ক’জন আছে যারা বলবে যে আমি বাইসাইকেল দেখিনি? সারা বিশ্বজুরে দেখা যায় এমনই এক জনপ্রিয় বাহনই হচ্ছে বাইসাইকেল আমার মনে হয় পৃথিবীর কোথাও এমন কাউকে পাওয়া যাবে না বাইসাইকেলের সাথে যার পরিচয় নেই
বাইসাইকেলের তিনটি ভাল দিক আছে
১. দামে সস্তা বলে সবাই এমনকি গ্রামের খুব কম উপার্জন করা লোকেরাও কিনতে পারে
২. সময় বাঁচিয়ে কম খরচে অপেক্ষাকৃতভাবে বেশি আয়েশে ও নিরাপদে ভ্রমন করা যায়
৩. বাইসাইকেল চালানো একটা ভাল ব্যায়ামও বটে যারা নিয়মিত সাইকেল চালায় তারা সুসাস্থ্যের অধিকারী হয়
বাংলাদেশেও বাইসাইকেল আছে এবং বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতই এখানেও সমান জনপ্রিয়
বাংলাদেশে সব বয়সের লোকেরাই সাইকেল চালায় বা চালাতে পারেচলাচলের সহজ বাহন বলে আজকাল অল্প বয়সী মেয়ে থেকে শুরু করে মধ্য বয়সী অনেক মহিলাদেরও সাইকেল চালাতে দেখা যায়
কিন্তু মাত্র ১০/১২ বছর আগেও মেয়েদের সাইকেল চালানো ছিল অনেকটাই অশোভনীয় এবং লজ্জ্বাজনক বিষয় বিশেষকরে গ্রামাঞ্চলে বিষযটি ছিল আরও জটিল
ওই সময় রুবিনার বয়স ছিল ১৩ বছর ও গ্রামের মেয়ে ওর বাবা একজন গরীব কৃষক
রুবিনা গরীব বাবা-মার ঘরে জন্ম গ্রহণ করেছিল, গরীবি হালে জীবন যাপনও করত বটে তবে ওর অন্তরে ছিল আকাশের মত উঁচু এবং দিগন্তের মত বিশাল আশা, আকাংখা, স্বপ্ন, সাধ
গ্রামটি অতি মাত্রায় গ্রাম্য হলেও ভাগ্যক্রমে সেখানে একটি প্রাইমারী স্কুল ও একটি হাইস্কুল ছিলআর রুবিনা এই উভয় বিদ্যাপিঠেই ভাল ছাত্রী হিসেবে পরিচিত ছিল
খুবই ভাল ফলাফল নিয়ে একদিন এস এস সি পাস করে রুবিনা আর যেন স্বর্গীয় আনন্দ নেমে আসে ওর বাবা-মা’র মন, প্রাণ ও অন্তর জুরে কিন্তু সেই আনন্দ ছিল মাত্র কয়েক দিনের জন্য কয়েক দিন পরই সে আনন্দ বাষ্প হয়ে উড়ে গেল, হারিয়ে গেল কোথাও
শহরে পাঠিয়ে রুবিনাকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করার মত আর্থিক সামর্থ ছিল না ওর বাবার তবে ওর বাবা চেয়েছিল রুবিনা অনেক অনেক বেশি পড়াশুনা করুক এজন্য চেষ্টাও করেছিল অনেক যদি কোন একটা উপায় করা যায়কিন্তু কোন উপায়ই করতে পারেনি
কোন উপায় করতে না পেরে অনেকটা হতাশায়, বেদনায় ও কষ্টে রুবিনার পড়াশুনা বন্ধ করে ওকে বিয়ে দেবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়
রুবিনাও ভেংগে পড়ে কিন্তু ওর উচ্চাকাংখা ও শিক্ষার প্রতি অদমনীয় আগ্রহ ওকে ভিন্নভাবে ভাবতে সাহায্য করে
স্কুলে এক সংগে পড়ত এমন এক বন্ধুর কাছ থেকে একটি কলেজ সম্পর্কে জানতে পারল ও কলেজটা দূরের কোন শহরে নয়, গ্রামাঞ্চলেই কিন্তু এমন এক দূরত্বে পায়ে হেঁটে প্রতিদিন যাওয়া-আশা সম্ভব নয় এটাও ছিল সত্যিকারের একটা সমস্যা
কিন্তু ও ওর স্বপ্ন ভরা অন্তর দৃষ্টি দিয়ে দেখতে পেল একটা বাইসাইকেল, শুধুমাত্র একটা বাইসাইকেলই সমস্যার উপযুক্ত সমাধান হতে পারে
রুবিনা বাবাকে অনুরোধ করল কোনভাবে হলেও যেন একটা বাইসাইকেল কিনে ওকে দেয়
কিছুই বল্ল না তবে বিষয়টি ভাবতে লাগল রুবিনার বাবা তারপর উত্তম বাবার মতই একদিন সত্যি সত্যিই একটা বাইসাইকেল কিনে দেয় রুবিনাকে
সাইকেলে চড়ে কলেজে যাওয়া আসা শুরু হলো রুবিনার প্রতিদিনই কলেজে যায় ও গ্রামের লোকেরা চেয়ে চেয়ে দেখে কানাকানি করে মন্দ কথা বলে এমনকি এও বলে- রুবিনা সমাজের কলংক, পরিবারের লজ্জ্বা
কিন্তু রুবিনা মনে নেয় না কিছুই ওদের কোন কিছুকে ওর চলার পথের বাধা হিসেবেও মনে করেনি কখনও
আমিও ওই একই গ্রামের মানুষ তবে অনেক আগে বলা যায় জীবনের শুরুতেই গ্রামটাকে ছেড়ে এসেছি
এখন শুধু গ্রামেরই নয় পুরো এলাকার অনেক উন্নয়ন হয়েছে
অনেক বছর পর অল্প সময়ের জন্য সেদিন গ্রামটিতে বেড়াতে গিয়েছিলাম ভাগ্যক্রমে পুরোনো বন্ধুদের অনেকের দেখাও পেলাম
একটা চা’এর দোকানে একত্র হয়ে আড্ডা দিচ্ছিলাম ইতিমধ্যে চা’এর অর্ডারও হয়ে গেছে সেই মূহুর্তে দোকানের অল্প বয়সী এক ছেলে এসে চা’এর কাপ হাতে ধরিয়ে দিয়ে গেল
আমি কাপটাকে ঠোঁটের কাছে তুলে ধরে প্রথম এক ঢোক চা পান করতে যাচ্ছিলাম ঠিক তখনই মোটর সাইকেলের শব্দ শুনতে পেলামআমি রাস্তার দিকে তাকালাম এবং দেখলাম এক ভদ্র মহিলা মোটর সাইকেল চালিয়ে দ্রুত ছুটে চলছেন তার পথে
আমি বন্ধুদের জিজ্ঞেস করলাম, “মহিলাটি কে?”
