একটা পুরো রাত
যশোর ষ্টেশন।মামা একটা ফার্স্ট ক্লাস চেয়ার। সীমান্ত এক্সপ্রেস।
কিছুক্ষণ পরেই ট্রেন এসে লাগবে ষ্টেশনে, খুলনা থেকে ছেড়ে আসা ট্রেন লেট হয় প্রায়ই। স্টেশনের বুকস্টল থেকে কেনা রহস্য পত্রিকা হাতে কর্নারের চায়ের দোকান থেকে চায়ে চুমুক দিয়ে সিগারেট ধরাতেই ঢং ঢং ঢং। ট্রেন আসছে। একদম ইন টাইম। ক্যান্টনমেন্ট ষ্টেশন আসতেই আর নরেনা, কি হচ্ছে? ইউনিট মুভ করতেছে আর্মির। ব্যাপার না, রহস্য পত্রিকায় ডুব। মাঝে মাঝে, মামা একটা চা দিয়ে যেও, আর একটু পর পর দরজার সামনে দাড়িয়ে সিগারেট।
ঈশ্বরদী ষ্টেশন। আব্বু ট্রেন আসতে এত দেড়ি করতেছে কেন? এই রেলওয়ে না!!! উফ, ভাল্লাগেনা। আবার কত গুলা রজনীগন্ধা আইনা রাখছে, গন্ধে মাথা ধইরা যায়।
সীমান্ত এক্সপ্রেস।
হ্যালো রাসেল, মাম্মা সেই যে কর্পোরেট সিম দেওনের কথা, দিছে?
হ, দিছে।
আমারটা রাখছস?
হ, নাম্বার লিখা নে ০১৭১৩****** আমি সামনের শনিবারে যে ট্রান্সপোর্ট বগুড়া যাইব সাপ্লাই নিয়া ওইটার ড্রাইভারের কাছে দিয়া দিমুনে।
থেঙ্কু, মাম্মা।
মামা, সামনে ঈশ্বরদী জংশন, অনেকক্ষণ ট্রেন দাড়াবে। নামবেন?
হু নামা যায়। এবং দরজায় দারিয়ে চশমা মাথার ওপর তুলতেই নজর সোজা সামনে লাইটের নিচে দাঁড়ানো অপ্সরা। শিট, মানুষ এত্ত সুন্দর কেমনে হয়? মানুষরে দেখলে এমন কইরা দম বন্ধ হইয়া আসে? বুকের মধ্যে খামছি দিয়া ধরে?
বাহ, দারুন হ্যান্ডসাম তো। আবার চশমা পরা। হু, শিট, সিগারেট ধরাইতেছে? ওয়াক।
উলটো দিকে ফিসফিস, প্রিয়ন্তি দেখ দেখ চশমা পরা পোলাডা তোর দিকে কেমনে ড্যাব ড্যাব কইরা তাকাইয়া আছে?
আহ, খালা আস্তে শুনবে তো।
এইযে দরজা ছাড়েন, উঠব।
ওহ শিওর, স্যরি।
আব্বু, চেয়ার কার কেন? স্লিপিং বার্থ নাই?
রাতের ট্রেনের জানালার একটা সুবিধা আছে, জানলার গ্লাস গুলো সব আয়না হয়ে যায়। আরেহ, সে ও তো একই কাজ করছে। জানালার কাচে আমাকেই দেখছে। কিন্ত, যতবার দরজার সামনে গিয়ে সিগারেট ধরাই মুখ কালো হয়ে যায় কেন?
মামা, আর দশ মিনিট পরেই শান্তাহার। নামবেন না?
হ্যা। থেঙ্কু।
এক্সকিউজ মি, আমি নামব এখানে, রহস্য পত্রিকাটা ফেরত দেয়া যায়?
হু, এইখানেই থাকেন?
না, আপাতত বগুড়া, মাস তিনেক পর আবার ঢাকা। আপনি?
