অশুভ জন্মদিন

নাসির সারওয়ার ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৬, বৃহস্পতিবার, ১০:৪৮:২০পূর্বাহ্ন একান্ত অনুভূতি ৩৭ মন্তব্য

এযুগের জন্মদিনের চিল্লাচিল্লি দেখে কিছুটা হলেও হিংসিত হই। কারণ আমার ছোট বেলাটায় তেমন উল্লেখ করার মত কোন জন্মদিনের কাহিনী নেই। মাঝে মধ্যে একটু ভালো খাবার দিয়েই মা সবাইকে মনে করিয়ে দিতেন। তবে আজকাল আমার জন্মদিন উৎসব হয়! ব্যাপারটা ভাবতেই বেশ লাগে।

দুষ্ট ভাতিজার জন্মদিন উৎসব। সে অনেক হৈ চৈ ব্যাপার। কত কত বেলুন যা আমার সেই সময় দেখা হয়নি। আমাকে আড়াল করে বেশ শক্ত পোক্ত দাবি, আমার ১৪ বছরের জন্মদিনে কী কী হয়েছে! মনটাই খারাপ হয়ে গেলো। ঐ জন্মদিনের কথা মনেই আনতে পারছিনা। তবে অন্য একটা বন্ধুর ১৪ তম জন্মদিনের কথা সাড়া জীবনই তো মনে থাকার কথা।

সাত বোনের একমাত্র লুতুপুতু ভাই, আমার বন্ধু স্বপন। ওরও মেয়ে হয়েই জন্মানো উচিৎ ছিলও। মাঝে মাঝে মেয়েদের মত সাজত। আমাদের হাসির খোঁড়াক যোগাতো সে সময়। একদিন শুনলাম তার জন্মদিন পালন হবে বেশ ঘটা করে। ওকে বাদ দিয়ে শুরু হলো অন্য বন্ধুদের শলা পরামর্শ। কী করা হবে সেদিন, বন্ধুর জন্মদিন বলে কথা।

মহল্লাতেই থাকেন একজন বিশিষ্ট পল্লীগীতি শিল্পী। চাচা, একটা গান লিখে দেন জন্মদিনের। জানতাম উনি কিছু লিখে দেবেন এবং শুরু হোল সেই চার লাইন গানের চর্চা। সাথে একটা কবিতা আবৃতিও হবে। দিনটা যত কাছে আসছে, আমাদের প্রস্তুতিও ততই বেশী বেশী চলছে। অবশেষে সেই দিন আসলো। ওমা, আমরা যেতে পারবোনা! বলে কী ! আমরাতো দাওয়াত এর জন্য বসে থাকিনি। কিন্তু খবর আসলো আমাদের যাওয়া মানা। ছোট ছোট মনগুলোর কিযে কষ্ট তা কেউ কাউকে বলতে পারছিনা। যে দিকে তাকাই, সব মনে হচ্ছে সরষে ক্ষেত। মরার উপর খাড়ার গাঁ যখন শুনলাম দুই বন্ধু পরিবার আমন্ত্রণ পেয়েছে আত্মীয় বলে।

কোনভাবেই হজম হচ্ছেনা। কিন্তু কী ই বা করার আছে। নাহ, কিছু একটা করতেই হবে যে। এ অপমান গায়ে সইছে না। অল্প সময়েই পরিকল্পনা রেডি। শুধু সাধন (সেই শিল্পী চাচার ছেলে) হলেই এই প্লানটা বাস্তবে নিয়ে আসা যাবে। সে খুবই ভালো একটা ছেলে। হাত ধরলে কাউকে সে না বলতে পারেনা। আমার আইডিয়া গুলো বেশ ভালো ভাবেই বিক্রি হত তখন (এখনো হয় কিন্তু!)। প্রথমটা বাদ দিলাম বেশ কঠিন হয়ে যাবে বলে। দ্বিতীয়টায় সবার সম্মতি পেলাম। চলে গেলাম বাজারে দুটো মিষ্টির মাটির হাড়ি কিনতে। মহাল্লেতেই দুটো পরিবার গরু পালত। হাড়ি দুটোর কারণে গরুগুলো বেশ হাসি হাসি করছে।

আমাদের এলাকার ঘরবাড়ি গুলো বেশ একই রকম বাংলো টাইপের ছিল তখন। চারিদিকে দেয়াল এবং মাঝ খানে ঘর। স্বপনদের বাড়ির সামনের লনটা বেশ বড় সড় ছিল (এখনো তেমনই আছে)। সেখানেই ঢাউস আকারের কয়েকটা টেবিল মিশিয়ে সাজানো হয়েছে আপ্যায়ন কেন্দ্র। সব সার্ভে শেষ করে ঐ বাড়ির সামনে পাহারা বসানো হোল পালাক্রমে। অপেক্ষা সেই বিশেষ মুহূর্তের।

অবশেষে সেই ক্ষণ। বো টাই পরা সাজুগুজু করা স্বপনের আগমন। আমদের আর তর সইছে না। আরে ভাই শুরু করুন আপনাদের গান! হ্যাপি বার্থ ডে টু ...। কেক কাটা পর্যন্ত আর অপেক্ষা সইলো না। দুটো হাড়ি আঘাত হানল সেই ঢাউস টেবিলদের উপরে। আহা, এইতো বেশ অশুভ জন্মদিন উপহার।

0 Shares

৩৭টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