ভয়ের হিম স্রোত নীচে নেমে গেল শিরদাঁড়া বেয়ে, নাহ্, মাথাটি ঘাড়সম্মতিতে আছে যথাস্থানেই, কেউ আসেনি চুকচুক করে রক্ত খেতে ঘাড় মটকে লম্বা সূচাল দাঁত বিঁধিয়ে,
দেখছি ডাইনি রাণীর কর্মযজ্ঞ, না বুঝেই। কেটেছে ভয় কিছুটা, যদিও বিরাজমান আছে গভীর ভাবে ডাইনি ফ্রেন্ডলি এ্যাটমোস্ফিয়ার,
জানি ই না কী করে কেমন করে এই এখানে এলাম, ভয় কমে যাওয়াতে খুব ভাল না লাগলেও ঔৎসুক্য নিয়ে দেখছি দেখছি, মন্দও লাগছে না, পারছি না কূলকিনারা করতে, কেমতে কী?
আধা স্বচ্ছ ও ক্রমপরিবর্তনশীল চেহারা, অদ্ভুত চোখ তাদের, পাতাহীন, ক্ষুদে দু’টি বাতি যেন, বিভিন্ন রংয়ের, কখনও কখনও জ্বলে আবার নেভে, পিটপিট করতেই থাকে, শুধু ডাইনি রাণীর চোখের রং সবুজাভ, জ্বলেই থাকে জ্বলেই আছে বলা যায়। এরা এক, তিন, পাঁচ এই কম্বিনেশনে চলাফেরা করে, একত্রে দেখিনি দুটি বা চারটি ডাইনি একবারের জন্যও। এরা কথাবার্তা বলে নিজেদের এক বিচিত্র ভাষায়, তবে তারা টেলিপ্যাথি টাইপ কিছু একটা যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু রাখে, করতে পারে অন্যদের মাইন্ড রিড, বুঝতে পেরেছি বেশ পরে, বোঝা যাচ্ছে না কোনভাবেই এখানে দিন বা রাত্রির পরিমাণটুকু।
আমাকে কেউ নজরে রাখছে এমন কিছু দেখছি বা বুঝছি না, তবে মনে হচ্ছে কোথাও যেন অদৃশ্য শৃঙ্খল রয়েই গেছে,
বুঝতে পারছিলাম না হঠাৎ চাঞ্চল্য দেখে কী হবে বা কিসের তা, পরে বুঝলাম খাওয়ার সময় হয়েছে এদের। রাণীজি বাদে বসে গেল সবাই সুশৃঙ্খল ভাবে ফ্লোরে, খাবার এলো রাশিরাশি, দেখে গা রিরি করে উঠল, মরা-পচা আস্ত কঙ্কাল, মানুষের, তাজাও, বেয়ে রক্ত ঝরছে, মরা গরু ছাগল, শিং সহ মহিষ ও গরুর মাথা, এসব দেখে হড়হড় করে বমি করে ফেললাম, আমাকেও খেতে বাধ্য করে কী না ভেবে শ্বাস কষ্ট শুরু হয়ে গেল, ভাবছি মরেই যাব, হঠাৎ দেখি আমার জন্য বিচিত্র ফলমূল ও ম ম গন্ধ ছড়ানো আস্ত মুরগি ফ্রাই! এই প্রথম একটি ছয়ছোট্ট ডাইনি আমার কাছাকাছি হয়ে প্রথমে আকারে-ইঙ্গিতে পরে মুখে প্রায় মিষ্টি ভাষায় আশ্বস্ত করে খেতে বলল ভয়হীন ভাবে। ভাল কথা, বমি করে ফেলেছি কিন্তু তা কোথাও দেখতে পাচ্ছি না, নেই কোন বিশ্রী গন্ধও।
মুহূর্তের মধ্যেই ওরা সব খাবার সাফ করে ফেলে সবাই চলেও গেল, অবাক, কাছাকাছি হওয়া ডাইনির কাছ থেকে মরা-পচার বোটকা গন্ধ পেলাম না। আজিব!
রাণীজিকে কিছু খেতে-টেতে দেখলাম না, তিন জনের একটি দল একটি কচি পাঠা নিয়ে
তাঁর কাছে এলে সে তার সবুজ চোখের আলো ফেলে একবার দেখল, এরপর এই তিনজনে মিলে এমন ভাবে পাঠাটাকে চেপে ধরলো গলগল করে সব রক্ত মুখ থেকে বের হয়ে এলো, বাবারে বীভৎস, রানীজি আস্তে আস্তে সবটুকু রক্ত বাটিতে নিয়ে পান করে ফেললেন, বাপরে!
