
আজকাল আর আমাকে তোমার মনে পড়ে না,তোমার মনে পড়ে আমার মুখোশধারী আপনজনদের।
আজ আমার মোবাইলে আগের মত মেসেঞ্জারের টুং টাং আওয়াজ পাই না, টুং টাং আওয়াজ হয় অন্যখানে।
ভাবতে অবাক লাগলেও সত্যি এটাই যে,আজ আমি তোমার কাছে ঘৃনিত অথচ আমার কাছের মানুষ তোমার ক্রাশ!
আজকাল চুম্বকের ভৌত ধর্ম মেনেই চলছে তোমার এখানে ওখানে ক্রাশ খাওয়া।
স্বৈরতন্ত্রের চাপেই বলো আর আমার ছদ্ববেশী আপনজনের সাঁয় দেয়াতেই বলো, চুক্তি করে একদম এক নিমিষেই নিভিয়ে দিলে সামাজিক জীবন।
তোমাদের হাসি ঠাট্টায়, এস এম এসের নীলনকশা কনভারশেসনে,দুষ্টু ভয়েস কলে, সিগারেট আর চায়ের ধোঁয়ায় মিলিয়ে দিলে আমার এতদিনের ভালোবাসা।
তোমাদের আলোচনার মুখরোচক বিষয়ই হলো আমার এতদিনের গচ্ছিত ভালোবাসা নাকি আজ প্রতারনা ! আমি নাকি বেহায়া ! অভিনেত্রী আরও কত রং বাহারী নাম আর ভন্ডামী !
মনুষ্যত্বের বাকল খুলে দুর্নীতির দুষ্ট চক্রের মত পায়ে আমার শিকল পড়িয়ে দিলে !
জলাঞ্জলী দিলে আমার অস্তিত্বকে,প্রমান করে দিলে তুমিইই সত্যি !
জানিয়ে দিলে গোঁধূলিতে আমার কপালে একরাশ চুমুর গল্পটা মিথ্যে,
তোমাতে আমাতে মিশে থাকার গল্পটা মিথ্যে,
তোমার ছেড়ে যাওয়ার গল্পটাও মিথ্যে,
বুক ফুলিয়ে নিজের মত করে বাক্যাবলী বানিয়ে রংবাহারী পেখম মেলে মহান সাজলে।
গনসমাবেশে ছড়িয়ে দিলে নিজের আওড়ানো বুলির মিছিল।
অনুভূতির বোধ প্রাচীরে হারানোর দাগ তীব্রভাবে কেটে গেলে !
মাকড়ঁসার জালের মত ঝুলিয়ে দিলে আমার সমস্ত মানসিক যন্ত্রনা ঐ রংচটা দেয়ালে।
অথচ তুমি কিন্তু ঠিকই জানো সত্যিটা কি?
এর আগেও বহুবার অলিখিত হিসেব নিকেশে আমাকে মারতে গিয়েও ফিরে এসেছিলে !
এবার একেবারে থার্ড পারসনের সহযোগীতায় ভালোবাসার বদৌলতে উপহারস্বরুপ লিখিত মৃত্যু লিখে দিলে।
পাথরচাপা দিয়ে বরফ দেয়া কফিনে চায়ের পাতা,আতর লোবান ছাড়াই চুপিসারে শুইয়ে দিলে।
নিস্তব্ধ আমি বাকরুদ্ধ হয়ে নিজের এই লিখিত মৃত্যুর পোস্টমর্টেম দেখছিলাম আমার অন্ধকার ছোট্ট ঘরটায়,,
দেখছি হাতুড়ির আঘাতে খাঁচা কেটে হৃদপিণ্ড খুলে ফেলার নির্মম দৃশ্য,,
এ দৃশ্যপট আমার একেবারে অপরিচিত একেবারে অচেনা।
কালসিটে দাগগুলো দেখে এবার আমি ভয়ে নিজেই গগনবিদারী চিৎকারে আকাশ পাতাল ভাঙ্গলাম তবুও কোথাও তার প্রতিধ্বনি শুনতে পেলাম না।
অনূভুতিহীন শূণ্য শরীরে আজকাল আর কোনো ব্যাথা বেদনা, সুখ দুঃখের আলাপন,ভালোবাসার কথোপোকথনের আওয়াজ পাই না।
বেঁচে আছি খাদ্য শৃঙ্খলে রক্ত মাংসের এক তাঁজা শরীর নিয়ে, যা নীল শাড়ীতে আজও আচ্ছাদিত।
তবে হৃদপিন্ডটা এখন ও পড়ে আছে ঐ ধুলোবালিতে ভরা পোস্টমর্টেম ঘরে।
তবুও আমি কল্পনায়, স্বপ্নে তোমায় বাহু-ডোরে বাঁধি,
কাছে পাওয়ার ব্যাকুলতায় অধীর হয়ে বসে থাকি।
ভালোবাসা অমলিন সেই আগের মত,একই সুর একই তালে বেঁজে ওঠে আমার অন্তঃরীক্ষ দ্বীপে।
শুধু তুমি কাছে নেই দূরে- বহুদূরে,
এখন শুধু স্মৃতিগুলোকে পানির দরে বেঁচতে পারার অপেক্ষায়।
নিজের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ ! বেঁচে আছি কী???