একজন উত্তর দিয়ে বল্ল, “এই সেই রুবিনা এখন রুবিনা ম্যাডাম”
আরেকজন জানাল, “অনেক বড় সরকারী অফিসার এখন পর্যন্ত গ্রামেই থাকে তবে তা শুধুমাত্র বাবা-মার জন্য”
আমার বামে যে বন্ধুটি বসে ছিল সে বল্ল,”বাবা-মাকে নিয়ে খুব ভালভাবে শহরেও থাকতে পারে ও হয়তো যে কোন সময় চলেও যাবে”
আমি ওদের কথাগলো মনযোগ দিয়ে শুনলাম
আমি রুবিনার মুখ কখনও দেখিনি কিন্তু অন্তদৃষ্টি দিয়ে রুবিনার ছবি দেখলাম আজকের রুবিনা টগবগে, উচ্ছল, সাহসী, কর্মঠ, শিক্ষিত, উচ্চাকাংখী এবং স্বপ্নময়ী
মনে মনে বল্লাম-এমন কারোর জন্যই তো পৃথিবীর সবকিছু অপেক্ষা করে আজকে ও মোটর সাইকেল নিয়ে ঘরে বেড়ায় কালকে মোটর যান নিয়ে ঘুরে বেড়াবে তারপর বিমানে চড়ে উড়ে বেড়াবে এক দেশ থেকে আরেক দেশে
৮টি মন্তব্য
আবু খায়ের আনিছ
ভাই, সোনেলার নিয়ম অনুযায়ী ২৪ ঘন্টার মধ্যে একটির বেশি পোষ্ট দেওয়া যায় না। দয়া করে বিষয়টি মাথায় রাখবেন।
ভালো লিখেছেন, শুভ কামনা।
কেসি মিলান
আমি সত্যিই দুঃখিত। ভবিষ্ৎতে এমনটি হবে না।
আবু খায়ের আনিছ
ধন্যবাদ ভাই, শুভ কামনা।
নীলাঞ্জনা নীলা
রুবিনার মতো মেয়েদেরকে স্যাল্যুট।
কিন্তু ভয় হয় দেশে যা চলছে, তাতে কখন কি হয়ে যায়!
মৌনতা রিতু
মনে পড়ছে, ব্লগের আপনাদের খসড়া ভাইয়াআপুর কথা আমার এক আদর্শ, আমরা একদিন গাড়িতে করে রংপুর যাচ্ছিলাম। পথে যেতে এক মেয়েকে দেখলাম মটরসাইকেলে করে পাশ কেটে যাচ্ছো। ভাবি সাথে সাথে বলল” হে বালিকা চিৎকার করো যতোদূর যতোদূর তোমার শব্দ যায়।
এখানে একটা মেয়ে আছে এমনি উচ্ছল এক প্রণবন্ত কিশোরী। খুব ভাললাগে মেয়েটাকে।
ভাললাগা একটা পোষ্ট।
মিষ্টি জিন
রুবিনার মত মত মেঁয়েদের এখন আমাদের খুব প্রয়োজন। তথাকথিত নিয়ম ভেংগে এগিয়ে চল।
আমরা তোমার সাথে আছি।
শুন্য শুন্যালয়
পৃথিবীর সব সাহসী, প্রতিবাদী মেয়েকে আমি ঈর্ষা করি। ছোটবেলায় প্রথম যখন এক কিশোরীকে সাইকেল চালিয়ে যেতে দেখতাম, আমি ঈর্ষা ভরে তাকিয়ে থাকতাম, অসম্ভব ভালো লাগতো।
স্যালুট সকল রুবিনা কে।
খুব ভালো একটি লেখা দিয়েছেন ভাইয়া। ভিন্নধর্মী এই লেখাগুলো বের হয়ে আসুক, তাই চাই। নিয়মিত হয়ে আমাদের সাথে থাকুন।
আবু জাকারিয়া
রুবিনার মত সাহসী মেয়েরাই কুসংস্কার থেকে মুক্ত করছে আমাদের সমাজকে। এখন আর সংকোচে দিন গোনার সময় নেই, সামনে এগিয়েই যেতে হবে সবাইকে। গল্প ভাল লাগল।