আমার অনুমান যদি ভুল না হয়, রাহেলা আপুর বয়স পঞ্চাশ প্লাস। অবিবাহিতা। স্বভাবগত কারনে নিজ থেকে কারো একান্ত বিষয়গুলো জানতে চাই না কখনো আমি। কর্মসুত্রে পরিচিত আপুটার সাথে আমার সখ্যতা বেশ। অমায়িক ব্যাবহার আর নিজস্ব এক ক্ষমতায় সবাইকে কেমন যেন মোহাচ্ছন্ন করে রাখতো। তিনি যখন কথা বলেন, আমি তার মুগ্ধ শ্রোতা। লাঞ্চ ব্রেকে একদিন বললেন তার জীবনের গল্প____
ছোটবেলা কিংবা বেড়ে উঠা জীবনে তার চোখ ধাঁধানো কোন জগত ছিল না। রক্ষণশীল পরিবারে বেড়ে উঠেছেন। লেখাপড়া, ভাল রেজাল্ট... এসবের পিছনে ব্যয় করেছেন সোনালী সময়গুলো। সর্বোচ্চ ডিগ্রি নিয়ে মফস্বলের একটি কলেজে শিক্ষকতা করতেন। সে সময় ক্রস কানেকশনে পরিচয় ঢাকায় বসবাসরত রোহানের সাথে। রাহেলা আপু'র কণ্ঠস্বর, কথা বলা... এসবে মুগ্ধ রোহান পৃথিবী ওলট-পালট করে দেয়ার মত করে ভালবাসলো। রাহেলা আপুর ভাষায়___ "সে এক "দুর্দান্ত প্রেম" ছিল আমাদের। ঘোর লাগা সময়ের মধ্য দিয়ে পেরিয়ে গেছে তিনটি বসন্ত।" রোহান দেখা করতে চায় যে কোন দিন... যে কোন সময়... যে কোন স্থানে। কোন এক অজানা আশংকায় রাহেলা আপু রাজী হয়নি এতদিন। অবশেষে রোহানের জেদের কাছে হার মেনে সম্মতি দিয়েছেন।
ফোনে কথা শুনে শুনে আচ্ছন্ন হয়ে থাকতো যে রোহান, দেখা হবার পর... রাহেলা আপু'র ভাষায়___" গোধূলিবেলার রক্তিম আলোটুকু যেমন দ্রুততার সাথে মিলিয়ে যায়, তার চাইতেও দ্রুততার সাথে মিলিয়ে গেলো রোহানের মুখের উজ্জ্বল হাসিটুকু___ যখন দেখা হলো আমাদের।"
আমি বাকরুদ্ধ হয়ে চেয়ে থাকি ! অনেক বছর আগের স্মৃতিতে ফিরে যাওয়া রাহেলা আপু'র বিষাদময় মুখখানার দিকে। বললেন, "মোহ বলো, মুগ্ধতা বলো... দূরত্ব কমলে সবই উবে যায়।"
দেখতে অসুন্দর বলে সেই দিনের পর ওপ্রান্তের ফোন আর রিসিভ করেনি জগত এফোঁড়-ওফোঁড় করে দেয়া ভালোবাসার মানুষটি। আকাশসম বিষণ্ণতা আর অভিমানে নিজেকে শামুকের মতো গুটিয়ে রাখেন আপুটি। এরপর তিনি আর কারো করুনার পাত্রী হয়ে থাকতে চাননি, তাই এই একাকী পথ চলা...
তার গল্প আমার ভেতরে একরকম হাহাকারের জন্ম দেয় যদিও, তবুও আমার ভাবতে ভাললাগছে যে... বর্তমানের রাহেলা আপু অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী...
একজীবনে মানুষের সব চাওয়াগুলো পূর্ণতা পায়না জানি। তবুও বলি,বাহ্যিক সৌন্দর্যই কি সব ? ক্ষণস্থায়ী সৌন্দর্যের পিছনে ছুটে চলা মানুষগুলো কখনো ভাবে না___মানুষের অন্তর্গত সৌন্দর্যই আমাদের চারপাশ আলোকিত করে রাখে প্রতিক্ষন... প্রতিদিন... যুগ যুগ...
শুভকামনা সবাইকে...
