Gopal-300x190

নিম্ন বিত্ত গোপাল ভাঁড় বনাম প্রদীপ দৈত্য-ইদানিং-১৪-১৫

এতো রাতে হাতের কাছে ওরকম একটা প্রদীপ দেখে টাসকি খেয়ে গেলো গোপাল ভাড়। এমন নির্জন জায়গায় পড়ে থাকা ময়লা প্রদীপটিকে হাতে তুলে নিয়ে হালকা ঘষা দিল। যা ভেবেছিল ঠিক তাই, এটি একটি জাদুর প্রদীপ! মুহূর্তের মধ্যেই আকাশ-বাতাস কাঁপিয়ে তুলে এক বিশালাকার দৈত্য গোপাল ভাঁড়ের সামনে আবির্ভূত হলো। যথারীতি দৈত্যকায় হাসি হেঁসে বলল, হুকুম করুন মালিক। গোপাল ভাঁড় ভয় পেয়ে গেলো তাও ভয়ে ভয়ে দৈত্যের কাছে রাজপ্রাসাদের মত একটা বাড়ী চাইলো। দৈত্য বলল সকালেই পেয়ে যাবেন। এরপর দৈত্য যাথারীতি বলল মালিক আপনার দ্বীতিয় ইচ্ছে বলুন এইবার গোপাল প্রচুর ধন-রত্ন চাইলো। এগুলো মিলে যাবে দৈত্য জানালো। এবার আবার তৃতীয় ইচ্ছে কি জানতে চাইলো দৈত্য। এই বার তিন নম্বর ইচ্ছে কী হতে পারে ভাবতে শুরু করল বিএ পাস কেরানি গোপাল ভাঁড়। শেষমেশ অনেক ভেবে দেখলো, দৈত্যের কাছে তার মনটাকে সহনশীল বা ধৈর্যশীল করে দিতে বলবে। কেননা সে অনেক সংগ্রাম করে অনেক পথ পাড়ি দিয়ে জেনেছে ধৈর্য কতটা জরুরী বিষয়। তাই মনের মধ্যে ভয় না রেখে এ ইচ্ছাটার কথাও দৈত্যকে বলে ফেলল গোপাল ভাঁড় কিন্তু ইচ্ছেটার কথা শুনেই দৈত্য কাঁদতে শুরু করে দিল। হঠাৎ করে দৈত্যের কান্না দেখে ভয় পেয়ে গেলো গোপাল ভাঁড়। তবু ভয়টা চেপে রেখে দৈত্যকে জিজ্ঞেস করল কি ব্যাপার কাঁদছও কেন? তখন দৈত্য কাঁদো কাঁদো স্বরে বলল হে আমার মালিক! আমি আপনাকে সহনশীল করতে পারছিনা, কারন আমার নিজেরই ধৈর্য কম! বুঝতে পারছেন না আমি কেবল আমার অধীনস্থ জিনিসই দিতে পারি, এর বাইরে নয়। ধৈর্য আমার নিয়ন্ত্রনে নেই। থাকলে কি আর প্রদীপের গায়ে সামান্য ঘষাতেই ঘুম ভেঙ্গে যেত? এই কথা বলেই দৈত্য আবার হাউমাউ করে কান্না শুরু করে দিলো। গোপাল ভাঁড় এতোদিন শুধু জানতো দৈত্যের হাঁসি অনেক উচ্চ স্বরে হয়। কিন্তু কান্না এতো বিশ্রী হয় জানতো না! দৈত্যের কান্না দেখে গোপাল ভাঁড়ের মেজাজ গেলো খারাপ হয়ে, কিন্তু সেই ভাবটাতে বাধা পড়লো যখন তার বউ আছিয়া তাকে ডাক দিল, ওগো উঠো, সেহরীর সময় হইয়া গেল...।। চোখ কচলাতে কচলাতে শোয়া থেকে উঠে এল গোপাল ভাঁড় আর ভাবল এতক্ষণ কি সে সপ্ন দেখছিল! কি অদ্ভুত সপ্ন! ভেবেই কিঞ্চিৎ হাসলো! চোখের সামনে আলু ভর্তা আর খেসারীর ডাল সাজানো সেহরির জন্যে। তবু এতটুকু ক্লান্তি নেই গোপাল ভাঁড়ের। কারন পোড় খাওয়া জীবনে কখনোই কোন জাদুর প্রদীপ বা জাদুর কাঠির ছোঁয়া পায় না গোপাল ভাঁড়রা, তাদের বারো মাসই কাটে বাস্তবতার সঙ্গে লড়াই করে, যেটি অন্যদের মতো এককালীন নয়-মাসিক নয়, একেবারে চিরকালিন। অবশেষে গোপাল ভাঁড় দৈত্যের মত হু হু করে কেঁদে উঠে বলে উঠলো কপাল আমার না দৈত্যের বেটা সপ্নেই থাক বাস্তবে আইলে খালি পোড়ই খাইতো।

