আমি ও আমার ডাইনি আতিথ্য!

ছাইরাছ হেলাল ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, বৃহস্পতিবার, ০৪:৫৬:২৭পূর্বাহ্ন একান্ত অনুভূতি ১৮ মন্তব্য

ভয়ের হিম স্রোত নীচে নেমে গেল শিরদাঁড়া বেয়ে, নাহ্‌, মাথাটি ঘাড়সম্মতিতে আছে যথাস্থানেই, কেউ আসেনি চুকচুক করে রক্ত খেতে ঘাড় মটকে লম্বা সূচাল দাঁত বিঁধিয়ে,

দেখছি ডাইনি রাণীর কর্মযজ্ঞ, না বুঝেই। কেটেছে ভয় কিছুটা, যদিও বিরাজমান আছে গভীর ভাবে ডাইনি ফ্রেন্ডলি এ্যাটমোস্ফিয়ার,

জানি ই না কী করে কেমন করে এই এখানে এলাম, ভয় কমে যাওয়াতে খুব ভাল না লাগলেও ঔৎসুক্য নিয়ে দেখছি দেখছি, মন্দও লাগছে না, পারছি না কূলকিনারা করতে, কেমতে কী?

আধা স্বচ্ছ ও ক্রমপরিবর্তনশীল চেহারা, অদ্ভুত চোখ তাদের, পাতাহীন, ক্ষুদে দু’টি বাতি যেন, বিভিন্ন রংয়ের, কখনও কখনও জ্বলে আবার নেভে, পিটপিট করতেই থাকে, শুধু ডাইনি রাণীর চোখের রং সবুজাভ, জ্বলেই থাকে জ্বলেই আছে বলা যায়। এরা এক, তিন, পাঁচ এই কম্বিনেশনে চলাফেরা করে, একত্রে দেখিনি দুটি বা চারটি ডাইনি একবারের জন্যও। এরা কথাবার্তা বলে নিজেদের এক বিচিত্র ভাষায়, তবে তারা টেলিপ্যাথি টাইপ কিছু একটা যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু রাখে, করতে পারে অন্যদের মাইন্ড রিড, বুঝতে পেরেছি বেশ পরে, বোঝা যাচ্ছে না কোনভাবেই এখানে দিন বা রাত্রির পরিমাণটুকু।

আমাকে কেউ নজরে রাখছে এমন কিছু দেখছি বা বুঝছি না, তবে মনে হচ্ছে কোথাও যেন অদৃশ্য শৃঙ্খল রয়েই গেছে,

বুঝতে পারছিলাম না হঠাৎ চাঞ্চল্য দেখে কী হবে বা কিসের তা, পরে বুঝলাম খাওয়ার সময় হয়েছে এদের। রাণীজি বাদে বসে গেল সবাই সুশৃঙ্খল ভাবে ফ্লোরে, খাবার এলো রাশিরাশি, দেখে গা রিরি করে উঠল, মরা-পচা আস্ত কঙ্কাল, মানুষের, তাজাও, বেয়ে রক্ত ঝরছে, মরা গরু ছাগল, শিং সহ মহিষ ও গরুর মাথা, এসব দেখে হড়হড় করে বমি করে ফেললাম, আমাকেও খেতে বাধ্য করে কী না ভেবে শ্বাস কষ্ট শুরু হয়ে গেল, ভাবছি মরেই  যাব,  হঠাৎ দেখি আমার জন্য বিচিত্র ফলমূল ও ম ম গন্ধ ছড়ানো আস্ত মুরগি ফ্রাই! এই প্রথম একটি ছয়ছোট্ট ডাইনি আমার কাছাকাছি হয়ে প্রথমে আকারে-ইঙ্গিতে পরে মুখে প্রায় মিষ্টি ভাষায় আশ্বস্ত করে খেতে বলল ভয়হীন ভাবে। ভাল কথা, বমি করে ফেলেছি কিন্তু তা কোথাও দেখতে পাচ্ছি না, নেই কোন বিশ্রী গন্ধও।
মুহূর্তের মধ্যেই ওরা সব খাবার সাফ করে ফেলে সবাই চলেও গেল, অবাক, কাছাকাছি হওয়া ডাইনির কাছ থেকে মরা-পচার বোটকা গন্ধ পেলাম না। আজিব!

রাণীজিকে কিছু খেতে-টেতে দেখলাম না, তিন জনের একটি দল একটি কচি পাঠা নিয়ে

তাঁর কাছে এলে সে তার সবুজ চোখের আলো ফেলে একবার দেখল, এরপর এই তিনজনে মিলে এমন ভাবে পাঠাটাকে চেপে ধরলো গলগল করে সব রক্ত মুখ থেকে বের হয়ে এলো, বাবারে বীভৎস, রানীজি আস্তে আস্তে সবটুকু রক্ত বাটিতে নিয়ে পান করে ফেললেন, বাপরে!

টেলিপ্যাথি,
পানির পিপাসা অনুভব করলাম, সাথে সাথে সুদৃশ্য পানপাত্রে পানীয় হাজির, হাতজোড় করে অনুনয় করলাম, এখন মদ-ফদ খেতে পারব না, ভয়ের কিছু নেই জানিয়ে দিতেই এক চুমুকেই শেষ করে ফেললাম, ইহজীবনে এমন সুস্বাদু পানীয় আর খাইনি,
আহ্‌, শান্তি শান্তি।

এরপর এই ডাইনিকে ডেকে নানান কিছু জানতে চাইলাম, বুঝলাম আমি যাই জিজ্ঞেস করি সেটা রিলে হয়ে অন্য কোথাও যায়, সেখান থেকে যা বলতে বলা হয় তাই সে বলে,

