মুর্তিপূজার প্রারম্ভ এবং ভাস্কর্যের সাথে এর যোগসূত্র আলোচনার সূচনাতেই জ্ঞাত হওয়া আবশ্যিক মানবজাতির বিভক্তির ইতিহাস। চলুন দেখি-

মহান আল্লাহ বলেন-“সমস্ত মানুষ ছিল একই উম্মত”..... সূরা বাক্বারা-213 নং আয়াত এর প্রথমাংশ।

“আর সমস্ত মানুষ এক উম্মতই ছিল, অতঃপর তারা মতভেদ সৃষ্টি করল....”। (সূরা ইউনুছ এর 19 নং আয়াতের প্রথমাংশ)

একই বিশ্বাস ও তাওহিদের অনুসারিগণের মধ্যে বিভক্তির পূর্বাপর জেনে নেয়া যাক।

প্রথমেই সূরা বাক্বারার 213 নং আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসিরের কিতাবগুলোতে কি লিখেছেন ধারাবাহিকভাবে  তুলে ধরা হল -

কোন এককালে পৃথিবীর সমস্ত মানুষ একই মতাদর্শের অন্তর্ভূক্ত ছিল। তারা নিঃসন্দেহে তাওহীদের উপর ছিল। আদম আ. এর আগমনের পরে ও নুহ আ. এর আগমনের মাঝখানে দশ শতাব্দি অতিবাহিত হয়ে যায়। একে দশটি প্রজন্ম বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। এই দশটি প্রজন্ম হেদায়েতের উপর প্রতিষ্ঠিত ছিল। এরপর তাদের মধ্যে ইমান, আক্বিদা, বিশ্বাসের মধ্যে ব্যাপক পরিবর্তন সূচিত হয়। ফলে মহান আল্লাহপাক রাব্বুল আলামিন নবী-রাসূলগণকে মানবজাতির হেদায়েতের জন্য প্রেরণ করেন। (কুরআনুল কারিম তাফসির- ডাঃ জাকারিয়া)

আদম আ. থেকে নুহ আ. পর্যন্ত দশ শতাব্দি অবধি যে তাওহিদের শিক্ষা নবিরা দিয়েছেন সেই তাওহীদের উপরই মানুষ প্রতিষ্ঠিত ছিল। এরপর শয়তানের চক্রান্তে তাদের মধ্যে মতভেদ দেখা দিল এবং শির্ক ও করবপূজা ব্যাপক হয়ে গেল। (তাফসিরে আহসানুল বয়ান- সূরা বাক্বারার 86 নং টিকার প্রয়োজনীয় অংশ)

শিরকের প্রথম উদ্বোধন শিরেনামে, আল্লাহ সংবাদ দিচ্ছেন যে, এখন লোকদের মধ্যে শিরকের উৎপত্তি ঘটেছে। পূর্বে এর কোন অস্তিত্ব ছিল না কিন্তু এখন হয়েছে। সমস্ত লোক একই দীনের উপর ছিল। আর তা ছিল প্রথম হতেই ইসলাম। ইবনে আব্বাস রাঃ বলেন যে, আদম আ. ও নুহ আ. এর মধ্যে দশটি শতবর্ষ অতিবাহিত হয়েছে। এসব লোক আদম আ. এর সত্য দীন ইসলামের উপর ছিল। তারপর লোকদের মধ্যে মতভেদ সৃষ্টি হয় এবং তারা মূর্তিপূজা করতে শুরু করে।–(তাফসিরে ইবনে কাসির সূরা ইউনুছ এর 19 নং আয়াতের ব্যাখ্যায়)

ইবনে আব্বাস রা. বর্ণনা করেন, নুহ আ. ও আদমের (আ) এর মধ্যে দশটি যুগ ছিল, ঐ যুগসমূহের লোকেরা সত্য শরিয়াতের অনুসারি ছিল। অতঃপর তাদের মধ্যে মতভেদ সৃষ্টি হয়। তখন আল্লাহ তায়ালা নবিগণকে (আ) প্রেরণ করেন। (স্পষ্ট নিদর্শন আসার পরও মতভেদ করা হল দীনকে অস্বীকার করা শিরোনামে তাফসির ইবনে কাসির)

