আমার জন্ম হয় ১৯২০ সালের ১৭ই মার্চ তারিখে। আমার আব্বার নাম শেখ লুৎফুর রহমান। আমার ছোট দাদা খান সাহেব শেখ আবদুর রশিদ একটা এম ই স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। আমাদের অঞ্চলের মধ্যে সেকালে এই একটা মাত্র ইংরেজি স্কুল ছিল, পরে এটা হাইস্কুল হয়, সেটি আজও আছে। আমি তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত এই স্কুলে লেখাপড়া করে আমার আব্বার কাছে চলে যাই এবং চতুর্থ শ্রেণীতে গোপালগঞ্জ পাবলিক স্কুলে ভর্তি হই। আমার মায়ের নাম সায়েরা খাতুন। তিনি কোনোদিন আমার আব্বার সাথে শহরে থাকতেন না। তিনি সমস্ত সম্পত্তি দেখাশুনা করতেন আর বলতেন, “আমার বাবা আমাকে সম্পত্তি দিয়ে গেছেন যাতে তাঁর বাড়িতে আমি থাকি। শহরে চলে গেলে ঘরে আলো জ্বলবে না, বাবা অভিশাপ দেবে।”
আমরা আমার নানার ঘরেই থাকতাম, দাদার ও নানার ঘর পাশাপাশি। আব্বার কাছে থেকেই আমি লেখাপড়া করি। আব্বার কাছেই আমি ঘুমাতাম। তাঁর গলা ধরে রাতে না ঘুমালে আমার ঘুম আসতো না। আমি বংশের বড় ছেলে, তাই সমস্ত আদর আমারই ছিল। আমার মেজো চাচারও কোনো ছেলে মেয়ে ছিল না। আমার ছোট দাদারও একমাত্র ছেলে আছে। তিনিও ‘খান সাহেব’ খেতাব পান। এখন আইয়ুব সাহেবের আমলে প্রাদেশিক আইনসভার সদস্য আছেন। ডিস্ট্রিক্ট বোর্ডের সভ্যও ছিলেন, নাম শেখ মোশারফ হোসেন।
১৯৩৪ সালে যখন আমি সপ্তম শ্রেণীতে পড়ি তখন ভীষণভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ি। ছোট সময়ে আমি খুব দুষ্ট প্রকৃতির ছিলাম। খেলাধুলা করতাম, গান গাইতাম এবং খুব ভাল ব্রতচারী করতে পারতাম। হঠাৎ বেরিবেরি রোগে আক্রান্ত হয়ে আমার হার্ট দুর্বল হয়ে পড়ে। আব্বা আমাকে নিয়ে কলকাতায় চিকিৎসা করাতে যান। কলকাতার বড় বড় ডাক্তার শিবপদ ভট্টাচার্য, এ কে রায় চৌধুরী আরও অনেককেই দেখান এবং চিকিৎসা করাতে থাকেন। প্রায় দুই বছর আমার এইভাবে চলল।
১৯৩৬ সালে আব্বা মাদারীপুর মহকুমায় সেরেস্তাদার হয়ে বদলি হয়ে যান। আমার অসুস্থতার জন্য মাকেও সেখানে নিয়ে আসেন। ১৯৩৬ সালে আবার আমার চক্ষু খারাপ হয়ে পড়ে। গ্লুকোমা নামে একটা রোগ হয়। ডাক্তারদের পরামর্শে আব্বা আমাকে নিয়ে আবার কলকাতায় রওয়ানা হলেন চিকিৎসার জন্য। এই সময় আমি মাদারীপুর হাইস্কুলে সপ্তম শ্রেণীতে ভর্তি হয়েছিলাম লেখাপড়া করার জন্য। কলকাতা যেয়ে ডাক্তার টি, আহমেদ সাহেবকে দেখালাম। আমার বোন কলকাতায় থাকত, কারণ ভগ্নিপতি এজিবিতে চাকরি করতেন। তিনি আমার মেজোবোন শেখ ফজলুল হক মণির মা। মণির বাবা পূর্বে সম্পর্কে আমার দাদা হতেন। তিনিও শেখ বংশের লোক। বোনের কাছেই থাকতাম। কোন অসুবিধা হত না। ডাক্তার সাহেব আমার চক্ষু অপারেশন করতে বললেন। দেরি করলে আমি অন্ধ হয়ে যেতে পারি। আমাকে কলকাতা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে দিলেন। ভোর ন’টায় অপারেশন হবে। আমি ভয় পেয়ে পালাতে চেষ্টা করতে লাগলাম, কিন্ত পারলাম না। আমাকে অপারেশন ঘরে নিয়ে যাওয়া হল। দশ দিনের মধ্যে দুইটা চক্ষুই অপারেশন করা হল। আমি ভাল হলাম। তবে কিছুদিন লেখাপড়া বন্ধ রাখতে হবে, চশমা পরতে হবে। তাই ১৯৩৬ সাল থেকেই চশমা পরছি।
