সূর্যগ্রহণই বলুন, কি চন্দ্রগ্রহণ—ছোটবেলা থেকেই তো শুনে আসছেন, গ্রহণের সময় নাকি এই করতে নেই, তাই করতে নেই! খাবার খেতে নেই, বাড়ির বাইরে বেরোতে নেই—এমন আরও অনেক কিছু। তা আপনার মনেও নিশ্চয়ই প্রশ্ন জেগেছে যে কেন গ্রহণের সময় খাবার খেতে নেই? আর আশেপাশের লোকজনকে জিজ্ঞেস করেও কোনো সদুত্তর পাননি। তাই সেই চক্করে কিছু না জেনেই কিছু নিয়ম নিশ্চয়ই আপনি এবারেও মেনে ফেলেছেন, তাই তো?
শাস্ত্রে কী বলে?
গ্রহণের সময় খাবার খাওয়া আদৌ উচিত কিনা এ নিয়ে নানা জন নানা মতামত তো দিয়েই থাকেন। কিন্তু প্রাচীন ভারতে মনে করা হতো যে চন্দ্রগ্রহণ নাকি শুধু রাতেই ঘটে, আর এই সময় নাকি কিছু বিশেষ ঘটনা ঘটে। বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, প্রাচীন ভারতে গ্রহণের সময় খাবার খাওয়া হতো না, কারণ খাবার নাকি এইসময় শরীরে নানা ক্ষতিকারক এফেক্ট করে।
চাঁদই বলুন বা সূর্য—মানুষের শরীরের বা জীবনের সাথে এই দুয়েরই যোগ আছে। আর গ্রহণের সময় নাকি কিছু ক্ষতিকর গ্যাস নির্গত হয় যা আপনার পেটের খাবারকে বিষে পর্যন্ত পরিণত করে ফেলতে পারে। তাহলেই ভেবে দেখুন কি মারাত্মক ব্যাপার।
‘চৈতন্য ফাউন্ডেশনে’র যোগাচার্জ অনুপ মনে করেন, খাবার একদম খাওয়া বন্ধ করা নয়, তবে এই সময় নাকি কিছু হালকা খাবার খাওয়া উচিত, যা হজম তাড়াতাড়ি হয়। কারণ গ্রহণের সময় শরীরে নাকি ‘কুলিং এফেক্ট’ থাকে, ফলে খাবার হজম হতে দেরী হয়। চাঁদে তো জল থাকে, আর আমাদের শরীরেও প্রায় ৭০% জল। তাই চাঁদে গ্রহণের সময় কিছু পরিবর্তন হওয়া মানে আমাদের শরীরেও নাকি খানিক তার প্রভাব পড়ে।
অনেকে বলেন, গ্রহণের সময় খাবার না খাওয়ার কোনো আলাদা বাধা নেই। কিন্তু সূর্যগ্রহণ যখন হয়, তখন দিনের বেলাতেই আলো থাকে না। ফলে এইসময় কিছু ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া খাবারে অনায়াসে ছড়িয়ে পড়তে পারে। তাই গ্রহণের সময় খাবার খেতে বারণ করা হয়।
আবার অনেকে মনে করেন, চন্দ্রগ্রহণের সময় নাকি পূর্ণিমা থেকে অমাবস্যা—২৮ দিনের এই গোটা সাইকেলটা একসাথে ঘটে, মাত্র ২-৩ ঘণ্টায়। ‘স্বাভাবিকের থেকে আলাদা’, ‘অ-স্বাভাবিক’ এই ঘটনাই কিন্তু ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। যার প্রভাব পড়ে খাবারেও।
আর গ্রহণ মানেই তো চাঁদ, সূর্য আর পৃথিবীর একই সরলরেখায় আসা। এইসময় তাদের ম্যাগনেটিক শক্তি নাকি সবথেকে বেশী হয়। শরীরেও এই সময় বায়ো ম্যাগনেটিজমের শক্তি বেশী থাকে। এই দুটো শক্তিকে সামঞ্জস্যে আনতেই নাকি প্রাচীনকালে মুনিঋষিরা বসতেন ধ্যানে। তাও আবার খালি পেটে। আর এর সাথে মিশে থাকত একটা বিশ্বাস। মুনিঋষিরা বিশ্বাস করতেন, অসুর রাহুর গ্রাস থেকে দেবতা চন্দ্রকে বাঁচানোর জন্যই নাকি তাঁদের এই ধ্যান জরুরী। আর সেই থেকেই নাকি চলে আসছে গ্রহণের সময় খালি পেটে থাকার নিয়ম।
বিজ্ঞান কী বলে?
