# হ্যালো, বল ।
# আচ্ছা, আজ নিয়ে যাবো
# আচ্ছা
সে কী ওর হাসি যেন ছোট্ট একটা খোকা তার মার বুকে ঝাঁপ দিয়েছে। ইচ্ছে হোল কাশবনে হাটবে, ওদের গাঁয়ে হাত বোলাচ্ছে। সাথে কত সুন্দর করে প্রকৃতির বর্ণনা সেতো আমি পারিনা।
মাঝে মাঝে কিছু ভাবনা আমায় ঝাপটে ধরে। ইচ্ছে হলেও এড়াতে পারিনা। আমার এই বন্ধুটির দুটো কিডনিই অকেজো প্রায় চার বছর। চিকিৎসা পরিভাষায় ওর অবস্থা End stage renal failure এবং Kidney transplant ই ছিল যোগ্য চিকিৎসা। হয়ে উঠেনি তা। একদিন পরপর dialysis করেই চলছিলো দিন। মাঝে মাঝেই আমাকে কল দিয়ে তার আবদার। আজ অনেক ঠাণ্ডা একটা কোমল পানীয় খেতে ইচ্ছে হচ্ছে। একটু খোলা আকাশের নীচে হাঁটবো। মাঝে মাঝেই ওকে নিয়ে উত্তরার আশেপাশে ঘুরতাম।
আজকের পরে ও আর আমাকে কল দেবেনা। ওকে নিয়ে কীর্তন খোলায় নৌকায় আর চড়া হলোনা। ওর বাচ্চাসুলভ হাঁসিটা আর দেখবোনা।
কিছুদিন আগের ওর লেখা একটা কবিতা। একটা মানুষ মৃত্যুর কাছে বসে কেমন করে এসব লেখে ! কবিতাটা কি ওর কাছে হেরে গেল!!
অনিচ্ছুক যাত্রী
ডাঃ ইমতিয়াজ চৌধুরী
না হে, ব্যাপারটা ততটা ভয়ানক নয় ;
কিছুটা অপার্থিব, সেটা অবশ্য মেনে নিতেই হয় ।
না সেরকম হিমশীতল বরফি আগুনের পথ নয় তা —
নয় সে পথ অগ্নিকুন্ডময় হুতাশন হাহাকারে পূর্ণ ।
বেঁচে থেকে পৃথিবীতে থাকতে থাকতে এ জায়গাটাতে বড় অভ্যস্ত আমি ।
মায়া পড়ে গেছে ভীষন, যেতে ইচ্ছে করে না আর কোথাও
এই রংমহল ছেড়ে । ওরাও ছাড়বে না, যেতেই হবে ।
সময় হয়ে গেছে, যেতেই হ’বে ওপারে ।
২৬০ / ১৫৩ রক্তচাপ আর শ্বাসরুদ্ধ অবস্থায় কত আর প্রতিরোধ ?
ইষ্টনাম জপে সমর্পণ করে ফেললাম একসময়ে ; কোন প্রার্থনা শ্লোক
পর্যন্ত মনে হচ্ছিল না তখন । তক্ষুণি খুলে গেল চেনা-অচেনা এক পথ ।
লহমায় দেখা হয়ে গেল, তখন চরাচর জুড়ে প্রশস্ত এক বিষণ্ন গেরুয়া
সড়ক ; দুপাশে সারিবাঁধা বনস্পতি, বট, অশ্বত্থ ইত্যাদি ।
ওপরে সুর্মা রঙ-এর আকাশ নিচু হয়ে নরম আলো ছড়াচ্ছে ।
নেই কোন শব্দ, না আছে সেখানে কোন পাখী ।
শুধু মিঠে একটা নরম বাতাস, মাদকের মত আকর্ষন করা বাতাস ।
সেই হাওয়া শুধু সামনে পথে ঠেলে নেয়, মাথার ওপরে টুপটাপ
করে গাছের পাতা ফেলে মনে করিয়ে দেয় যাওয়ার কথা ।
কে যেন সেসময় শক্ত করে ধরে ফেলে আমার হাত ।
যেতে চাই আমি পথের শেষে, সে আমায় নিয়ে আসে পেছনে ।
তখন আমার আর মনে নেই কারো কথা । বাবামা, ভাইবোন
অদৃশ্য আমার স্মৃতিতে ; চল্লিশ বছরের বন্ধুরা সব অপাঙতেয় ।
যেতে চাই সেই পাতা বিছানো গেরুয়া পথ ধরে পৃথিবীর সীমান্তে,
পথের শেষে জানি আমি, সেখানে খেয়ানৌকার হাল ধরে মাথায় গামছা
বেঁধে বসে আছে আমার জন্যে, কাশেম ভাই ।
গেলেই ধমকে দিয়ে বিরস বদনে বলবে, ‘এত দেরি কেন ? উঠে পর
ঝটপট নৌকায় ; তারপর বলবে সবাইই যায়, সবাইকেই যেতে হয় ।
ভাবিস না, আমি আছি নারে !
