এখানে আমার এক জমি ছিলো, ঘর ছিলো
সবুজ শস্যে ভরে উঠতো উঠোন আমার,
দিগন্তের কোনে সূর্য উঁকি মেরে উঠতেই, আমারো দিনের শুরু হতো।
থালায় আউশ ধানের পান্তা,
কি তার সৌরভ!
উঠোন জুড়ে সন্তানের কলোরব, মুরগির ছানা, বাছুরের ছুটোছুটি
সে এক শ্রুতিমধুর ধ্বনি আমার কানে বাজে,
এ যেনো স্বর্গীয় কোনো সুর।
দিনশেষে ক্লান্ত কৃষানী আমার ঘুমিয়ে গেছে
শিউরে তার পড়ে আছে হাতপাখাটি,
মুখে তার নতুন ফসল প্রাপ্তির তৃপ্তির ছাপ।
সামনে বুক ফুলিয়ে বয়ে গেছে এক নদী
বড় অহংকারি সে নদী।
এক এক করে গিলে খেলো সে আমার সবটুকু জমি,
উগরে দিলো ওপারে, চর জাগালো মাঝনদীতে।
সে চরে ফসল ফলে, উঠোন ভরে অন্যের।
অসহায় উদাস দৃষ্টি আমার আটকে যায় ভূমিদস্যুর সে উঠোনে।
বউ আমার অন্যের উঠোনে আজ শস্য ঝাড়ে।
রাত গভীর, জেগে আছি আমি
ক্লান্ত শরীর নিয়ে বউ আমার তাকিয়ে আছে অপলোক,
গভির ঘুমে সন্তান ঘুমায় আমার আধপেটে।
এ শহরের নীল বাতি, মাংস পোড়ার গন্ধ, মাথার উপরে কালো আকাশ, পথের পাশে আশ্রহীন আমি
ক্লান্ত চোখে এক রাজ্যের ঘুম।
নিজেরই এক আর্তচিৎকারে উঠে দেখি নিথর রক্তমাখা এক শরীর আমার পড়ে আছে।
কখন যেনো আলিশান এ শহরের এক গাড়ি চলে গেছে আমার ক্লান্ত পরিশ্রান্ত ঘুমন্ত শরীরটার উপর দিয়ে।
বউ আমার কাঁদতে ভুলে গেছে, পাথর চোখে তাকিয়ে আছে অপলোক।
আমি তোমাদের শহরে আসতে চাইনি, বিশ্বাস করো।
তোমার শহরের পোড়া মাংসের গন্ধে আমার বমি আসে,
পোড়া পেট্রোল, পোড়া মাংসের গন্ধ
তোমার গাড়ির কাঁচ গলে ভেতরে যায়না ঠিক,
শুধু আমি আমার মতো নদীভাঙ্গা গেরস্ত মানুষগুলো জানি, বাড়ির উঠোনের চাঁপা ফুলের গন্ধ ছেড়ে এ পোড়া মাংসের গন্ধ কতোটা দুর্বিসহ।
,,,,,,রিতু,,,,,
26.06.18. কুড়িগ্রাম।

0 Shares

১৫টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