“এ আয়াতে বর্ণনা করা হয়েছে যে, কোন এককালে পৃথিবীর সমস্ত মানুষ একই মতাদর্শ ও ধর্মের অন্তর্ভুক্ত ছিল। সবাই একই ধরণের বিশ্বাস ও আকিদা পোষণ করত। তা ছিল প্রকৃতির ধর্ম। অত:পর তাদের মধ্যে আকিদা, বিশ্বাস ও  ধ্যান-ধারণার বিভিন্নতা দেখা দেয়। ফলে সত্য ও মিথ্যার মধ্যে পার্থক্য করা বা পরিচয় দেওয়া অসম্ভব হয়ে পড়ে। তাই আল্লাহ তায়ালা সত্য ও সঠিক মতবাদকে প্রকাশ করার জন্য এবং সঠিক পথ দেখাবার লক্ষ্যে নবী ও রাসুলগণকে প্রেরণ করেন। তাদের প্রতি আসমানি কিতাব অবতীর্ণ করেন।” [তাফসীর মাআরেফুল ক্বোরআন (সংক্ষিপ্ত)-পৃষ্ঠা 106, সূরা বাকারার 213 নং আয়াতের ব্যাখ্যায় ]

এছাড়াও বিস্তারিত ব্যাখ্যা প্রদান করা হয়েছে তাফসীর মাআরেফুল ক্বোরআন এর 107 নং পৃষ্ঠায়। দেখে নেয়া যাক-

যখন প্রতিটি মানুষ একই মত ও আদর্শ এবং একই ধর্মের অন্তর্ভুক্ত ছিল- প্রশ্ন উঠে সে মত ও বিশ্বাসটি কি ছিল? এতে দু’টি সম্ভবনা বিদ্যমান। (1) হয় তখনকার সব মানুষ তাওহিদ ও ইমানের বিশ্বাসে ঐক্যবদ্ধ ছিল। নতুবা (2) সবাই মিথ্যা ও কুফরিতে ঐক্যবদ্ধ ছিল। অধিকাংশ তাফসিরকারকের সমর্থিত মত হচ্ছে, সে আকিদাটি ছিল সঠিক ও যথার্থতা ভিত্তিক। অর্থাৎ তাওহীদ ও ঈমানের ঐক্যমত্য।

এ আয়াতের দ্বারা বোঝা যাচ্ছে যে, ‘এক’ বলতে আকিদা ও তরীকায় একত্ব এবং সত্য-ধর্ম বলে আল্লাহর একত্ববাদ ও ঈমানের ব্যাপারে ঐক্যমত্যের কথাই বলা হয়েছে।

0 Shares

৭টি মন্তব্য

  • মোঃ মজিবর রহমান

    আল্লাহ পাক ক্ষমা করুন, খুরশীদ ভাই জানতে ইচ্ছে করে শির্ক মানুষের মাঝে কিভাবে প্রচলন হল ও কার আবির্ভাবে?

    আপনার নিকট প্রশ্ন ভাস্কর্য বা মুর্তি হলেই কি আমরা শির্ক হই?
    কারণ আমরা তাকে আল্লাহর উপরে স্থান দিইনি।
    কারণ তাকে পুজাও করা হইনা।
    ার আমিও এটাও বুঝি ভাস্কর্য করে সাধারণ মানুষের হৃদয় স্থান করে নিতে কেউ পারবেনা, যদি সততা, ন্যায়বিচার, নৈতিকতা বর্জিতরোধ, করতে না পারে। দেশে বিদেশে যত রাজা বাদশা বা বর্তমানে রাজনৈতিক ভাবে রাষ্ট্রপ্রধান আছে বা ছিলো কেউ না যদি তারা শাসন কাজে জনতাকে খুশি করতে বা ভালো না রাখতে পারে। কেউ ই পরোলোক গমণ করে সুনামে রহিবেনা।

