
আজ ভালোবাসা দিবস। ফাতিমা নামের ছোট্ট মেয়েটি খুব কাঁদছে কারন তার মা কাঁদছে। মায়ের কান্নার কারন হলো ফাতিমার বাবার চাকরী চলে গেছে। ফাতিমার বাবা এককোনে ঘাপটি মেরে বসে আছে। আজ বউকে একটা বসন্তের শাড়ি কিনে দেবে বলেছিল। সেই শাড়িতে বউসহ ধরলার পাড়ে গিয়ে নির্জনতা খুঁজে বসে বলবে- বউ তোমাকে আজ ভীষন সুন্দর লাগছে ; একটা চুমু দেই?
ফাতিমার মা লাল হয়ে উঠবে লজ্জায়। তাদের একরুমের বাসাটা তো আছেই? বাইরে আবার এসব আবদার কেন? ভীষন বেসরম মানুষটা। তবুও মনে মনে এমনটাই চাইবে। কারন ঘরের বাইরে প্রেমিক যুগলই এমন করে। আজ ভালোবাসা দিবসে তারাও প্রেমিকযুগল।
এসবের কিছুই হয়ে ওঠেনি। ভালোবাসার দামান পে বৈশ্বিক রাজনীতি নামক দাগ লেগেছে। রাজনীতি সে আর কি বোঝে। এও বোঝেনা কিভাবে তেলের দাম বাড়ে, চাল, ডাল, নুন, আটা- ময়দা, মাছ-মাংস এসবের দাম বাড়ে। কারও অকারনে চাকরী ছাটাই হয়। বেতন কমে যায় এদিকে জিনিসের দাম হুহু করে বাড়ে?
গাড়ি পার্ক করা পাট গবেষণার ডিডি সাহেবের বউ অন্যদের সাথে আজ বসন্ত ও ভ্যালেন্টাইন উৎসবের আয়োজন করেছে। এই উৎসবে সবাই এলাউড না। কারন চাঁদার অংক বেশ বড়। সবার সামর্থ্য নেই। সেখানে থাকছে অনেক রকমের খাবার। অধিকাংশই শেষে ডাস্টবিনে চলে যাবে তবুও কারও চাঁদার সামর্থ্য না থাকলে তাকে নেয়া হবে না।
ভ্যালেন্টাইন ডে তে ডিডি সাহেবও কয়েক পেহ মেরে মাতাল হয়ে ঘরে ফিরবে। তারও কতো খরচ! ভাড়া করা মেয়ে আর হুইস্কির সাথে বন্ধু ও দামী বাদাম, কাজু, মাংস।
বোটকা গন্ধ মুখে একগাদা কেনা ফুল হাতে টলতে টলতে ফিরবে। এরপর ভালোবাসা নামক রসদ নিরসনে বিরাটকায় ভূড়ি চাপিয়ে দিবে বউ এর নিতম্বে। কোনকিছু হয়ে উঠুক না উঠুক বউ কিছুক্ষণ করুন চোখে ভূড়ির দিকে তাকিয়ে পরক্ষণেই ভুলে যাবে এসব ব্যাপার।
ভাবতে থাকবে, পরদিন কুকুরে কামড়াকামড়ি করে যখন উচ্ছিষ্ট খাবার খাবে। পথচারীরা, ছোটলোক, গরীবরা মুখের লালা ফেলে আফসোস করবে। ডিডির বউ আটতলা থেকে দেখে শুধু মজাই পাবে।
সারাদিন অটো রিকশা চালানো ছগির মিয়া আজ খুব তারাতারী খুপরি ঘরে ফিরেছে। সকালে মন খারাপ করে গিয়েছিল। রুমাল নিতে বুক পকেটে দেখে বউ তাকে চিঠি লিখেছে।
একদিন সন্ধ্যায় ২০/২২ বছর বয়সের একটি মেয়েকে সে অটোতে উঠিয়েছিল। সে কোথাও যায়নি। ঘন্টাখানেক ঘোরাঘুরির পর আগের জায়গায় ফিরে এসেছে। হয়তো কোন কারনে তার মন খারাপ ছিল। মলিন সুন্দর কাটা নাকের বালিকাকে দেখে সেদিন তার বুকের ভেতর কাঁপুনি দেবার কোন কারন ছিল না, তবুও দিয়েছিল।
