এযুগের জন্মদিনের চিল্লাচিল্লি দেখে কিছুটা হলেও হিংসিত হই। কারণ আমার ছোট বেলাটায় তেমন উল্লেখ করার মত কোন জন্মদিনের কাহিনী নেই। মাঝে মধ্যে একটু ভালো খাবার দিয়েই মা সবাইকে মনে করিয়ে দিতেন। তবে আজকাল আমার জন্মদিন উৎসব হয়! ব্যাপারটা ভাবতেই বেশ লাগে।
দুষ্ট ভাতিজার জন্মদিন উৎসব। সে অনেক হৈ চৈ ব্যাপার। কত কত বেলুন যা আমার সেই সময় দেখা হয়নি। আমাকে আড়াল করে বেশ শক্ত পোক্ত দাবি, আমার ১৪ বছরের জন্মদিনে কী কী হয়েছে! মনটাই খারাপ হয়ে গেলো। ঐ জন্মদিনের কথা মনেই আনতে পারছিনা। তবে অন্য একটা বন্ধুর ১৪ তম জন্মদিনের কথা সাড়া জীবনই তো মনে থাকার কথা।
সাত বোনের একমাত্র লুতুপুতু ভাই, আমার বন্ধু স্বপন। ওরও মেয়ে হয়েই জন্মানো উচিৎ ছিলও। মাঝে মাঝে মেয়েদের মত সাজত। আমাদের হাসির খোঁড়াক যোগাতো সে সময়। একদিন শুনলাম তার জন্মদিন পালন হবে বেশ ঘটা করে। ওকে বাদ দিয়ে শুরু হলো অন্য বন্ধুদের শলা পরামর্শ। কী করা হবে সেদিন, বন্ধুর জন্মদিন বলে কথা।
মহল্লাতেই থাকেন একজন বিশিষ্ট পল্লীগীতি শিল্পী। চাচা, একটা গান লিখে দেন জন্মদিনের। জানতাম উনি কিছু লিখে দেবেন এবং শুরু হোল সেই চার লাইন গানের চর্চা। সাথে একটা কবিতা আবৃতিও হবে। দিনটা যত কাছে আসছে, আমাদের প্রস্তুতিও ততই বেশী বেশী চলছে। অবশেষে সেই দিন আসলো। ওমা, আমরা যেতে পারবোনা! বলে কী ! আমরাতো দাওয়াত এর জন্য বসে থাকিনি। কিন্তু খবর আসলো আমাদের যাওয়া মানা। ছোট ছোট মনগুলোর কিযে কষ্ট তা কেউ কাউকে বলতে পারছিনা। যে দিকে তাকাই, সব মনে হচ্ছে সরষে ক্ষেত। মরার উপর খাড়ার গাঁ যখন শুনলাম দুই বন্ধু পরিবার আমন্ত্রণ পেয়েছে আত্মীয় বলে।
কোনভাবেই হজম হচ্ছেনা। কিন্তু কী ই বা করার আছে। নাহ, কিছু একটা করতেই হবে যে। এ অপমান গায়ে সইছে না। অল্প সময়েই পরিকল্পনা রেডি। শুধু সাধন (সেই শিল্পী চাচার ছেলে) হলেই এই প্লানটা বাস্তবে নিয়ে আসা যাবে। সে খুবই ভালো একটা ছেলে। হাত ধরলে কাউকে সে না বলতে পারেনা। আমার আইডিয়া গুলো বেশ ভালো ভাবেই বিক্রি হত তখন (এখনো হয় কিন্তু!)। প্রথমটা বাদ দিলাম বেশ কঠিন হয়ে যাবে বলে। দ্বিতীয়টায় সবার সম্মতি পেলাম। চলে গেলাম বাজারে দুটো মিষ্টির মাটির হাড়ি কিনতে। মহাল্লেতেই দুটো পরিবার গরু পালত। হাড়ি দুটোর কারণে গরুগুলো বেশ হাসি হাসি করছে।
আমাদের এলাকার ঘরবাড়ি গুলো বেশ একই রকম বাংলো টাইপের ছিল তখন। চারিদিকে দেয়াল এবং মাঝ খানে ঘর। স্বপনদের বাড়ির সামনের লনটা বেশ বড় সড় ছিল (এখনো তেমনই আছে)। সেখানেই ঢাউস আকারের কয়েকটা টেবিল মিশিয়ে সাজানো হয়েছে আপ্যায়ন কেন্দ্র। সব সার্ভে শেষ করে ঐ বাড়ির সামনে পাহারা বসানো হোল পালাক্রমে। অপেক্ষা সেই বিশেষ মুহূর্তের।