আছিইইই তো !!!
জীবনের তাগিদেই একটা জীবন্ত লাশ হয়ে।।।।
ছবিঃ নেট থেকে।
১৪টি মন্তব্য
খাদিজাতুল কুবরা
কি বলবো ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না। প্রিয়জনের দেওয়া আঘাত আর বিশ্বাসঘাতকতার চেয়ে ধারালো তরবারী আর নেই। তবুও দিনশেষে মানুষের মাঝেই মানুষ বাঁচে। তবে কি জানো, দুষ্ট গরুর চেয়ে শূন্য গোয়াল ভালো। এই যে বিষাদ সুন্দর কবিতা লিখলে, শতশত পাঠক পড়বে, কেউ কেউ নিজেকে খুঁজে পাবে আর মনের অজান্তেই কারুর হয়ত জমে থাকা চোখের জল গড়িয়ে পড়বে। এসব একজনের লেখকের সেরা প্রাপ্তি!
জীবনে দুঃখ আসে সব কেড়ে নিতে নয়, নিজের ভেতর সুপ্তশক্তিকে জাগিয়ে তুলতে ও আসে। সব ঝড় ক্ষতিকর নয়, কিছু ঝড় করে রাস্তা পরিস্কার।
এভাবেই লিখতে থাক।
অনেক শুভেচ্ছা রইল
রেজওয়ানা কবির
দুষ্টু গরুর চেয়ে শূন্য গোয়াল ভালো এটা প্রবাদেই মানায়, প্রবাদ দিয়ে কি আর জীবন চলে আপু???একজন লেখক তার কল্পনা থেকেই যা মনে আসে তাই লেখে আমিও তাই লিখলাম। আমার কাছে মনে হয় পাঠক হয় বিরহ নয় ভালোবাসা এ দুটোই বেশি পছন্দ করে। আমি ছোটবেলা থেকেই বিরহ লিখতে পছন্দ করি থিম একই থাকে শুধু ভাষা চেঞ্জ হয় এই আর কি!!! আব্বুও বিরহ বেশি লেখে তাই তার লেখা পড়তে পড়তে হয়ত অবচেতন মনে এইসব লিখি। আর লেখকের লেখা তখনই স্বার্থকতা যখন মানুষের চোখে পানি আনতে পারা। ধন্যবাদ আর শুভকামনা আপু।
খাদিজাতুল কুবরা
আমি লেখাটির সারবস্তু মাথায় রেখেই মন্তব্য করেছি। লেখকের সাথে লেখার বিষয়বস্তুকে গুলিয়ে ফেলিনি। যেহেতু আমি ও দু’চার লাইন লেখার দুঃসাহস করি। তাই এটুকু বুঝি যেকোনো বিষয় নিয়ে লিখতে পারেন।
রেজওয়ানা কবির
আপু আমি আসলে ওভাবে মিন করে বলিনি আমি বোঝাতে চেয়েছি আমার মনের অনুভূতি যে আমি বিরহ পছন্দ করি অন্য কিছু না আর আমার লেখা পড়ে আপনার ভালো লেগেছে জন্যই এভাবে লিখলাম। আর আপনি তো অনেক ভালো লেখেন আমিতো অত ভালো কিছু লিখতে পারিনা যাস্ট আপনারা উৎসাহ দেন সেইটার জন্যই লিখি আপনারা না উৎসাহ দিলে হয়ত লিখতেই পারব না। ভুল বুঝবেন না প্লিজ এমনিতেই সময় ভালো যাচ্ছে না আমার কেন জানি!!ভালো থাকবেন সবসময়, শুভকামনা।
রোকসানা খন্দকার রুকু
কবিতায়, কলমে অগ্নিঝড় বইছে, এটা বেটার।।গো এহেড,,
ভালোবাসাটাই একপ্রকার বেহায়ামী, সেটা মুখোশধারী আপনজন বলুক আর ক্রাশই বলুক! এইসব মুখোশধারীদের থেকে দুরে থাকাই শ্রেয়।
আগলে রাখা, থাকা সত্যিকার ভালোবাসা কারও কথায় নড়চড় হয় না। যেটার ভিত দূর্বল থাকে সেটাই আসলে একে, ওকে, তাকে ক্রাশ বানায়!!
