রাজাকার জাতীয় পার্টির নেত সাখওয়াতকে মৃত্যুদন্ড সহ  সাত জনকে আমৃত্যু কারাদন্ড দিলো যুদ্ধাপরাধ ট্রাবুনাল।পত্রিকায় পুরনো খবর পড়লেন সমর।
-বেশ এ ভাবে হয়তো আমরা আমাদের কলংকের  কালিমার দাগ কিছুটা হলেও লাগব হবে।
সমরের এমন বক্তব্যের জের ধরেন অভি।
-তাতো ঠিক আছে কিন্তু.....।
-থাক ওসব কথা।
-থাকবে কেনো?
-এক জায়গায় যাচ্ছি...সেখানে গিয়ে ভাল করে বক্তিতা দিস,....তুইতো আবার ষ্টেজে উঠার আগেই কাপতে শুরু করিস।
-কোথায় যাবি?
-কোথায় আবার,....আজ যে ১৫ই আগষ্ট তুই জানিস না,,,,একটি ক্যাম্পে যাবো দাওয়াত পেয়েছি।
-দাওয়াত পেতে হয় না,সবার জন্যই উম্মোক্ত এই শোক দিবস...বুঝলি।
-হুম...তবে অবাক বিষয় হলো এই যে শোক দিবসের এতো সব আয়োজন যাদের জন্য,সেই গরীব অনাথরাই ঠিক মতো খাবার পায় না।
-পাবে কি করে এখনতো অনেকে বিরানি শোক দিবস পালন করেন।
-হ, তুই যা বলেছিস।
দুজনেই রাজধানীর রাজ পথের পথ চারি।খালি রিক্সাকে যেতে দেখে ডাক দিলেন।
-ঐ রিক্সা!
রিক্সাওয়ালা রিক্সাটিকে দ্রুতই তাদের সামনে এনে হাজির করলেন।দুজনেই রিক্সায় উঠলেন।রিক্সাওয়ালা পেট্রুোল মেরে টান দিয়ে কিছু দুর এগিয়ে অভিযোগের সুরে কথা বললেন।
-ভাইয়া, আমারে যে রিক্সা বলে ডাক দিলেন আমার কিন্তু সুন্দর একটি নাম আছে।
-ঠিক আচ্ছে,...কি নাম তোর।(আশ্চর্য্য হয়ে)
-একাত্তোর!
-হুম...সুন্দর তবে নামটি কে রেখেছিল।
-কেউ না ভাই, আমারটা আমি দিয়েছি।
-কেনো?
-৭১ পর ৭২ এর কাছা কাছি তখন আমার জন্ম,জন্মের পর মাকে দেখিনি,বড় হয়ে শুনেছি,.....আমি শিশু কাল কাটিয়েছিলাম এক ভিক্ষারির ঘরে,...শৈশব কেটেছিল এতিম খানায় আর এখন এই রিক্সিায়।
-তুমিতো দেখছি খুব সুন্দর শুদ্ধ ভাষায় কথা বলছো তুমি লেখা পড়া কতটুকু করেছো?
-বেশী না এই মেট্রিক পাশ....।
-তা তুমি এ পেশায় এলে কেনো?
-কি করব বলেন চাকরীর বাজারে  আমার  যে টাকা মামা কিছুই নেই তাছাড়া এরকম জেনারেল পাশের কোন মুল্য নেই....সরকার যদি পুরো শিক্ষা ব্যাবস্থাকে টেকনিক্যালের দিকে নিয়ে যেত তবে যে কোন স্তরের পাশই কাজ পেত।পড়েছিতো গদ্য-পদ্য আর সমাজ বিজ্ঞান যা বাস্তবতার বাহিরে।
-চমৎকার বলেছোতো.....।
এরই মধ্যে গন্তব্য স্থানে এসে গেলেন তারা।ইশারা দিলেন একাত্তোরকে রিক্সা থামানোর জন্য।ওরা রিক্সা থেকে নেমে গন্তব্যের দিকে এগিয়ে যাবেন ঠিক সে সময়,সমর কি ভেবে যেনো হালকা চলন্ত সেই রিক্সা চালককে কাছে ডাকলেন।
-একাত্তোর ভাইয়া...আচ্ছা তুমি বাকী সময়টা রিক্সা চালালে কত টাকা উপার্জন করবে....আমি সেই টাকা যদি তোমাকে দিয়ে দেই তবে কি তুমি যাবে আমাদের সাথে.... ঐ অনুষ্টানে?
-কিসের অনুষ্টান?
-মুক্তিযুদ্ধে জীবিত যে সব নারী বীরাঙ্গনারা যুদ্ধে আত্ব ত্যাগ দিয়েছেন সে সব সুবিদা বঞ্চিত নারীদের একটি সংবর্ধনার আয়োজন করেছেন এখানকার একটি ক্লাব।
-ঠিক আছে যাবো,মুক্তি যুদ্ধের যে কোন অনুষ্ঠানে আমি যেতে রাজি ।