অবশেষে সেই ক্ষণ। বো টাই পরা সাজুগুজু করা স্বপনের আগমন। আমদের আর তর সইছে না। আরে ভাই শুরু করুন আপনাদের গান! হ্যাপি বার্থ ডে টু ...। কেক কাটা পর্যন্ত আর অপেক্ষা সইলো না। দুটো হাড়ি আঘাত হানল সেই ঢাউস টেবিলদের উপরে। আহা, এইতো বেশ অশুভ জন্মদিন উপহার।
৩৭টি মন্তব্য
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
আমাদের সময় জন্ম দিনের তারিখটি স্কুলের হেড মাষ্টার দিতো যখন ssc পরীক্ষার সময় হয়।তখন সরকারি চাকুরীর মেয়াদের কথা মাথায় রেখে তারিখটি ভাবেন।যেমন আমার 01-01-1974 একই দিন একই তারিখ অবিস্বাস্য! হা হা হা -{@ আপনার ভাতিজাকে জানাই জন্ম দিনের শুভেচ্ছা -{@
নাসির সারওয়ার
তবে স্যাররা মাস আর দিনটা ঠিক রেখে সনটা আগপিছ করতে পারতেন। আমাদের ক্লাসের চারজনের জন্মদিন এক। দিন মাস ও সন।
জন্মদিন পালন চলতে থাকুক আরো শ’বছর।।
ছাইরাছ হেলাল
আপনার বয়স বোধ করি ধাড়ি বটবৃক্ষের সমান, তার আবার জন্মদিন!!
কালে কালে কত্ত গপ শুনতে হপে কে জানে!
চৌদ্দতমতেই ঢাউস হাড়ির কারবার! তা এখন কী কী ফাটাচ্ছেন তার বিশদ বর্ণনা জাতি আশা করতেই পারে,
যাক এভাবে আকামা জন্মদিনের জন্য হলেও লেখা পড়ার সুযোগ পেলাম, বহুদিন পর!
নাসির সারওয়ার
ধাড়ি কিনা জানিনা, তবে অনেক বড় বটবৃক্ষের কাছাকাছিই আছি। মনে হচ্ছে জন্মদিন পালন হচ্ছে সেই সুবাধে।
কাল যত গড়াবে, গপ্প ততই বাড়িবে।।।।
আজকাল তেমন আর পারছি কই।
এসব ছাড়া আর কিছু লেখার মেধা কই আমার। কালে ভদ্রে এসবই আসবে।
ছাইরাছ হেলাল
পারছি না বললে মুক্তি পাবেন এমন ভরসা না করাই ভাল,
পারতে যে হবেই!
আসুক আসুক, আমরা ত আমরাই,
পড়ে নেব গটগটিয়ে,
নাসির সারওয়ার
আর যাই হোক, জোড় করে লেখা হয়না।
আসিবেক অখাদ্য
সময়ের ভাজে ভাজে।।
মোঃ মজিবর রহমান
আইডিয়া বেচেন নাকি ভাইজান।! সোনেলায় কিছু চালান দিন বিভিন্ন সময়ে ফ্রী ফ্রী নো মানি।
নাসির সারওয়ার
একেবারে ফ্রি হলে পেটের কি হবে! আচ্ছা, সোনাদের জন্য ডিসকাউন্ট থাকবে।
মোঃ মজিবর রহমান
দেন ডিস্কাঊন্ট পরিশোধ হবে সোনেলার মাধ্যমেই।
নাসির সারওয়ার
ডিসকাউন্ট চলিবে শুধু সোনাদের জন্য।
মিষ্টি জিন
হা হা হা ……। :D) ভালই শোধ নিলেন
নাসির সারওয়ার
অপমান বোধটা সহজে মানতে পারিনি তখন।
আবু খায়ের আনিছ
আমার জন্মদিন কবে সেটা আমি নিজেই ভুলে যাই, ছোট বোন মাঝে মাঝে মনে করিয়ে দেয়। তবে ঢাকায় আসার পর বন্ধুদের জন্মদিন পালণ করেছি কয়েকবার। বেশ ভালোই লাগে, আনন্দ করতে।
নাসির সারওয়ার
জন্মদিন একটি উৎসবের উছিলা হলে খারাপ কি। আমরা খবর পেলে এরকম না হয় চারটা হাড়ি নিয়ে আসবো!!