অসমাপ্ত আত্মজীবনী, শেখ মুজিবুর রহমান।(পৃষ্ঠা নং-০৮ ও ০৯)
বিঃ দ্রঃ আজকের অংশটিতে ‘সভ্য’ শব্দটি সম্পর্কে আমি পরিচিত নই, কারো জানা থাকলে ধারণা দিবেন।
Thumbnails managed by ThumbPress
১৪টি মন্তব্য
অনিকেত নন্দিনী
সভ্য – সদস্য, মেম্বার।
সাথেই আছি আপু। লিখতে থাকুন। 🙂
মারজানা ফেরদৌস রুবা
ধন্যবাদ। আমার জানা হয়েছে। সাথে আছেন, তাই আগ্রহ পাচ্ছি। -{@
ইদানীং মা অসুস্থ থাকায় ব্লগে তেমন সময় দিতে পারছি না। কতো লিখা আসছে, পড়া হয়ে উঠছে না।
ভালো থাকুন।
তানজির খান
ভাল লাগলো।এই পোস্ট কি রি পোস্ট? মনে হচ্ছে আগেও পড়েছি।
বারাবার পড়লেও ভাল লাগে, জানতে ইচ্ছে করে আরো।
শুভেচ্ছা রইল প্রিয় ব্লগার
মারজানা ফেরদৌস রুবা
রি পোস্ট কি না, আগের পোস্ট দেখে নিলেই তো বুঝা যেতো। ভালো করে পড়া হয়নি বুঝি?
হ্যাঁ, বারবার পড়লেও ভালো লাগে।
তানজির খান
আপু, আমি আগে অন্য কোথাও পড়েছি এটা। এই সিরিজ আমার আগ্রহের। তবে এই আগ্রহ কিছুটা কমবে বইটা হাতে পেলেই! মানে বইটা কিনব খুব দ্রুতই আপু।
শুভেচ্ছা ও শুভকামনা রইল
মারজানা ফেরদৌস রুবা
হ্যাঁ, এ বইটি হাতের কাছে থাকাটাই অন্যরকম উপলব্ধি। তবে বইটা অল্পসময়ে পড়ে ঠিক তৃপ্তি আসে না, বরং অল্পঅল্প করে পড়লেই সুন্দরভাবে ধারণ সম্ভব।
শুভেচ্ছা রইলো।
ছাইরাছ হেলাল
এ জন্যই আজীবন চশমা!!
আপনার মা দ্রুত সেরে উঠুন এ কামনা, করি।
মারজানা ফেরদৌস রুবা
ধন্যবাদ।
হ্যাঁ, আজীবন চশমার রহস্য জানা গেলো।
জিসান শা ইকরাম
আগ্রহ নিয়ে পড়ছি জাতির পিতার জীবন কথা।
পর্ব গুলো আর একটু বড় করা যায়? ৩ পাতা করে…………
কষ্ট করে শেয়ার দিচ্ছেন…… কৃতজ্ঞতা।
মারজানা ফেরদৌস রুবা
পর্বগুলো বড় করা যেতো কিন্তু বেশি বড় করলে পাঠক আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। পরে আস্তে আস্তে বড় করে দেবো।
ধন্যবাদ।
মোঃ মজিবর রহমান
পড়ে অনেক কিছুই জানা হলে।
আপনার মা সুস্থ হক এই কামনা করি।
মারজানা ফেরদৌস রুবা
ধন্যবাদ মজিবর ভাই।
শুন্য শুন্যালয়
ছোটবেলা থেকেই যুদ্ধ, হয়তো তাকে মানসিক দিক দিয়ে শক্তিশালি করেছে। জানতে পারছি কতকিছু।
একজন আইজুদ্দিন
খুব ভাল উদ্যোগ।
ফেসবুকে আমাদের গ্রুপ K Force এর পক্ষ থেকে আমরা ধারাবাহিকভাবে বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনী প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছি। আপনার এই লেখাগুলো আমাদের সেই উদ্যোগকে পুরোপুরিভাবেই সহযোগিতা করবে।
অসম্ভবরকম ভাল লেগেছে। সবার মাঝে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও তার জীবনচরিত পৌঁছে দেওয়ার এই উদ্যোগকে দাঁড়িয়ে স্যালুট জানাই।
অভিনন্দন নিন।