অনুষ্টানে উপস্থাপকের উপস্থাপনা চলছে....
-১৯৭১ সালে নয় মাসের রক্ত ক্ষয়ি স্বাধীনতার সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ নামক নতুন যে দেশটি সৃষ্টি হয় এর প্রধান লিডার ছিলেন জাতির জনক বঙ্গ বন্ধু শেখ মজিবুর রহমান।রক্তক্ষয়ি সংগ্রামের দীর্ঘ নয়টি মাস তিনি ছিলে পাক বাহিনী দ্বারা বন্দী।তার পরিবার সদস্যরা ছিলেন এখানে সেখানে আত্ব গোপনে।যেই মানুষটির জন্য স্বাধীন একটি দেশ পেলাম,যে মানুষটির উদ্দ্যেশ্যই ছিলো জনগণের কল্যায়ন করা...সেই মানুষটিকে এই আমরাই হত্যা করি নির্মম ভাবে...
শুধু তাই নয় তার পুরো পরিবারকে চিরতরে পৃথিবী থেকে বিদায়ের লক্ষ্যে বঙ্গ বন্ধুর কনিষ্ট ছেলে শেখ রাসেলকেও ঘাতকরা ছাড়েনি তাকেও হত্যা করেছে নির্মম ভাবে....সেই সব মীরজাফরদের এ দেশ,এ দেশের মাটি ও মানুষেরা ঘৃণা করেন,ঘৃণা করবেন আজীবন।সেই মহান নেতার মৃত্যুতে আমরা শোকাহত।
আজকের এই আয়োজন কাঙ্গালি ভোজে আমরা অগ্রাদিকার দিয়েছি এ দেশের অসহায় মানুষদেরকে।এমন শোকাহত দিনে এমন একটি আয়োজন সত্যিই প্রশংসনীয়।আমি মঞ্চে আসতে অনুরোধ করব এ আয়োজকের প্রধান অনুদান দাতা প্রধান অতিথি...সূ-দুর বিদেশ থেকে আগত বাংলাদেশী কন্যা  মিস্ নন্দিনী।দর্শকদের মুচ্চোরে করতালি দেয়া আগেই বারণ ছিল তবুও দু একটি হাত তালির শব্দ পাওয়া যায়।মঞ্চে উঠলেন প্রধান অতিথি তারপর ডাকলেন এলাকার স্থানীয় কমিশনার ও নেতাদের।
এ দিকে সমর আর অভি দর্শক সারিতে সামনে অতিথি চেয়ারে বসা।তাদের পাশের চেয়ারে সূর্যকে সমর অভি দেখে অবাক হলেন এছাড়াও তাদের পরিচিত নন্দিনীর চিফ গেইষ্ট হওয়াটি ছিলো আরো বেশী অপ্রত্যাশিত।এমন একটি অনুষ্টানের প্রধান বাহক হলেন তাদের দলেরই একজন অথচ তারা জানেন না।স্বভাবত সূর্য্যকে প্রশ্ন করেন অভি।
-কি রে তুইতো একবারও বললি না....যে এই অনুষ্টানের প্রধান অতিথি নন্দিনী।
-আমি কি জানতাম নাকি?আমাকেতো এখানে আসবার ঘন্টা খানেক আগে বলল,নন্দিনী এখানে আছে আমাকে আসতে হবে।সময় কম তাই তোদের বলতে পারিনি।
ওদের এমন কথোপকথনে নন্দিনীর চোখ পড়ে তাদের দিকে....উপস্থাপককে ডেকে ওদের মঞ্চে উঠতে বিরণ সহ এক টুকরা কাগজ ধরিয়ে দিলেন।উপস্থাপক কাগজটি হাতে নিয়ে নাম ঘোষনা করতে লাগলেন।
-আমি অত্যান্ত আনন্দের সহিত জানাচ্ছি যে আমাদের মঞ্চে উঠতে এমন কয়েকজনকে ডাকবো যাদের পিতা মাতা আত্বীয় স্বজনদের আত্ব ত্যাগ মহান মুক্তিযুদ্ধে অনেক অনেক যা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না শুধু তাই নয় ওরা এখনো মুক্তিযুদ্ধের ঘৃণিত চরিত্র রাজাকার আলবদর আল সামসদের মৃত্যুর হুংকার।এমন কিছু দেশপ্রেমিক আছেন বলেই আমরা আজো আশায় বেচে আছি আমরা বিশ্বাস করি ওরাই এ দেশ হতে ঘৃণিত রাজাকার বাহিনীকে চিরতরে নির্মুল করবেন।আমি এক এক করে নাম বলবো আশা করব আপনারা মঞ্চে উঠে এসে মুল অনুষ্টান শুরু করার সহযোগিতা করবেন।

