কিন্তু, এবং; অতঃপর….

ঘুমের ঘোরে কেটে যাওয়া অনন্ত পথ ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৬, মঙ্গলবার, ০১:০৩:৩৪অপরাহ্ন বিবিধ ১১ মন্তব্য

১।
গতকাল রাত থেকেই একটা অচেনা নম্বর থেকে বার বার কল আসছে। ওপাশ থেকে কোন সাড়া শব্দ পাওয়া যায় না। শুধু মাঝে মাঝে কেউ একজন নিশ্বাস নিচ্ছে স্পষ্ঠ বুঝতে পারছি। প্রায় ২০ টার মত কল করেছিল সে। এমনিতেই কাল মেজাজ খারাপ ছিল। রাতে কেন জানি ঘুম আসছিল না। ফোন করবি ভাল কথা; কিন্তু কথা না বলার কি যুক্তি!! আর ২ দিন পর সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা। পড়া তো হচ্ছেই না বরং ঘুরে বেড়াতে মন চাইছে। পরীক্ষা আসলেই আমার এমনটা হয়। পড়ায় মন বসাতে পারি না। কিছুক্ষণ পর পর ফেইসবুকে গুতাগুতি, সেলফি, আর কিছু করতে না ইচ্ছে করলে মোবাইল নিয়ে টিপাটিপি; এই কাজ!

সাধারণত খুব সকালে উঠার অভ্যাস আমার। কিন্তু গতরাতে ঘুম ঠিক মত হয় নি বলে বিছানা ছেড়ে উঠতে বেশ দেরি হয়ে গেল। উঠেই যেন মনে হল স্বপ্ন দেখেছি আমি! কারণ অহনা বসে আছে চেয়ারে। আমাকে দেখে মিটিমিটি হাসছে। মনে হাজারো প্রশ্ন এখন উকিঝুকি মারছে। হয়তো অহনা সেটা বুঝতে পারছে আমাকে দেখেই। অহনা আমার পাশের বাসায় থাকে। মা হারা মেয়ে, বাবা থাকে সারাদিন অফিসের কাজ়ে ব্যস্থ। তাই মেয়েকে তেমন সময় দিতে পারেন না। তাই সে সময় অসময়ে আমার আম্মার কাছে আসে। আমার মা অহনাকে খুব পছন্দ করেন। নিজের মেয়ের মত দেখেন।

অহনাঃ কেমন আছেন?

আমিঃ ভাল (বিরক্ত হয়ে)

অহনাঃ খুব বিরক্ত নাকি আমার উপর?

আমিঃ নাহ! তা তুমি এখন এখানে?

অহনাঃ আসলাম আপনাকে দেখতে

আমিঃ কেন, আমাকে দেখার কি আছে?

অহনাঃ তা যদি বুঝতেন তাহলে ............

কথা শেষ না করেই অহনা রুম থেকে বিদায় নিল। আর আমিও হাফ ছেড়ে বাচলাম। এই মেয়েটাকে কেন জানি আমার ভাল লাগে না। সেটা অহনা হয়তো বোঝে কিন্তু তারপরও পিছু ছাড়ে না।

মোবাইলটা হাতে নিয়েই আবার চমকে উঠলাম। সাতাশটা মিসকল! আমি হঠাৎ করেই এমন গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে পরিণত হলাম কি করে মাথায় আসলো না। মোবাইল ঘটে যা বুঝলাম তা হল গতকালের সেই অচেনা নম্বর থেকেই কল দেয়া হয়েছে আমাকে। কৌতুহল সামলাতে না পেরে কল দিলাম সেই নম্বরে। ২ /৩ টা রঙ এর পর ফোন ধরার আওয়াজ পেলাম।

আমিঃ হ্যালো, কে আপনি? এতো বার বার ফোন দিচ্ছেন কেন?

ওপাশ থেকেঃ (কিছুক্ষণ চুপ)...... আসলে ......

আমিঃ আরে কি হল? এত ভনিতা করছেন কেন? ফাজলামী করার জায়গা পান না?

ওপাশ থেকেঃ আ... মি লিজা।

আমিঃ কোন লিজা?

ওপাশ থেকে খট করে ফোন রাখার আওয়াজ পেলাম। মনে হয় রাগ করেছে সে!

২।
পুরোনো ছবির আলবাম ঘেটেঘুটে আবিষ্কার করলাম লিজা আমার সেই ছোটবেলার বান্ধবী। যখন ক্লাস ৫ / ৬ এ পড়ি তখন থেকেই ওর সাথে আমার পরিচয়। প্রথম প্রথম ওর সাথে কথা বলতে চাইতাম না। একটু বেশী সুন্দরী আর দেমাগী হওয়ায় ওর ধারে কাছে ঘেষতে ইচ্ছে করতো না। যদিও লোকমুখে শুনেছিলাম আমার প্রতি নাকি সে বিশেষভাবে দূর্বল। যদিও খুব একটা পাত্তা দিতে ইচ্ছে করতো না। অনেকটা ড্যাম কেয়ার ভাব নিয়ে চলাটাই আমার পছন্দের। কিন্তু আস্তে আস্তে কি করে জানি লিজার সাথে আমার সখ্যতা গড়ে উঠতে শুরু করেছিল। লিজা যখন ক্লাস ৯ কি ১০ এ পড়ে তখন ওর পরিবার থেকে ওকে অন্যত্র বিয়ে দেয়া হয়েছিল। ছেলে নাকি কোটিপতি। বিদেশ থাকে। বিয়ের পর লিজাকে নিয়ে যাবে।