এভাবেই চলে যেতামই হয়তো একা একা ;
কিন্তু কে যে হাতটা ধরে রাখলো ?
আর যাওয়া হ’লো না এবেলা, বুঝলে বাপু !
যাওয়া বললেই হয় না যাওয়া, যাবো না বললেই হয় না থাকা ।
৩০টি মন্তব্য
আবু খায়ের আনিছ
বিষাধে ভরে গেল মন, অনেক ভালো একটা কবিতা উনি উপহার দিয়েছেন আমাদের, কিন্তু উনিই থাকতে পারলেন না এই বিষাধটা মেনে নেওয়া কঠিন।
আল্লাহ উনাকে জান্নাতবাসী করুন।
নাসির সারওয়ার
আমার এই বন্ধুটা বেশ লিখতো। শেষ দিকে ওর সাথের সময়গুলো আবেগের ঘরেই থেকে রইলো।
সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।
মিষ্টি জিন
মন খারাপ হয়ে গেল।
মৃত্যুর কাছে সবকিছুই হার মেনে যায়।
অসাধারন সুন্দর কবিতা।
ওনার আত্মার শান্তি কামনা করছি।
আল্লাহ ওনাকে বেহেস্ত নসীব করুক।
নাসির সারওয়ার
ইমতিয়াজের আরো বেশ কিছু লেখা আছে। সুযোগ করে এখানে দেবো।
বন্ধুটা অনেক ভালো মানুষ ছিলো।
ইঞ্জা
ব্যথাতুর হলো মন, অসাধারণ কবিতাটি আরো বেদনার্ত করলো, আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিন উনাকে জান্নাতুল ফেরদৌস দান করুন, আমীন।
নাসির সারওয়ার
একটা মানুষ মুমুর্ষ অবস্থায় কেমন করে এভাবে লেখে।
ভালো থাকুন।
ইঞ্জা
জানিনা ভাই।
নাসির সারওয়ার
আমিও জানিনা।
ব্লগার সজীব
ভাইয়া ইমতিয়াজ ভাইয়ার চলে যাওয়াটা অত্যন্ত বেদনার। চিনি না তাকে, অথচ যেন কত চেনা। মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়ে এভাবে কেউ লিখতে পারেন! আল্লাহ ওনাকে ভাল রাখবেন।
নাসির সারওয়ার
কিছু মানুষের লেখার ধাঁচে আপন আপন মনে হতে পারে। আমার তেমনিই হয়। এই “ব্লগার সজীবকে” মাঝে মাঝে না দেখলে মনে মনে খুঁজে ফিরে বিশেষ করে বিষণ্ণাতায়।
আমিও ভাবি, এই অবস্থায় মানুষ কেমন করে এভাবে লেখে!
