গল্প # আঘাত

আবু জাকারিয়া ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৫, মঙ্গলবার, ০৪:০১:১৮অপরাহ্ন গল্প ৮ মন্তব্য

"রাজনিতী করতে হলেতো একটু আধটু এরকম করতেই হয়। মানুষের মায়া করলে কি চলে?" বলেই ১০০০ টাকার একটা নোট কালুর হাতে দিল সোলেমান। কালু বলল, নারে ভাই, এখন আর মায়া দয়া হয়না, কলিজা শক্ত হয়ে গেছে। সোলেমান বলল, কলিজা আরো শক্ত করতে হইব, আর সাবধানে সব কাজ করবি। কেউ জানো দেখে না ফেলে। কালু হেসে বলল, কি যে কন ভাই, আপনি কোন চিন্তা কইরেননা। সোলেমান বলল, এবার তাহলে যা। কালু প্যাট্রোল বোমার ব্যাগটা নিয়ে সাবধানে বেরিয়ে গেল সোলেমানের ঘর থেকে। লক্ষবস্তু রাস্তায় চলন্ত বা পার্ক করে রাখা গাড়ি। হরতাল অবরোধ না মেনে গাড়ি চালানো, হরতাল অবরোধ তোয়াক্কা না করা, এবার বুঝবে এর মজা কি! সোলেমান শান্তিতে বসে আছে চেয়ার পেতে। মেজাজ ফুরফুরে তার। কালুকে কাজ দিলে কাজের ভাল সুফল পাওয়া যায়। এর আগেও চারপাচ যায় গায় পেট্রল বোমা মেরেছে। মানুষ মেরেছে ১০ জন। যত মানুষ মরবে ততই ভাল, হরতাল মজবুত হবে আর দেশও অচল হয়ে পরবে। দেশ অচল না করে কি সরকার পতন করা যায়? সোলেমানের দুইটা ছেলে। বড় ছেলে সুমন থাকে বিদেশে। সুমনের রাজনিতী পছন্দ না। তাই সোলেমান ওকে বিদেশে পাঠিয়ে দিয়েছে। বিদেশে বসে টাকা কামাই করে আর বছরে একদুবার বাড়ি আসে। আসার সময় বিদেশ থেকে অনেক কিছু নিয়ে আসে। প্রতি মাশে মাসে টাকা পাঠায় যদিও সোলেমানের টাকা পয়সার অভাব নেই। আর ছোট ছেলে আমান ক্লাস টেনে পড়ে। পড়াশুনায় তেমন ভাল না। তাই টেনেটুনে আই এ পাশ করতে পারলেই একটা ব্যবসায় ঢুকিয়ে দেবার ইচ্ছা সোলেমানের। তারপর নিজে নিশ্চিন্তে রাজনিতীতে লেগে জাবে। রাজনিতী ছাড়া কি চলে নাকি বর্তমানে? রাজনিতী করলে আলাদা একটা কদর থাকে সমাজে, লোকে ভয় করে চলে, সালাম দেয়। আর রাজনিতী না করলে কেউ চেনেনা, সমাজে দাম থাকেনা, মানুষে মুল্যায়ন করেনা।
স্ত্রী জরিনা বেগম এসে ছোলেমানের পাশে বসল, ওগো কালু আসছিল কেন?
-ওই একটা কাজে আসছিল।
-কি কাজ আমার কাছে বল।
-তেমন কিছু না, নতুন ব্যবসা শুরু করবে তাই আমার কাছে পরামর্শ নিতে আসছিল।
-আমার মনে হয় তুমি কিজানো লুকানর চেষ্টা করছ।
সোলেমান এক গাল হেসে বলল, আরে না, তোমার কাছে লুকাতে যাব কেন?

