শপথের বাণী পড়িয়াছি মোরা
বন্ধন রাখিতে
অটুট, দু'টি হৃদয়ে জাগে
আপন করে পাবার অজানা
শিহরণ,

ছিন্ন হই যদি কভূ
তবুও হয় যেন
গো
সহ-মরণ।

বিকালটা আজ পাগল করা রৌদ্রের উম্মাদনায় মন প্রান তৃষ্ণায় দিশেহারা।তীব্র তাপে ঘাম যেন শরীরে অসহনীয় যন্ত্রনার গুড়ি গুড়ি ঘামের লবাক্ত বীজ।অনেক ক্ষণ হন্নে হয়ে খুজছেঁন মমি তার অশান্ত মনকে শান্ত করার নিষিদ্ধ ঔষধ ছয় ইঞ্চি পচ্চিশ এম এল মাল।ভালই হলো একটি বস্তুর খোজেঁ কত কত অচেনা অজানা স্হান যে দেখা হলো তা এক জীবনে এ এক প্রকার অভিজ্ঞতা বলা চলে।হতাশায় ছেয়ে যাওয়া হৃদয় স্হির ভালবাসার একটি শান্তি নীড় খুজেঁর পালাক্রমে ফিরে মন বার বার আপনলালয়ে।বিউটি,অনন্যা,মিলি, রাণী আরো যারা ছিল সু-সময়ে ভাল লাগার সুখের পাখি গুলো শেষ বেলায় সব যেন সময় কে বড্ড অ-সময়ে ফেলে দেয়।সেই যে শিশির ভেজাঁ ঘণ কুয়াশার সকালে বের হয় মমি ঘর ফেরার সময় যেন বেমালুম ভুলে যায় এ যেন আজকাল তার নিয়মে পরিণত হয়ে গেছে.. চোখ লাল হয়ে আসা ঝিম ঝিম নেশাত্ত্বক ব্রেনে অন্য বন্ধুদের ঘরে ফেরা দৃশ্য যেন বলে দেয়...মমি তোমারও ঘরে ফেরার সময় পার হয়ে যাচ্ছে।
তখন রাত্র এগারোটা ১৯৯৭ইং ২৩শে জুন।বাসায় ঢুকতে গিয়ে লোকের সমাগম দেখে ফিরে আসেন,ভাবেন কেনো এতো লোকের কোলাহল! এরই মধ্যে বন্ধু সাইদুরের সাথে দেখা।
-শুন,তুই ভিতরে যাবি, কি হচ্ছে তা এক্ষুনি আমাকে জানাবি।
বন্ধু বাড়ীর ভিতরে চলে গেল, মনে আসে অজানা আতংক,ভয় দাড়িয়ে থেকে একের পর এক সিগারেটের বিষাক্ত ধুম্র গলার্থ করণে ব্যাস্ত।ঠিক সেই সময় ডাকাতের ছেলে আমির আর এলাকার মেম্বার তার সামনে পড়ল হয়তো তাদের বাড়ীতে গিয়েছিল।মেম্বার তার কাছে তার কাছে আসেন।
-শোন সব আয়োজন কথা বার্তা শেষ।কোন সমস্যা নেই।
-আমি কি কোন সমস্যার কথা আপনাকে বলেছিলাম যেটার সমাধান আপনাকে করতে হবে?
মেম্বারকে এ কথা বলাতে মেম্বার যেন একটু রেগেই গেল।
-এই যা, হলো এবার... যার জন্য করি চুরি সেই বলে চোর।এত দিন যাবৎ যে সমস্যাগুলো চলছে তা সমাধানে আমাদের কোন কি দায়ীত্ত্ব নেই।
-সমস্যা চলছিল, না বলে, বলেন সমস্যা সৃষ্টি করেছেন।
-এইটা কিন্তু ঠিক নয়,আমরা তোর ভালোর জন্যই করছি।
-কোনটা ঠিক আর কোনটা বেঠিক সেটা বুঝবার বয়স আমার হয়েছে।এবার দয়া করে আমার বাড়ীর সামনে থেকে চলে যান আর কখনও এখানে নাক গলাতে আসবেন না।আমার সমস্যা আমিই সমাধান করব।
মেম্বার রাগ করে হুমকি দিয়ে চলে গেলেন।বন্ধু সাইদুর বাড়ীর ভিতর থেকে বেশ ক্লান্ত অবস্হায় হাফাতে হাফাতে মমির কাছে এলো।
-কি রে মনে হচ্ছে কোন যুদ্ধ করে এসেছিস... ঘামে একাকার....

