আনন্দপুর জায়গাটা প্রাচীনকাল হতে ভ্রমণের জন্য উপযোগী। দেশের বাইরে থেকে অনেক লোক আসে।
প্রাকৃতিক পরিবেশ এছাড়া এ অঞ্চলের আবহাওয়া  ছিলো অন্যরকম। বিশেষ করে জমিদাররা আসতেন আনন্দপুর ভ্রমণে। আনন্দপুর জায়গাটা না শহর,না গ্রাম। এ দুইয়ের মাঝামাঝি ছিলো।
চারদিকে উঁচুনিচু, ঢালু, ভঙ্গিল পাহাড় আর সবুজে আচ্ছাদিত গাছপালা দিয়ে ডাকা।
জমিদার হরিবাবুর বাড়িতে বড় হলঘর ছিলো এছাড়া রয়েছে বৈঠকখানা। জমিদারগণ আসতেন এবং গল্পগুজব ও আলাপ আলোচনা করতেন।
পূর্বে জমিদার হরিবাবুর দীঘির পাড়ে সাত সওদাগরের ডিঙি ঠেকতো। বাগানবাড়ির ঠিক পূর্বপাশে প্রতিবছর চৈত্রসংক্রান্তিতে চড়ক ও গাজন উৎসব হতো।
দেশবিদেশের নানা প্রান্ত হতে লোকজন ও তান্ত্রিক সাধু ঋষিরা আসতেন। উৎসবে দোকানিপসরীরা নানা জিনিসপত্র নিয়ে বসত।
ছোটদের জন্য নাগরদোলা, বায়স্কোপ, সাপের খেলা, আকাশে সাতরঙা ঘুড়ি উড়ানো ইত্যাদি কতকিছুর আনন্দমেলা জমে উঠতো। রাতে পালাগান, যাত্রাগানের আসর বসত আর আগত জমিদারগণ তা দেখে মনস্পন্দিত হতেন।
তখন ষাট দশকের কথা। জমিদারবাড়ি ছিলো ভিন্ন রঙের সাজে সজ্জিত। গোলাভরা ধান, গোয়ালভরা গরু, সপ্ততরী ডিঙি, ছিলো অশ্বশালা, গজশ্বালা ছিলো অজস্র রক্ষী।
ছিলোনা ভূতপ্রেতের আভাস। তবে প্লানচেটের মাধ্যমে
জমিদারবাড়ির পূর্বপুরুষের আত্মার আবাহন করা হতো। এ ঐতিহ্য আজও ধরে রেখেছেন জমিদার হরিবাবু।
একে একে আজকাল সবকিছু ভূতের ভয়ে হারতে বসেছে। ডুবতে বসেছে ষাট দশকের ঐতিহ্যবাহী জমিদারবাড়ির নাম। লোকজন এখন ভূতবাড়ি বলে ডাকে। কঠিন শাস্তির নীতি প্রয়োগ করেও ঠেকাতে পারছেন না হরিবাবু।
দেশের প্রতিটা জমিদারবাড়ির একেকটা ঐতিহ্য থাকে। কিন্তু সে ঐতিহ্যটা আজ ধরে রাখা বড্ড কঠিন হয়ে পড়েছে।
একে তো বউয়ের ভাইয়ের বিরুদ্ধে কথা বললে যা তা শুনতে হয়। তার উপর ভূত ধরেছে ঘাড়চেপে।
এতসব জ্বালাযন্ত্রণা নিয়ে ঠিকে আছেন জমিদারবাবু।
লালমোহনের বিয়ের জন্য চারটে পাঁঠা বলি ইতিমধ্যে হয়ে গিয়েছে। চলছে ঘরজামাই হয়ে না থাকার তন্ত্রমন্ত্র।
অবশেষে ঘরজামাই হতে মুক্ত করে দিলেন নগেন জ্যোতিষী।
বিয়ে না হওয়ার পূর্বেই সকাল পোহালে বাড়িতে লোকজন ডেকে এনে মিষ্টি খাওয়ার উপদ্রব পড়ে যায়।
বিনু ও রাঘব দুজনি ডাক্তার নীলুদা শঙ্করের মুখে ভূতের গল্প শুনে ঘুমিয়ে পড়েছে। ভোর হতেই ডাক্তার নীলুদা তামাক খাচ্ছেন। তামাকের লোভনীয় ঘ্রাণে সে ভোর থেকে হরিবাবু নিজেকে সামলিয়ে না রাখতে পেরে, নিজেই দু এক টান দিলেন। তবে নীলুদা শঙ্করের হুকা দিয়ে নয়।
সকালবেলা ঘুম থেকে উঠেই বিনু ও রাঘব দুজনি মিষ্টিমুখে ভরপুর হয়ে উঠেছে। লালমোহনের এ যেন আনন্দের শেষ নেই।
লালমোহনের এমন গোপাল লীলা দেখে হাসছেন হরিবাবু।
আর বলছেন..
এক দুই তিন,
এবার ঠিক হলো কী ঘরজামাই লালমোহনের বিয়ের দিন?
এ কী বলছেন জামাইবাবু!
আমি ঘরজামাই হতে যাবো কেন?
না না তুমি আমার সোহাগী আদরের বউয়ের একমাত্র ভাই আমার অকালকুষ্মাণ্ড শ্যালক।
তুমি ঘরজামাই হয়ে শ্বশুরবাড়ির থাকলে সেটা আমার লজ্জার বিষয়!
আর যাই হোক জ্যোতিষী মশাইকে বলো বিয়ের দিনতারিখ ঠিক করার পূর্বে ঘাড়ে যে তিন চারটে পেত্নী আছে সেগুলোকে তাড়িয়ে দিতে!
এমন কথা শুনে রাঘবের সন্দেহের মাত্রা বেড়ে গিয়েছে।
কখন কাকে ভূত আর পেত্নী ধরে তা বুঝে উঠা বড্ড মুশকিল।
যাই হোক এইবার ভূত দেখেই ছাড়বে রাঘব।
বিনু একজনের কাছ হতে জানতে পারলো যে জমিদারবাড়ির বাগানবাড়িতেও না কী আফ্রিকার ভয়ংকর জঙ্গলের ভূতপ্রেত রয়েছে।
তাও আবার ভিন্নরকমের ভূতপ্রেতের বসবাস।
সে কথা রাঘব জানলে ভয়ে কেপে উঠে।
আর ভাবছে তাহলে কী জমিদারবাবু আমাদেরকে ভূতপ্রেতে জায়গায় ঘুমাতে দিয়েছিলেন এতদিন!
কিন্তু দুজনি আজও একটা রাত্রি ভূতের ভয়ে ঘুমাতে পারেনি। তাদের মনে একের পর একেক সংশয় কেটে ভূতপ্রেত আছে বলে বিশ্বাস। শুধু সচক্ষে দেখার পালা। সচক্ষে ভূত দেখতে হলে ডাক্তার নীলুদা শঙ্করের সাথে পূর্ববঙ্গে যেতে হবে।
কিন্তু রাঘব বিনুর গতকালকের একটা কথা ভাবতে পারছেনা। তাহলো ভূত কি মরে। ভূতের কি আবার মরা মাথার খুলি আছে। যা নাকি একেক সময় একেক রূপ ধরে। এমন অদ্ভুত কথাবার্তা।
কি আর করা হলেই হতে পারে।

0 Shares

২২টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