যেটা বলার অনুমতি নেই সেটাতে চুপ করে থাকে, তাও বা মন্দ কী! কিছু না কিছু তো জানতে পারছি।

হিসুর বেগ আসার সাথে সেই একই ডাইনি হাজির, একটি নির্দিষ্ট রুম দেখিয়ে দিল। ঢুকলাম! ঝকঝকে সব কিছু, কিন্তু কোন ব্যবস্থা নেই ই। বাইরে বের হয়ে এলে ডাইনিটি চিক চিক করে হাসে! মহা ঝামেলা! এরপর বুঝিয়ে দিল, ওখানে গিয়ে করলেই হবে, নো চিন্তা। কাজ করলাম, যথারীতি সব হাওয়া হাওয়া।

তিনটে ডাইনি সারাক্ষণ ঘুটঘুট করছে, এগুলোকে একটু ভিন্ন টাইপের ফিসকা বা আকামা টাইপের মনে হল। রাণীর কাছে যেতে চাচ্ছে কিন্তু অনুমতি পাচ্ছে না, শেষে পৌঁছুল, আমার দেখভাল করা ডাইনিটির কাছে এদের বিষয় জানতে চাইলাম।

এই তিনটের মধ্যে চ্যালাটির ঘটনা, নদী তীরের টগবগে এক পেশল জেলের পিছু নিয়ে নানান ফন্দি-ফিকির করেও সুবিধা করতে না পারায় জেলার বাড়িতে গিয়ে হানা দিল, গিয়ে দেখে সুন্দরী জেলেবউ মাটির চুলায় ইলিশ মাছ ভাঁজছে, মনে মনে যত প্রকার গালি ছিল, ধুমসী থেকে শুরু করে ডাইনি রাজ্যে যা ছিল সব দিয়ে, কখনও আত্মীয় সেজে কখনও বিড়াল সেজে আরও অনেক অনেক সেজেও ইলিশ মাছ ভাঁজা খেতে সমর্থ তো হলোই না উপরন্তু গরম তেল ছিটে গায়ে নিয়ে পালিয়ে এসেছে। এবারে রানীর অনুমতি চাই, জেলের ঘাড় মটকে দেবে, অনুমতি দেয়া হয়নি, তবে হাল্কা ঘুরান্তিসের অনুমতি নিয়ে হয়েছে এবার।

এই আকামা ত্রিরত্নরা আমার কাছাকাছি এসে যেতে যেতে বলে, ‘এই টাউক্কা বুইড়া, টুলবুল করে তাকিয়ে কী এমন দেখ? বের হও এখান থেকে, দেখাচ্ছি মজা,’ হতভম্ব হয়ে দেখলাম রাণীজির চোখ মুহুর্তের জন্য লাল হয়ে আবার সবুজ হয়ে গেল, আর এই ডাইনির দল ভয়ার্ত চিৎকার দিয়েই হাওয়ায় মিলিয়ে গেল।
প্রমাদ গুনলাম, গেরো ফসকা নয়, আঁটুনি যে ব্জ্র তা এতক্ষণে টের পেলাম বেশ করে, বেশি করেও।

একবার জানতে চাইলাম, “এখানে সাজুগুজু আর সূচালো বহির্গামী ঝুলানো দাঁতয়ালা ডাইনিরা নেই কেন?” আমার উপস্থিতি কালীন সময়ের জন্য তা নিষিদ্ধ করা হয়েছে,
কয় কী কয় কী!! ফিলিং হাল্কা প্রাউড।

আমি এখানে কেন? এ প্রশ্নের উত্তরে জানিয়েছিল অনুমতি পেলেই জানাবে, তিমিরেই থেকে যাচ্ছি।

ডাইনি রাজ্যে সব থেকে ভাল লেগেছে লেখাপড়া নিয়ে নানা জানা অজানা বিষয় প্রশ্ন করলেই জানতে পারছি। গালিব থেকে লালন, কিছুই বাদ যাচ্ছে না। তবে একবার কী যেন ঝামেলা হয়েছিল জানতে পারিনি। ম্যাকবেথের ডাকিনীদের সংলাপ নিয়ে কথা বলার সময় সবুজ চোখ সামান্য লাল হয়েছিল, ছুটে গিয়েছিল রানীর কাছে, চিঁচিঁ করেছে অনেক্ষণ, ফিরে এলে এ বিষয়ে আর কোন আলোচনা আর হয়নি, অন্য অনেক অনেক কবিতা শুনেছি, যখন যা মন চেয়েছে,

মানবকুলে যা কিছু যত কিছু কুখাদ্য-অখাদ্য পচা-নোংরা, বাসি ও অপাংক্তেয়, তাই ই ডাইনি রাজ্যে অসম্ভব উপাদেয়, আমার ল্যাখার মত, জেনে ধন্য হলাম। জয়তু ডাইনিকুলশিরোমণি, এত্তদিন পড় উহারা আমারে পাইল, আমিও উহাদের!!

এর ই মধ্যে পাঁচ জনের একটি দল প্রায় মার্চ করে ভিতরে প্রবেশ করেই হাসিহাসি মুখে আবার দ্রুত ফিরে গেল, কারও ঘাড় মটকানোর ফরমান নিয়ে, হতে পারে কোন রাজা না রাণীর!!

আমার বৃদ্ধঘাড়টি যথাস্থানেই আছে, মটকে গেলা যাক না!!

ডাইনির পুংলিঙ্গ কী জানি না, জানতে পারিনি, তবে বংশগতী রক্ষার একটি অতি জটিল প্রক্রিয়া বিশেষ তিথিতে অমাবস্যায় শশ্মানে গিয়ে দেখানোর কথা আছে।

একটি শুঁটকো ডাইনি বুড়ির কথা পরে হলেও হতে পারে;

0 Shares

১৮টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