টেলিপ্যাথি,
পানির পিপাসা অনুভব করলাম, সাথে সাথে সুদৃশ্য পানপাত্রে পানীয় হাজির, হাতজোড় করে অনুনয় করলাম, এখন মদ-ফদ খেতে পারব না, ভয়ের কিছু নেই জানিয়ে দিতেই এক চুমুকেই শেষ করে ফেললাম, ইহজীবনে এমন সুস্বাদু পানীয় আর খাইনি,
আহ্, শান্তি শান্তি।
এরপর এই ডাইনিকে ডেকে নানান কিছু জানতে চাইলাম, বুঝলাম আমি যাই জিজ্ঞেস করি সেটা রিলে হয়ে অন্য কোথাও যায়, সেখান থেকে যা বলতে বলা হয় তাই সে বলে,
যেটা বলার অনুমতি নেই সেটাতে চুপ করে থাকে, তাও বা মন্দ কী! কিছু না কিছু তো জানতে পারছি।
হিসুর বেগ আসার সাথে সেই একই ডাইনি হাজির, একটি নির্দিষ্ট রুম দেখিয়ে দিল। ঢুকলাম! ঝকঝকে সব কিছু, কিন্তু কোন ব্যবস্থা নেই ই। বাইরে বের হয়ে এলে ডাইনিটি চিক চিক করে হাসে! মহা ঝামেলা! এরপর বুঝিয়ে দিল, ওখানে গিয়ে করলেই হবে, নো চিন্তা। কাজ করলাম, যথারীতি সব হাওয়া হাওয়া।
তিনটে ডাইনি সারাক্ষণ ঘুটঘুট করছে, এগুলোকে একটু ভিন্ন টাইপের ফিসকা বা আকামা টাইপের মনে হল। রাণীর কাছে যেতে চাচ্ছে কিন্তু অনুমতি পাচ্ছে না, শেষে পৌঁছুল, আমার দেখভাল করা ডাইনিটির কাছে এদের বিষয় জানতে চাইলাম।
এই তিনটের মধ্যে চ্যালাটির ঘটনা, নদী তীরের টগবগে এক পেশল জেলের পিছু নিয়ে নানান ফন্দি-ফিকির করেও সুবিধা করতে না পারায় জেলার বাড়িতে গিয়ে হানা দিল, গিয়ে দেখে সুন্দরী জেলেবউ মাটির চুলায় ইলিশ মাছ ভাঁজছে, মনে মনে যত প্রকার গালি ছিল, ধুমসী থেকে শুরু করে ডাইনি রাজ্যে যা ছিল সব দিয়ে, কখনও আত্মীয় সেজে কখনও বিড়াল সেজে আরও অনেক অনেক সেজেও ইলিশ মাছ ভাঁজা খেতে সমর্থ তো হলোই না উপরন্তু গরম তেল ছিটে গায়ে নিয়ে পালিয়ে এসেছে। এবারে রানীর অনুমতি চাই, জেলের ঘাড় মটকে দেবে, অনুমতি দেয়া হয়নি, তবে হাল্কা ঘুরান্তিসের অনুমতি নিয়ে হয়েছে এবার।
এই আকামা ত্রিরত্নরা আমার কাছাকাছি এসে যেতে যেতে বলে, ‘এই টাউক্কা বুইড়া, টুলবুল করে তাকিয়ে কী এমন দেখ? বের হও এখান থেকে, দেখাচ্ছি মজা,’ হতভম্ব হয়ে দেখলাম রাণীজির চোখ মুহুর্তের জন্য লাল হয়ে আবার সবুজ হয়ে গেল, আর এই ডাইনির দল ভয়ার্ত চিৎকার দিয়েই হাওয়ায় মিলিয়ে গেল।
প্রমাদ গুনলাম, গেরো ফসকা নয়, আঁটুনি যে ব্জ্র তা এতক্ষণে টের পেলাম বেশ করে, বেশি করেও।
একবার জানতে চাইলাম, “এখানে সাজুগুজু আর সূচালো বহির্গামী ঝুলানো দাঁতয়ালা ডাইনিরা নেই কেন?” আমার উপস্থিতি কালীন সময়ের জন্য তা নিষিদ্ধ করা হয়েছে,
কয় কী কয় কী!! ফিলিং হাল্কা প্রাউড।
আমি এখানে কেন? এ প্রশ্নের উত্তরে জানিয়েছিল অনুমতি পেলেই জানাবে, তিমিরেই থেকে যাচ্ছি।
ডাইনি রাজ্যে সব থেকে ভাল লেগেছে লেখাপড়া নিয়ে নানা জানা অজানা বিষয় প্রশ্ন করলেই জানতে পারছি। গালিব থেকে লালন, কিছুই বাদ যাচ্ছে না। তবে একবার কী যেন ঝামেলা হয়েছিল জানতে পারিনি। ম্যাকবেথের ডাকিনীদের সংলাপ নিয়ে কথা বলার সময় সবুজ চোখ সামান্য লাল হয়েছিল, ছুটে গিয়েছিল রানীর কাছে, চিঁচিঁ করেছে অনেক্ষণ, ফিরে এলে এ বিষয়ে আর কোন আলোচনা আর হয়নি, অন্য অনেক অনেক কবিতা শুনেছি, যখন যা মন চেয়েছে,
মানবকুলে যা কিছু যত কিছু কুখাদ্য-অখাদ্য পচা-নোংরা, বাসি ও অপাংক্তেয়, তাই ই ডাইনি রাজ্যে অসম্ভব উপাদেয়, আমার ল্যাখার মত, জেনে ধন্য হলাম। জয়তু ডাইনিকুলশিরোমণি, এত্তদিন পড় উহারা আমারে পাইল, আমিও উহাদের!!