জিগাতলা থাকি।
ওকে, গুড বাই।
বাই।
শান্তাহার। তুমুল বৃষ্টি। একজন দাড়িয়ে ষ্টেশনে, ট্রেন চলে যাচ্ছে। আরেকজন জানালায়, ষ্টেশন পিছিয়ে পড়ছে, বৃষ্টিতে ঝাপসা সব।
কয়েকটি মৃত বিকেল এবং
তিন মাস পর।
কিরে কি হইছে তোর? হুট কইরা বিড়ি ছাইরা দিলি? আগে দশদিন ফোন দিলে একদিন আইতি জিগাতলা, আর এহন ডেইলি আইয়া একলা একলা ঘুরস ঘটনা কি?
এমন করে একটা একটা মৃত বিকাল পার হয়, কাউকেই বলা হয়না সিগারেট ধরাতে গেলেই চোখের সামনে একজনের কুচকে ওঠা ভ্রূ ভেসে ওঠে, তাই শেষ প্যাকেট টা শান্তাহারেই ফেলে এসেছে সে বৃষ্টির রাতে।
তারপর এক মৃত বিকেল সন্ধ্যায় গড়ায়, বন্ধুদের সাথে হৈ হৈ করে কফি খেতে,কোন এক মার্কেটের উপর তলায় উঠেই ধাক্কা। ভালোবাসার মানুষেরা কাছাকাছি বসলে তাদের ঘিরে লেবুফুলের ঘ্রানের মত নরম একটা ঘ্রান পাক খায়। আর তাদের মুখে খেলা করে নরম কোমল একটা আলো। যার দেখার সেই শুধু দেখতে পায়। আর সেই আলো দেখেই নিচে নেমে এসে বলে ওঠে সে, প্রায় মাস পাচেক পর, শামিম একটা বিড়ি দেত দোস্ত
বহু , বহুকাল আগের গল্প এটা প্রায় গতজন্মের । শুন্যের কমেন্ট দেখেই মনে পরল এটার কথা তাই খুঁজে বের করে তাকেই উৎসর্গ করে দিলাম 🙂
২০টি মন্তব্য
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
গল্পটা বেশ চমৎকার আসলে সব জার্নিতেই কিছু না কিছু গল্প লুকিয়ে থাকে।শুন্য আপুর কারনে আপনার গল্পটাও জেনে গেলাম।ভাষার ্যাবহারও চমৎকার।
সাইদ মিলটন
ক্রেডিট গোজ টু শূন্য 😀
স্বপ্ন
‘ ভালোবাসার মানুষেরা কাছাকাছি বসলে তাদের ঘিরে লেবুফুলের ঘ্রানের মত নরম একটা ঘ্রান পাক খায়। আর তাদের মুখে খেলা করে নরম কোমল একটা আলো। যার দেখার সেই শুধু দেখতে পায়। ‘ এপর্যন্ত পড়ে ভেবেছিলাম সিনেমার মত মিলন হয়ে যাচ্ছে। দিলেন তো স্বপ্নটা ভেঙ্গে। তারপরেও অদ্ভুত ঘোরলাগা গল্পটি ভালো লেগেছে খুব। প্রিয় ব্লগারের নামে উতসর্গ করায় আরো ভালো লেগেছে।
সাইদ মিলটন
ধইন্যা স্বপ্ন 🙂
নুসরাত মৌরিন
এক নিঃশ্বাসে পড়ে ফেললাম…।
শেষে এসে মরা বিকেল গুলো ভেবেছিলাম বুঝি জ্যান্ত হবে.. হলো না…। 🙁
তবে মারাত্মক সুন্দর গল্প…।এমন গল্পে দিন শুরু হলে আর কি লাগে? 🙂
সাইদ মিলটন
🙂
ছাইরাছ হেলাল
শান্তাহার এলে আমাদের খবর দিয়েন।
সেই লেবুই নাই , তার আবার ঘ্রাণ ! ছিল তা কোন এক কালে।
সাইদ মিলটন
অবশ্যই ভাই শান্তাহার যেতেই হবে
সীমান্ত উন্মাদ
গল্প কথনের ধরনটা চমৎকার। আমার এই ধরনের গল্প অনেক অনেক ভাললাগে
সাইদ মিলটন
থ্যাঙ্কু সীমান্ত উন্মাদ
মিসু
বহু কাল আগের লেখাই এত ভালো ! আমি অবশ্য আপনার লেখাগুলো মনে হয় মিস করেছি। পড়তে হবে বুঝতে পারছি।
সাইদ মিলটন
অন্য আরেক ব্লগে লিখতাম আরেকজন্মে 🙂
প্রজন্ম ৭১
এত ভালো গল্পটি যাকে উতসর্গ করলেন সেই শুন্য আপুও বা কোথায় গেলেন ? ভালো লেগেছে সাঈদ ভাই।
সাইদ মিলটন
থ্যাংকস প্রজন্ম৭১ , আমিও তাই কই কই গেলেন উনি ;?