এরপর বালিকার অপেক্ষায় সে প্রায়ই থাকতো। কোন কোনদিন বালিকা আবার ঘন্টা খানেক ঘুরে চলে আসতো। বালিকা তেমন কথা বলে না। ছগির মিয়া শুধু সুন্দর জায়গায় ঘুরিয়ে এনে নামিয়ে চলে যায়।
একদিন সন্ধ্যায় বালিকা কাজি অফিস নিয়ে গেল। ছগির অদ্ভূত ভয়ার্ত চোখে তার দিকে তাকিয়ে রইলো। কাজী সাহেবও কড়া চোখে তার দিকে তাকিয়ে রইলো।
আজও লোকে কড়া চোখেই তাকিয়ে থাকে। কারন ছগিরের বয়স পয়তাল্লিশ ছুঁই ছুঁই । গাল গর্তে, চোখ কোটরে, হাত- পায়ে অসংখ্য ছেঁড়া – কাটা দাগ, হাড় জিরজিরে বিশ্রী দেখতে, তার উপর সারাদিন পরিশ্রম করা ঘামে ভেজা দূর্গন্ধময় শরীর। ছগির মিয়া এতো কমবয়সী আর এতোসুন্দর বউ ডিজার্ভ করে না। তারপর আবার বউ আই, এ পাশ।
ছগির বিয়ের পর বিশ্বাসই করতে পারেনি। বারবার ভেবেছে হয়তো মেয়েটি ভুল করে ফেলেছে, যে কোনদিন তাকে ফেলে চলে যাবে। আরও একটা কারন ছিল। বউ তাকে ভালোবাসে কিনা কখনও বলেনি। অনেকবার জানতে চেয়েও মুখ থেকে বের করাতে পারেনি।
আজ সকালেও অনেকবার বলেছে। আজ নাকি ভালোবাসা দিবস, বসন্ত আজ বলো। সে চুপচাপ, মানুষ এতো কম কথা বলে বাঁচে কিভাবে?
মন খারাপ নিয়ে ছগির রিকশা নিয়ে বেরিয়ে গেছে। তার মতো বুড়ার উচিত হয়নি এমন কচি মেয়েকে বিয়ে করা। মেয়ে না হয় ঝোঁকের মাথায় বলে ফেলেছে। সে তো বয়স্ক মানুষ। তার বোঝা উচিত ছিল। ভালোবাসা কি সত্যি অন্ধ কিংবা এর বয়স নেই?
ছগির কেঁদে ফেললো। রুমাল বের করতে বুক পকেটে হাত দিতেই কি যেন শক্ত। টাকা নয় কাগজ। তাতে যা লেখা তা পড়ার পর ছগিরের হাত- পায়ে রীতিমতো কাঁপুনি এলো। শরীর ঠান্ডা হয়ে গেল। অনেকদিন লেখে না তাই হয়তো ভুল বানানে লেখা সহজ- সুন্দর ভাষার চিঠি। সকালে রাগ করা মোটেই ঠিক করেনি। বউ পিয়াজু পছন্দ করে। সে পিয়াজু কিনে নিয়ে সোজা ঘরে ফিরলো। হালকা বাসন্তী শাড়ি পরে বউ কি যেন করছ। ছগিরের ইচ্ছে করলো পাতলা কোমরে হাত ঢুকিয়ে দিতে! তা না করে সে জোরে জোরে চিঠি পড়তে লাগলো। বউ চমকে তাকালো।
❣️এই শোনো,
হ্যাঁ, তোমাকেই বলছি। আমি জানি না আমি তোমাকে ঠিক কতটা ভালোবাসি। কিন্তু এটা জানি তোমাকে ছাড়া কিছু ভাবতে পারি না। তোমার কথা বলা, তোমার হাসি, তোমার চোখ, তোমার সব কিছুতে কেমন একটা মায়া মায়া ভাব। যেটা সব সময় আমাকে তোমার কাছে খুব করে টানে। মনে হয় অনন্তকাল এই মায়ায় নিজেকে জড়িয়ে পথ চলি।