কে কোথায়, কাকে কি, ক্রাশ এসব আসলে ডিজগাস্টিং,,,
সেইমফুলি স্পিক টু সে,,,,কালসিটে দাগ কোনদিন শেষ হয় না। সে যতোই বিশ্বাসী চোখে তাকানো হোক না কেন?
তবুও অশেষ কৃতজ্ঞতা ও শুভকামনা।।।।।
রেজওয়ানা কবির
হুম যেকোনো সম্পর্কেরই ভিত্তি যদি মজবুত হয় তবে আর যাইহোক সম্পর্ক ভেঙ্গে যায় না। তাই জীবনে বেঁচে থাকতে গেলে অনেক মানুষের দরকার নেই দু চারজন বিশ্বস্ত, আগলে রাখার মানুষ থাকলেই চলে।
ধন্যবাদ আর শুভকামনা আপু।
ছাইরাছ হেলাল
নিকট থেকে দূর-বহুদূর সময়ের স্রোতে সত্যি ই হারিয়ে গেছে,
ফেলে রেখে গিয়েছে এক রাশ বুভুক্ষ স্মৃতি।
রেজওয়ানা কবির
স্মৃতিই মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে, আবার স্মৃতি মানুষকে কাঁদায় কি অদ্ভুত দুনিয়া???
অশেষ কৃতজ্ঞতা ভাইয়া।।।
আলমগীর সরকার লিটন
বেশ অনুভূতির এক অভিমানের প্রকাশ কবি আপু ভাল থাকবেন——–
রেজওয়ানা কবির
ধন্যবাদ ভাইয়া।
হালিমা আক্তার
জীবনের সবচেয়ে কষ্ট প্রিয়জনের কাছ থেকে আঘাত পাওয়া। যখন অভিমান না বুঝে দূরে সরে যায়। নিজেকে তখন তুচ্ছ মনে হয়। কেন এমন হয়। মন্তব্য লিখতে যেয়ে চোখ জলে ভরে উঠে। খাদিজা সঠিক বলেছে। এ লেখার মাঝে নিজের ছবি খুঁজে পাওয়া যায়। তবু আমরা অপেক্ষা করি প্রিয়জন ফিরে আসবে বলে।
রেজওয়ানা কবির
কি লিখব বুঝতেছি না আপু, শুধু এইটুকু বলা লেখা, নাটক,সিনেমা সব কিছুতেই বাস্তবতার ছোঁয়া থাকে বলেই আমাদের অনেকের জীবনের সাথে লেখা মিলে যায় তখনই স্মৃতিগুলো ডানা মেলে আমার ঝাপটাতে থাকে। অনেক শুভকামনা আপু।
সাবিনা ইয়াসমিন
জীবন্ত লাশের অনুভূতি খুব সুক্ষ্মভাবে উপস্থাপন করেছেন। আমরা আমাদের দৃষ্টিতে কেবল মানুষ দেখি, চলতি ফিরতি মানুষের বাইরের অংশের সাথে ভেতরের অংশের ব্যবধান কত সেটা বুঝতে পারি ক’জন।
আপনি সব সময়েই অনেক ভালো লেখেন, তবে এই লেখায় আপনার পারদর্শীতা ভিন্নভাবে দেখতে পাচ্ছি।
নিয়মিত লিখুন। শুভ কামনা অবিরাম 🌹🌹
রেজওয়ানা কবির
ধন্যবাদ আপু ঠিকই বলেছেন আমরা বেশিরভাগ মানুষের বাইরের দিক দেখেই পর্যবেক্ষন করে থাকি যে পর্যবেক্ষনে আমাদের ভুল ও হতে পারে কেননা আমরা মানুষের জায়গায় থেকে তার পরিস্থিতি অনুভব করতে পারি না শুধু বাহ্যিক দিক দেখি যা সত্যি কষ্টদায়ক। শুভকামনা আপু এভাবে লেখায় উৎসাহ দেয়ার জন্য। ভালো থাকবেন।