সাইদুর হাফাতে হাফাতে বলার চেষ্টা করছে কিছুতেই মুখ দিয়ে কোন শব্দই বের করতে পারছে না আর পারবেই বা কি করে সে তো নরমাল অবস্হাই কথা বলতে গেলে তোতলাতে থাকে।তাকে শান্ত হবার সময় দেয়।
-এবার বল ভিতরে কে কে?ঘটনা কি খুলে বল।
-কি কি কিবলবো...স স সসব শে শে শেষ।
-আরে বেঠা তোর কইতে ....এতক্ষণ লাগলে আমি যে পাগল হয়ে যাবো।
সাইদুর আবারও ঘটনা বর্ননার ব্যার্থ চেষ্টা তোতলামীতে শব্দরা যেন বার বার বেকে বসে কিছুতেই তা প্রকাশ হতে দিবে না।
-...ঠি ঠি ঠিক আছে চল....ভিতরে চল।
বন্ধুকে সাথে করে বাড়ীর ভিতর উঠোনে ঢুকতে মমি হতবাক।এই কি এখানে, এতো রাতে এতো মানুষ জন! নিশ্চয় কোন ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে হয়তো আমাকে নিয়ে।যেই ভাব না সেই কাজ।পাশের এক ভাবী উকিতেঁ উকুন কাটেন....মিষ্টি খাওয়াতে হবে!আশ্চর্য্য কি হচ্ছে এ সব, যেন হঠাৎ কোন নতুন পৃথিবীর সৃষ্টি রাতের আধারেঁ।
মমি বন্ধুকে নিয়ে নিজ রুমে দরজাটা আবঝিয়ে ভাঙ্গা টেপ রেকর্ডটায় মৃধু সাউন্ডে তপন চৌধুরীর সেই কালজয়ী গান শুনছেন...আমি সব কিছু ছাড়তে পারি...তখন রাত্র বারোটা।বন্ধুর কাছে রক্ষিত হতাশায় নিমজ্জিত কিঞ্চিৎ সূখের ঔষধ চাইতে অবাক।
-সা আলা..আমার মাথা নষ্ট নাকি তোর, তুই আমারে না দিয়াই খাইলি কেমনে....।যাক যা আছে তাই  দে....।
পুরোটা মুখে দিয়ে হাতে সিগারেট ধরায় মমি।কয়েক মুহুর্তে ধোয়ায় রুম অন্ধকার হয়ে যায় এই মুহুর্তে কেউ এলে সর্বনাস!জ্ঞান ছিল বলে তৎক্ষনাত ঘরটাকে সুগন্ধী স্প্রে করে বিসুদ্ধতায় নিয়ে আনেন।
ঘটনার বিবরণে মমি জানতে পারে সিরাজ সাহেব মানে মমির এক বড় ভাই তার ঘরে মেয়ে(অনন্যা)পক্ষের এবং বর পক্ষের লোকদের বৈঠক চলছে।যদিও তা ছিল মমির অনুমতি বিহীন হঠাৎ বৈঠক তথাপি মুরুব্বিদের না করা মমির পক্ষে কোন কালেই সম্ভব ছিল না।বেশ কয়েক দিন যাবৎ পাড়ায় গুঞ্জণ চলছিল অনন্যা এবং মমির প্রেম কাহিনী নিয়ে যা মমির ধারনার বাহিরে কেননা প্রথমা বিদায়ের পর কত ভ্রুমরতো তার জীবনে আসছে যাচ্ছে,যা ছিল খুবই নীরবে তা এতটা প্রকাশ্যে আসবে তা সে চিন্তায় আনেনি।

