রাহুগ্রস্ত ঋতুর বিভীষিকাময় দুঃস্বপ্নের কথা মনে হলে
বুক থেকে ঝরে পড়ে দীর্ঘনিঃশ্বাস, দুঃস্বপ্নের ঘোরে
আৎকে ওঠি ঘুম ভেঙে, তখন বিভীষিকার ক্ষতচিহ্ন
বুকের পাজরে, জখম পেশি, অস্তিমজ্জায় জেগে ওঠে
সেই শব্দহীন বাকরুদ্ধতার দিনগুলো প্রজ্জোল দীপ্তিময়
হয়ে ওঠে ডায়রীরর পাতায় পাতায়,
শরীরের আঘাতে আঘাতে, ক্ষতচিহ্নে।

সেদিন আমাদের নির্দোষ প্রাণের দাবীকে স্তব্দ করে দিতে
হায়েনা শ্বাপদেরা জনপদের পথে পথে নামিয়ে
দিয়েছিল জলপাই রঙের টেঙ্ক, মেশিনগানের ভয়ঙ্কর
উদ্যত গর্জনে ছিন্নভিন্ন করে দিয়েছিল রাতের নির্জনতা
ঝাঁকে ঝাঁকে ছুটে আসছে গুলি, মনে হলো বারুদের
আতশবাজী আলো-আঁধারের ফাঁকে ফাঁকে দেখা গেল
লাশে লাশে ভরে গেছে অলিগলির রাজপথ।

মানুষের রক্তের স্রোত নেমে যাচ্ছে শীতালক্ষ্যা
বুড়িগঙ্গার স্ফটিক স্বচ্ছ জলে, আমাদের যতসব
সৌর্যবীর্যের স্থাপনা পুড়ে যাচ্ছে, আগুনের
লেলিহান শিখায়।

আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখি সারা আকাশ
ঢেকে গেছে আগুন আর ধোঁয়ার কুন্ডলীতে
মনে হলো একী সেই কেয়ামতের আলামত
নাকি হিরোসীমা নাগাসাকির কোনো ধ্বংসস্তুপ
সেই নৃশংস প্রলয়ের মাঝে দেখি সবুজ
ফসলের মাঠ ন্যুব্জ হয়ে পড়ে আছে আত্মরক্ষায়
সেখানে সবুজ সোনালী ফসলের আভা নেই
শুধুই কেবল ধূসর জমিন।

উদ্যানের দিকে দৃষ্টি মেলে দেখি গুলির আঘাতে
আঘাতে ধ্বংস হয়ে গেছে প্রসূনের শরীর,
পলাশ শিমুল কৃষ্ণচুড়ার লাল পাপড়িরা
মিশে গেছে মানুষের রক্তস্রোতে।

পরদিন সূর্যোদ্বয়ের সাথে সাথে ফুল রোধিরের
মিলিত শক্তিতে জেগে ওঠে ফিনিক্স পাখি
অতপর দ্রোহ, ক্ষোভ, যন্ত্রণার আগুনে পুড়ে
ফিরে আসে খাঁটি সোনা হয়ে ।

পথই একদিন পথ দেখায়, সেই নির্দেশিত পথে
বাঙালিরা বারুদের নেশায় মত্ত হয়ে
সিংহ বিক্রমে ঝাপিয়ে পড়ে হানাদারদের
বাঙ্কারে বাঙ্কারে সীমান্ত চৌকির দুর্গে দুর্গে।

অনেক প্রাণ, মা-বোনের ইজ্জতের রক্তরেখায়
লিখা হয় আমাদের স্বাধীনতার জয়ধ্বনী
মাঠের সবুজ জমিনে রক্তের কালিতে
আঁকা হয় লাল-সবুজ পতাকা।

তাই এখনো একাত্তরের সেই বেদনার্থ
স্মৃতির দ্যোতনা, স্বজন হারানোর বেদনা
আমাদের অন্তরের শোকাগ্নিতে দগ্ধ করে
সেই শোককে শক্তিতে রূপান্তরিত করে
এভাবেই আমরা অনন্তকাল ধরে
আমাদের গৌরবোজ্জল সাহসী সময়কে
ধারণ করবো নতঃ শিরে লাল সালামে।

0 Shares

১৯টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