চৈত্রের দুপুর। বেশ ভালই গরম পড়েছে। যাকে বলে পিঠ জ্বালা পোড়া গরম। সগির মিয়া এই গরমের মধ্যে বাস স্টপেজে দাঁড়িয়ে আছে। তাও আবার গায়ে কোট জড়িয়ে। বাস ধরার অপেক্ষায় আছে সে। বাস স্টপেজে খানিকক্ষণ বাদে বাদে একটি করে বাস এসে থামছে, যাত্রীরা নামছে আবার নতুন যাত্রী উঠছে। যাত্রীদের এমন হুড়োহুড়িতে ঠিকমতো তাল মেলাতে পারছে না সগির মিয়া। মানুষটি দেখতে বেশ ফিটফাট। সরু দেহ। শ্যাম বর্ণ। মাথায় আংশিক কোঁকড়া চুলের সমাবেশ। সগির মিয়া আশেপাশে তাকিয়ে দেখল তার মতো আরও কিছু যাত্রী দাঁড়িয়ে আছে।
খানিকক্ষণ পর আরও একটি বাস এসে থামল স্টপেজে। সগির মিয়া এবার অনেকটা দৌড়ে গিয়ে বাসে উঠলো। সাথে আরও কিছু যাত্রী। লোকাল বাস। আসন খালি নেই। বাসের রডই এখন ভরসা। সগির মিয়া বাসের মাঝামাঝি জায়গায় গিয়ে রড ধরে দাঁড়িয়ে আছে। বাসে যাত্রীর আধিক্য খানিকটা বেশী। সগির মিয়া এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। কোনও আসন খালি হবে কিনা তা বোঝার চেষ্টা করছে হয়তো। ও যেখানটায় দাঁড়িয়েছে তার পাশের সিটের যাত্রীটি ঘুমাচ্ছে। দাঁড়ানো যাত্রীদের দিকেও একবার দৃষ্টি দিল। দাঁড়িয়ে থাকা পাশের যাত্রীটি সগির এর দিকে তাকিয়ে কেমন যেন একটা মুচকি হাসি দিল। সগির ভ্রু কুচকে ফেলল। বেশ বিরক্ত হল সে। অহেতুক এভাবে হাসার কোনও মানে খুঁজে পেলনা।
-“মিয়া ভাই একটু চাইপা খাড়ান। সামনেই নাইমা যামু”। মুচকি হাসি দেয়া ছেলেটি এবার সগির মিয়াকে উদ্দেশ্য করে বলল। গলার স্বর কিছুটা মৃদু।
-“চাপতে হবেনা, আমিও নামবো”। শান্ত গলায় সগির মিয়ার জবাব।
বাস থামল করিমপুর স্টপেজে। সগির মিয়া বেশ তড়িঘড়ি করে নামলো বাস থেকে। পেছন পেছন নামলো মুচকি হাসি দেয়া ছেলেটি এবং সেই সাথে আরও কিছু যাত্রী।
বাস থেকে নেমে বেশ ধীর গতিতেই হাঁটা শুরু করলো সগির মিয়া। হাতদুটো কোটের পকেটে রাখা। গন্তব্য তার কোন দিকে দেখে বোঝার উপায় নেই। তাড়াহুড়োও দেখা যাচ্ছে না তার ভেতর। দু একবার অবশ্য পেছনের দিকে দৃষ্টি দিল। ছেলেটিও দেখি তার পিছু পিছু আসছে। এবার ঠিক সগিরের পাশাপাশি হাঁটছে ছেলেটি।
-“জয়নাল”। ভারী কণ্ঠে ডাকল সগির মিয়া।
-“জী ওস্তাদ”।
-“ব্যাটায় ঘুমাইয়া আছিল দেইখা কামডা তাড়াতাড়ি সারতে পারলি। ভালই মাইর দিসস। ব্যাটায় ঘুম থিকা উইঠা দেখব মানি ব্যাগ নাই। লও ঠ্যালা। হা হা হা”।
-“সবই আপনের আশীর্বাদ ওস্তাদ”।
গুরু শিষ্য এবার দাঁড়িয়ে আছে করিমপুর স্টপেজের যাত্রী ছাউনিতে। হয়তো নতুন কোনও শিকারের খোঁজে।
১৯টি মন্তব্য
সঞ্জয় মালাকার
“ব্যাটায় ঘুমাইয়া আছিল দেইখা কামডা তাড়াতাড়ি সারতে পারলি। ভালই মাইর দিসস। ব্যাটায় ঘুম থিকা উইঠা দেখব মানি ব্যাগ নাই। লও ঠ্যালা। হা হা হা”।
চমৎকার লিখলেন দাদা পড়ে মজা নিলাম।
রুমন আশরাফ
অনেক ধন্যবাদ দাদা। ভাল থাকবেন।
সুরাইয়া পারভিন
ভালো লিখেছেন।
গুরু শিষ্যের পকেট কাটার কথপোকথন।যা এখন হরহামেশায় হয়ে থাকে।
রুমন আশরাফ
ধন্যবাদ পারভিন আপু।
জিসান শা ইকরাম
শিকারিরা অপেক্ষা করে পরের শিকারের জন্য,
গল্পটা ভালোই লেগেছে।
শুভ কামনা।
রুমন আশরাফ
অনেক ধন্যবাদ জিসান ভাই।
অনন্য অর্ণব
তৌহিদ ভাই সোনেলার পকেট কিন্তু সাবধানে থাইকেন। এখানেও হয়তো সগির মিয়া ঢুকে পড়ছে,,,পরে আমও যাবে ছালাও যাবে হা হা হা 😀
রুমন আশরাফ
হা হা হা।
মনির হোসেন মমি
নিত্য দিনের ঘটনা। এটাও এক প্রকার কর্ম হা হা হা । খুব ভাল হয়েছে।
রুমন আশরাফ
ধন্যবাদ প্রিয় মনির ভাই।
এস.জেড বাবু
ওরে ভাই
সম্পূর্ণ আলাদা স্বাধের কিছু পড়লাম____
পাশাপাশি হাঁটতে দেখে ভাবছিলাম কি হয়! কি হয়!!
বেশ ভালো লাগলো_
রুমন আশরাফ
ধন্যবাদ ভাই
ছাইরাছ হেলাল
আমাদের কি পাশাপাশি কাউকে হাঁটতে দেখলে এমন ভাবতে বলছেন!
রুমন আশরাফ
ঠিক তা নয় আবার অনেকটা তাই। আসলে কে ভাল কে মন্দ তা বিচার করা মুশকিল।
হালিম নজরুল
লেখাটি অন্য অনেককে সচেতন করতে পারে।
রুমন আশরাফ
thik tai. thanks Nazrul bhai.
কামাল উদ্দিন
ধরা পড়লে কিন্তু জামিন নাই,
বেশ সাবলীল লেখা। ভালোলাগা জানিয়ে গেলাম আশরাফ ভাই।
রুমন আশরাফ
কামাল ভাই আপনাকে ধন্যবাদ। দোয়া করবেন যেন আরও ভাল কিছু লিখতে পারি।
কামাল উদ্দিন
চেষ্টা থাকলে অবশ্যই ভালো কিছু হবে ভাই, চালিয়ে যান