চলচ্চিত্র পরিচালক চাষী নজরুল ইসলাম একজন খাটী বাঙ্গালী তার নামের মাঝেই মিশে আছে ত্রিশ লক্ষ শহীদের আত্ত্ব ত্যাগে পাওয়া রক্তাক্ত পবিত্র মৃত্তিকার ঘ্রান।তিনি বরাবর গর্বো করতেন নামের প্রথমে চাষী লেখাটি নিয়ে।আজ সেই ব্যাক্তটি লাইফ সাপোর্টে ছিলেন।ছোট মেয়ে আন্নী ইসলামের কথা মতে তার বাবা দীর্ঘ দিন ধরেই অসুস্হ ছিলেন তবে দিন দশেক আগে আবারও তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।তার বাবার শরীরে ক্যানসার ধরা পড়েছে ।শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় পর পরই দ্রুত তাঁকে কেবিন থেকে আইসিইউতে (নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে) নিয়ে যাওয়া হয়। বর্তমানে শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে তার বাবা চাষী নজরুল ইসলামকে লাইফ সাপোর্টে নেয়া হয়।অবশেষে চিরস্হায়ী দেশে চলে গেলেন
(y) চাষী নজরুল ইসলাম সব মিলিয়ে ৩৫টির মতো ছবি নির্মাণ করেন এর মধ্যে ছয়টি ছিল মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক।
চলচ্চিত্রগুলো হলো -{@ ‘সংগ্রাম’,‘ধ্রুবতারা’, ‘শহীদ ক্যাপ্টেন সালাউদ্দীন’, ‘দেবদাস’, ‘শুভদা’, ‘পদ্মা মেঘনা যমুনা’, ‘হাছন রাজা’,ভূল যদি হয়, ‘সুভা’ এবং ওরা ১১ জন ,ভালো মানুষ - (১৯৭৫),বাজীমাত - (১৯৭৮),চন্দ্রকথা - (১৯৮৫),লেডি স্মাগলার - (১৯৮৬),মিয়া ভাই - (১৯৮৭),বেহুলা লক্ষিন্দর - (১৯৮৭),বিরহ বেথা - (১৯৮৮),মহাযুদ্ধ - (১৯৮৮),বাসনা - (১৯৮৯),দাঙ্গা ফাসাদ - (১৯৯০),দেশ জাতি জিয়া - (১৯৯৩),আজকের প্রতিবাদ - (১৯৯৫),শিল্পী - (১৯৯৫),হাঙর নদী গ্রেনেড - (১৯৯৫),কামালপুরের যুদ্ধ - (২০০২),মেঘের পরে মেঘ - (২০০৪),শাস্তি - (২০০৫),দুই পুরুষ - (২০১১)
স্বাধীনতা যুদ্ধের পরবর্তী সেই সময়ে এই নক্ষত্রের আর্বিভাব না ঘটলে মুক্তিযুদ্ধকে এত সুন্দর করে সেলুলয়ের ফিতায় উপাস্হিত ভাবে পেতাম না আর আমরা যারা নতুন প্রজন্ম যুদ্ধ দেখিনি যুদ্ধের ভয়াভহতায় একটি নতুন দেশের সৃষ্টির ইতিহাস আমি মনে করি ওরা১১জন ছবিটি দেখেই বুঝেছি।
এবং অল্প পরিসরে চাষী নজরুল ইসলামের কর্মময় জীবন
-{@
(y) তত্‍কালীন সময়ের কিংবদন্তীতুল্য পরিচালক ফতেহ্ লোহানীর সহকারী হিসেবে ১৯৬০ সালে চলচ্চিত্র জগতে কর্ম শুরু করেন।
(y) ১৯৬৩ সাল থেকে প্রখ্যাত সাংবাদিক ও চলচ্চিত্রকার ওবায়েদ-উল-হক এর সঙ্গে কাজ করেছেন।
(y) ১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন।
(y) বাংলাদেশের প্রথম মুক্তিযুদ্ধ নির্ভর পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র 'ওরা ১১ জন' নির্মাণ ও পরিচালনা করেন।
(y) পরবর্তীতে আরও প্রায় বাইশটি পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র সাফল্যের সঙ্গে নির্মাণ করেন।
(y) সম্পূর্ণ সরকারী অর্থানু কূল্যে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ তিন মহত্‍ ব্যক্তি মাওলানা ভাসানী, শেরে বাংলা ও শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ঘটনা বহুল জীবন ভিত্তিক প্রামাণ্য চিত্র নির্মাণ করেন।
(y) সরকারী অনুদান প্রাপ্ত চলচ্চিত্র 'হাঙর নদী গ্রেনেড' নির্মাণ করেন।
(y) জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র প্রযোজিত প্রামাণ্য নাট্য চিত্র 'নতুন দিগন্ত' পরিচালনা করেন।
(y) বাংলাদেশ সেনা বাহিনী প্রযোজিত প্রথম মুক্তি যুদ্ধ ভিত্তিক প্রামাণ্য চিত্র 'কমলাপুর যুদ্ধ' পরিচালনা করেন।