আমি আগেই বলেছি আমরা জীবিত বীরাঙ্গনাদের এক যোগে সংবর্ধনা দিবো।মঞ্চে আসতে অনুরোধ করছি..... অভি সমর সূর্য্য এবং তাদের সাথে আসা নাম না জানা যুবককে।কথার ফাকে মঞ্চে তাদের নাম ঘোষনায় আশ্চর্য্য হয়ে ধীরে ধীরে এগিয়ে মঞ্চে আসন গ্রহন করিলেন।

দেশের বিভিন্ন অঞ্চল হতে আসা বীরাঙ্গনারা আজ তৃপ্তির হাসিতে হাসছেন।মঞ্চের নীচে সামনের সাড়ির এক পাশে চেয়ারে বসে আছেন পাচ জন বীরাঙ্গনা।তাদের পাশে একটু দুরে খোলা মাঠে চলছে কাঙ্গালি ভোজ।উপস্থাপক সব দিক দেখে মুল অনুষ্টান শুরু করেন।

-আমি প্রথমেই পাচ জন বীরাঙ্গনার মধ্যে প্রথম একজন যিনি মুক্তিযুদ্ধে ছিলেন পাক বাহিনীর আতংক।ইন্ডিয়া হতে প্রশিক্ষণ নিয়ে সম্মুখ মাঠে যুদ্ধ করেছিলেন।তিনি আমাদের মা শিউলি বেগমকে মঞ্চে তার যুদ্ধকালিন স্মৃতি তুলে ধরার অনুরোধ করছি।আমি বলে রাখছি তার হাতেই তুলে দিবো আমাদের প্রধান অতিথির সহযোগিতার হাত পাচ জনের জন্য পাচ লক্ষ টাকার একটি চেক।তার আগে আমাদের অত্র এলাকার ক্ষুদে বন্ধু মীম তাদেরকে ফুলের  মালা দিয়ে সংবর্ধনা দিবেন।অনুরোধ থাকবে এই একবার করতালি দিয়ে তাদের এ মহৎ কাজকে স্বীকৃতি দিবেন।হালকা হাততালিতে ছোট্র মীম মামণি এই মাত্র আমাদের সন্মানীত বীরাঙ্গনাদের ফুলের মালা দিয়ে বরণ করে নিলেন।
কৃতজ্ঞ তাদের কাছে যারা কখনো বা কারো কন্যা জায়া জননী কিংবা যুদ্ধের ময়দানে সাহসী সৈনিক।.....কিছুক্ষণ পর
ভবের দুনিয়ায়
গভীর কষ্টের সীমানা স্পর্শ
ধারণ কারিনি,
ধর্মের নীতি হীনদের কুনীতিকে
উপেক্ষা করে,
কেউ অস্ত্র হাতে সম্মুখে বুলেটের নিকট
বুক পেতে দিয়েছেন।

কেউ বা বিদ্রোহী কবি নজরুলের
সুরে সুর মিলিয়ে,
মুক্তিকামি মানুষের অন্তরে
দেশ প্রেমকে উজ্জিবীত করেছেন।

কেউ বা নারীত্বের নারীত্বতাকে
ধ্বংস করে,
কেউ বা তথ্যের আদান প্রদান আর চিকিৎসায়
নার্স হয়ে,
সেবার আসনে পুরো দেশটাকেই
বুকে ধারণ করিয়াছেন,
এঈ সেই নারী
বীরাঙ্গনা মা তুমি।
কারো কোন রা শব্দ নেই।উপস্থাপকের কবিতা পাঠের মন্ত্র মাখা সূর অনুষ্টানের সব হৈ হোল্ললকে হঠাৎ চুপছে দেন।রিক্সা চালক ছেলেটিকে ক্লাবের পক্ষ থেকে একটি রিক্সা উপহার দিলেন।ছেলেটি তৎক্ষনাৎ কেদে দেন।দেশে এখনো ভালো মানুষ আছে বিধায় আজো আশা জাগে দেশ একদিন স্বনির্ভর হবে।