ব্লগার সজীব
আর খুঁজতে হবেনা, পাবেন নিয়মিত এখন হতে ভাইয়া।
নাসির সারওয়ার
মাঝে মাঝ পেলেও হবে। না হলে আমাদের হাসির একটু ঘাটতি থেকে যায়।
ছাইরাছ হেলাল
তাঁর লেখাটি মনযোগের কেন্দ্রেও অবস্থান করে আমাকে বিমূঢ় করে ফেলেছে,
নিশ্চিত মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়ে এমন প্রকাশ এক কথায় প্রায় অসম্ভব!
বিশেষ করে শেষ লাইনটি,
তাঁর আত্মার শান্তি কামনা করছি,
আরও লেখা পড়ার অপেক্ষায় রইলাম,
নাসির সারওয়ার
তার পাশে তার শেষের কিছুদিন আমি ছিলাম সময় করে। অনেক প্রাণবন্ত একটা মানুষ যে জানে তার কি অবস্থা। অথচ তার হাসি হাসি মুখটা কখনো বুজতে দেইনি তার ব্যথা। আমি তার কল মিস করবো সাথে আড্ডা।
শেষ লাইনের সাথে কেউ একজন যোগ করেছিলো – “তবুও আমার যাই ই”।
চেস্টা করবো তার আরো কিছু লেখা এনে দিতে।
মৌনতা রিতু
সত্যি এতো প্রাণ কোথায় পান উনারা ! আমি একজনের ডায়রি পড়েছি এবং প্রায়ই বের করে পড়ি। সে যে কি সব একান্ত অনুভূতি ! মন ডুকরে কান্না আসে। সত্যি খুব প্রাণে ভরা থাকে।
প্রানচঞ্চল শরীর সময়ের আগে জরাগ্রস্থ হলে, মনেই সব শক্তি থাকে।
মন ভরে গেল। ব্লগে উনার অন্যসব লেখাগুলো দিয়েন ভাই।
নাসির সারওয়ার
ইমতিয়াজ হয়তো অনেক বড় লেখক নয় যেমন কিছু লেখকরা তাদের মৃত্যুর দিন গুনেও লিখে যান যা আমরা জানতে পারি। তবে ওর এই লেখাটায় কি যেন আছে যা মনকে ঠিকই নাড়া দিতে পেড়েছে আমাকে সহ আরো অনেককে।
চেষ্টা করবো ওর কিছু লেখা এখানে এনে দিতে।
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
তার বিদেহী আত্বার মাগফিরাত কামনা করছি -{@
প্রত্যাকেই যাবার বেলায় স্মৃতি চিহ্ন রেখে যায় ভিন্ন ভিন্ন কায়দায়।কবিতাটি চমৎকার তার চলে যাবার কথার অব্যাক্ত সূর -{@
নাসির সারওয়ার
আমি এখনো ভাবি, যে মানুষটা মৃত্যুর দিন গুনছে সে কেমন করে এভাবে লিখতে পারে!
অনিকেত নন্দিনী
“যাওয়া বললেই হয় না যাওয়া, যাবো না বললেই হয় না থাকা” – চিরসত্য এই কথাগুলিই তিনি চলে গিয়ে প্রমাণ করে দিলেন। তাঁকে চিনিনা, জানিনা তবুও তাঁর আত্মার জন্য শান্তি প্রার্থনা করছি। 🙁
নাসির সারওয়ার
“তবুও আমার যাই ই”।
টিচার, ও আমার প্রিয় মানুষের একজন। হাঁসি রসের একটা ভাণ্ডার। আর কোনদিন আমাকে কল করে বলবে না, আমি খোলা আকাশ দেখবো।
অনিকেত নন্দিনী
না চাইলেও প্রিয় অনেক কিছুই দূরে চলে যায় গো নবিশ। দুনিয়ার নিয়মটাই এমন। যতোকিছুই করিনা কেন যার যাবার সময় হয় সে চলে যায়ই। আমরা বরং তাঁর আত্মার শান্তির জন্য মহান আল্লাহ পাকের কাছে প্রার্থনা করি। 🙁
নাসির সারওয়ার
