অচ্যুৎ সামন্ত নাম তাঁর, ‘দ্য গ্রেটম্যান’ বলে সম্বোধন করেছেন আমাদের মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী তাঁকে ’প্রথম আলো’ কার্যালয়ে তাঁর পরিচিতি অনুষ্ঠানে । তিনি ভারতের ’ওডিষ্যার বিস্ময়’ । ‘এত দিন শুধু অচ্যুত সামন্তর গল্প শুনেছি। পত্রিকায় পড়েছি। সামনাসামনি তাঁর সাক্ষাৎ পাওয়াটা আমি মনে করি বড় ধরনের সৌভাগ্য। আমার মনে হয়, তাঁর কাজ আমাদের সবাইকে অনেক বেশি উৎসাহিত ও উদ্দীপিত করবে।’ পরিচয়-পরবর্তী সংক্ষিপ্ত বক্তৃতায় বলছিলেন শিক্ষামন্ত্রী।
গতকাল এটিএন নিউজের ‘নিউজ এক্সট্রা’ অনুষ্ঠানে উপস্থাপিকা জনাবা মুন্নী সাহা সবশেষ তাঁর মন্তব্য যখন শুনতে চান, অচ্যুৎ সামন্ত তখন বলেন, আমি সারা জীবন যা করেছি সেগুলি যেন আজকের তরুন সমাজও করতে উদ্ভুদ্ধ হয় । আজকের ছাত্র-যুবকেরা যদি সেই আদর্শ ধারন করে, তবে দেশ-সমাজ এগিয়ে যাবে । অনুষ্ঠানটিতে ইনি সম্পর্কে যা জানা যায়, সংক্ষেপে তা নিম্নে উদ্ধৃত করা হলো ।
জনাব অচ্যুৎ সামন্ত ওডিষ্যায় কলিঙ্গ ইনস্টিটিউট অব ইন্ডাস্ট্রিয়াল টেকনোলজি (কেআইআইটি—কিট) ও কলিঙ্গ ইনস্টিটিউট অব সোশ্যাল সায়েন্স (কেআইএসএস-কিস) নামক দুটি বিশাল শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান গড়েছেন । তিনি বলেন, নানাভাবে প্রায় ১০ লাখ লোকের অন্নসংস্থান হয় কিট ও কিস-এর মাধ্যমে । কলিঙ্গ ইনস্টিটিউট অব সোশ্যাল সায়েন্স (কেআইএসএস-কিস)-এ ’কেজি-পিজি’ মেয়াদে বিনামূল্যে পড়াশোনার সুযোগ পাচ্ছে ২০ হাজারেরও বেশী আদিবাসী ছাত্র-ছাত্রী । ঢাকায় ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে যৌথভাবে তাঁরা কেআইএসএস(কিস)-এর আদলে একটি শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান চালু করতে যাচ্ছেন ।
তাঁর বাল্যকাল সম্পর্কে উক্ত অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, তাঁর জন্ম হয়েছিল এক দরিদ্র পরিবারে, অভাব যেখানে নিত্যসংগী । অভাবে তা কাটলেও আশপাশের কোন জিনিস, এমনকি গাছের একটা ডালের দিকেও তাঁর কোন লোভ ছিলনা । আর, বাল্যকাল থেকেই প্রচুর শ্রম করার কারনে তাঁর মধ্যে সরল নেতৃত্বের বড় একটা গুন গড়ে ওঠে, তাঁর মতে এটাই তার সাফল্যের উৎস । ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, ছেলেবেলায় জংগল বা কোন মাঠ পরিষ্কার অথবা সমতলকরন কাজ তিনি সংগীদের নিয়ে করে চলেছেন । তিনি বলেন, অর্থ দিয়ে আমি কাউকে সাহায্য করতে পারিনি, কিন্তু নিজস্ব-উদ্যোগ দিয়ে সেই অভাব, বিনয়ী তিনি, বলেলন, হয়তো পূরণ হয়েছে ।
