এই শতাব্দীর সবচেয়ে ভয়াবহ মারণ ভাইরাস হিসেবে করোনাভাইরাসের কথা সবাই একবাক্যেই স্বীকার করছেন। পৃথিবীব্যাপী আক্রান্তের সংখ্যা ছাব্বিশ লাখের উপরে এবং মৃতের সংখ্যা এক লক্ষ নব্বই হাজার ছাড়িয়েছে এবং সুস্থ হয়েছেন সাত লক্ষ ত্রিশ হাজার আটশত পঞ্চান্ন জন (২৪/০৪/২০২০ তারিখ পর্যন্ত)। বহুরূপী করোনাভাইরাস এমন একটি মারণ ভাইরাস যার কোন কার্যকরী প্রতিষেধক বা টীকা অদ্যাবধি আবিষ্কৃত হয়নি। বিশ্বের নামকরা সব বিজ্ঞানী, গবেষক, প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তিগত পর্যায়ে গবেষনা করছেন কি করে এই ভাইরাস থেকে মানুষকে মুক্ত করা যায়।
করোনাভাইরাস নিয়ে বিশ্বের সব দেশের মানুষ যখন মৃত্যু আতঙ্কে দিন অতিবাহিত করছে তখন কিছু মানুষের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফসল ভয়াবহ এই ভাইরাস থেকে মুক্তির জন্য আবিষ্কৃত ভ্যাকসিনের খবরে মনে আশার সঞ্চার হচ্ছে। হয়তো অচিরেই আমরা করোনাকে জয় করবো। চলুন প্রথমেই প্রাণঘাতী করোনার ভ্যাকসিন আবিষ্কার নিয়ে কিছু আশার কথা জেনে নেই।
কিছুদিন আগেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকদের দ্বারা আবিষ্কৃত করোনা ভ্যাকসিন RNA- 12379 পর্যায়ক্রমে ৪৫ জন স্বেচ্ছাসেবক মানুষের দেহে পরীক্ষামূলকভাবে প্রয়োগ করা হয়েছে। যদি তারা সফলতা অর্জন করে তাহলে আমাদের অপেক্ষা করতে হবে ১২ থেকে ১৮ মাস ।
করোনাভাইরাস মোকাবেলায় গত ৭ এপ্রিল জাপান সরকার সরকার দেশটির মোট জিডিপির ২০ শতাংশ (১ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার) আর্থিক প্রণোদনা দেয়ার ঘোষণা দেয়। এই বরাদ্ধকৃত অর্থের অন্যতম একটি অংশ ব্যয় হবে ইনফ্লুয়েঞ্জার জন্য কার্যকরী অ্যান্টিভাইরাল ঔষধ ‘অ্যাভিগান’ তৈরিতে। প্রায় ২০ লাখ অ্যাভিগান ট্যাবলেট উৎপাদনের ঘোষণা সেদিনই দেয়া হয়।
ওইদিন জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, যেসব দেশ কভিড-১৯ আক্রান্ত সেই দেশে অ্যাভিগান বিনামূল্য সরকার দেবে। এরই ধারাবাহিকতায় জাপান সরকার সিদ্ধান্ত নেন যে অন্তত ২০ টি দেশে প্রাথমিকভাবে ফেইজ-৩ ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের অংশ হিসেবে অ্যাভিগান সরবরাহ করা হবে।
গত ২৩ এপ্রিল ২০২০ তারিখে 'নভেল করোনাভাইরাস'- এর টীকা হিসেবে ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপিকা বিজ্ঞানী সারা গিলবার্টের আবিষ্কৃত "ChAdOx1" এবং "ChAdOx2" নামক করোনা ভ্যাকসিন সফলভাবে মানব শরীরে প্রয়োগ করা হয়েছে। ১ বছর থেকে ৯০ বছর বয়সের মধ্যে সব বয়সী ৫০০ জন 'করোনা' আক্রান্ত রোগীদের শরীরে প্রয়োগ করা হবে এই ভ্যাকসিন। পুরো বিশ্বের মানুষ প্রার্থনা করছে এই "ChAdOx1" এবং "ChAdOx2" ভ্যাকসিন যেন সফল হয় ।
একদিকে করোনার সংক্রমণ প্রতিদিন যেমন বেড়েই চলেছে তেমনি করোনা ভ্যাকসিন আবিষ্কার করতে পৃথিবীব্যাপী অন্যান্য দেশের গবেষকরা দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। এর সাথে অন্য একটি শঙ্কাও উঠে এসেছে আন্তর্জাতিক গবেষক মহলে। সেটি হলো করোনার আবিষ্কৃত ভ্যাকসিন নিয়ে পুঁজিবাদী দেশগুলোর রাজনৈতিক টানাপোড়ন। করোনা ভ্যাকসিন নিয়ে বিশ্বব্যাপী যে রাজনীতি শুরু হবে তার মোকাবেলা কিভাবে হবে?
বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা এবং ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরামের যৌথ ভার্চুয়াল সভায় বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্ব নেতাদের আহবান জানিয়ে বলেছেন- করোনাভাইরাস মোকাবেলায় বিশ্বের সব দেশকে একযোগে কাজ করতে হবে। কিন্তু করোনাভাইরাসের কার্যকর ভ্যাকসিন আবিষ্কার হলে বাস্তবে বিশ্বের পুঁজিবাদী রাষ্ট্রগুলি কি আদৌ একসাথে একজোট হয়ে এমনটা করবে?
চলবে......
(তথ্যসূত্র এবং ছবি অনলাইন মাধ্যম থেকে নেয়া)
২৯টি মন্তব্য
মাহবুবুল আলম
তৌহিদ ভাই! লেখায় অনেক আশার কথা শুনলাম।
এ আশায় বুকবেঁধে আছি কবে হবে এর বিপুল উদযাপন।
ভাল থাকবেন।
তৌহিদ
আমরা সবাই আশায় আছি যাতে সফল হয় তারা। ভালো থাকবেন ভাই।
ছাইরাছ হেলাল
ইবোলা ও সার্স ভাইরাসের ভ্যাক্সিনের কিন্তু প্রয়োগ করার জায়গা নেই, যেহেতু এর প্রাদুর্ভাব শেষ হয়ে গেছে।
করোনার ভ্যাকসিন আবিস্কার হয়ে গেলে তখন এই রোগটি কেমন ও কী অবস্থায় থাকবে তা কিন্তু জানি না।
তাই বানিজ্য কেমন করে কী হবে এখুনি বলা যাচ্ছে না।
লেখার জন্য ধন্যবাদ।
তৌহিদ
সার্স, ইবোলা নেই নতুন এসেছে করোনা। আপনার কথায় যুক্তি আছে। শুধুমাত্র এশিয়াতেই শিশুতের যে ৬ টি টিকা দেয়া হয় সেগুলোর সংকট তৈরি হয়েছে ইতিমধ্যে। করোনার বড় সমস্যা হলো এটি এখন পর্যন্ত ৩০ হাজারের বেশিবার তার রুপ বদল করেছে। সারা যে ভ্যাকসিন আবিষ্কার করেছেন সেটি ত্রিশ হাজার করোনাভাইরাসের তত্ত্ব উপাত্ত নিয়ে তার ভিত্তিতে বানানো হয়েছে। এরপরে কি হবে এখনই বলা যাচ্ছেনা।
পড়ার জন্য ধন্যবাদ ভাই।
সঞ্জয় মালাকার
বিশ্বের পুঁজিবাদী রাষ্ট্রগুলি কি আদৌ একসাথে একজোট হয়ে এমনটা করবে?
দাদা, লেখায় অনেক আশার কথা শুনলাম।
এই আশার আনন্দে বুকবেঁধে আছি কবে হবে আনন্দের উদযাপন।
ভালো থাকবেন সবসময় শুভ কামনা।
তৌহিদ
আশা নিয়েইতো বেঁচে আছি দাদা। উপরওয়ালা সহায় হোন সকলের।
সঞ্জয় মালাকার
ঠিক বলেছেন দাদা উপরওয়ালা সহায়,
ভালো থাকবেন দাদা শুভ কামনা।
প্রদীপ চক্রবর্তী
আমরা বেঁচে থাকার প্রতিষেধক চাই।
সকল রাষ্ট্র একযুগে মিলে এ মহামারি করোনার ভ্যাকসিন আবিষ্কার করুক।
এ মহামারি কাটিয়ে পৃথিবী সগর্ভে ফিরে আসুক।
তৌহিদ
এটাই প্রত্যেকের কামনা ভাই। একদিন আমরা করোনাকে জয় করবো নিশ্চয়।
আরজু মুক্তা
বিশ্ব মহামারী কাটিয়ে উঠুক।
তৌহিদ
ইনশাআল্লাহ তাই যেন হয় আপু।
ইঞ্জা
পুঁজিবাদী বিশ্ব তো সুযোগ নেবেই তা ধরে রাখতে পারেন, আর কেউ করুক আর না করুক, ট্রাম্প করবে তা শতভাগ নিশ্চিত ধরে রাখতে পারেন।
গুরুত্ববহ পোস্টটি সময় উপযোগী, ধন্যবাদ ভাই।
তৌহিদ
যুক্তরাষ্ট্র চালাক চিজ দাদা, ব্যাটারা ঝোপ বুঝে কোপ মারতে ওস্তাদ। পড়ার জন্য ধন্যবাদ ভাই।
ইঞ্জা
