১০ শতকের দিকে জার্মানরা পূর্ব দিকে তাদের রাজ্য বিস্তার করতে থাকলে এত অধিসংখ্যক স্লাভে Slav নাগরিকদের ধরে ক্রীতদাস বানানো হয় যে তাদের নামেই ক্রীতদাসদের নাম হয়ে যায় স্লেভ Slave। একই সময়ে কৃষ্ণসাগর অঞ্চলে ক্রীতদাসদের চালান দেওয়া হয়ে দাঁড়ায় রাশিয়ার একটি বড় আয়ের পথ এবং এর ওপর রাশিয়ার অর্থনীতি অনেক ক্ষেত্রেই নির্ভর করে।
ভূমধ্যসাগরের দক্ষিণে আরব রাজবংশগুলো সমুদ্রতীরবর্তী অঞ্চলে ক্রীতদাস আফ্রিকান ক্রীতদাস ব্যবসায় উদ্দিপনা এনে দেয়। ৭০০ সালের দিকে সাহারা অঞ্চলে জাউইলা শহরে আফ্রিকান ক্রীতদাসদের বিক্রি করে দেওয়া হতো মুসলমানদের নিকট, যা পরবর্তীতে স্পেন থেকে পারস্য পর্যন্ত বিস্তৃতি লাভ করে।
ইসলাম ধর্ম নারী-পুরুষের অধিকারের ব্যাপারে খুব উদার হলেও ক্রীতদাস প্রথার বিরুদ্ধে যায়নি বরং এর বৈধতাই দিয়েছিল। তবে এটা ও ঠিক ইসলাম ধর্মে নারী ক্রীতদাসদের সাথে যথার্থ আচরনের নির্দেশ দেয়। কিন্তু আমরা ইতিহাস পড়লে দেখি বিশেষ করে অটোমান সম্রাজ্য, এবং আরবের অন্যান্য সম্রাজ্যে হেরেমে নারীদের কিনে নেওয়া হতো এই প্রথাতেই। সেই সব নারী ক্রীতদাসদের বিভিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে হেরেমে প্রবেশ করানো হতো। অনেক রাজকর্মচারী এই সব নারীদের বিবস্ত্র অবস্থায়, তার শরীরের বিভিন্ন স্পর্শকাতর স্থানে স্পর্শ করে তাদের পরীক্ষা করে দেখা হতো। পরীক্ষায় পাশ করলে তবেই তাদের হেরেমে যায়গা হতো নতুবা অন্য যায়গা পাঠিয়ে দেওয়া হতো। ইসলাম ধর্মে তখন কোনো মুসলিমকে নারীকে দাস হিসেবে হেরেমে রাখার নিয়ম ছিল না।
মামলুক রাজবংশ একসময় ক্রীতদাস ছিল তারা ১২৫০ সালে সুলতানকে অপসারন করে নিজেরাই মধ্যপ্রাচ্য শাসন করে। তারা প্রায় ৩০০ বৎসরের অধিক সময় ধরে শাসন করে। ৯ শতকে আব্বাসিদ অর্থাৎ আব্বাসীয় খলিফারা আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিবের বংশধর ছিলেন। তিনি ছিলেন মুহাম্মদ (সা) এর সর্বকনিষ্ঠ চাচাদের অন্যতম। মুহাম্মদ (সা) এর সাথে নিকটাত্মীয়তার কারণে তারা উমাইয়াদের হটিয়ে নিজেদের রাসুলের প্রকৃত উত্তরসুরি হিসেবে দাবি করে মামলুকরা এই সম্রাজ্যে অত্যান্ত দৃঢ়ভাবে ক্ষমতায় বসে। পরে ১৬ শতকে অটোমান অর্থাৎ সালতানাতের প্রতিষ্ঠাতা প্রথম উসমানের নাম থেকে উসমানীয় বা অটোমান নামটি এসেছে। একইভাবে রাজবংশকে উসমানীয় রাজবংশ বা অটোমান রাজবংশ বলা হয়। তুর্কি ভাষায় সাম্রাজ্যকে বলা হত দেভলেতি আলিয়া উসমানিয়া[১৩] বা উসমানলি দেভলেতি[১৪] বলা হত। আধুনিক তুর্কি ভাষায় উসমানলি ইম্পারাতুরলুগু বা উসমানলি দেভলেতি বলা হয়। মামলুকরা অটোমানদের নিকট পরাজিত হলেও স্বল্প সময়ের মধ্যেই আবারো নিজেদেরকে গুছিয়ে নিয়ে রাজ্য পরিচালনা করে। যাইহোক এই মামলুকরা ক্ষমতায় বসার পর আর ক্রীতদাস ছিল না। মামলুকরা নিজেদের মধ্যে ছাড়া অন্য কোনো গোত্রে বৈবাহিক সম্পর্কে জড়াতো না। এভাবে তারা তাদের নিজেদের শক্তিকে আরো দৃঢ় করে।