    • মোঃ খুরশীদ আলম

      মোঃ মুজিবর রহমান ভাই,
      আসাসলামু আলাইকুম। আপনার আগ্রহ আমাকে সত্যিই আভিভূত করেছে।
      ভাস্কর্য বা মূর্তি – এ নিয়ে সংকট চলমান। স্বাধীনতার পূর্বাপর অদ্যাবধি আমাদের দেশ সব কোন না কোন ইস্যুতে উত্তাল ছিলই। কখনো সাধারণ ও জাতীয় বা রাজনৈতিক ইস্যু আবার কখনো ধর্মীয় ইস্যু। আপনি সচেতন হলে খেয়াল করে দেখবেন ধর্মীয় ইস্যুগুলোর সাথে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রার পাশাপাশি অনন্তকালের জীবনেরও নিবিড়ে যোগসূত্র রয়েছে। সেটা কিভাবে? দেখেন, আপনার পকেটে টাকা থাকলে আপনি যা খুশী তা করতে পারেন। কিন্তু তাই বলে আপনি অযাচিত খরচ নিশ্চই করেন না। আবার বিবাহের পূর্বে যেমন বেহিসাবে চলতেন এখন তা করেন না। কারণ আপনার সংসার-সন্তান-পিতা-মাতার প্রতি দায়িত্ববোধ সর্বপরি আপনার বিবেকবোধ আপনাকে তা করতে দেয় না। আপনি বেছে বেছে সেই কাজটাই করেন বা সেভাবেই খরচ করেন যাতে আপনার খরচের কানা-কড়িও অযথা নষ্ট না হয়। ঠিক আপনার খরচের ব্যাপারটাকে আপনি জাতীয় ইস্যুর সাথে মিলিয়ে দেখুন। তাইলেই আপনার বিবেক আপনাকে সঠিক উত্তর দিয়ে দিবে যে আজ ভাস্কর্য প্রতিষ্ঠার নামে জনগণের টাকা খরচের যে ইস্যু তৈরী হল তা কতটা যৌক্তিক। আপনি নিশ্চই একমত হবেন যে, অযাচিত খরচ কিংবা অপচয় কোন ধর্মেই বৈধ বলে না। তাহলে কেন আজ বেহুদা একটা কাজের পিছনে দেশ ও জাতীর কষ্ট ও ঘাম জড়ানো অর্থ নষ্ট করা।
      মুজিব ভাই, আমার আলোচ্য নিবন্ধে আমি কোন বিশ্লেষণ করিনি নিজেথেকে। আমার মনে হয়েছে আমরা ব্লগাররা চলমান ইস্যুতে ভাস্কর্য কিংবা মূতির্র ইতিহাস জানা দরকার। কারণ আমার বিশ্বাস যেমন আমার কাছে পবিত্র তেমনি সকল ব্লগারের বিশ্বাসও তাদের কাছে পবিত্র। আমি অন্তত আমার লেখায় আমার সহব্লগারদের বিবেকবোধ জাগ্রত করতে চেয়েছি। তবে সেটা আমার কোন মতামত বা বিশ্লেষণের মাধ্যমে নয় বরং মুসলমানদের জীবন চালনার যে গাইড লাইন কোরআন কিতাব-তা দিয়ে। কিতাবের কোথায় কি লেখা আছে এই ভাস্কর্য বা মূর্তি নিয়ে সেটাই তুলে ধরেছি। এখন বিবেকবান ব্লগাররা নিবন্ধটি ধৈর্য সহকারে ও বারবার পাঠ করলে তবেই সঠিক তথ্যটা পরিস্কার বুঝে উঠতে সক্ষম হবে বলে আশা করি। খুব মনোযোগের সাথে প্রতিটি পর্ব পড়ুন। পাশে থাকুন। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ, সুস্থ থাকুন সেই প্রত্যাশায়।

  • মনির হোসেন মমি

    ভাই আপনিতো লিখেই যাচ্ছেন নিজের মনগড়া ভাবে।একটা কথা বুঝেন আগে আপনি আপনার নিয়ত ঠিক রাখেন,ধর্মীও দৃষ্টি কোনের বাহিরে মানুষকে শুধু মানুষ ভাবেন সব ঠিক মনে হবে।মুর্তি আর ভাষ্কর্য কী তাইতো আপনি বুঝেন না আপনাকে আর কী বলব।অবস্থা দেখে মনে হল আপনিই হলেন একমত্র ইসলামের কান্ডারী মহাজ্ঞানী বাকী ধইঞ্চা।
    এবার বলেনতো আপনার অনুসারীরা দেশে এতো ভাষ্কর্য থাকতে শুধু বঙ্গবন্ধুর ভাষ্কর্য কেন ভাঙ্গছেন?
    বিশ্ব মুসলিম উম্মার অন্যান্য দেশের মত স্মৃতি ইতিহাস ঐতিয্যকে স্বরণীয় করে রাখতে ভবিষৎ প্রজন্মকে ইতিহাস জানাতে দেশের প্রসিদ্ধদের ভাষ্কর্য হিসাবে দাড় করাতে যে টাকা খরচ করেছেন তা যদি অপচয় হয় তবে তরাওতো ইসলামিক জ্ঞানে অজ্ঞ। তাই না?
    যে মানুষটার জন্য আজ নিজ স্বাধীনতায় পায়ের তলায় মাটি পেলেন সেই মানুষটাকে ধর্মের গ্যাড়াকলে মনগড়া কথা বলে ভাষ্কর্য ভেঙ্গে অপমান করছেন !!তা না করে সরাসরি বলতেইতো পারেন পাকিস্থান জিন্দাবাদ।

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