গ্রাম থেকে মিনু ফুফু আসে আমাদের শহরের বাসায়।
ম্যাট্রিক পরীক্ষা দিবে, সেই উপলক্ষে। বাসার কাছেই পরীক্ষার কেন্দ্র। বিরতি দিয়ে দিয়ে প্রায় একমাস অবধি চলে সেইসব দিনের পরীক্ষা। রোজ সন্ধ্যায় ফুফু পড়তে বসে। কখনো কখনো মায়ের বারোহাত কাপড় গায়ে জড়িয়ে জোরে জোরে পড়া মুখস্থ করে। তখন তাঁর আশপাশ মা মা গন্ধে ভেসে যেতে থাকে। গায়ে গা ঘেঁষে বসে থাকি ছোট্ট আমি।
বাসায় বাড়তি মানুষ মানেই আনন্দমহল হয়ে উঠে বাড়িখানা।
কেমন যেন অঘোষিত উৎসব উৎসব পরিবেশ। পরীক্ষা শেষ হয় একদিন। ফুফু সিনেমা দেখতে যায় বাসার পাশের হলে। সাথে আমি। আর কেউ ছিল কিনা মনে নেই। ছায়াছবির নামও মনে নেই। সিনেমা হলের নাম স্বচ্ছ জলের মত খেয়াল আছে। "ছায়াবানী" ।
অন্ধকারে কাচি হলুদের মত গায়ের রং এর মিনুফুফুকে অদ্ভুত সুন্দর দেখাচ্ছিল। হল ভর্তি সকলেই মনোযোগী দর্শক। অদ্ভুত এক নৈঃশব্দ্য। আমার চোখজোড়া ক্লান্তিতে বুঁজে আসে। নিকটবর্তী, দূরবর্তী সবই গাঢ় অন্ধকার লাগে। গাঢ় অন্ধকারে কেউ কি কিছু দেখে ! আমি দেখি, আমরা ঘন সবুজ ধান ক্ষেতের সরু আইল বেয়ে হাত ধরে দৌড়াচ্ছি। মুক্ত বিহঙ্গের মত। বাতাসে পত্পত্ করে উড়ছে মিনুফুফুর শাড়ির আঁচল। উড়ছে আমার লালচে, জট পাকানো চুলও। আমরা খালি পায়ে। ক্লান্ত হতে হতে দৌড়ের গতি কমে আসে। আমরা হাঁটছি। হাঁটতে হাঁটতে নদীর দিকে যাই। সামনে, দূরে, আরো দূরে। ততোক্ষণে সূর্য পশ্চিমে হেলে যেতে যেতে থৈথৈ নদীর জলে ডুবে গিয়ে টুপ করে সন্ধ্যার আঁধার নামায়।
মিনুফুফুর আচ্মকা ডাকে চোখ মেলে দেখি, অন্ধকারে হলুদ আলো জ্বলে উঠে।
সামনের বিশাল পর্দায় ভেসে উঠে লেখা__ " সমাপ্তি "।
......
যে জীবন, যাপন করে এসেছি আমরা, তা একবারই। ওয়ানওয়ে রাস্তার মতন।
যেতে যেতে এগোয় মৃত্যুর দিকে, সমাপ্তির দিকে। আমাদের আর ফেরা হয় না।
কখনোই ফেরা হয় না।
( আজ বাড়ি ফিরবার পথে ভুলবশত যে ওয়ানওয়ে রাস্তায় ঢুকে পড়েছিলাম, যেতে যেতে শেষ মাথায় দেখি " DEAD END " সাইন। মানে রাস্তাটি এখানেই সমাপ্তি )
ভালো থাকুন সকলে...
রিমি রুম্মান
নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র
৩২টি মন্তব্য
ইঞ্জা
আসলেই আপু, যে জীবন যায় তা আর ফিরে আসেনা, মাঝে মাঝে যা দেখি তাও আবার দেজাবু।
আচ্ছা আপু একটা বিষয় খেয়াল করলাম আপনি প্রায় ফেবু, বল্গে আসেন কিন্তু কাউকে কমেন্ট দেননা, কেন জানতে পারি?