জরিনা বেগম ঘর থেকে একটা বড় বাজারের ব্যাগ এনে সোলেমানের হাতে দিয়ে বলল, নাও বাজার করে আনো, দেশি মুরগী আনবে পাচ কেজি।
সোলেমান ভুরু কুচকে বলল, দেশি মুরগী আনব কেন?
জরিনা বেগম বলল, কারন সুমন খুব পছন্দ করে, তুমি জানোনা?
সোলেমান আবার হাসল, ওহো আমারতো তা একটু ও মনে ছিলনা যে আজকে সুমনের বিদেশ থেকে আসার কথা।

সোলেমান বাজার চলে গেল বাজার করতে। সুমন অনেকদিন পর বাড়ি ফিরছে, তাই ভাল ভাল বাজার করতে হবে। মাছ কিনতে হবে বড় বড়। সোলেমান প্রথমেই মুরগীর বাজার থেকে ৫ কেজি দেশি মুরগী কিনল। দুইটা মুরগীর ওজন পাচ কেজি। মুরগী দুইটা কো কো করছে। মুরগী ওয়ালা বলল, স্যার মুরগী সাইজ করে দেব? সোলেমান বলল, হ্যা, মেসিনে দিয়ে ভাল করে সাইজ করো, যাতে একটুও লোম না থাকে, আমার বড় ছেলে আসছে বিদেশ থেকে, তাই নিজেই বাজার করতে চলে আসলাম।

সোলেমান মাছের বাজারে আসল মাছ কিনতে। কত প্রকারের যে মাছ তার হিসাব নেই, কোনটা রেখে কোনটা কিনবে? ছোলেমান ৪ কেজি ওজনের একটা রুই মাছ কিনল। রুই মাছ সুমনের খুব পছন্দের।
বাজার করতে করতে সোলেমানের বড় ব্যাগটা একদম ফুলে ফুলে উঠেছে, আর কিছু রাখার যায়গা নেই।

জরীনা বেগম রান্নাবান্নায় মনযোগ দিলেন। রুই মাছ রান্না করল ঝোল ঝোল। দেশী মুরগীর মাংস করল ভুনা।
ছোট ছেলে আমান এসেছে স্কুল থেকে। জরিনা বেগম চেচিয়ে বললেন, কিরে আমান ভাত খাবিনা? আমানও চেচিয়ে বলল, ভাইয়া আসার পর একসাথে খাব।
জরিনা বেগম বলল, আরে তোর ভাইয়ার আস্তে সন্ধ্যা হয়ে যাবে।
আমান বলল, হোক ভাইয়া আসার পর খাব। বলেই রাস্তার দিকে দৌড়ে যায় আমান
সোলেমান বলল, কিরে আমান তুই কোথায় যাচ্ছিস?
আমান বলল, ভাইয়াকে এগিয়ে আনতে যাচ্ছি।
সোলেমান বলল, আরে পাগল, সুমনের আসতে সন্ধ্যা হয়ে যাবে।
আমান বলল, আমি সন্ধ্যার পরে ভাইয়ার সাথে একসাথে আসব। আমান রাস্তার পাশে একটা দোকানে বসে থাকে। নজর রাখে রাস্তার চলতি গাড়িগুলোর উপর।
সোলেমান বারান্দায় বসে অপেক্ষা করতে থাকে। জরিনা বেগম খাবার সামনে নিয়ে বসে আছে। সন্ধ্যা হয়ে যায় সুমনের আসার নাম নেই। আমান দৌড়াতে দৌড়াতে বাড়ি আসে, মা ভাইয়া এখনও আসছেনা কেন?
জরিনা বেগম বলল, হয়ত একটু পরেই এসে পরবে।

হঠাৎ সোলেমানের মোবাইলে রিং বেজে ওঠে।

-হ্যালো কে বলছেন?
-আমি ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিট থেকে বলছি। সুমন আপনার কি হয়?
-আমার ছেলে, কেন? গলা কেপে ওঠে সোলেমানের।
-আপনার ছেলে যে গাড়িতে আসছিল সেই গাড়িতে পেট্রল বোমা মারা হয়েছে। আপনার ছেলে গুরুতর আহত হয়েছে। যে পেট্রল বোমা মেরেছে তার নাম কালু। কালুকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে।

বার্ন ইউনিটে সুমন ঘুমিয়ে আছে। ওর সমস্ত গা পুরে গেছে। কোন কথা বলছেনা ও আর কোন দিন কথা বলবেও না।

সোলেমান হু হু করে কাদছে। পুরো হাসপাতাল তার কাছে অন্ধকার মনে হচ্ছে। জরিনা বেগম বেহুশ হয়ে পরে আছে। আর আমান সুমন কে ঘুম থেকে জাগানর চেষ্টা করছে, ভাইয়ের সাথে ভাত খাবে বলে।

0 Shares

৮টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