জিসান শা ইকরাম
চমৎকার উপাস্থাপনা ।
এক নাগারে পড়ে ফেললাম।
শান্তাহার ষ্টেশনের কথা শুনে শুন্য শুন্যালয়ের বুক ধকধক করে নাকি ?
এর কারন ঝাতি জানতে চায়।
সাইদ মিলটন
থ্যাংকস দাদা। শূন্য কই আপনে ঝাতির প্রশ্নের জবাব দিয়া জান
শুন্য শুন্যালয়
শান্তাহার আমার জেলা শহরের স্টেশন। ছোটবেলায় নানাবাড়ি যেতাম এই রেল পথেই, তখন ট্রেনের সময় ছিল ম্যাজিকের মতো ১২ টা বললে ১২ টাতেই ট্রেন ছাড়তো, শুধু pm টা am হয়ে যেত এটুকুই পার্থক্য। সারা রাত জেগে ট্রেনের মানুশগুলো দেখতাম স্টেশনে বসে। ছোট এই স্টেশনের কথা শুনে এজন্যই থমকে গিয়েছিলাম।
আপনি নিজেই কি হারিয়ে গেলেন নাকি আবার?
শুন্য শুন্যালয়
আসতে পারিনি অনেকদিন, সরি..এমন গল্পের উতসর্গ পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার 🙂
এবার ঝগড়া, একটা ধক শব্দ বাড়ায় দিয়া পুরা লাইন চেঞ্জ কইরা ফালাইছেন ক্যান? 🙁
এবার গল্প প্রসঙ্গ : তিনটা এন্ডিং হতে পারে। ল্যাপিতে বসে মন্তব্য করবো পরে। আপনি নাকি অনেকদিন হাওয়া।
শুন্য শুন্যালয়
গল্পটা খুবই সুন্দর। নেগেটিভ সমাপ্ত হতে পারে, মেয়েটি তাকে চিনতে পারেনি। তবে আমি বিয়োগান্তক সমাপ্তি একদম পছন্দ করিনা।
সুন্দর সমাপ্তি হতে পারে, বিড়ি ছেড়ে দেওয়া ছিলো একটা মানতের মতো, কিছু পাবার আশায় কিছু ছেড়ে দেওয়া। কিংবা হতে পারে মেয়েটির কোঁচকানো ভুরু দেখতেই তার আবার সেই ইচ্ছে।
হোক যেমন খুশি তেমন, তবে সত্যিই খুব সুন্দর।
সাইদ মিলটন
মন্তব্যের জবাবে ক্লিক করলে কিছুই আসেনা 🙁
একে একে জবাব দেই
১- হারাই নাই
২- শান্তাহার আমার অন্নেক পছন্দের ইস্টিশন
৩- ঝগড়া করমু নাহ তাই ধক বারায়া দেওয়ার জন্য ছরি :p
৪- সমাপ্তি টা ছিলো এইরকম ” শূন্য হইতে আসে মায়া শুন্যতে মিলায়”