নাসির সারওয়ার
জন্মদিন একটি উৎসবের উছিলা হলে খারাপ কি। আমরা খবর পেলে এরকম না হয় চারটা হাড়ি নিয়ে আসবো!!
শুন্য শুন্যালয়
আরে আরে আমাদের ইয়াং বন্ধুর জন্মদিন নাকি আজ? কেক কুক কই? চকলেট বেলুন কই? মাটির হাড়ি তো একটাও দেখিনা।
হ্যাপি বার্থডে টু ইউ……. গান গাইলাম ভাগ্যিস কেউ শোনেনি। এখন এই গলায় গান শুনালে আপনার পার্টির জন্য সেইটাই অশুভ হইতো।। ছাঁচা বাঁশ।
ও আপনি আইডিয়া ও বেঁচেন? লেখা বেঁচেন, আইডিয়া বেঁচেন, ফ্রির ভয়ে সোনেলায় দেন না বুজজি।
কথা হইলো আমি কিন্তু লেখা বুঝিনাই। হাড়ি দেখে গরু হাসে কেন?
নাসির সারওয়ার
জী, ইয়াং বন্ধুটির ১৪ হোল দুদিন আগে। আমার ১৪ হয়েছে এই কিছুদিন (!) আগে চকলেট বেলুন বিহীন।
আরে, আপনার গলাতো ভারী মিষ্টি। এতোদিন কোথায় ছিলেন!!!
আইডিয়া বেইচ্ছাই তো পেট পুজা চালাচ্ছি। ফ্রি হইলে খামু কেমতে!
সব কিছু সবার জন্য নয়। আপনি ১৪ হলেই বুঝতে পারবেন গরু হাসে কেনো …।।
শুন্য শুন্যালয়
কয় ১৪ লাগবে বুঝতে হলে? লীলাবতী বলেছে, হাড়িতে গোবর নিয়ে গিয়েছিলেন, তাই গরু হাসে। না বুঝলে একটু বলে দেয়া যায়না? 🙁 বুড়ো মানুষ তাই মাথা আর আগের মতো খোলেনা, আপনাদের বয়স পেড়িয়ে এসেছি সেই কবে।
আহারে কেউ চকলেট কিনে দেয়নি আপনাকে? একটা ফুলও না? আইডিয়া কিন্তু আমিও জানি, ফ্রি একটা আইডিয়া দিচ্ছি, জন্মদিনের সবচাইতে সেরা উপহার হচ্ছে ডিম। গিফট কেনার পয়সা নেই? একটা ডিমের গায়ে মুখ গোমড়ার এক সিম্বল মেরে নিয়ে যাবেন। আহা, আপনি একটা ডিম মিস করলেন।
নাসির সারওয়ার
কি বলেন! আপনিও ১৪ পার করে ফেলেছেন!!
না না, গোবর থাকবে কেনো। আস্ত একটা গরুইতো হাঁড়িতে ভরেছিলাম!!!
জী, চকলেট আমার খুবই প্রিয়। তবে ফুল দিলে কিন্তু বলতে হবে “ফুল দিয়ে কি হয়”।
আপনার জন্মদিনের উপহার ঠিক করে রাখলাম। দেখি অনেক বড় ডিম কোথায় পাওয়া যায়।
নীলাঞ্জনা নীলা
ও বাব্বাহ আমার ভাইয়ূর জন্মদিন!
শুভ জন্মদিন ভাইয়ূ।
https://youtu.be/Wm4QAbdzEm4
নাসির সারওয়ার
না আপুনি। আমার ভাতিজার ১৪ হোল দুদিন আগে। আমার ১৪ তম এইতো সেদিন গেলো।
আগাম শুভেচ্ছা রেখে দিলাম।
মাইলস আমার খুবই প্রিয় একটা ব্যান্ড।
https://www.youtube.com/watch?v=Dh8imKfHY0c
নীলাঞ্জনা নীলা
:D) :D) :D) :D) :D) :D) :D) :D)
পিচ্চি দেখি ফোনে বেশ কথা বলছে। রিসিপশনিষ্ট কি মহিলা? :p 😀
ভাইয়ূ পিচ্চিটাকে অনেক অনেক আদর। শুভ জন্মদিন পিচ্চিবাবু। -{@
নাসির সারওয়ার
পিচ্চিদের এসব কান্ড আমি বেশ উপভোগ করি।
এই পিচ্চিটা একটা মেয়ে। রিসিপশনিষ্ট এর ছেলে হবারই সম্ভাবনা বেশী!!!
