ভ্রমণ কথকতা………১

ছাইরাছ হেলাল ১৬ মে ২০১৭, মঙ্গলবার, ০৮:১৩:৫৩অপরাহ্ন ভ্রমণ ২৩ মন্তব্য

রাত ন’টায় ফ্লাইট, ঘণ্টা তিনেক সময় হাতে নিয়ে এয়ারপোর্টে পৌঁছে গেলাম। জিসান সাহেবের সাথে, বুড়োদের সুবিধে নিয়ে লেগ-স্পেস ছিট পেয়ে গেলাম, মাপা-মাপি ছাড়াই পুটুলিও, বোর্ডিং-ফোর্ডিং এভাবেই শেষ করে গায়ে-গতরে ফুঁ দিয়ে দেখাদেখি, তাকাতাকি করে প্রায় শুয়ে-বসে টাইম পাস, সদা পদচারণময় বিড়ালটির সাথে সখ্যতা হতে-হতেও কিছুই হলো না (সব সময় সব কিছু হইতে হইতেও না হওয়া থিওরিতে ফেললাম)।

কিঞ্চিত ক্ষুধার উদ্রেক হওয়াতে দু’জনে একটি ফাইন রেস্টুরেন্টে ঢুকে হাল্কা নাস্তা সেরে নিলাম, সাথে কিছু হাল্কা খাবারও নিয়ে নিলাম, আবার যদি লেগে যায়, সে হিসাব করে, উল্লেখ্য যে এখানে একটি হাল্কা উষ্টা খাওয়ার ব্যাপার চেপে গেলাম।

এ-সব করে-টরে বিমানে ওঠার জন্য লাইনে গিয়ে দাঁড়ালাম। গন্তব্য চাংগি এয়ারপোর্ট। টাইগার এয়ার। হঠাৎ বিশ্রী-বিকট চিক্কুর, যাদের কাছে খাবার ও পানি আছে খেয়ে ফেলুন বা ফেলে দিন, ভিতরে নেয়া যাবে না। এ ওর মুখ চাওয়া-চাওয়ি করে দ্রুত মজাদার খাবার অনিচ্ছা সত্ত্বেও খেয়ে নিলাম, তাও আবার সব-না, আহারে, এবার পানি!! এক বোতল খেলাম আর এক বোতল ফেললাম, আরও অনেক-কেই একই পদ্ধতি অবলম্বন করে দেখে স্বস্তি পেলাম, বাজেট এয়ারে এই প্রথম তাই হতচকিত অবস্থা। (ফেরার পথে খাবার ও পানি সাথে ছিল কেউ কোথাও কিছু জিজ্ঞেস করেনি)

আকাশ-পরীদের কাগুজে নিক্তি-মাপা হাসিমুখ দেখে (মন্দ লাগে-নি) আকাশ-জানে উঠে পা-হাত ছড়িয়ে বিজয়ীর বেশে আরাম ছিটে বসে আড়মোড়া ভেঙ্গে কৃত্রিম হাই-হুই তুলে ট্যাবে কোবতে পড়তে শুরু করে দিলাম, তারপর সব ইতিহাস কিচ্ছু মনে নেই, হাল্কা কিন্তু নিটোল নিবিড় নিঁদ। ঘড়ি দেখে বুঝলাম ঘণ্টা দুয়েক কেটে গেছে, আরও প্রায় ঘণ্টা দুয়েক বাকী। হাল্কা পিপাসা অনুভূত হলে জিসান কে বললাম, সে বলল একটু অপেক্ষা করে দেখতে, জরুরি হয়ে গেলে অবশ্যই পানি খেতে হবে। আধা ঘণ্টা পর আওয়াজ দিলাম, পানি চাই-ই।
আকাশ-পরীরা খুশবুদার খাবার ট্রলি নিয়ে এ-মাথা-ও-মাথা করছে, থামিয়ে পানি নিলাম তিনশত লিটারের ফাইন টলটলে ফরাসি খাবার পানি, দাম দিতে দিয়ে হাল্কা মশকরাও হয়ে গেল, পাঁচ ইউ এস ডলার, ফিক করে হেসে দিয়ে বললাম, তুমি ভুল বলছো নাতো, পাঁচ সিংগাপুর ডলার কিনা প্লিজ দেখে বল, সে কিছু বলে না, খালি হাসে।

সুন্দরী চলে যেতেই তৃষ্ণা ফালিয়ে উঠল। বোতল খুলে এক ঢোক যেই না গিলে শান্তি-শান্তি ভাব এসে যাচ্ছিল ঠিক তখন-ই নিয়ম ভেঙ্গে একটি কথা মনে পড়ে গেল, বিজ্ঞ জনেরা বলেন ভ্রমণে প্রতি ডলার-কে তিরাশি টাকা দিয়ে গুন করতে নেই। এক এক ঢোকের দাম প্রায় একশত পরে যাচ্ছে ভেবে পিপাসা নাই হয়ে গেল, জিসান নিয়ে খেতে শুরু করলে কায়দা করে প্রায় ছিনিয়ে এনে ছিটের পেছনে সযত্নে রেখে দিলাম, বিশ্বাস করুন প্লেন থেকে নামা পর্যন্ত আর একবারও তৃষ্ণার্ত হইনি।
রাত প্রায় একটার দিকে চাংগিতে নেমে শান্তি পেলাম, সুনসান কিন্তু অসম্ভব সুন্দর এই পোর্ট, হঠাৎ জিসান পানি খেতে চাইল,
হায় হায় আকাশ ভেঙ্গে খান-খান, বোতলটি প্লেনেই ফেলে এসেছি!!

চলিবে............

একান্ত অনুপ্রেরণা ভ্রমণকাহিনীকালাকার জান্নাতি বেগম!!

0 Shares

২৩টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