রিমি রুম্মান
ফোনের মাধ্যমে ফেসবুক, ব্লগে আসি হুটহাট, সময় পেলে। ফোন দিয়ে কমেন্ট করা সময় সাপেক্ষ ব্যপার। তাই একটু সময় পেলে নিউজ কিংবা ভাল কোন লেখা পড়তে চেষ্টা করি। তবে, কম্পিউটারে বসলে যতটুকু সম্ভব কমেন্ট করার চেষ্টা করি।
ভাল থাকবেন। শুভকামনা।
ইঞ্জা
পুরা গল্প, সামাজিক ব্যবস্থা নিয়ে ফোনে লিখে ফেলি আর আপনি পারবেন না অসম্ভব, চেষ্টা করুন, ভাইয়ের শুভকামনা রইল।
রিমি রুম্মান
ভাই রে, সেই চেষ্টাটুকু করতেও তো সময় দরকার। সময় পেলে আরও কর কি করতাম। বই পড়তাম, লিখতাম । সবার পরিস্থিতি তো আর এক নয়।
ভাল থাকুন সবসময়।
ক্রিস্টাল শামীম
যাক অবশেষে সাইনবোর্ড তো দেখতে পাইছেন। কিছু কিছু সময় আছে। যেতেই থাকি যেতেই থাকি কিন্তু সীমানা পাইনা। তা রাস্তারহোক বা জীবনের।
রিমি রুম্মান
ভাল বলেছেন। সীমানা না পেলেও জীবন এগিয়ে চলে জীবনের নিয়মে।
মৌনতা রিতু
সিনেমা না দেখে মাঠে মাঠে ঘুরে ফিরলে মুক্ত বিহঙ্গের মতো !
তবু তো দেখতে পেলে, ফিরে এলে পথ ভুলেও।
ভাল থেকো, শুভকামনা রইল সবার জন্য।
রিমি রুম্মান
শুভকামনা -{@
ছাইরাছ হেলাল
জীবনের গভীর ও শুদ্ধতম উপলব্ধি,
পথ শুধুই একমুখী এবং তা ডেড এন্ডের দিকে।
রিমি রুম্মান
সেটাই। একমুখী পথ ধরে আমরা এগিয়ে চলছি ক্রমেই শেষের দিকে। সমাপ্তির দিকে।
ব্লগার সজীব
আপু, এভাবে ভাবিনি কখনো, জীবনের পথ ওয়ানওয়ে। লাইনটি চাবুকের মতই লাগলে মনে। জবনের পথে যেতে যেতে আমরা মানুষকে যেন ভাল রাখি।
রিমি রুম্মান
এই একমুখী পথ ধরে এগিয়ে যাবার সময় আমরা যে ভুলটুকু করি, তা কিন্তু শোধরানো যায় না আর। কেননা সে সময়ে তো আমাদের আর ফিরবার উপায় নেই।
নীলাঞ্জনা নীলা
ফেরা হয়না ঠিকই। কিন্তু চলমান সময়ে আরোও যে অনেক পাওয়া আবার পেছনে পড়ে থাকে আপু!
সিনেমার কথা বলতেই মনে পড়ে গেলো, জীবনের প্রথম সিনেমা দেখা ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলোনির কাছে কোন একটা সিনেমাহলে “ছুটির ঘন্টা” মামনির কোলে বসে। নীরব কান্না। আর ঘুমের কথা বললে চা’ বাগানে যাত্রাপালা হতো দূর্গাপুজোর সময়। কতো চেষ্টা থাকতো পুরো যাত্রা দেখার। কিন্তু… 🙁
ভালো থেকো রিমি আপু। -{@
রিমি রুম্মান
গ্রাম থেকে প্রতি বছর যারা এস এস সি কিংবা এইচ এইচ সি পরীক্ষা দিতে আসতো আমাদের বাসায়, পরীক্ষার শেষ দিনে সবাইই সিনেমা দেখতে, শপিং করতে যেতো। আর আমাদের সাথে নিতো। এমন করে পিচ্চি বয়সে আমাদের বেশ কিছু মুভি দেখার সুযোগ হয়। বলাবাহুল্য, সেই সময়ে গ্রামের স্কুলে পরীক্ষার কেন্দ্র হতো না।
ভাল থেকো, নিরাপদ থেকো। -{@
নীলাঞ্জনা নীলা
রিমি আপু হুম একসময় গ্রাম গ্রামই ছিলো। এখন গ্রাম আর নেই। আমাদের ছোট্ট মফঃস্বল শহরটা আজ কতো বদলে গেছে।
ভালো রেখো আপু। -{@
মারজানা ফেরদৌস রুবা
জীবন এগিয়ে চলেছে সমাপ্তির পথে!