অনিকেত নন্দিনী
লে বাবা! এদ্দিনে এমন কঠিন আইডিয়াবাজ কারো খোঁজ পেলুম। তা নবিশ পক্ষান্তরে আইডিয়াবাজ বুড়ো খোকা, এখন থেকে কাউকে জব্দ করার আইডিয়া দরকার হলে কিন্তু সাঁড়াশি দিয়ে চেপে ধরবো। কোনো গাঁইগুঁই চলপেনা কিন্তু! আর আইডিয়ার দাম? একদম তাৎক্ষণিকভাবে ফ্রিতে পরিশোধ করে দেব। আমি আবার বকেয়ার কারবার পছন্দ করিনা। :p
নাসির সারওয়ার
ভালো ভালো আইডিয়া জমানো আছে। একদম চিন্তাইএন্না
ও টিচার, ফ্রি হইলে পেটে কি দিমু।
অনিকেত নন্দিনী
পেটে আবার কিছু দিতে হয় নাকি? 😮
নাসির সারওয়ার
আচ্ছা, কাইল থাইকা খাওয়ন বনদ।।।
অনিকেত নন্দিনী
দেশি নিমপাতা চাবাইয়া খাইবেন, দিনে তিনবেলা।
নাসির সারওয়ার
নিম পাতার খোঁজ পাইছি খোঁজ দ্যা সার্চ কইরা। আমি আবার পেটুক মানুষ। পাঁচ বেলা খাইতে হয়। তয় গাছটা নাকি আমার মত গেদা।
কি করুম কনতো টিচার!
অপার্থিব
স্মৃতি কথন ভাল লেগেছে।থাকলো জন্মদিনের শুভেচ্ছা।
নাসির সারওয়ার
হাসি কষ্ট যাই ই হোক, মাঝে মাঝে মনেতো হয়।
ভালো থাকুন। অনেক শুভেচ্ছা।
ইলিয়াস মাসুদ
জীবনে আসলে স্মৃতি ছাড়া আর কিছুই নেই, তো কবির জন্মদিন বুঝি?
শুভজন্ম দিন কবি ……………।
নাসির সারওয়ার
স্মৃতিরা পিছু ছাড়বেনা কোনদিনও। আমার ভাতিজার জন্মদিন ছিলো দুদিন আগে। ওর ১৪ হোল আর আমার ১৪ বছর বয়সের এক স্মৃতি।
আগাম শুভেচ্ছা তুলে রাখলাম তালাবন্ধ করে।
ভালো থাকুন।
লীলাবতী
মাটির হাড়ি দেখে গরু হাসবে কেন? হাড়ির সাথে গরুর যোগসূত্র কি ভাইয়া? হাড়িতে নিশ্চয়ই গোবর নিয়েছিলেন 😀 গোবর ভর্তি হাড়ি টেবিলে :D) মহা দুষ্ট ছিলেন তো ছোট বেলায় 🙂 আইডিয়া বিক্রী করলে পারেন বিনামূল্যে।
শুভ জন্মদিন ভাইয়া -{@
নাসির সারওয়ার
সবাই যে কেনো বুঝে গেলো। এত কঠিন ভাবে লিখলাম, তাও …।
দুষ্ট শুধু ছিলাম না, এখনো আছি কিন্তু।
না না, বিনামুল্যের জিনিস ভালো হয়না। কিছু দাম দিয়েন। ডিসকাউন্ট থাকবে আপনার জন্য।
অনেক শুভেচ্ছা রইলো। ভালো থাকুন।
মৌনতা রিতু
ভাইসাব, মোরেও কিছু আইডিয়া দেন না কেন ! তা হাড়ির কিছু কি আইডিয়াওয়ালার মাথায় পড়ে নাই ?
জন্মদিনের শুভেচ্ছা দেরিতে দিলেই নাকি মজা বেশী :p
তা বয়স কতো হইল ?
নাসির সারওয়ার
পয়সা লাগবে আইডিয়ার জন্য। বিনা মুল্যের জিনিষ নাকি ভালো হয়না।
আরে না। ওগুলো অনেক সন্মানিত অথিতিদের জন্য ছিলো।
আর বলেইয়েন না। মাত্র ১৪ হোল। কবে যে এত্তু বড় হবো। বড় হলেই নাকি কুবিতা লেখা যায়।