প্রিয় বন্ধুর বিয়েতে আমাদের ক্লাসের সবাইকে দাওয়াত দিয়েছিল ও। আমাকে অবশ্য স্পেশালভাবে দিয়েছিল। আমার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার সময় শুধু একটা কথাই বলেছিল লিজা – “হয়তো কোনদিনো সুখী হবো না আমি!”

আমাকে কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়ে চোখের পানি মুছতে মুছতে গাড়িতে উঠে চলে গিয়েছিল লিজ়া। আমি সেই কথার মানে আজো বুঝে উঠতে পারি নি।

যে কোন কারণেই হোক, লিজাকে আর ফোন দেই নি। তারপরও খুব ইচ্ছে করে ওর সাথে কথা বলতে। আজ এতো বছর পর............

৩।
বিকেলে গুলশানে টিউশনীতে গেলাম। ৩২ নম্বর রোডের আলিশান এক বাড়ি। কোটিপতি বাবার মেয়েকে পড়াই গত ২ বছর ধরে। ইছরে পাকা বলতে যা বোঝায় এই মেয়ে সেরকমই। পড়াশোনায় মনযোগ অনেক কম। এই মেয়েকে সামলানো অনেক কঠিন। অনেকবার চেষ্টা করেছিলাম এই টিউশনীটা ছেড়ে দিতে। কিন্তু মেয়ের বাবা এতো করে বললো যে না থেকে আর পারি নি।
এই মেয়ের পড়াশোনা ছাড়া সব কিছুতেই খেয়াল। একেক দিন একেক রকম বায়না ধরে। যেমন আজ বলছে আমার সাথে মুভি দেখতে যাবে। সরাসরি না করে দিলাম।
মেয়েও কম যায় না! সিনেমার ডায়লগ দেয়া শুরু করলো আমার সামনেই

“ওই ব্যাটা! এত বড় সাহস তোর!! তোর ঘরে কি মা - বোন নাই!!” :-*

ওর একরকম কান্ড দেখে হা করে তাকিয়ে থাকা ছাড়া আমার আর কিছু করার নেই।

১৫ – ২০ দিন পর,

যথারীতি টিউশনীতে যাবো বলে রেডি হচ্ছি। এমন সময় ফোন বেজে উঠলো। স্ক্রীণে দেখলাম আমার ছাত্রী ফোন দিয়েছে। হয়তো নতুন বাহানা ধরবে আজকে।

আমিঃ হ্যালো, হা বলো?

ছাত্রীঃ আজকে আমার বিয়ে,

আমিঃ তাই নাকি!! তা এরকম হঠাৎ?

ছাত্রীঃ আপনি কি খুব উল্লাসিত?

আমিঃ তা তো বটেই। তোমার বিয়ে।

ছাত্রীঃ আপনি আসলে একটা আজব লোক! মেয়েদের মনের কথা আপনি বুঝবেন না কোনদিনও। হয়তো আপনি সুখে থাকবেন কিন্তু আমি .........

খট করে ফোন রাখার শব্দ পেলাম ওপাশ থেকে।

কিছুই বুঝতে পারছি না কি করবো এখন!

৪।
১ মাস পর কোন এক বিকেলে,

বাসার কলিং বেলটা বেজে উঠলো। আশেপাশে কেউ না থাকায় আমি নিজেই দরজা খুললাম। দরজা খুলেই দেখি অহনা আমার সামনে দাঁড়ানো। অপরূপ সুন্দর লাগছে তাকে আজকে। খুব সুন্দর করে সেজে এসেছে সে। তার এমন সাজগোজ করা কারণ জানতে চাই নি। শুধু তার দিকে অপলক তাকিয়ে ছিলাম অনেকক্ষণ যাবত। হয়তো এই প্রথম এই মেয়েটাকে ভাল লাগলো মন থেকেই।

কিছু বলতে যাবো তার আগেই অহনা বলো "এটা কার্ডটা ধরেন"।

আমিঃ কিসের কার্ড?

অহনাঃ আমার বিয়ের।

আমিঃ কিন্তু আমার যে কিছু বলার ছিল ----

অহনাঃ (উদাস দৃষ্টি) বড্ড দেরি করে ফেলেছেন।

আমিঃ হবে হয়তো!

এভাবে করেই হয়তো সবকিছুতেই দেরি করে ফেলছি আমি। আর তা থামবে বলে মনে হয় না। নাহ! কিছুই হবে না আমাকে দিয়ে। 

0 Shares

১১টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