২৪টি মন্তব্য
ছাইরাছ হেলাল
এ কঠিন বাস্তবতা অনেক সময়ই আমার এড়াতে পারি না।
রিমি রুম্মান
ঠিক বলেছেন। এড়িয়ে যাওয়া হয়না অনেকের। ভাল থাকুন। শুভকামনা নিরন্তর।
সাইদ মিলটন
রাহেলা আপুরা বড্ড বোকা 🙂
তারা হৃদয়টাকেই সত্যি ভেবে বসে আছে।
দুনিয়া হৃদয় দিয়ে চলেনা।
রিমি রুম্মান
কিছু মানুষ বড্ড সহজ সরল।
জিসান শা ইকরাম
শ্রদ্ধা রাহেলা আপুর প্রতি
বিষন্ন না থেকে তিনি যে ঘুরে দাড়িয়েছেন, এটি দৃষ্টান্ত হবে অনেকের কাছে।
এসব আসলেই অসুন্দরের গল্প
মুখে যত কিছুই বলিনা কেনো, আমরা আসলে বাহ্যিক দিকটিই বেশী দেখি।
সোনেলায় সময় দিচ্ছেন দেখে ভালো লাগছে।
রিমি রুম্মান
সোনেলায় ফিরে ফিরে আসি ভালোলাগা থেকে, ভালোবাসা থেকে। ভাল থাকুন সবসময়।
মেহেরী তাজ
খারাপ লাগলো আপু। অসুন্দর মেয়েদের আসলে এমনই পরিনতি হয়। অন্যদিকে ছেলেরা অসুন্দর হলে, তার শিক্ষাগত যোগ্যতা বিবেচনায় এনে তাঁকে যোগ্য ভাবা হয়।
রিমি রুম্মান
মানুষের সৌন্দর্য মুলত মনে__ এটি আমরা ভুলে যাই।
আবু জাঈদ
তোর কলম আগের চেয়ে বেশি তাজা হয়েছে রিমি। অনুভুতির কি সুন্দর প্রকাশ
রিমি রুম্মান
অনেকদিন পর এলি সোনেলায়। অথচ দেখ্ , তোর লেখা পড়তে এসেই আমার সোনেলায় আসা।
ওয়ালিনা চৌধুরী অভি
আপনি একজন রাহেলা আপুর কথা বললেন, এমনি হাজারো রাহেলা আপুর কান্না বাতাসে মিশে আছে। ভালো ভাবেই ফুটিয়ে তুলেছেন।
রিমি রুম্মান
রাহেলা আপু’রা চিরকাল চাপা স্বভাবের হয়। একাকি কষ্ট পায়, তবু কাউকে প্রকাশ করে না।
অলিভার
মোহ বলো, মুগ্ধতা বলো… দূরত্ব কমলে সবই উবে যায়
সত্যিই তাই। মানুষ বাহ্যিক সৌন্দর্যের খোলস দেখে এগিয়ে যাওয়াকে এখনো পিছু ছাড়াতে পারে নি। অন্তরের সৌন্দর্য বরাবরই এই বাহ্যিক সৌন্দর্যের দৌড়ে পিছনে পড়ে থাকে। খুব অল্প ক’জনই তার ভেতরের সৌন্দর্যকে শক্তি বানিয়ে এগিয়ে যেতে পারে। আপনার রাহেলা আপুও তাদের একজন।
রিমি রুম্মান
মানুষের বাহ্যিক সৌন্দর্যের মোহ থেকে কবে আমরা বেরিয়ে আসতে পারবো ?
শুন্য শুন্যালয়
বাহিরের সৌন্দর্যে মুগ্ধ এরকম একজনের জন্য পুরো জীবন্ এভাবে কাটিয়ে দেয়া মেনে নিতে পারলাম না। তবে নিজের যোগ্যতায় ও যে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা যায়, তার আদর্শ প্রমান তিনি। শ্রদ্ধা এমন মানুষের প্রতি।
রিমি রুম্মান
তিনি শক্ড হয়েছেন। তাই তো আর কাউকে বেছে নিতে পারেননি নিজের জন্যে। তবে তিনি ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। এটি একটি উদাহরণ আমাদের জন্যে।
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
বলাবাহুল্য সুন্দরের ইতি নেই…একটার পর একটা তুলনামুলক ভাবে সৌন্দর্য্য বৃদ্ধির দিকেই নিয়ে যাবে।আরো একটি কথা আছে যার নয়নে যারে লাগে ভালো।তবে বাহিরের সৌন্দর্য্যের চেয়ে ভিতরে মনের সৌন্দর্য্যকেই আমরা যেন মানুষ বলি তারে।
রিমি রুম্মান
ভেতরের সৌন্দর্য খুব কম সংখ্যক মানুষই দেখতে পায়।
হৃদয়ের স্পন্দন
আমি বুঝিনা মানুষ কেন মন রেখে দেহ আর তার সৌন্দর্য এর প্রতি ছুটে, সেলুকাস মানুষ সেলুকাস দুনিয়া
রিমি রুম্মান
এটিই ঘটছে অহরহ আমাদের আশেপাশে। তবে আত্মবিশ্বাস নিয়ে এগিয়ে যাওয়াই মঙ্গল।
মোঃ মজিবর রহমান
জানিনা আমি এত বুঝিনা।
মনে ছুয়ে গেল।
রিমি রুম্মান
কোন লেখা পাঠকের মন ছুঁয়ে গেলে তাতেই লেখা এবং লেখকের সার্থকতা।
লীলাবতী
বাইরের রুপকে প্রাধান্য দেয়ার মন মানসিকতা সম্পন্ন মানুষই বেশি আপু। রাহেলা আপুর প্রতি শ্রদ্ধা।
রিমি রুম্মান
এমন পরিস্থিতির শিকার রাহেলা আপুরা আত্মবিশ্বাস নিয়ে এগিয়ে যাক্, সেই কামনা থেকেই লেখাটি লিখা আমার। ভাল থাকুন সবসময়।