এর ই মধ্যে পাঁচ জনের একটি দল প্রায় মার্চ করে ভিতরে প্রবেশ করেই হাসিহাসি মুখে আবার দ্রুত ফিরে গেল, কারও ঘাড় মটকানোর ফরমান নিয়ে, হতে পারে কোন রাজা না রাণীর!!
আমার বৃদ্ধঘাড়টি যথাস্থানেই আছে, মটকে গেলা যাক না!!
ডাইনির পুংলিঙ্গ কী জানি না, জানতে পারিনি, তবে বংশগতী রক্ষার একটি অতি জটিল প্রক্রিয়া বিশেষ তিথিতে অমাবস্যায় শশ্মানে গিয়ে দেখানোর কথা আছে।
একটি শুঁটকো ডাইনি বুড়ির কথা পরে হলেও হতে পারে;
১৮টি মন্তব্য
নীলাঞ্জনা নীলা
ডাইনি নিয়ে কাব্য! আরোও কতো কি যে দেখবো! তবে আমার মনে হয় ডাইনিরা আপনাকে ভয় পায়, তাই ক্ষতি করবেই না।
যাক,
শুনুন এখানে চায়নিজ দোকানে গরু-শূকরের রক্ত বিক্রী করা হয়। শুনলাম এরা নাকি স্যুপ বানায় এই দিয়ে। আপনার ডাইনি রানীর জন্য এটা কিন্তু ভ্যালেন্টাইনস গিফট হিসেবে দিতে পারেন। 😀
ছাইরাছ হেলাল
শুধু ভয় পায় তা কিন্তু মনে হচ্ছে না (মন দিয়ে পড়ুন),
আপনজনের ক্ষতি কেউ করে না (কেউ কেউ করে মনের ভুলে)
সে সুপ আপনি আগে ট্রাই করে আমাকে জানান, তারপর দেখা যাক কেমতে কী!!
নীলাঞ্জনা নীলা
আমি তো রক্ত পান করিনা। কিন্তু আপনি যে লিখলেন, “তাঁর কাছে এলে সে তার সবুজ চোখের আলো ফেলে একবার দেখল, এরপর এই তিনজনে মিলে এমন ভাবে পাঠাটাকে চেপে ধরলো গলগল করে সব রক্ত মুখ থেকে বের হয়ে এলো, বাবারে বীভৎস, রানীজি আস্তে আস্তে সবটুকু রক্ত বাটিতে নিয়ে পান করে ফেললেন, বাপরে!” তারপরে আপনিও পানীয় পান করেছেন, কিন্তু সেটা কিসের সে কথা কিন্তু বলেননি। 😀
ছাইরাছ হেলাল
ওটি তাঁর পানীয়,
আমার জন্য হইল সারাবান তহুড়া!!
লোভ লাগে!!
নিহারীকা জান্নাত
ভুত প্রেত থেকে এবার ডাইনি?
এরপর নিশ্চই রাক্ষস খোক্কশ নিয়ে লিখবেন 🙂
ছাইরাছ হেলাল
বলা যায় না, কখন কোন ভূত চেপে ধরে!!
