এই লেখাটি পড়ার আগে নীচের লিংকে ক্লিক করে প্রথম এবং দ্বিতীয় পর্ব পড়ুন।

প্রথম পর্ব

দ্বিতীয় পর্ব

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তাদের আশা আগামী তিন থেকে চার মাসের মধ্যে করোনার কার্যকরী ভ্যাকসিন আবিষ্কার হয়ে যাবে। এর পরেই শুরু হবে করোনা নিয়ে আসলে রাজনীতি এবং সেই বিশ্ব রাজনীতি সামলানোর ক্ষমতা কিন্তু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নেই। কিন্তু ঠিক কোন তথ্যের ভিত্তিতে তারা বিশ্ববাসীকে জানালো যে আগামী তিন-চার মাসের মধ্যে ভ্যাকসিন বাজারে আসবে? চলুন কিছু সমীকরণ মেলাই-

যদি তৃতীয় বিশ্বের কোন দেশ করোনার ভ্যাকসিন আবিষ্কার করে তবে গোটা বিশ্বেই একরকম রাজনীতি দেখা যাবে। ইউরোপ বা আমেরিকা যদি ভ্যাকসিন আবিষ্কার করে তখন আরেক পরিস্থিতি তৈরি হবে। আর যদি চীন ভ্যাকসিন নিয়ে আসে তখন হবে আরেক পরিস্থিতি। চীনের কথা কেন বলছি সে কথায় পরে আসছি।

চীন থেকে শুরু হওয়া করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে যে মহামারি শুরু হয়েছে সেটাকে তাদের দেশে তারা কীভাবে সামাল দিল সেটা চরম আশ্চর্যের বিষয়। আমেরিকাসহ আন্তর্জাতিক অনেক মহলের ধারণা চীন ইতিমধ্যেই ভ্যাকসিন আবিষ্কার করে ফেলেছে। সুযোগ খুঁজছে তা বাজারে আনার। অন্যদিকে ট্রাম্প প্রশাসন বলছে, কয়েকজন জার্মান গবেষক করোনা নিয়ে ভ্যাকসিন তৈরিতে অনেকটাই এগিয়েছে। তারা জার্মানিকে এক বিলিয়ন ডলারের প্রস্তাব পাঠিয়েছে যাতে আমেরিকার হাতে তাদের ভ্যাকসিন তুলে দেয়।

আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে কিউবা অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছে করোনা ভ্যাকসিন গবেষণায় এবং তারা ভ্যাকসিন আবিষ্কার করলে কোন পেটেন্টও দাবি করবে না। সেই ওষুধ হবে এই পৃথিবী সবার জন্য উন্মুক্ত। মনে রাখবেন, কিউবা একটি সমাজতান্ত্রিক দেশ আর চীনও কিন্তু একই সমাজতান্ত্রিকপন্থা অবলম্বন করে নিজেদের দেশকে পরিচালিত করে। এখানে উভয় দেশেই কমিউনিজমের প্রভাব লক্ষণীয়।

এখন করোনা ভ্যাকসিন নিয়ে চীনের প্রসঙ্গে কিছু বলি-

"Economic Times এবং India Times এর প্রতিবেদনে এসেছে- চীন ইতিমধ্যেই পাকিস্তানের স্বাস্থ্যশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কাছে করোনার ভ্যাকসিন যেটাকে তারা সফল বলে দাবি করছে তা দেবার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছে"!

আমি এ খবরে মোটেই আশ্চর্য হইনি। শেষ পর্যন্ত আসলে তাই ই হবে। কারন চীন এত তাড়াতাড়ি কি করে করোনাকে জয় করলো যেখানে বিশ্বের উন্নত দেশগুলো রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে? তার মানে হচ্ছে চীনের কাছে করোনার প্রতিষেধক অবশ্যই আছে, আপাতদৃষ্টিতে এমনটাই প্রতীয়মান হচ্ছে।

করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ তাদের চাকরি হারিয়ে বেকার হচ্ছে, খাদ্য সংকট থেকে শুরু করে ব্যবসায় মন্দা দেখা দিয়েছে। চীন করোনা প্রাদুর্ভাবের প্রথম থেকেই ইউরোপ আমেরিকার জায়ান্ট কোম্পানির বেশির ভাগ শেয়ার কিনে নিয়েছে। আসলে চীন আগাগোড়াই বিশ্ব পুঁজিবাজারে রাজত্ব করতে চেয়েছে। কিন্তু অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে আদতে হবে তার উল্টো।

