ক্রাইম রিপোর্টার শান্তা : পর্ব ৩ ও শেষ

আরজু মুক্তা ৪ জুন ২০২০, বৃহস্পতিবার, ০১:০৭:৩৪পূর্বাহ্ন গল্প ১৮ মন্তব্য

কালাম দরজা খোল।

না, আপা। নিজের জীবন তো নিজেই শেষ করছি। তারপরেও চাইনা, আপনার রিপোর্টের কারণে আমার বাচ্চা দুটার জীবন নষ্ট হোক।

কথা দিচ্ছি,  আমি তোমার ছবি ছাপাবো না।

না, আপা! আপনি নামও দিতে পারবেন না।

ঠিক আছে।

আপা, কীভাবে এই পেশায় আসলাম সেটার থেকে বড় কথা হলো, কখনো ছেলেমেয়েকে বাস স্ট্যান্ড, রেলস্টেশন, চায়ের দোকান এই জায়গা গুলোতে পাঠাবেন না। সব বাচ্চার মানসিকতা এক না! দূর্ঘটনা বলে কয়ে আসে না।

যখন আমি নাইনে পড়ি, আব্বা গৃহশিক্ষক খুঁজে না পেয়ে এক বন্ধুর বাড়িতে প্রাইভেট ঠিক করেছিলো। একটু দূর দেখে সাইকেলও কিনে দিলো। আমরা চার পাঁচ জন পড়ি। ফেরার পথে একটু আড্ডা দেই রেললাইনে। আমার এক বন্ধু ছিলো পাকা। সিগারেট ও খেতো। আজ অনুরোধ, কাল অনুরোধ। না- না- না- বলতে বলতে একটু টান দেই। সে কি ঝাঁজ। মাথা জ্বলে। নাক ছন ছন করে। আসার সময় পান মুখে দিয়ে আসি। আমার বড় বোনের আবার নাক সার্ফ। এটা ওটা বলে ওর থেকে দূরে থাকি। আস্তে আস্তে দেখি সিগারেট না খেলে চলেনা।

একদিন সিগারেটের মাঝে কি যে পাতার মতো গুড়া গুড়া দিলো। ঐটা টান দিয়ে দেখি চোখ মেলে না। কতক্ষণ যে ছিলাম ওখানে! পরে আমার বন্ধুরা বাসায় দিয়ে আসে। আব্বা আমার মাথা ন্যাড়া করে দেয়। কিন্তু ঐ সুখটানের নেশা আমায় ছাড়ে না। নিজে নিজে মাল ম্যাটেরিয়াল জোগাড় করে বানানো শিখি। কেমনে কেমনে বিশাল নেটওয়ার্ক হয়। মাঝি মাছ দেয়, আমি গাঁজা দেই। আস্তে আস্তে ব্যবসা শুরু করি। কতোদিন যে পুলিশের দৌড়ানি খাইছি!

পুলিশ হইছে আর এক। মনে করেন আমার কাছে কিছু নাই, তাও থানায় নিয়া গিয়া রিপোর্ট লিখবে এক কেজি হিরোইন সহ বাস স্ট্যান্ড থেকে গ্রেফতার। আপনার আত্মীয় স্বজন বড়লোক বা পরিচিত থাকলে রাতেই টাকা দিয়া খালাস পাবেন। আবার টাকা একটু কম হইলে সোজা থানা। সবারি লোভ ঐ টাকার দিকে।

আপা, বিশ্বাস করেন। এখন নিজে খাইলেও, আর ইচ্ছা করেনা : কারও সন্তান এটাতে জড়াক। আমার নিজেরও তো সন্তান আছে।

কালাম অঝরে কান্না শুরু করলো। সে কি কান্না!

বিবেক নিজে থেকে জাগ্রত না হলে,  অন্য কেউ পারবেনা আপনাকে বদলে দিতে।

আসুন নিজে বদলাই। দেশকে বদলে দেই।

ক্রাইম রিপোর্টার শান্তা: পর্ব- ১

0 Shares

১৮টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