সব সময় মনে হয় তোমার হাতে হাত রেখে, তোমার বুকে মাথা রেখে কাটিয়ে দেই বাকি জীবন। আমি ঠিক জানি না কবে তুমি আমার মনে জায়গা করে নিয়েছো। যদি বলো কেনো তোমাকে এতো ভালোবাসি, তার উত্তর আমার জানা নেই।
তুমি জানো কি, তুমি আমার হাত ধরলে, ভালোবাসি বললে, আমার বুকে কেমন যেন কাঁপুনি শুরু হয়, যার কারণও আমার জানা নেই, কিন্তু এটা জানি কোনো খারাপ লাগা কাজ করে না। সবচেয়ে বেশি যেটা হয় সেটা হচ্ছে তোমার সেই নেশা জড়ানো কণ্ঠ, চুমু দেওয়া আর তোমার সম্মোধন ” সোনা বউ “।
আমি চাই আমার এই ভালোলাগা, ভালোবাসার তুমিটাকে নিয়ে শেষ না হওয়া পথ চলতে।
তোমার আমার প্রতি ভালোবাসা, কেয়ার, আমার না বলা কথা বুঝতে পারা, আমার কথা চিন্তা করা, এই সবকিছুতে আমার ভালোবাসা কম কম মনে হয়। আমি চেষ্টা করি তোমাকে ভালো রাখার, ভালোবাসার। আমি মনে করি ভালোবাসার আলাদা কোনো দিন হয় না, যে সেই দিনেই একজন আরেকজনকে ভালোবাসবে, প্রতিটা দিনই ভালোবাসার দিন। আমি প্রতিক্ষনই বলি- তোমাকে ভালোবাসি, ভালোবাসি।
তবে সেখানে যখন কোনো এক নির্দিষ্ট দিনকে ভালোবাসাময় দিন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আর এটাই আমাদের প্রথম ভালোবাসা দিবস উপলক্ষ্যে ” HAPPY VALANTAINS (Valentine’s) DAY.”
চিঠি পড়ার পর বুকের ভেতর কেমন তোলপার শুরু হয়েছে। আজ তার মতো সূখী কেউ নেই। আর সত্যিই ভালোবাসার কোন বয়স নেই!
এমন সময় বিদ্যুত চলে গেল। এতো ঘন ঘন কেন যে যায়? টিনের ফাঁক গলে আলো এসে বউ এর মুখে পড়েছে। কি পূণ্যে যে সে এই মেয়েটিকে পেয়েছে। ভাবতেই তার আবার কান্না পেল। কিন্তু সে আর কাঁদবে না। এখন তার রোমান্টিক হবার সময়, ভালোবাসা- বাসির সময়।
ছগির মোবাইল ফোনে গান ছেড়ে দিল। বাপ্পীলাহিরী গাইছে- ওই শোন, পাখিরা বলছে কথা,,,,,
বউ পাশ থেকে মশকরা করলো, আপনি এই অন্ধকার রাতে পাখি পাইলেন কই ?
– সবসময় সব থাকতে হয় না বউ , মাঝেমাঝে ভাবতেও হয়। দুজনেই অকারন হেসে উঠলো।
ছবি- নেটের
৫টি মন্তব্য
হালিমা আক্তার
ছগির মিয়া অবশেষে ভালোবাসা শুনতে পেল। ভালোবাসা দিবসের রোমান্টিক গল্প। শুভ কামনা রইলো।
রোকসানা খন্দকার রুকু
আপনার জন্যও শুভকামনা রইলো ❣️❣️
কাজী জহির উদ্দিন তিতাস
ভাল লাগলো, শুভ কামনা নিরন্তর।
ফারজানা তৈয়ূব
আমি বরাবরই রুকু আপার লেখার ভক্ত। উন্মুখ হয়ে থাকি কবে ওনার নতুন লেখা আসবে।খুব ভালো লেগেছে লেখাটি।
নার্গিস রশিদ
ভালো লাগলো । শুভ কামনা ।