চীন থেকে অনেক আন্তর্জাতিক কোম্পানি তাদের ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছে। এখন শুধু স্যামসাং আছে, তারাও আগামী এক বছরের মধ্যে চলে যাবার ঘোষণা দিয়েছে। চীনের কাছে করোনার প্রতিষেধক আছে এটি বিশ্বের অনেক দেশই বারবার বলে আসছে। দীর্ঘদিন থেকে করোনা মহামারির এই পরিস্থিতিতে চীন এখন উল্টো নিজেদের পাতা ফাঁদে নিজেরাই পড়বে। পাকিস্তানের কাছ চীন করোনা ভ্যাকসিন দিলে ন্যাটোভুক্ত দেশগুলো চীনকে ছেড়ে কথা বলবে না কিছুতেই।

চীন পুঁজিবাদী বিশ্বের কলকাঠি নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য এবং বিশ্ব বাজারে করোনা ভ্যাকসিন বিক্রির সর্বগ্রাসী তৃষ্ণার জন্য অপেক্ষা করছিলো এতদিন। সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাজ্যে সারা গিলবার্ট এর আবিষ্কৃত করোনা ভ্যাকসিনের হিউম্যান ট্রায়ালের কারণে তারা আর সময় ক্ষেপণের ঝুঁকি নেবে না। চীন করোনা ভ্যাকসিন মার্কেটে ছেড়ে দিচ্ছে এবং কমিউনিস্ট বিশ্বের গোপন নেটওয়ার্কের বাইরে প্রথম দেশ হিসেবে পাকিস্তান পেতে যাচ্ছে এই ভ্যাকসিন।

চীন তাদের তৈরি করোনা ভ্যাকসিন দিয়ে বিশ্ববাজার নিয়ন্ত্রণ রাখবে বলেই এতদিন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাথে ভালো সম্পর্ক রেখে এসেছে। সে কারণেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাথে চীনের এত দহরম মহরম। সেই প্রথম থেকেই করোনা নিয়ে চীন যেটাই বলেছে সংস্থাটির সভাপতির মুখ দিয়ে সেই কথাগুলিই এখন পর্যন্ত বেরিয়ে এসেছে। যার ফলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ইদানীংকালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চক্ষুশূল হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ভ্যাকসিনের জন্য বিশ্বের পুঁজিবাদী রাষ্ট্রগুলো নিজেদের মধ্যে রেষারেষি করলেও এশিয়ায় এর প্রভাব পড়বেনা। কারণ চীন বিশ্ববাজারে নিজের অবস্থান হারালেও এশিয়াকে অবশ্যই নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাইবে। সে ক্ষেত্রে ইউরোপ আমেরিকার অনেক দেশ আপাতত চীনের তৈরী ভ্যাকসিন না পেলেও এশিয়ার দেশগুলোতে তারা নিজেদের অবস্থান ধরে রাখার জন্য চীন নিজেদের গরজেই ভ্যাকসিন দিয়ে দেবে। একসময় সকলেই এই ভ্যাকসিন পাবে তবে চীনের অর্থনীতিতে একটি ধ্বস নামতে পারে।

কিন্তু তাহলে বাংলাদেশের কি হবে? কূটনৈতিক পর্যায়ের এই জায়গাতে বাংলাদেশ সফল অবস্থানে আছে। মনে রাখবেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একজন দক্ষ কূটনীতিক এবং বিশ্বের ক্ষমতাধর রাষ্ট্রপ্রধানদের একজন। পাকিস্তান যদি চীনের কাছ থেকে ভ্যাকসিন পায় তাহলে বাংলাদেশও পাবে নিশ্চিত। চীনের কাছে এই ভ্যাকসিনের ক্রয়ক্ষমতা বাংলাদেশের আছে। আশা করছি হয়তো আগামী জুন নাগাদ আমরা তা হাতে পেয়ে যাব। মাঝখানে পুঁজিবাদী দেশিগুলোর রোষানলে পড়ে চীন তাদেরকেও ভ্যাকসিন দিতে বাধ্য হবে এবং সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র হয়েও রাশিয়ার সেখানে তেমন কিছু আর করার থাকবেনা।

তাই নিয়ম মেনে আরো কিছুদিন ঘরেই থাকুন। করোনার ভ্যাকসিন তৈরিতে গবেষকরা যাতে সফল হন এবং গোটা বিশ্বের মানুষ সমানভাবে উপকৃত হয় এটাই বিশ্ব মানবতার অন্যতম নিদর্শন হতে পারে। করোনা ভ্যাকসিন নিয়ে কোন দেশের রাজনীতি নয় বরং মানব সেবায় উন্মুক্ত করার মধ্যেই নিহিত রয়েছে বিশ্বশান্তি এবং সমৃদ্ধি। (সমাপ্ত)

[তথ্যসূত্র এবং ছবি অনলাইন মাধ্যম থেকে নেয়া]

0 Shares

৩৪টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