রাতের গভীরতার সাথে শীতের তীব্রতা বাড়তে থাকে সেই সাথে বাড়ীর উঠোনে বকুল ফুলের মাতাল হওয়া ঘ্রানে মন ছুয়েঁ যায় ভাল লাগার এক বিশেষ অনুভূতি।হঠাৎ মমির কর্ণে এলো এক অবিস্বাস্ব উক্তি।বিবাহের বৈঠকে দর কষা কষির মাঝে তার পাঞ্জেয়ানা নামাজী সহজ সরল পিতা বিরক্ত হয়ে পড়েন।
-আমার কোন কিছুই লাগবে না,মেয়ে আমার নিজের হাতে বানানো নামাজ পড়ে, রোজা রাখে,পর্দাশীল আর কি চাই...আপনারা গরুর হাটের মতো দর কষাকষি বাদ দেন।সময় তারিখ ঠিক করেন আমি সম্মতি দিলাম।
বৈঠকের সবাই আল হামদুলিল্লাহ বলেন।এবং উভয় পক্ষ আলোচনা করছেন এখন দিন ক্ষণ নিয়ে।দিন ক্ষণে কিছু চতুর অভিজ্ঞ মুরুব্বি তারা আজই বিয়ের আয়োজনের পক্ষে মত দেন, তাদের মত "শুভ কাজ দেরি করতে নেই" দেরী করলে হয়তো কোন অশুভ ছায়া পড়তে পারে।
যেমন ভাবনা তেমন কাজ কিন্তু বাদ সাধে গভীর রাত্রটি।এতো রাতে বিয়ে পড়াবার কাজী পাবেন কোথায়?তাছাড়া বিয়ের নুণ্যতম জিনিসপত্র প্রয়োজন পড়ে..এই কন্যের জন্য নাক ফুল,বরের আংটি লুঙ্গি গামছা মেয়ের শাড়ী ইত্যাদি তা সংগ্রহ করতে সময়ের প্রয়োজন তাই কিছু লোক অন্য দিনের পক্ষেও মত দেন।

কন কনে শীতে পৃথিবীর ঘর মুখী মানুষগুলো খুব দ্রুত লেপ বা কাথা জড়িয়ে আরামের নিদ্রায় নিজেদের আগামী দিনের সংসার সংগ্রামে প্রস্তুতি নেন, হয়তো এ পাড়ার মমিদের বাড়ীটিই ছিল কখনও থমথমে, কখনও উৎসবের ইমেজে।সব তর্ক যেন স্বর্গে গেলো মুরুব্বির কথাই রয়ে গেল...আজ রাতেই হবে শুভ কাজ।ভূতপ্রেত যেন এ শুভ কাজে সহযোগিতা করছেন...কে কখন কাজীকে গভীর ঘুম থেকে ডেকে নিয়ে এলো,মমির রুমেও এসে দিয়ে যায় নতুন লুঙ্গি নতুন পাঞ্জাবী এবং তর্জণীর আংটি।সে অবাক এ সব কি হচ্ছে....রুম থেকে মমি বাহিরে বেড়িয়ে এসে একটু শান্তির নিঃস্বাস নেন যখন শুনতে পেলো যার বিয়ে মানে কন্যাতো এই মুহুর্তে ঘরে নেই সে তার মামীর সাথে দেশের বাড়ীতে চলে গেছেন।বিয়ের সকল আয়োজন যেন গভীর রাতে পুজোর দেবীকে উৎসর্গ করল সাগরের মাঝে।
সময় কেটে যায় সেকেন্ড মিনিট ঘন্টার কাটা ধরে তখন রাত্র তিনটে থমথমে নীরবতার মাঝে কে যেন শুনাল আশার বাণী।কন্যা যেখানে বেড়াতে যাবার কথা ছিল সেখানে তার মামীর অসুস্হতার কারনে যাওয়া হয়নি নিকটে সে তার মামার বাসায় আছেন এবং আসছে বধু সাজতে।একেই বলে জন্ম মৃত্যু বিয়ে এই তিনটি বিষয় সম্পূর্ণ স্রষ্টার হাতে কারো ইচ্ছায় এর ব্যাতিক্রম হয় না।
অনন্যা আসে, চোখ মুখ তার কেমন যেন অস্বাভাবিক দেখা যাচ্ছে.. হয়তো সে কাচা ঘুম থেকে উঠে এসেছে।বিয়ে আয়োজনে আরো বেশ কয়েক জন গুরুত্ত্বপূর্ণ চরিত্রের উপস্হিতি লাগে, বর কনের বোন জামাইরা।বিয়ে হয় তাদের ইচ্ছেতেই আর এটা যেন আমাদের দেশের এক প্রকার অলিখিত রীতি।কনের বোন জামাই বিদেশ থাকেন সেই সুবাদে কনের বোনই যথেষ্ট আর বরের বোন জামাইকে বিয়ে আসরে আনতে কত মণ তৈল নয় খাটী গাওয়া ঘি মাখতে হয়েছিল তা কেবল ভুক্ত ভোগীরাই জানেন।
মুরুব্বিদের শাসনে মমি পড়নে পেন্টের উপরেই নতুন লুঙ্গি পড়তে হয়েছিল কন্যার দিক দিয়েও একই দৃশ্য সালোয়ার কামিজের উপর দিয়ে বিয়ের শাড়ীটি পড়তে হয়েছিল।বর কনে উভয়ে পাশাপাশি মাঝ খানে বাশের তৈরী বেড়ার পাটিসন।মাঝ রাতে নীরব বিয়ের আয়োজনে ছিল না কোন বিয়ের চিরাচরিত ওয়েডিং সং, নেই কোন আনুষ্ঠিকতা তবে স্বাক্ষী হিসাবে ছিল বিশাল আকাশেঁর জ্যোৎস্না ভরা মায়াবী চাদঁ।