তাইতো দেখছি টিচার। এ বন্ধুটা আমাদের ডাটা ব্যাংক ছিলো। মোটামুটি সব কিছুর উপরেই কিছুকিছু দখল ছিলো।
প্রার্থনা ছাড়া আরতো কিছুই করার নেই আর। সে ভালো থাকুক।
নীলাঞ্জনা নীলা
কবিতা এতোটা মনকে ছুঁতে পারে! এর উত্তর অবশ্যই “হ্যা।” কিন্তু কিছু কবিতা প্রাণের ভেতরের একেবারে গভীর আবেগকে ছুঁয়ে ওখানেই স্থান করে নিতে পারে, যা সব কবিতা পারেনা। মৃত্যু চিরন্তন, কিন্তু অসময়ে চলে যাওয়া সেটা মেনে নিতে কষ্ট হয়।
প্রার্থনা ঈশ্বর উনার আত্মার মঙ্গল করুন।
একটা কথা শুনতাম, পৃথিবীতে প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলে সেই মানুষকে ঈশ্বর নাকি আর রাখেননা। আমার কাছে কথাটি ভুল, এর প্রমাণ আজও আমি পেলাম না।
নাসির সারওয়ার
দিন গুনছিল যাবার জন্য। তারপরও একদিন বলেছিলো, “আমারও বাঁচতে ইচ্ছে হয়। কত কি যে দেখা হলোনা”। আমরা পারিনি ওর কিডনি পালটাতে যা হয়তো আরো কিছুটা সময় দিতো।
নীলাঞ্জনা নীলা
ভাইয়ূ পৃথিবীতে কেউ পারিনা আমরা নিজেদের প্রিয় মানুষদের আটকে রাখতে। এখানেই আমরা সবচেয়ে অসহায়।
আমার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধুর বোনের স্বামী এই একই রোগে চলে গেলো। বয়স ২৬-ও হয়নি। আর বন্ধুর বোনটা অন্তঃসত্ত্বা। প্রথম বাচ্চা, অথচ ওর মুখ ওর বাবা দেখলো না। বিয়ে হলো প্রেম করে, বহুবছরের প্রেম। বিয়ে দু’ বছরও হয়নি। আজ জানার পর কি যে যন্ত্রণা হচ্ছে। মেয়েটি খুব হাসিখুশী, এত্তো মিষ্টি। আজ একেবারে থমকে গেছে।
এতোকিছুর ভেতর দিয়েও আমরা বেঁচে থাকি। থাকতে হয় ভাইয়ূ। শুভ বিজয়ার শুভেচ্ছা।
নাসির সারওয়ার
বেঁচে থাকার কতো আনন্দ। অথচ যাবার সময় হলে আমরা কত অসহায়। কিচ্ছুটি করার নাই।
আপনার প্রিয় বন্ধুর বোনের জন্য অনেক দোয়া রইলো।
ভালো থাকুন।
মারজানা ফেরদৌস রুবা
মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়ে কি ভয়ঙ্কর সত্য উচ্চারণ! “যাওয়া বললেই হয় না যাওয়া, যাবো না বললেই হয় না থাকা।”
মানুষটির বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।
নাসির সারওয়ার
আমি এখনো ভাবছি, একটা মানুষ এই অবস্থায় কেমন করে এভাবে লিখতে পারে।
আল্লাহ ওকে ভালো রাখুন।
আপনার জন্য শুভেচ্ছা রইলো অনেক।
ইকরাম মাহমুদ
শেষ লাইনটা আমাকে বাধ্য করলো আরো ক’বার পড়ে নিতে। শীতলতা ছুঁয়ে গেল যেন আমাকে। আমরা মানুষরা কত অসহায় আবার কত ভাগ্যবান। আল্লাহ তাঁকে জান্নাত নসীব করুন।
নাসির সারওয়ার
শেষ লাইনটা আমাকে থমকে দিয়েছিলো। সে অবশ্য ভালো একজন লেখকও ছিলো।
আপনি ভালো থাকুন। সাথে থাকার জন্য অনেক শুভেচ্ছা।