শুধুই রাক্ষস-খোক্কোশ না, আরও অনেক কিছুই আছে,
নিহারীকা জান্নাত
এই সিন্দাবাদকে সাথে নিয়ে বসলাম। লিখতে থাকুন।
ভয় কি আমার?
ছাইরাছ হেলাল
আপনি ভয়হীনা তা আগে বলতে হবে তো!!
মিষ্টি জিন
যা বুঝলাম, কি বুঝলাম ?
বুঝলাম ডাইনিদের সাথে ডেটিংয়ে গিয়েছেন। তো ডেটিংয়ের পুরো ঘটনা জানতে চাই। অর্ধেক ,ছেডে ছুডে বললে হপে না।
শুটকো ডাইনি বুডিও পেয়েছেন তাহলে ? ভাল ভাল। ^:^
লেখা অনেক ভালো হয়েছে। :D)
ছাইরাছ হেলাল
আমার কম্মোকাবার হচ্ছে, আর আপনি ডেটিংয়ের ঘ্রাণ পাচ্ছেন!!
কই! কিছুইতো চেপে-ছেপে যাইনি,
আর এক পর্ব দিলেই সবই ফকফকা হয়ে যাবে,
ভাল বলেছেন তাই-ই অনেক!!
জিসান শা ইকরাম
ডাইনি নিয়ে আছেন এখন তাইলে?
খ্রাফ না, এরা এককথার ডায়েন, মাইন্সের মত উল্টা পাল্টা করেনা,
তবে আপনি শেষ,
হে আল্লাহ্, রক্ষা করো ছাইরাছ হেলালকে।
ছাইরাছ হেলাল
আমার এই মরণকালে শেষ-অশেষের কিচ্ছু নেই,
তবে ওরা ভালো, রাখ-ঢাক বা হ্যান-ত্যান নেই, সবই সরাসরি একশন,
মহা প্রভু সাথেই আছেন, থাকেনও!!
আবু খায়ের আনিছ
ভূত নিয়ে নাকি আমিই লিখি, ইদানীং তো আপনিও কম যান না। এই রকম ঘটনা হলে আর শেষ রক্ষার প্রয়োজন ছিল না, তার আগেই আমি পটল তুলে ফেলতাম।
ছাইরাছ হেলাল
সব দোষ দায় আপনার,
আপনি এ সব লাইন দেখিয়েছেন!!
এখনই সব পটল নিয়ে নিলে হবে না,
শুন্য শুন্যালয়
আপনি বমি করেছেন সে নাকি হাওয়ায় মিলিয়ে ক্লিন হয়ে গেছে, যেইসব খাবারদাবারের বর্ননা দিয়েছেন, আমি বমি করে ফেললে তো আমাকেই ক্লিন করতে হতো নাকি? 🙁
এরা অড নাম্বারে ঘুরছে কেন? কাহিনী কী? আম্নেরে মনেহয় এই কারনেই ন্যাছে, সব বেজোড়ের লগে এক যোগ করে দেবে, কমন নাম্বার।
যত্তো অখাদ্য কুখাদ্যও আমরা আপনার লেখার মতোই ডেলিসিয়াস কই, হেইডাই কী আসল কথা? বুজ্জি। শুঁটকো ডাইনীর গল্পের আগে রানীর সাথে মোলাকাতের অংশ দেয়া বাঁকি না?
আল্লাহ্ এই লেখকের কী হইলো হঠাৎ করে? কোন ডাইনী গো আছর পড়লো? 🙁
ছাইরাছ হেলাল
লেখা পড়েই বমন উদ্রেক হলে তো সমস্যা!!
কাওয়া-কাদ্য সামনে এলে কী হয় কে জানে!
দেখুন, মনে নয়, মুখে মুখে যতই ডেলিসিয়াস কন না কেন, এখানে এরা কিন্তু সত্যি করেই সত্যিকথা বলে,
এরা মনে-মুখে একই কথা বলে,
বিলকুল সহি, পরের পর্বেই রানীজীর দেখা পাওয়া যাবে, শান্তি শান্তি,
নেই সেখানে কোন ভ্রান্তি।
মৌনতা রিতু
ডাইনীর বংশ বৃদ্ধি করার ইচ্ছে ^:^
ডাইনি পেত্নী কি শুরু করছেরেএএএ!
ব্লগে জিন থাকতে এতো ডাইনি ভূতের ছড়াছড়ি হলে কি আর চলে!
যাই মুই একটা ফুঁক দিয়া আসি লেবানন গিয়া।
ছাইরাছ হেলাল
দ্রুত লেবানন থেকে ঘুরে আসুন,
সব কিছু এলোমেলো হওয়ার আগেই।