সমর এবং স্বর্নার লুকোচরি বিবাহটি অবশেষে স্বর্নার পরিবার থেকে মত আসে।যা হবার তা হয়ে গেছে এখন ওদের দুজনকে একত্রে বসবাস করার সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে এমন ভাবনা নিয়ে স্বর্নার পিতা মাতার এমন সিদ্ধাান্ত।সমরে মা খুব খুশি হলেন এবং বিবাহত্তোর সংবর্ধনার আয়োজনে প্রস্তুতিতে সমরকে নিমন্ত্রণ পত্র ডেলিভারির ব্যাবস্থা করতে অনুমতি দিলেন।সমর সময়কে কাজে লাগিয়ে সে দিনই বেশ কিছু দাওয়াতি কার্ড তৈরী করে সকাল সকাল নিমন্ত্রণ পত্র দিতে সূর্য্যকে সাথে করে নন্দিনীদের বাসায় গেলেন।
k;ll;k'কয়েক বার কলিংবেল্ট  টিপলেন কিন্তু কোন সাড়া শব্দ নেই অনেকক্ষণ পর কাজের বুয়া দরজা খুলে তাদের ভিতরে বসতে দিয়ে বললেন আফা বাহির থেকে এক্ষুনি ফিরবেন আপনারা বসেন আমি চা নাস্তা আনছি।কাজের বুয়া ভিতরে চলে গেলেন যাবার আগে ওদের বসতে দেয়া ড্রইং রুমের টিভিটি অন করে গেলেন।কথার ফাকে টিভিিতে চোখ গেল তাদের।টিভি লাইভে দেখাচ্ছেন আলোচিত সেভেন মার্ডার প্রাচ্যের ডান্ডি খ্যাত নারায়ণগঞ্জ শহরের পাইক পাড়ায় চলছে রেব পুলিশি জঙ্গি নির্মুল অভিযান অপারেশন "হিট ষ্ট্রং"।অলরেডি তিন জন জঙ্গি নিহত হন।এই তিন জনের মধ্যে গুলশান শোলাকিয়া কল্যানপুর ট্রাজেডির মুল পরিকল্পনাকারি তামিম চৌধুরিও নিহত হন।
-নারায়ণগঞ্জ! মানে আলোচিত সমালোচিত  সাংসদ শামীম ওসমানের বাড়ীর পাশে?
-তাইতো দেখছি,এমন একজন ক্ষমতা ধর ব্যাক্তির এলাকায় কি ভাবে জঙ্গিরা আশ্রয় নেয়.....অবাক লাগে।
-অবাকের কিছুই নেই.....রাজনৈতিক দলের প্রত্যেক উচ্চ পর্যায়ের নেতাদের যদি জঙ্গি দমনে সদিচ্ছা থাকে তবে দেশে জঙ্গিবাজ এবং মাদকের আস্তানা নির্মুল করা প্রশাসনের পক্ষে আরো সহজ হতো।
তাদের কথো পকথনের মধ্যে কলিং বেল্টের শব্দে বুয়া দরজা খুলে দিলেন।নন্দিনীর মামির সাথে নন্দিনী ঘরে প্রবেশ করেন।নন্দিনীকে দেখে সূর্য্য অবাক হন নন্দিনীর দেহ ধীরে ধীরে কেমন যেন নেতিয়ে পড়ছে...নন্দিনীকে দেখে সূর্য্যের মনে হতে লাগল কোন মতে পৃথিবীটাকে পাশ কেটে পৃথিবী হতে বিদায় হতে পারলেই সে বেচে যায়।
-তোমরা!কখন  এলে?
-এইততো কিছুক্ষণ হলো,
-তোমরা বসো,আমি একটু ফ্রেস হয়ে আসছি।
নন্দিনীর মামি কথগুলো  বলে ভিতরে চলে গেলেন।এরই মধ্যে বুয়া চা বিস্কুট এনে টি-টেবিলে রেখে চলে গেলেন।নন্দিনী ওদের সাথে কথা বলা শুরু করার মধ্যেই মামি আবার চলে আসলেন।তাদের সামনে সোফায় বসলেন।
-তারপর সমর কি  খবর তোমার মা ভাল আছেন তো?
-জি ভালো,এসেছিলাম একটি দাওয়াত নিয়ে...
-কিসের দাওয়াত?
-বিয়ের,
-কার বিয়ে?
সমর একটু লজ্জা পেয়ে ইততস্তঃ করায় সূূর্য্য কথা বললেন।হাজার হলে নিজের ঢোলতো তাই পিটাইতে লজ্জা পাচ্ছিলেন।
-ওর নিজের,বিয়ের  কাজটা আগেই সেরেছেন নিজেরা নিজেরা এখন আমাদের ঝাল টক মিষ্টি মুখ করাইয়া তা বৈধ করবে এ আর কি।
-তাতো ভাল কথা, তা কবে?
-এইতো আগামী মাসের পনের  তারিখে.....দাওয়াতি কার্ডটি  এগিয়ে দিলেন সূর্য্য।কার্ডটি হাতে নিয়ে চিন্তায় পড়ে গেলেন নন্দিনীর মামি,নন্দিনীও কিছু বলছেন না।তাদের  মুখের দিকে তাকিয়ে সূর্য্য  যেন কোন এক অশনি সংকেত দেখতে পেলেন।
-মামি কোন সমস্যা?
এরই মধ্যে নন্দিনী বৈঠক থেকে প্র্রস্থান নিয়ে তার রুমের দক্ষিনা জানালায় দাড়ালেন।দুষ্টু দক্ষিন বাতাসে নন্দিনীর কালো কেশগুলো বার বার  তার অশ্রু  জলে চোখের উপর উড়ে পড়ছে।বাহিরে আকাশে বাদলের মেঘের ঘণঘটা হয়তো কিছুক্ষণের মধ্যে গরমে কাতর তৃষ্ণার্ত মানবের অন্তরকে শীতল করবে কিন্তু তার হৃদয়ে যে কষ্টরা বাসা বেধেছে তা কি দূর হবে?সূর্য্য বৈঠকে কথার এক ফাকে নন্দিনীর দক্ষিণমুখীর জানালার রুমে ঢুকেন অতি নীরবে নিঃশব্দে।সে ঢুকে টেপ রেকর্ডটা অন করতেই কাজী নজরুলের একটি বিরহী কবিতার একটি কবিতা পাঠ বেজে উঠে.....
তোমারে পড়িছে মনে
তোমারে পড়িছে মনে
আজি নীপ-বালিকার ভীরু-শিহরণে
যুথিকার অশ্রুসিক্ত ছলছল মুখে
কেতকী-বধূর অবগুন্ঠিত ও বুকে-
তোমারে পড়িছে মনে।

