমবয়সী নারী।নদীর ঢেউয়ে এক দিকে হঠাৎ কাত হওয়াতে বুঝতে পারেন যে, সে কোন এক ট্রলারে বড় কোন নদীর  মাঝা মাঝি আছেন।অন্ধকারে তেমন কোন কিছু স্পষ্ট দেখতে পারছেন না সবই অনুমানের ভিত্তিতে ধারনা করছেন।বদ্ধ অন্ধকার স্থানে উপরের দিকে দু'তিন স্থানে মোটা মোটি আট দশ ইঞ্চি করে ফুটো আছে যা দিয়ে তাদের কাছে সূর্যের সরু আলো পৌছে।সেই ছিদ্র দিয়ে ফুলী তাকিয়ে দেখছেন নদীতে ঢেউ আছড়ে এসে পড়ছে তাদের ট্রলারে তখন সে বুঝতে পারেন সে এখন কোথায় আছেন।তার সাথে অন্য আরো মেয়েদের মুখ দেখে বুঝতে পারেন সে এখন নারী হয়তো পাচারকারীর হাতে বন্দী।প্রচন্ড ক্ষিদে লেগেছে ফুলীর ট্রলারে দরজা নক করাতে এক বিশাল মুছাকার বিকট মুখটি তার ডাকে দরজা খুলে প্রশ্ন করেন।
-কি হইছে?
-ক্ষিদে লেগেছে,
-পরে,...আর একটু পর আমরা নামবো একটি ঘাটে, সেখানে সবাইকে চা নাস্তা খাওয়াবো।
ফুলী দরজা নক করে চলেন আসলেন নিজের বসার স্থানে।চোখে এখন আগের চেয়ে একটু পরিষ্কার পরিষ্কার দেখছেন, প্রায় সবার মুখই দেখতে পারছেন।তাদের সাথে ছিল চার জন কিশোরী মেয়ে অবস্থা দেখে মনে হয় কোন বড় ঘরের সন্তান ওরা।ঘুম যেন ফুলীর চোখ থেকে যাচ্ছেই না আবারও সে বসার মাঝেই চোখের পাতা এক করলেন।
fyufখালা উপায়ন্তর না পেয়ে ফুলীকে ফিরে পাবার আশা ছেড়ে নিজ এলাকায় ভাইয়ের বাড়ীতে আসতে লাগলেন তখন প্রায় সন্ধ্যা।বাসে এলাকার কাছা কাছি আসতেই বাস যেন আর চলছে না তীব্র জ্যামে দিশে হারার মত এদিক সেদিক ছুটছেন কর্ম জীবি মানুষগুলো যদিও এ জ্যাম তাদের নিত্য দিনের সঙ্গী তবুও কিছু না কিছু কারন তো জ্যামের জন্য আছেই তবে সে দিনের জ্যাম ছিল মানুষের ক্ষোভের জ্যাম।তার বাস থেকে প্রায় দুই তিন মাইল দূর ভাইয়ের আলীশান অফিস ভাংচুড় করছেন ঐক্য বদ্ধ বিক্ষিপ্ত জনতা,আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছেন ভাইয়ের সহযোগীর একটি তেলের পাম্প।অবরুদ্ধ করে রেখেছিল ঢাকা-চিটাগাং হাইওয় রোড।খালা সে দিনের মতো ভাইয়ের সাথে দেখা করতে পারেননি।