উক্ত অনুষ্ঠানে অন্য আলোচকগনও বলেছেন, আমাদের দেশেও সাদামনের মানুষ আছেন অনেক । এঁদের কেউ অতি-অভাবের সংসারেও স্ত্রীর গয়না বিক্রী করে, অভাবে বাস করা অনেক স্ত্রীরাও নিজের শেষ-সম্বল গয়না বিক্রী করে হলেও পাঠাগারের খরচ চালিয়ে গেছেন। আমরা যখন ছোট, দেখতাম, অনেক শিক্ষক খালি পায়ে হেঁটে বাড়ী বাড়ী গিয়ে হাসিমুখে ঞ্জান বিলিয়ে যেতেন । কিছু সাদামনের মানুয় আছেন, যাঁরা সাইকেলে চালিয়ে বাড়ী বাড়ী গিয়ে এখনও ঞ্জানের আলো ছড়িয়ে চলেছেন, কেউ সুশাসনের ফেরিওয়ালা হয়ে নিজস্ব-হাতের লিখা প্রচার করছেন । কিন্তু অচ্যুৎ সামন্তের মতো এতো বড় মাপের মানুষ, আসলে নাই তা হয়তো নয়, তবে এতো বিশাল আকারের কমর্কান্ড হয়নি এখনও তাঁদের । আজো তিনি দুই কামরার ছোট্ট একটা বাসা ভাড়া নিয়ে বাস করেন, স্ত্রী নাই । সমাজসেবা করার জন্যই যে সংসারে জড়াননি, নিজেই বলেছেন সেটা । কারন তাতে সমাজসেবার কাজটা সেরকমভাবে করা হয়ে উঠতোনা বলে মনে করেন তিনি ।
আমি অভিভূত হয়ে পড়েছি । আমার মতো অতি ছোট চাকুরিজীবির এছাড়া আর উপায়ই বা কি ! নিজের সন্মান আমরা অনেক আগে থেকেই বিসর্জন দিয়ে রেখেছি । অচ্যুৎ সামন্ত তরুন-সমাজকে আহ্বান করেন সকল সময় ভাল কাজ করতে । সে-আহ্বান শুনে আমরাও যদি আহ্বায়িত হই, সেটা হবে এদেশের জন্য ভালো একটা ব্যাপার ।
জনাব অচ্যুৎ সামন্ত, প্রনঢালা অভিনন্দন আপনাকে ।
মোঃ আজিমুল হক । তাংঃ ০৬/০৩/১৪।
৬টি মন্তব্য
ছাইরাছ হেলাল
আমি আপনার সাথে এক মত যে অচ্যুৎ সামন্তের মত ভালো বড় মানুষেরা
আমাদের এখানেও আছেন । তবে পার্থক্য একটাই এখানে এখনও এমন কোন প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠেনি ।
কেন ? সেটাই আমাদের ভাবনার বিষয় ।
ওয়ালিনা চৌধুরী অভি
এই সব সাদা মনের মানুষকে শ্রদ্ধা জানাতেই হয় ।
লীলাবতী
এমন আশাবাদ আমাদের নাগালের বাইরে এখন।
জিসান শা ইকরাম
অচ্যুৎ সামন্তের প্রতি স্যাল্যুট ।
স্বপ্ন
কেমন অবাস্তব মনে হয়।
প্রহেলিকা
নিজের সন্মান আমরা অনেক আগে থেকেই বিসর্জন দিয়ে রেখেছি । অচ্যুৎ সামন্ত তরুন-সমাজকে আহ্বান করেন সকল সময় ভাল কাজ করতে । সে-আহ্বান শুনে আমরাও যদি আহ্বায়িত হই, সেটা হবে এদেশের জন্য ভালো একটা ব্যাপার ।
এটা আমার কথা আর বেশি কিছু বলব না। (y)