ঠিক যখন ঘড়ির কাটায় রাত তিনটে ত্রিশ মিনিট তখন বর কনে কাজীর সাথে সাথে কবুল  বলেন।লজ্জাবতী কনের কবুলের উচ্চারণটি দাদী নানীর ধাক্কাতে মুখ থেকে বের হয় "কবুল"।এই একটু শব্দ কবুল সমাজ মমি অনন্যাকে বেধে দিল সারাটি জীবন দুঃখ সুখে একত্রে থাকার অনুমতি,বৈধতা দিল উভয়ের শারিরীক মানষিক কাম চরিতার্থের বৈধতার সার্টিফিকেট।
শুভ কাজের সব আনুষ্ঠিকতা শেষে বর কনেকে একত্রে বসবাসের অনুমতিতে যদিও শর্ত ছিল বর কনেকে ঘরে তুলে নিবে বিদেশ থেকে আসার দু'বছর পর কিন্তু মুরুব্বিদের ভাষ্যমতে প্রথম দিন নাকি কনেকে বরের বাড়ীর মাটি পাড়াতে হয় তাই আনুষ্ঠিকতা শেষে অনন্যা এবং মমি যখন বিয়ের আসর থেকে বরের বাড়ীতে কনেকে মাটি পাড়াতে নিচ্ছিল ...তখন সেই বকুল ফুলের গাছটির নীচ দিয়ে যেতেই অনন্যা, মমির হাতটি ধরা অবস্হায় জোড়ে মমির হাতে সে আঙ্গুলে চিমটি কাটে তাতে অনন্যার মুখে যেন স্বর্গীয় সূখ,জীবনের তৃপ্তির হাসি বয়ে যায়।আর ছন্ন ছাড়া মমির ভালবাসার নীল রক্তে ভাসা নিঃস্ব হৃদয় যেন খুজেঁ পেল একটি জীবনের আরেকটি নতুন অধ্যায় সূচনা যার অনুভূতি পৃথিবীর সকল মানুষের মতো মমির হৃদয়েও বয়ে আনে আনন্দের ঝড়।

চলবে....

কৃতজ্ঞতায়:ইউটিউব&অনলাইন

অতৃপ্ত জীবন....ভালবাসা১২

0 Shares

২৫টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