ঘুড়ি – লকডাউন শহরে

বন্যা লিপি ১৮ এপ্রিল ২০২০, শনিবার, ১১:৫৬:১২অপরাহ্ন একান্ত অনুভূতি ২৬ মন্তব্য

ওকে আমি বাসুলিয়ার গায়েন বলে ডাকি। ওর একটা নাম আছে।থাকুক।ওকে আমি ভূত বলেও ডাকি। মাঝে মাঝে ভূতের মতো আচরন করে বলে। আমাকে অনেক কিছু ডাকে।যখন যেমন মনে চায়! পেঁচী, পেত্নী, বোঁচা, কানি, শালিক, চড়ুই,বাবুই, কত্ত নাম! আসল নামটাই ভুলে যাই আমার মাঝে মাঝে।আমারো একটা নাম আছে। ঝুমুর। রেগে গেলেই বলে......." আমার যা খুশি ডাকুম, তাতে কানি'র কি? " কেমনটা লাগে তখন?

ভূতের মতো  হঠাৎ  প্রশ্ন করে ---কি করছো?

-- বসে আছি। ভাল্লাগছে না।

--ঘুড়ি ওড়াতে ইচ্ছে করছে।

---ঘুড়ি??

---হ্যাঁ

---ওড়াও

---আমি বানাতে পারি।

---বানাও

ওড়াও

আমার খুব ভালো লাগে দেখতে ঘুড়ি ওড়ানো।

---আমারো

---ঘন্টার পর  ঘন্টা তাকিয়ে থাকতে পারি।

কেমন করে নিয়ন্ত্রনে উড়ছে আকাশময়---

---একদম  একদম......

----প্যাঁচ লেগে গেলেই ভোঁকাট্টা!

----হা হা হা হা হা.....

চিঠি পাঠানো যায়!!

---আছে নাকি এরকম অভিজ্ঞতা?

---কারো কাছে না

ঘুড়ির সুতোয় কাগজ রেখে দিলে বাতাসে চলে যায় ঘুড়ির কাছে।

---জানো, সেদিন ছাদে উঠেছিলাম আমাদের। উঠিনা তো খুব একটা! এত উঁচুতে থাকি আমি! আমার চারিদিকেও সব উঁচু উঁচু বাড়ি। সব বাড়ির ছাদে তখন মানুষ। নিচের রাস্তাঘাট সব ফাঁকা। এ ছাদ থেকে সে ছাদের কিশোর ছেলেরা ঘুড়ি ওড়াচ্ছিলো। চিৎকার করে করে একে অপরের নির্দেশনা মেনে মেনে ঘুড়ি ওড়াচ্ছে। আমি ঠোঁট বিস্তৃত করে হাসি হাসি মুখে ওদের ঘুড়ি ওড়ানো দেখছিলাম। কি বিশাল আকাশটাতে রংবেরংয়ের ঘুড়ি উড়ছে। যারা ওড়াচ্ছে তারা সব দালান বাড়ির ছাদে। ছাদগুলোতে রেলিং দেয়া। সীমানা বাঁধা আছে।

হঠাৎ এক কিশোর বালক চিৎকার করে উঠলো.....ভোঁকাট্টাআআআআআ.....সুতো কেটে ঘুড়ি গোত্তা খেতে খেতে নিচের দিকে নেমে আসছে। নাটাই আরেকজনার হাতে দিয়ে ছেলেটা ছুটছে। সিঁড়ি দিয়ে লাফ ঝাঁপ দিয়ে ,পড়িমরি  করে নেমে আসছে ।

আমি হাহাকার করে উঠলাম......

নামিসনে বাছা --নামিসনে পুরো শহরে লকডাউন চলছে.......

0 Shares

২৬টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