বিজ্ঞানীরা মেনে থাকেন সে কথা, যে গ্রহণের সময় কিন্তু কিছু কিছু ক্ষতিকারক রশ্মি, যেমন অতিবেগুনী রশ্মি একটু বেশী মাত্রাতেই বিকিরিত হয়, যা খাবারের মধ্যে যেতেই পারে। চন্দ্রগ্রহণের সময় এই বিকিরণের মাত্রা অনেক কম থাকে, কিন্তু সূর্যগ্রহণের সময় তা থাকে আরও ব্যাপক। ফলে খাবারই বলুন, বা কোনো জীবিত কোষই বলুন, ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
আর খাবার যদি হয় রান্না করা? তাহলে কিন্তু বিপদ। কারণ রান্না করা খাবারে থাকে জল। আর গ্রহণের সময় রশ্মি বিকিরণ বা রেডিয়েশনের সবথেকে ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে ওই জলেই! আর রান্না করা খাবারেও যেহেতু থাকে জল, তাই ক্ষতি হয় সেটারও। এই ক্ষতিকর রেডিয়েশনকে এড়ানোর জন্য খাবারের ওপর অনেকসময় তুলসীপাতা রাখা হয়। তবে ওই বিপুল রেডিয়েশনকে ওই সামান্য তুলসীপাতা আদৌ কমাতে পারে কিনা, তা নিয়ে খানিক সন্দেহই আছে!
কি বুঝলেন তাহলে? গ্রহণের সময় খাবার খেতে নেই—এই ধারণাকে যদি আপনি অ্যাদ্দিন নিছকই কুসংস্কার বলে উড়িয়ে দিয়ে থাকেন, তাহলে ধারণা বদলান। কারণ বিজ্ঞান আর শাস্ত্র—যুক্তি আছে কিন্তু দু পক্ষেরই! এবার মতামত আপনার!
.
নিম্নে বাংলাদেশ কয়েকটি অঞ্চলের দৃশ্যবিবরণ দেওয়া হলো..
স্থান
১) যশোর আরম্ভ ১১/১৬ সমাপ্তি ২/৪৭
২) পঞ্চগড় আরম্ভ ১১/১৭ সমাপ্তি ২/৪৬
৩) সিলেট আরম্ভ ১১/৩১ সমাপ্তি ২/৫৭
৪) কুমিল্লা আরম্ভ ১১/২৬ সমাপ্তি ২/৫৪
৫) রংপুর আরম্ভ ১১/১৭ সমাপ্তি ২/৪৭
৬) ঢাকা আরম্ভ ১১/১৬ সমাপ্তি ২/৪৭
২৬টি মন্তব্য
জিসান শা ইকরাম
ছোট বেলা থেকেই গ্রহনের সময় ভাত না খেয়ে রুটি খেয়ে যাচ্ছি। এটি বংশ পরম্পরায় হয়ে আসছে আমাদের পরিবারে।
আর এই সংস্কার মেনে চলতে চাই। এই সংস্কার মানতে ক্ষতি তো নেই কোনো।
বিজ্ঞান আর সংস্কার এ বিষয়ে তো একই কথা বলছে।
ভালো পোস্ট।
শুভ কামনা।
প্রদীপ চক্রবর্তী
আমাদেরও এ সংস্কার মেনে চলে হয়, দাদা।
ভালো থাকুন অনেক।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
খুব সুন্দর পোষ্ট দাদা। অসংখ্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা। ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন
প্রদীপ চক্রবর্তী
সাধুবাদ,দিদি
ভালো থাকুন অনেক।
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
আমার কেন জানি মনে হয় এটা কুসংস্কার। আপনার বিশ্বাসে আঘাত দেয়া আমার ইচ্ছে নয়। ধন্যবাদ।
দালান জাহান
সুন্দর পোস্ট
কামাল উদ্দিন
………সুর্য্য বা চন্দ্র গ্রহণের সময় জন্ম নেওয়া ওই বিপুল রেডিয়েশনে ক্ষতিগ্রস্থ রান্না করা খাবারটা যদি পরেও খাওয়া হয় তাহলেও তো ওটা থাকারই কথা। সেই বিষয়ে আপনার বক্তব্য কি? আর সেটা যদি সত্যি হয় তাহলে তো উপায় মাত্র একটাই। গ্রহণের আগের রান্না করা সমস্ত খাবার ফেলে দিতে হবে। আর ওই রেডিয়েশন যদি এতোটাই ক্ষতিকারক হয় তাহলে তাহলে আমাদের পুকুর বা নদীর জলের কি অবস্থা হবে সেটাও কিন্তু ভাবার বিষয়।
প্রদীপ চক্রবর্তী
আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় এমনি দেখে এসেছি দাদা.তাই শেয়ার করলাম। তুলসীর কার্যকারিতা যাই হোক ছোটবেলা থেকে দেখে আসা ঐটা হয়ে গেছে আমার বিশ্বাস।
নিতাই বাবু
এটা শুধু গ্রহণ আরম্ভ থেকে শেষপর্যন্ত সময়টুকুর জন্যই বিধিনিষেধ। গ্রহণ শেষ হবার পর আবার সবকিছুই ঠিকঠাক হয়ে যায়। যা আগেকার বুড়া-বুড়ি ও পণ্ডিতদের মুখে শোনা। তবে বিজ্ঞান এটা মানতে রাজি নয়! আবার বিজ্ঞান বলে সূর্যগ্রহনের সময় খালি চোখে সূর্যের দিকে তাকানো নিষেধ। এতে নাকি চোখেরও ক্ষতি হয়। তো বুঝুন ব্যাপার! বিজ্ঞান এটা মানে না, ওটা মানে! প্রদীপ চক্রবর্তী দাদার সুন্দর বিশ্লেষণমূলক মন্তব্য আশা করি।
প্রদীপ চক্রবর্তী
শ্রদ্ধেয় কামাল দাদা রেডিয়েশনের কার্যকারিতা সাধারণত তোলা জলেই বেশী থাকে।আর আমাদের সমাজে ঐ সময়ে রান্না হয়না আর থাকলে তা ফেলে দেওয়া হয়।
.
