আমাদের কখনোই আর ফেরা হয় না

রিমি রুম্মান ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬, রবিবার, ০১:২৫:০৮অপরাহ্ন একান্ত অনুভূতি ৩২ মন্তব্য

গ্রাম থেকে মিনু ফুফু আসে আমাদের শহরের বাসায়।

ম্যাট্রিক পরীক্ষা দিবে, সেই উপলক্ষে। বাসার কাছেই পরীক্ষার কেন্দ্র। বিরতি দিয়ে দিয়ে প্রায় একমাস অবধি চলে সেইসব দিনের পরীক্ষা। রোজ সন্ধ্যায় ফুফু পড়তে বসে। কখনো কখনো মায়ের বারোহাত কাপড় গায়ে জড়িয়ে জোরে জোরে পড়া মুখস্থ করে। তখন তাঁর আশপাশ মা মা গন্ধে ভেসে যেতে থাকে। গায়ে গা ঘেঁষে বসে থাকি ছোট্ট আমি।

বাসায় বাড়তি মানুষ মানেই আনন্দমহল হয়ে উঠে বাড়িখানা। 

কেমন যেন অঘোষিত উৎসব উৎসব পরিবেশ। পরীক্ষা শেষ হয় একদিন। ফুফু সিনেমা দেখতে যায় বাসার পাশের হলে। সাথে আমি। আর কেউ ছিল কিনা মনে নেই। ছায়াছবির নামও মনে নেই। সিনেমা হলের নাম স্বচ্ছ জলের মত খেয়াল আছে। "ছায়াবানী" ।

অন্ধকারে কাচি হলুদের মত গায়ের রং এর মিনুফুফুকে অদ্ভুত সুন্দর দেখাচ্ছিল। হল ভর্তি সকলেই মনোযোগী দর্শক। অদ্ভুত এক নৈঃশব্দ্য। আমার চোখজোড়া ক্লান্তিতে বুঁজে আসে। নিকটবর্তী, দূরবর্তী সবই গাঢ় অন্ধকার লাগে। গাঢ় অন্ধকারে কেউ কি কিছু দেখে ! আমি দেখি, আমরা ঘন সবুজ ধান ক্ষেতের সরু আইল বেয়ে হাত ধরে দৌড়াচ্ছি। মুক্ত বিহঙ্গের মত। বাতাসে পত্‌পত্‌ করে উড়ছে মিনুফুফুর শাড়ির আঁচল। উড়ছে আমার লালচে, জট পাকানো চুলও। আমরা খালি পায়ে। ক্লান্ত হতে হতে দৌড়ের গতি কমে আসে। আমরা হাঁটছি। হাঁটতে হাঁটতে নদীর দিকে যাই। সামনে, দূরে, আরো দূরে। ততোক্ষণে সূর্য পশ্চিমে হেলে যেতে যেতে থৈথৈ নদীর জলে ডুবে গিয়ে টুপ করে সন্ধ্যার আঁধার নামায়।

মিনুফুফুর আচ্‌মকা ডাকে চোখ মেলে দেখি, অন্ধকারে হলুদ আলো জ্বলে উঠে।

সামনের বিশাল পর্দায় ভেসে উঠে লেখা__ " সমাপ্তি "।

......

যে জীবন, যাপন করে এসেছি আমরা, তা একবারই। ওয়ানওয়ে রাস্তার মতন।

যেতে যেতে এগোয় মৃত্যুর দিকে, সমাপ্তির দিকে। আমাদের আর ফেরা হয় না।

কখনোই ফেরা হয় না।

( আজ বাড়ি ফিরবার পথে ভুলবশত যে ওয়ানওয়ে রাস্তায় ঢুকে পড়েছিলাম, যেতে যেতে শেষ মাথায় দেখি " DEAD END " সাইন। মানে রাস্তাটি এখানেই সমাপ্তি )

ভালো থাকুন সকলে...
imgpsh_fullsize (1) []

রিমি রুম্মান

নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র

0 Shares

৩২টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