শিরোনাম:এখনো হুমায়ূন আহমেদ আমাদের কাছে কতটা প্রাসঙ্গিক?

কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ এখনও বাংলাদেশে খুবই প্রাসঙ্গিক। তাঁর রচনাগুলি বাংলাদেশের জনজীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। তাঁর বইগুলি এখনও ব্যাপকভাবে পঠিত এবং সমাদৃত হয়।

হুমায়ূন আহমেদের রচনাগুলির প্রাসঙ্গিকতার বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে। প্রথমত, তাঁর রচনাগুলি বাংলাদেশের মানুষের জীবন এবং সংস্কৃতিকে চিত্রিত করে। তাঁর বইগুলিতে আমরা বাংলাদেশের গ্রামীণ জীবন, শহর জীবন এবং মানুষের আবেগ ও অনুভূতিগুলি দেখতে পাই। দ্বিতীয়ত, তাঁর রচনাগুলি হাস্যরস এবং জীবনের প্রতি একটি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির জন্য পরিচিত। তাঁর বইগুলি আমাদেরকে হাসায় এবং আমাদেরকে জীবনের প্রতি আরও ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নিতে সাহায্য করে। তৃতীয়ত, তাঁর রচনাগুলি শিক্ষামূলক এবং অনুপ্রেরণামূলক। তাঁর বইগুলি আমাদেরকে জীবন সম্পর্কে নতুন জিনিস শিখতে এবং আমাদের স্বপ্নগুলিকে অনুসরণ করতে সাহায্য করে।

হুমায়ূন আহমেদের রচনাগুলির প্রাসঙ্গিকতা শুধুমাত্র বাংলাদেশেই নয়, সারা বিশ্বে। তাঁর রচনাগুলি বিশ্বব্যাপী অনুবাদ এবং পঠিত হয়।হুমায়ূন আহমেদ বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় ও প্রভাবশালী সাহিত্যিক। তিনি তার বহুমুখী সৃষ্টিশীলতার জন্য সমধিক পরিচিত। তিনি উপন্যাস, ছোটগল্প, নাটক, চলচ্চিত্র, গান, প্রবন্ধ, কলাম ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের সাহিত্য রচনা করেছেন। তার লেখাগুলো সাধারণ মানুষের জীবন-যাপন, প্রেম, বন্ধুত্ব, পরিবার, সমাজ, রাজনীতি ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়কে তুলে ধরে।

হুমায়ূন আহমেদের সাহিত্যের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল তার সরল ও প্রাঞ্জল ভাষা। তিনি সাধারণ মানুষের ভাষায় কথা বলেন, ফলে তার লেখাগুলো সকলের কাছে সহজবোধ্য। তিনি তার চরিত্রগুলোকেও সাধারণ মানুষের মতো করে উপস্থাপন করেন। ফলে তার পাঠকরা সহজেই তার চরিত্রগুলোর সাথে নিজেদেরকে মিলিয়ে নিতে পারে।

হুমায়ূন আহমেদের সাহিত্য বাংলাদেশের সাহিত্যকে নতুন মাত্রা এনে দিয়েছে। তিনি বাংলা সাহিত্যে আধুনিকতা ও বৈচিত্র্য নিয়ে এসেছেন। তার লেখাগুলো বাংলাদেশের মানুষের জীবন-যাপনের বাস্তব চিত্র তুলে ধরে। ফলে তার লেখাগুলো পাঠকদের মনে গভীর প্রভাব ফেলে।

হুমায়ূন আহমেদের কিছু জনপ্রিয় রচনাগুলির মধ্যে রয়েছে:

গল্প: অক্টোবর, নন্দিত নরকে, শঙ্খনীল কারাগার, ইত্যাদি।

উপন্যাস: ফুলের গল্প, শ্রাবণ মেঘের দিন, চন্দ্রকথা, ইত্যাদি।

ছোটগল্প: হিমু, মিসির আলী, হিমুর হাতে কাঁচের চুড়ি, ইত্যাদি।

হুমায়ূন আহমেদের রচনাগুলি বাংলাদেশের সাহিত্য এবং সংস্কৃতিতে একটি অমূল্য অবদান। তাঁর রচনাগুলি বাংলাদেশের মানুষের জীবনকে সমৃদ্ধ করেছে এবং ভবিষ্যতেও তা করে যাবে।

হুমায়ূন আহমেদ তার অসংখ্য বহুমাত্রিক সৃষ্টির জন্য নানা পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। তার উল্লেখযোগ্য পুরস্কারগুলোর মধ্যে রয়েছে:

বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৮১)

লেখক শিবির পুরস্কার (১৯৭৩)

বাংলাদেশ শিশু একাডেমি পুরস্কার (১৯৭৯)

একুশে পদক (১৯৯৪)

স্বাধীনতা পদক (২০০৯)

হুমায়ূন আহমেদ ২০১২ সালের ১৯ জুলাই মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যুতে বাংলাদেশের সাহিত্য ও সংস্কৃতি জগতে এক অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে।

হুমায়ূন আহমেদের সাহিত্য বাংলাদেশের সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছে। তার লেখাগুলো বাংলাদেশের মানুষের জীবন-যাপন ও সংস্কৃতির এক অমূল্য দলিল। তিনি বাংলাদেশের একজন সত্যিকারের সাহিত্যিক ও সংস্কৃতি ব্যক্তি হিসেবে আমাদের মাঝে থেকে যাবেন সারা জীবন। হুমায়ূন আহমেদের লেখা বহু উক্তির মধ্যে যে উক্তিটা মানুষের মধ্যে দাগ কেটে যায়

জীবন মানে শুধুমাত্র বেঁচে থাকা নয়, জীবন মানে বেঁচে থেকে কিছু একটা করা

হুমায়ূন আহমেদের লেখার মাধ্যমে আমরা জীবনের অনেক মূল্যবান বার্তা পেয়েছি। তার লেখায় জীবনের বাস্তবতা, ভালোবাসা, বন্ধুত্ব, এবং মানবতার প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ পেয়েছে। হুমায়ূন আহমেদের লেখার মাধ্যমে আমরা অনেক কিছু শিখেছি এবং আমাদের জীবনকে আরও সুন্দর করে তুলতে সাহায্য পেয়েছি।তাই আমি মনে করি হুমায়ূন আহমেদ আমাদের কাছে এখনো এক কিংবদন্তি।

শিক্ষার্থী সৌরভ হালদার ব্যবস্থাপনা বিভাগ সরকারি ব্রজলাল কলেজে খুলনা

skhsouravhalder@gmail.com

0 Shares

একটি মন্তব্য

  • হালিমা আক্তার

    হুমায়ুন আহমেদ অবশ্যই একজন বড় মাপের লেখক। শুধু লেখক বললে ভুল হবে। তিনি একজন নাট্যকার ও পরিচালক। সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় তাঁর বিচরণ। তিনি তরুণদের মধ্যে বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলেছেন। হুমায়ুন আহমেদ এর কাছ থেকে নন্দিত নরকে ও শঙ্খনীল কারাগার এর মতো আর গল্প কেন পাঠক পেল না। বিনম্র শ্রদ্ধা রইলো লেখকের প্রতি।

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