সামাজিক ভাবে অন্যান্য ঈর্শণীয় কর্মকান্ডেও তার অবদান ছিল তুলনামূলক
-{@ ভাইস প্রেসিডেন্ট (২০০৩) ব্রাদার্স ইউনিয়ন ক্লাব।
-{@ জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি।
-{@ সাংস্কৃতিক সম্পাদক শত নাগরিক সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী।
-{@ উপদেষ্টা, জাতীয়তাবাদী চলচ্চিত্র পরিষদ।
-{@ সমরপুর হাইস্কুলের পরিষদ সদস্য।
-{@ চেয়ারম্যান, সায়েস্তাখানম, চাষী আজিজুল ইসলাম ট্রাস্টী বোর্ড।
-{@ সদস্য-গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডের চতুর্থ বারের মতো
-{@ সাবেক সদস্য গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের যৌথ প্রযোজনা কমিটি br> - সাবেক নির্বাহী সদস্য- চলচ্চিত্র প্রযোজক ও পরিবেশক সমিতি
-{@ সাবেক সদস্য ঢাকা মেট্রোপলিটন ফুটবল লিগ এসোসিয়েশন (ডামফা)
-{@ সাবেক ফুটবল সম্পাদক (১৯৭৬-৮১) ব্রাদার্স ইউনিয়ন ক্লাব।
একটি সাক্ষাৎকার


- যুদ্ধ চলাকালীন অবস্থায় আমার মাথার কাজ করত, কি করে যুদ্ধের এই অবস্থা ছবিতে তুলে আনা যায়। আমি তখন গুপীবাগে থাকি। বাসায় বসে আছি আর ভাবছি যে একটা ছবি করবো। মাসুদ পারভেজ (সোহেল রানা) বললো, 'চলেন ছবি করি।' আমি বললাম, 'ছবি করবো টাকা কোথায়?' ও বলল, 'চলেন ছাত্রনেতা খসরুর কাছে যাই।' তিনি আমাকে দেখে চিনলেন। বললাম, 'মুক্তিযুদ্ধের ছবি বানাবো, আপনি অভিনয় করবেন।' খসরু টাকার সন্ধান বললেন। স্টার ফিল্ম কর্পোরেশন তখন বড় প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান। ইফতেখারুল আলম কিসলু ছিলেন কর্ণধার। তাদের মালিকানায় তখন স্টার, মুকুল সহ ১১টি সিনেমা হল। প্রথম গেলাম স্টার সিনেমা হলে। আমরা বললাম, 'কিসলু ভাই আমরা ছবি বানাবো কিন্তু টাকা নেই, আপনাকে টাকা দিতে হবে।' ইফতেখারুল আলম পরামর্শ দিলেন, 'আপনারা শের আলীর কাছে যান।' হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজের পাশে একটি বাড়ীতে তিনি থাকেন।

শের আলী একজন মাড়োয়ারি ব্যাবসায়ী, গেলাম তার কাছে। উনি তো খসরুকে দেখে ওর কথায় ভয়ই পেলেন। কারণ '৬৯-এ আইয়ূব খান বিরোধী আন্দোলনের এক পরিচিত মুখ ছিলেন খসরু। পরে আমাদের বসতে বললেন, অরেঞ্জ জুস দিলেন। পরে বললেন কত টাকা লাগবে। তিনি ভয়ে ভয়ে ব্রিফকেস বের করে দিলেন। আমরা বললাম, 'আমরা কিন্তু ছিনতাই বা লুট করতে আসিনি। আমরা ছবি বানাবো আপনি ডিস্ট্রিবিউটার হবেন, সেইভাবে এগ্রিমেন্ট করে টাকা দেন।' তিনি আমাদের কথা শুনে অবাক হয়ে গেলেন। আমাদের পরের দিন যেতে বললেন। ইফতেখার কিসলুকে বললেন, জহির রায়হানের সাথে যে এগ্রিমেন্ট আমাদের আছে, সেই পুরাতন এগ্রিমেন্ট বদলে আমাদের নামে করতে।