সাধুবাদ,শ্রদ্ধেয় নিতাই দাদা।
যথার্থ ব্যাখ্যাদানের জন্য।
কামাল উদ্দিন
ঐ সময়ে রান্না হয়না তো কি হয়েছে, আগে রান্না করা খাবারগুলো তো আমরা খাচ্ছি। যেহেতু তোলা জলেও এসব হয়ে থাকে তাহলে রেডিয়েশনের কার্যকারিতা তো এতে থেকেই যাওয়ার কথা। আর ওসবে খেয়ে আমাদের নানা রকম বিপত্তি হওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয়, কিন্তু তেমনটা তো হচ্ছে না।
নিতাই বাবু
না, শ্রদ্ধেয় ‘কামাল’ দাদা। চন্দ্রগ্রহণ আর সূর্যগ্রহন শুরুর আগে থেকেই আমারা হিন্দুরা বাসি কোনও খাবার ঘরে রাখি না। খাবারও গ্রহণ করি না।
নিতাই বাবু
যথাসময়ে সময়োপযোগী পোস্টের জন্য প্রিয় প্রদীপ চক্রবর্তী দাদাকে অজস্র ধন্যবাদ।
প্রদীপ চক্রবর্তী
সাধুবাদ,দাদা
ভালো থাকুন অনেক।
তৌহিদ
এতসব নিয়ম! জানতামই না। তবে খারাপ বাতাস ঘোরাফেরা করে এটা শুনেছি আমি। গ্রহনের সময় আরো অনেক কিছুই করা যায়না কিন্তু!
চমৎকার পোষ্ট দাদা।
প্রদীপ চক্রবর্তী
সাধুবাদ,দাদা।
ভালো থাকুন অনেক।
আরজু মুক্তা
জানলে তা মানতে গয়। এটা বুঝি। তর্ক নেই
আরজু মুক্তা
হয়
মোহাম্মদ দিদার
আলোচনা বেশ মুখ্য ছিলো। তবে বিষয়টা আমি মানি না!
সুপায়ন বড়ুয়া
গ্রহনের সময় প্রতিক্রিয়া হবে স্বাভাবিক।
তাই সংস্কার মেনে চলাই উত্তম। যতক্ষন পর্যন্ত
বিজ্ঞান সম্মত উপায় বের না হয়।
ভাল লাগলো। শুভ কামনা।
প্রদীপ চক্রবর্তী
সাধুবাদ,দাদা।
এস.জেড বাবু
ছেটবেলায় শুনেছি “গণ্যা লাগছে”
পারিবারিক ভাবে খাওয়া দাওয়ায় বিধি নিষেধ ছিলো এখনও আছে। তবে নতুন করে অনেক তথ্য জানা হলো।
বিষয়টি নিয়ে এর আগে কখনো ভাবিনি / খুঁজিনি।
ধন্যবাদ প্রিয় ভাই
প্রদীপ চক্রবর্তী
সাধুবাদ,দাদা
আলমগীর সরকার লিটন
ভাল লেখেছেন দাদা
দুখের বিষয় হলো চন্দ্রগ্রহণটা দেখতে পারিনি
হালিম নজরুল
হায় খোদা! কত্ত নিয়ম
সাবিনা ইয়াসমিন
এতদিন কুসংস্কারই ভাবতাম, যদিও ভয়ে হোক আর বড়োদের কথা মানতে গিয়েই হোক,চন্দ্র/সূর্য গ্রহণের সময় কিছুই খাই না।
খুব সুন্দর তথ্যসূত্র দিয়ে লেখা পোস্টটা ভালো লাগলো প্রদীপ।
শুভ কামনা 🌹🌹