হয়তো তেমনি আজি দূর বাতায়নে
ঝিলিমিলি-তলে
ম্লান   লুলিত অঞ্ছলে
চাহিয়া বসিয়া আছ একা,
বারে বারে মুছে যায় আঁখি-জল-লেখা।
বারে বারে নিভে যায় শিয়রেরে বাতি,
তুমি জাগ, জাগে সাথে বরষার রাতি।

সিক্ত-পক্ষ পাখী
তোমার চাঁপার ডালে বসিয়া একাকী
হয়ত তেমনি করি, ডাকিছ সাথীরে,
তুমি চাহি' আছ শুধু দূর শৈল-শিরে ।।
তোমার আঁখির ঘন নীলাঞ্জন ছায়া
গগনে গগনে আজ ধরিয়াছে কায়া । ...

আজি হেথা রচি' নব নীপ-মালা--
স্মরণ পারের প্রিয়া, একান্তে নিরালা
অকারণে !-জানি আমি জানি
তোমারে পাব না আমি। এই গান এই মালাখানি
রহিবে তাদেরি কন্ঠে- যাহাদেরে কভু
চাহি নাই, কুসুমে কাঁটার মত জড়ায়ে রহিল যারা তবু।

বহে আজি দিশাহারা শ্রাবণের অশান্ত পবন,
তারি মত ছুটে ফেরে দিকে দিকে উচাটন মন,
খুঁজে যায় মোর গীত-সুর
কোথা কোন্‌ বাতায়নে বসি' তুমি বিরহ-বিধুর।
তোমার গগনে নেভে বারে বারে বিজলীর দীপ,
আমার অঙ্গনে হেথা বিকশিয়া ঝরে যায় নীপ।

তোমার গগনে ঝরে ধারা অবিরল,
আমার নয়নে হেথা জল নাই, বুকে ব্যথা করে টলমল।
আমার বেদনা আজি রূপ ধরি' শত গীত-সুরে
নিখিল বিরহী-কন্ঠে--বিরহিণী--তব তরে ঝুরে!
এ-পারে ও-পারে মোরা, নাই নাই কূল!
তুমি দাও আঁখি-জল, আমি দেই ফুল!

চলবে.....

প্রজন্মের ঋণ শোধ ৩১তম

0 Shares

১৭টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