ছবির কাহিনী নিয়ে আলোচনা করলাম। তখন তিনি আমাদের সোয়া ৩ লাখ টাকার চেক দিলেন। টাকা নিয়ে আমরা কাজ শুরু করলাম। 'ওরা ১১ জন' নামটি নিয়ে অনেক ভেবেছি। মুক্তিযুদ্ধে ১১ সেক্টর, '৬৯ এর ১১ দফা দাবী। আমাদের ছবিতেও ১১ জন মুক্তিযোদ্ধা থাকবে। ১১ জনের মধ্যে ১ জন হিন্দু, ১ জন খ্রিস্টান, বাকি ৯ জন মুসলমান।

জয়দেবপুর ক্যান্টনমেন্টে গেলাম শুটিং করতে। তখন জয়দেবপুর ক্যান্টনমেন্টের সিও (কমান্ডিং অফিসার) ছিলেন কর্নেল শওকত আলী। ছবিটি যখন এডিটিং করছি তখন এডিটর বললেন কত খরচ পড়ল? বললাম সাড়ে ৩ লাখ। তিনি বললেন ২০ লাখ টাকার ব্যবসা করবে। পরে ছবি হিট হলো। ছবিটি অভিসার ও মধুমিতায় এক নাগাড়ে ছয় সপ্তাহ প্রদর্শিত হয়েছে।
- হ্যা, ঠিকই শুনেছেন, 'ওরা ১১ জন'-এর কাহিনীর বাস্তব ভিত্তি রয়েছে। আর 'ওরা ১১ জন' নামটি দেয়া হয়েছে দুটি কারণে। প্রথমত -{@ , ১১ জন মুক্তি যোদ্ধা মানে এগারোজন সেক্টর কমাণ্ডার, দ্বিতীয়ত এগারো দফা আন্দোলন। এই এগারো দফা আন্দোলনই কিন্তু পরে স্বাধীনতার আন্দোলনে রূপান্তরিত হয়। তারপর ছবির টাইটেলে যখন 'ওরা ১১ জন' নামটি আসে, তখন নেপথ্যে ছয়টি কামানের গোলা ছোঁড়ার শব্দ শোনা যায়। অর্থাত্‍ এগারো দফার জন্যেই যে আমরা ছয় দফা পাই সেটি প্রতীকি ব্যঞ্জনায় উদ্ভাসিত হয়েছে।
....................................................................জন্ম ও বংশগত সংক্ষিপ্ত পরিচয়................................. -{@
১৯৪১ সালের ২৩ অক্টোবর বিক্রমপুর শ্রীনগর থানার সমষপুর গ্রামে আজকের চাষী নজরুলের জন্ম। চাষী ছিলেন বাবা-মায়ের জ্যেষ্ঠপুত্র। বাবা মোসলেহ উদ্দিন আহম্মদ, ভারতের বিহারে টাটা আয়রন এন্ড স্টীল কোম্পানির ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। বাবা মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ লস্করের পূর্বপুরুষেদের সমন্ধে যা জানা যায় সে অনুযায়ী প্রথম পুরুষ আমিন লস্কর, তারপর মোমেন লস্কর। এভাবে আহমেদ লস্কর, জরিপ লস্কর তারপর চাষীর দাদা হেলাল উদ্দিন আহমদ লস্কর। জানা যায়, শেরেবাংলা এ. কে. ফজলুল হক চাষীর নাম রেখেছিলেন। চাষীর মামা চাষী ইমাম উদ্দিন শেরেবাংলা এ. কে. ফজলুল হকের সঙ্গে রাজনীতি করতেন এবং নবযুগলাঙ্গল পত্রিকার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। সেই সূত্রেই একদিন ফজলুল হককে একটা নাম দিতে বলা হলে তিনি চাষী ইমাম উদ্দিনের 'চাষী' আর কাজী নজরুল ইসলামের 'নজরুল ইসলাম' মিলিয়ে একটা নাম দেন।

সবাই কাদিয়ে ঝড়ে গেল আরো একটি নক্ষত্র আমরা তার বিদেহী আত্ত্বার মাগফিরাত কামনা করছি।

 কৃতজ্ঞতায়
গুণীজন
এবং ইউটিউব,উইকিপিয়া

0 Shares

১৬টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