fyfyfট্রলারে অন্য সব মেয়েদের ট্রলার থেকে নামবার শব্দে ফুলীর ঘুম ভেঙ্গে যায় এবং অনুভব করেন ভোরের একটি নির্মল সকাল।ট্রলারের গায়ে লাগানো লাগানো ছিল বন ভোজনের ব্যানার।যে ঘাটে গিয়ে থামল ট্রলারটি বলা চলে লোকহীন একটি পরিত্যাক্ত ঘাট কথিত আছে,এই ঘাটে লোকজন আসে না অজানা এক আতংকে। বেশ কিছু দিন পর পর এখানে মৃত মানুষের লাশ দেখতে পায়  আবার লোক জন জড়ো হবার আগেই লাশটি উদাও হয়ে যায়।এমন রহস্য ঘেরা ঘাটটি সারা বছর অব্যাহৃত ভাবে পরে থাকে কেবল মাত্র অন্ধকার জগতের বাসিন্দারা এটাকে মাঝে মধ্যে ব্যাবহার করেন।
ঘন ঘন গাছ পালার মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে সরু একটি যাতায়াতের রাস্তা তার আশে পাশে অথবা সম্মুখে গজানো লতাপাতা গুলোকে কেটে কেটে পথ অতিক্রম করতে হয়।তেমনি ভাবে মেয়েগুলোকে নিয়ে যাচ্ছেন কিছু অচেনা স্বদেশী পুরুষ দালাল।উদ্দ্যেশ্য এ পথের শেষে মিলবে মায়ানমারের বর্ডার,যেখানে অপেক্ষা করছেন মেয়ে মানুষের আরো এক বার্মিজ দালাল।অর্থের বিনিময়ে তাদের সেই দালালের কাছেই তুলে দিবেন।

পথে কিছুটা বিশ্রামে গেলেন দলটির দলপতি।ফুলীও যেন হাফ ছেড়ে বাচলেন কিছুটা বিশ্রাম যেন তার খুবই প্রয়োজন ছিল অনবরত হেটে চলার শক্তি যেন আর তার দেহে  নেই,ঘাসের উপরে বসতে গিয়ে মনে হলো তৃষ্ণা লেগেছে তাই সে দালালকে বলে পাশেই একটি ছোট খালের মতো প্রবাহিত সম্ভবত ঝরনার জল।সেখানে গিয়ে চোখে মুখে জল ছিটাচ্ছেন আর চার পাশ তাকিয়ে দেখছেন.......
ঐতো খুব বেশী দূরে নয় ঐ যে দাড়িয়ে আছে তাল গাছটা! তার খুবই চেনা চেনা লাগছে।কেনো যেন তার মনে হচ্ছে এই জঙ্গলও তার বেশ পরিচিত।জঙ্গলের ঝরনায় প্রবাহিত জলের স্পর্শের অনুভূতির সাথে সে যেন আগ থেকেই পরিচিত ছিলেন।ফুলীর সাথে সিকুরিটি হিসাবে আসা লোকটিকে এই এলাকার নাম জিজ্ঞাসা করেন।তাতে সে অপরাগতা স্বীকার করে ধমক দেন।ধমকের সূরে সে তার সমান্য বর্ননা দেন।
-নাইংছড়ি উপজেলার ঘুম ধম ইউনিয়নের তুমব্রু বাজারে কাছাকাছি যাবো আমরা।তবে আমরা মনে হয় আমরা এসে গেছি।
তুমব্রু বাজার সে তো আমার গ্রাম তবে কি আমি আমার গ্রামে ফিরে এলাম!মনে মনে আশ্চর্য হয় সে।যে মা বাবা ভাই বোনকে গ্রামে রেখে জীবিকার খোজে চলে গিয়েছিলেন ঢাকা তার পর নারায়ণগঞ্জ শহরে প্রায় দশটি বছর গ্রামে তার আর ফেরা হয়নি,হয়নি দেখা মা ভাইয়ের সাথে, এক সময় সে ভূলে যায় তার গ্রামে ফিরে যাবার পথটিও আজ সরে জমিনে দেখে পরিবারের অনেক স্মৃতিই চোখে ভাসছে তার।এত কাছাকাছি থেকেও সে তার পরিবারের দেখা পাবে না তা ভাবতে তার অন্তর নীরবেই কেদে উঠে।
ঘূণে ধরা সমাজের ফুলীরা ১৪তম

0 Shares

১৮টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