ওয়ানওয়ে রাস্তায় হাটতে হাটতে পেছনে কেবল স্মৃতিচারনই, ফেরার কোন উপায় নেই। এই তো জীবন!!
রিমি রুম্মান
অনেকটা রাস্তা এগিয়ে যাবার পর পিছনে ফিরলে মনে হয় এত ছোট কেন, এত সংক্ষিপ্ত কেন ! জীবন আসলেই অনেক ছোট।
মোঃ মজিবর রহমান
জীবন চলে ফেরে না।
আপনার লেখা হ্রিদয়গম লরলাম
DEAD END (y)
রিমি রুম্মান
অনেক শুভকামনা।
মোঃ মজিবর রহমান
আপনাকেও শুভেচ্ছা আপু।
রিমি রুম্মান
দুইদিন বাদে ঈদ। ঈদের অগ্রিম শুভেচ্ছা। -{@
মোঃ মজিবর রহমান
আপু আপনিসহ সকল ব্লগারকে ঈদের অগ্রীম শুভেচ্ছা।
শুন্য শুন্যালয়
অনেকদিন আগে, রাস্তার স্পিড লিমিট সাইনের ছবি তুলে রেখেছিলাম, মনের মধ্যে অনেকটা এরকম কএকটা লাইন ঘুরঘুর করেছিল, আচমকা ১১০ কিমি থেকে আমাদের কখনো ৪০ কিমি স্পিডেই চলতে হয়, যখন ভেঙ্গেচুড়ে যায় পথ, ভেঙ্গে পড়বার জন্য নয়, বরং মেরামত করে আবার নতুন করে চলার জন্য।
কি সুন্দর করেই লিখলেন Dead End এর কথা, আর ঘুম ভেঙ্গে বড় স্ক্রিনে দেখা “সমাপ্তি”। আমরা ওয়ান ওয়েতেই চলি, আর ফেরা হবেনা সেই পথে, তবুও ধন্যবাদ আমাদের মেমোরির কিছু প্রকোষ্ঠের কাছে।
অনেক অনেক সুন্দর একটি লেখা।
রিমি রুম্মান
কি সুন্দর করেই না মন্তব্য করলেন। এমন মন্তব্যে লিখতে উৎসাহিত হই আরও।
একটু সময় পেলে কত লেখাই না লিখতে মন চায়।
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
ফেবুকেই পড়েছি চমৎকার অনুভুতি -{@
রিমি রুম্মান
ঈদের অগ্রিম শুভেচ্ছা… -{@
লীলাবতী
মন খারাপ হলেও সত্যি লিখেছেন আপু। যে সময়ের পথে আমরা হেঁটে যাই, সে সময়ের পথে আর ফেরা হয় না। ওয়ান ওয়ে রোড। ভাল থাকুন আপু।
রিমি রুম্মান
ফেলে আসা পথের স্মৃতি সবার সুন্দর হোক।
ঈদের শুভেচ্ছা , লীলা’পু… -{@
লীলাবতী
আপনাকেও ঈদের শুভেচ্ছা রিমি রুম্মানাপু -{@
কেসি মিলান
জীবনের গতি সম্পর্কে যে ধারণা তা আরওপরিষ্কার হলো।
আপা আপনাকে ধন্যবাদ।
আপনার লেখা খুব ভাল লেগেছে।
রিমি রুম্মান
লেখা ভাল লেগেছে জেনে ভাল লাগলো । ভাল থাকুন, নিরাপদ থাকুন। ঈদের শুভেচ্ছা। -{@
মুহাম্মদ আরিফ হোসেইন
ক্ষুদ্র একটা জীবন! কত কত পথ!!