ঐশ্বরিক প্রেম

সাবিনা ইয়াসমিন ১৩ নভেম্বর ২০১৮, মঙ্গলবার, ০৯:৫২:২১অপরাহ্ন গল্প ২২ মন্তব্য

ছেলেটি তরুন।স্বাস্থ্যবান।উজ্বল শ্যমলা গায়ের রঙ,,লম্বা।মাথা ভর্তি চুলে কপালটা ঢেকে থাকে।কালো চোখের দৃষ্টিতে তিব্রতা বেশ।হাসিতে যাদু আছে।তবে যাদুটা সব সময় প্রকাশ করেনা।সারাক্ষন অন্যমনষ্ক থাকে।গ্রামীন পরিবেশে বড়ো হয়ে উঠেছে।প্রকৃতিকে ভালোবাসে।বন্ধুরা যখন প্রেম আরাধনায় মত্ত হয়ে নানা উপায়ে,উপঢৌকনে নিজ-নিজ আরাধ্যদেবীর কৃপা প্রার্থনায় মগ্ন,তখন ছেলেটি ভাবে অন্য কিছু।তার ভাবনায় চলে আসে জীবনানন্দের বনলতা,রবী ঠাকুরের লাবন্য।প্রেম যদি করতেই হয় তবে এমন মেয়েদের সাথে করবো।ছেলেটি আরো ভাবে,,প্রেমিকা যেমন হোক,প্রেম হবে ঐশ্বরিক।তা না হলে প্রেম মূল্যহীন।
গ্রামের সীমাবদ্ধ পাঠ চুকিয়ে একদিন প্রবেশ করে দেশের প্রানকেন্দ্র রাজধানী ঢাকায়।।একটি নামকড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে খুব সহজেই স্থান করে নেয় নিজের মেধা দিয়ে।শুরু হয় নতুন ভাবে নতুন দিনের পথচলা।ছেলেটির নাম "তানভীর শাহরিয়া",,ডাকে সবাই তানভী।

মেয়েটি দুরন্ত,প্রানবন্ত,একটু লাজুক আর বেশ মেজাজী।রাগ তার অলংকার।মেয়েরা সব সময়েই সুন্দর।তাই এই মেয়েটির সৌন্দর্যের বর্ননা আলাদা করে করলাম না।তার ভালো লাগার তালিকাটা অনেক বড়ো।বই,বই,বই,বই,আর কবিতা।তার জগৎটা কবিতায় মোড়ানো।বান্ধবীরা যখন নিজেদের নানারকম প্রেমিক বন্ধুদের নিয়ে গল্পের ঝুড়ি খোলে তখন মেয়েটি অবাক হয়ে ভাবে,,প্রেম কি আসলেই এমন !তাহলে কবিরা এতো এতো কবিতা কাদের নিয়ে লিখেছেন !?মনে মনে সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করে,,,যদি প্রেম দাও তবে ঐশ্বরিক প্রেম দিও।যে প্রেমে পবিত্রতা থাকবে।আমায় দিয়ে এসব ন্যাঁকা ন্যাঁকা প্রেম হবে না।
একদিন মেয়েটি উচ্চ শিক্ষা লাভের আশায় ভর্তি হয়ে যায় শহরের স্বনামে প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ে।শুরু করে নতুন ভাবে নবজীবন।মেয়েটির নাম তানহা আক্তার কথা।কথা নামেই পরিচিত।

আজকের মতো সবগুলো ক্লাস শেষ।বাড়ি যাবার তাড়া আছে।বিশেষ কারন নেই ,তারাতারি বাড়ি ফিরতে ভাল লাগে,,,তাই।তাড়াহুড়োর ফল সব সময়ে ভালো হয় না।তানভী আর কথার মাঝে মুখোমুখি সংঘর্ষটা হয়েই গেলো।যার-যার ব্যাগ তুলে নেয়ার পর যে-যার পথে চলে গেলো।ফিরতি পথে দুজনের মনে একই ভাবনা,,,ছিঃ সরি বলার শিক্ষাটাও পায়নি,আবার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এসেছে,,,।