ট্রাম্প তো আরও এক কাঠি বাড়া।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
আশার কথা শুনলাম, জানলাম আপনার লেখনীতে। আমরা অবশ্যই সফল হবো। মানুষ যতই বিপদগ্রস্ত হবে সেখানে রাজনীতি প্রবলভাবে জোট বাঁধবে। ধন্যবাদ আপনার তথ্য ভান্ডার শেয়ার করার জন্য । শুভ কামনা রইলো
তৌহিদ
আশা নিয়েই আছি সবাই। আশাকরি করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন যেন রাজনীতির শিকার না হয়। আমি শুধু নেট থেকে পাওয়া তথ্যই শেয়ার করলাম সবার সাথে।
ভালো থাকবেন আপু।
ছাইরাছ হেলাল
এই মাত্র জানলাম, যদি অক্সফোর্ডের সারা গিলবার্ডের ভ্যাকসিন কার্যকারিতা প্রমানিত হয়
তাহলে বিনা লাভে তা বাজারজাত করা হবে ঘোষনা এসেছে।
আমাদের অপেক্ষা চালু থাকল।
তৌহিদ
আশার কথা শোনালেন ভাই। আপনার এই মন্তব্য দেখে নেটে সার্চ দিয়ে যেটা বুঝলাম তাদের সাথে চীন, ইন্ডিয়ারও প্রাইভেট কিছু কোম্পানি ইনভেস্ট করছে ভ্যাকসিন তৈরিতে। তবে তা শুধুমাত্র যুক্তরাজ্যের জন্যই কিনা সেখানে লেখা নেই। অন্যান্য দেশ কিভাবে পাবে সেটাও উল্লেখ নেই।
লাভ ছাড়াই বাজারজাত করবে তারা মানে নিজের দেশে তা করবে। তাদের যত সংখ্যক আক্রান্ত হয়েছে আর সামনে কি হবে বলা যাচ্ছেনা।
আজকের নতুন খবর হলো ম্যালেরিয়া, এবং এভিগান প্রয়োগে করোনার রোগীরা আরো জটিল অবস্থার শিকার হচ্ছেন। নতুন উপসর্গ হলো রক্ত জমাট বেঁধে যাচ্ছে। সারা গিলবার্ট এই উপসর্গ নিয়ে কাজ করেননি কিন্তু।
তবুও আশায় আছি। দেখা যাক কি হয়। আল্লাহ সহায় ভাই।
সুরাইয়া পারভীন
অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পোস্ট। আশার বাণী বটে, কিন্তু ততদিনে এই মহামারী কত গুলো প্রাণ নেবে কে জানে
আমরা শুধু সুসময়ের অপেক্ষা করতে পারি।
অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া। চমৎকার একটি পোস্টের জন্য
তৌহিদ
সময়ের অপেক্ষা ছাড়া আর কিছুই করার নেই এখন। ভ্যাকসিন আসতে আসতে কত প্রাণ ঝরে যাবে এটা ভেবেই শঙ্কিত আসলে সবাই।
ভালো থাকবেন আপু।
ফয়জুল মহী
অধীর আগ্রহ নিয়ে মানুষ অপেক্ষা করছে শুভ খবর শুনতে ।
তৌহিদ
শুভ খবরের অপেক্ষায় আছি সবাই ভাই। ভালো থাকবেন।
কামাল উদ্দিন
দুষ্ট লোকের কথা যদি সত্য হয় তাহলে চীনের কাছে এর প্রতিশেধক আছে। আর যদি থেকেই থাকে সেটা দিয়া ওরা পৃথিবী দখল করার চেষ্টা করাটা অমুলক কিছুই নয়। আপনার পোষ্টের পরবর্তি অংশ পড়ার অপেক্ষায় আছি।
তৌহিদ
শেষপর্বে এর ব্যখ্যা আসবে ভাই। সাথে থাকুন।
কামাল উদ্দিন
ধন্যবাদ
জিসান শা ইকরাম
একমত আপনার সাথে।
ভ্যাকসিন হতে পারে প্রবল ক্ষতাবান অস্র।
পোস্ট ভালো হয়েছে খুব
শুভ কামনা।
তৌহিদ
ভ্যাকসিন নিয়ে ইতিমধ্যেইই টানাহ্যাঁচড়া শুরু হয়েছে। পড়ার জন্য ধন্যবাদ ভাই। ভালো থাকবেন।
হালিম নজরুল
আমিও আশাবাদী ভাই।
তৌহিদ
অবশ্যই শুভ লক্ষণ। আশা নিয়েই বেঁচে আছি কিন্তু।