শেষের টান, নয়ত কোন মান অভিমানঃ

সবাইকে চলমান রমজানের শুভেচ্ছা। আচ্ছা আপনি যখন নানা রকমের বিলাস বহুল আইটেম দিয়ে ইফতার কিংবা সেহরি করছেন, একবারও কি ভেবেছেন আপনার পাশের ঘরের কিংবা আশেপাশের বাড়ির কেউ, কি দিয়ে ইফতার করছেন? কিংবা রাস্তার পাশের বস্তির ঘরে আজ কি তৈরি হচ্ছে ইফতার বা সেহরির আয়োজনে। আর আপনি যদি শহরের মানুষ হয়ে থাকেন, তাহলে আপনার ফ্ল্যাট কিংবা বাড়িটি যে বা যারা দারোয়ান নামে নামাঙ্কিত হয়ে ২৪ ঘন্টা পাহারা দিচ্ছে, তারা ইফতারে কি খাচ্ছে। আচ্ছা বাদ দিন শুধু এইটুকু বলুনঃ রমযান তো সংযম শিক্ষা দেয়, তাও যেনে কেন দামী দামী রেস্তুরাতে গিয়ে কিনে নিয়ে আসছেন খাবারের নামে বিষ। প্রশ্নটা সবার কাছে? মধ্যবিত্ত কিংবা নিন্ম মধ্যবিত্ত গোপাল ভাঁড়দের খাওয়া না হয় একদিন রমজানের সংযম উপলক্ষেই খেয়ে দেখেন না, অনুভব করতে পারেন কিনা? একদিন কবি  নির্মেলন্দ গুনকে প্রশ্ন করেছিলাম, গুন দা, ভালবাসা কিভাবে পাওয়া যায়? তিনি জবাবে বলেছিলেনঃ ভালবাসা বিলিয়ে যাও, ভালবাসা পাবে। কবির ভাবনার ভাবে বলতে চাইঃ ভালোবাসার মত নিজে না খেয়ে নয়, কিন্তু আপনার উদৃত খাবারের কিংবা আপনার খাবারের ভাগ থেকে কিছুটা বিলিয়ে দেখুন না, পরিনামে হয়ত তারা আপনাকে খাবার দিতে পারবেনা কিন্তু যেটা দিবে তার নাম দোয়া। আর এইটাই রমজানের আসল উদ্দ্যেশ্য, ক্ষুদ্র আমি উন্মাদ এইটাই বুঝি রমজানের মহত্ব বিশ্লেষন করতে গিয়ে। সবাই ভালো থাকুন সুস্থ, থাকুন, হয়ত ফিরবো আগামীতে অন্য কোন রম্য নিয়ে, যদি সাহস পাই।

 

বিঃদ্রঃ ইহা একটি রম্য রচনা, কারো জীবনের সাথে ডাইনে-বামে, চামে-চিকনে, উপরে-নিচে কিংবা কোন এঙ্গেলে মিল খাইলে আমি উন্মাদ দায়ী না। জানেনতো পাগলে কিনা বলে আর ডেশ ডেশ কিনা খায়।

 

শুভেচ্ছা সবাইকে।

এই পর্বের সমাপ্তি।

0 Shares

২৯টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