দিন মাস গড়িয়ে বছর পার হয়।ততোদিনে পদ্মা,মেঘনার পানি আরেকটু কমেছে।তানভী আর কথার মাঝে এখনো বন্ধুত্ব গড়ে উঠেনি।দুজন দুজনকে নিয়ে কেবল ভেবেই যায়।

তানভী : মেয়েটি বেশ সুন্দর।মনটাও খুব ভালো।স্পষ্টবাদী।কোনো অহংকার নেই।চমৎকার গুছিয়ে কথা বলে।কথা কে আমার অনেক ভালো লাগে।একদিন ওকে না দেখলে পাগল হয়ে যাই।আমি কি ওর প্রেমে পরে গেছি !!মনের কথাগুলো কি জানাবো ? যদি ফিরিয়ে দেয় !!ফিরিয়ে দিলে দিবে,,তবুও আমার মনের অনুভূতি গুলো ওকে জানাবো।এভাবে আর বাঁচতে পারবো না।

কথা : ছেলেটার নামটা যেনো কেমন ,,তানভী।আর বেশ রুক্ষ।সব সময় মনে হয় ধ্যান করতে থাকে।কোনো মেয়েদের পাত্তা দিতে চায় না।নাহ ! খারাপ না।মনে দয়া মায়া আছে।বন্ধু -অ-বন্ধু সবার বিপদেই এগিয়ে যায়।যে-কোনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে নির্ভয়ে।ওর মুখের হাসি আমায় খুব টানে ।এতো সুন্দর করে ছেলেটি হাসে কি-করে।আচ্ছা,,আমি কি ছেলেটার প্রেমে পরে গেছি !!!

এক সপ্তাহ পর।বিকেল বেলা।তানভী আর কথা বসে আছে সবুজ ঘাসে ভরা মাঠে।কেউ কিছু বলছে না।সাতদিন আগে তানভী কথাকে যা বলার বলেছে।কথা আজ উত্তর দিবে।ধিরে ধিরে সন্ধ্যা নেমে আসে।বিদায় নেবার পালা।কথার মুখে উচ্চারিত হয় মির্জা গালিবের কবিতার দুটি লাইন,,,,

**ইশ্ক পর জোর নেহি হ্যায় উহ্ আতিশ গালিব,
কে লাগায়ে না লগে,,বুজায়ে না বুজে**

অর্থাৎ,,ভালোবাসায় জোর খাটে না এটা এমনই আগুন,
লাগাতে চাইলে লাগবে না আর নেভাতে গেলে নেভে না।

তানভী কিছুই বললো না।চুপচাপ দাড়িঁয়ে কথার চলে যাওয়া দেখছে।দুজনের মনেই ভাবনার ঝড় বইছে।

কথা :তানভী কে আমার মনের কথা গুলো খুব বলতে
চেয়েছি ,,কিনতু কেন যে এই কবিতাটা মাথায় এলো !!
কবিতায় কি বলতে চেয়েছি সে কি বুঝেছে ?উত্তরে কিছুই বললো না।মনে হয় বোঝেনি।হুহ !!ব্যাটা মূর্খ ,কবিতা বোঝে না ,,আমায় বুঝবে কি-করে !!??

তানভী : আজ এক সপ্তাহ পর কথা আমাকে তার উত্তর দিলো।এটা কি তার সাড়া ছিলো না অপরাগতা প্রকাশ ?
যাইহোক কাল জেনে নেবো।ততোক্ষনে আকাশে চাঁদ দেখা দিয়েছে।তানভী আপন মনে বলে উঠে,,

***সও বার বন্দই ইশ্ক সে আজাদ হাম হুয়ে
ফের কিয়া কঁরে কে দিল হি উদু হ্যায় ফিরাগ কা **

অর্থাৎ,,শতবার আমি প্রেমের শৃংখল থেকে মুক্তি পেয়েছি,,কিনতু কি করবো
আমার হৃদয় যে মুক্তির প্রতিকূলে **(মির্জা গালিব)

কথা আমার স্বপ্নমানবী ,,আজ থেকে কবিতা নয় ,,শুধু তোমাকেই বুঝতে চাই।

**সমাপ্ত**

0 Shares

২২টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