মধ্যযুগের প্রথম দিকে গোলযোগের সুযোগ নিয়ে ঘেরাও দিয়ে ইউরোপের অধিবাসীদেরকে ধরে নিয়ে ক্রীতদাস হিসেবে বিক্রি করতো। খ্রিস্টীয় ধর্মীয় নেতা সেন্ট প্যাট্রিককে এ রাম ঘেরাও করে ধরে নিয়ে ক্রীতদাস হিসেবে বিক্রয় করা হয়। কারন তিনি আয়ারল্যান্ডে করোটিকাস সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ব্যাপ্টিস্ট খ্রিস্টানদের ধরে নিয়ে গিয়ে ক্রীতদাস হিসেবে বিক্রয় না করার জন্য সম্রাটকে করোটিকাস এর সেনাবাহিনীর নিকট চিঠি দিয়েছিল।
৮ম-১১ শতক পর্যন্ত ভাইকিং জলদস্যুদের বিস্তৃতি ছিল ইউরোপ, এশিয়া, ও উত্তর আটলান্টিক দ্বীপগুলোতে। আমরা ছাত্র জীবনে অনেকেই জিপসী শব্দটি শুনেছি। ভাইকিংরা যাযাবর বা জিপসী জাতি নামে পরিচিত। ভাইকিংরা সুযোগ পেলেই ইউরোপ আক্রমন করে লোকজন ধরে নিয়ে বিক্রি করত। ভাইকিংরা কিছু মানুষকে তাদের নিজেদের কাজের জন্য এবং অন্যদের কিছু বাইজেন্টাইন ও মুসলিম এলাকার ক্রীতদাস বাজারে বিক্রি করে দিত। ১১ শতকে ভাইকিংরা তাদের ক্রীতদাস ব্যাবসা গুটিয়ে বিভিন্ন টেরাটরিতে বসতি স্থাপন করে এক সময় তাদের সাথে মিশে যায়।
১০ শতকে জান্জি বিদ্রোহের কারনে আরব বিশ্বে আফ্রিকান ক্রীতদাস ব্যবহার করা কমতে থাকলে ক্রীতদাস ব্যাবসায় কিছুটা ভাটা পড়ে।
এই ক্রীতদাস প্রথা বন্ধ করতে আফ্রিকানদের করতে হয়েছে অনেক সংগ্রাম।
চলবে,,,,,,,,,,
এই পর্বগুলো লিখতে আমাকে সাহায্য করছে, আশরাফ উল ময়েজ এর' অটোমান সম্রাজ্যের নারীরা, ক্রীতদাস ইতিহাস, এছাড়া মোঘল সম্রাজ্যের পতন, উইকিপিডিয়া থেকে নেওয়া তথ্য।
২৭টি মন্তব্য
ছাইরাছ হেলাল
পড়লাম,
এভাবে জানা ছিল না,
অটোম্যানদের দিকটি একটু বিস্তারিত বলা যায় কী না দেখবেন,
ঐ সময়টায় আমার আগ্রহ আছে,
মৌনতা রিতু
একবার ভাবলাম এই পর্বেই দেই। কিন্তু যদি অন্যদিকে চলে যায় তাই আর দেইনি। এই অটোমানদের নিয়ে পড়েছিলাম। অটোমানরাই কিন্তু উসমানিয়া বংশের। এর ইতিহাসও খুব চমৎকার। আসলে ইতিহাস একটার সাথে আর একটা জড়িত। পাকিস্তানিরা নিজেদের নামের আগে কেন খান উপাধী লাগায় সেদিনইসেটা জানলাম। আমি অটোমনদের নিয়ে লিখব ভাবছি।
শুন্য শুন্যালয়
স্লেভ শব্দটা এইভাবে এসেছে জানতাম না। অটোম্যানদের ব্যাপারেও জানিনা। ইতিহাস সবসময় আমার কাছে কঠিন সাবজেক্ট মনে হতো। মনে থাকতো না। ইতিহাসের ভয়েই আর্টস থেকে দূরে থেকেছি। এখন মনে হচ্ছে কতো কিছু মিস করে ফেললাম। এতো বই ঘেটে কষ্ট করে পোস্ট দিচ্ছো বলে এত্তো ধন্যবাদ তোমাকে। আমরা কতো ভালো সময়েই না জন্মেছি।
মৌনতা রিতু
ইতিহাস তোমার ভাইয়ার কাছ থেকেই শিখেছি। তিনি রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্র। খুব মজা লাগে ইতিহাস। অটোমানরা হলো উসমানিয়া বংশ। এই বিষয়ে দিব ভাবছি।
পাশে থেকো। এই বিষয়ের উপরে যে কোনো খটকা লাগলে নির্দিধায় বলিও।
নাসির সারওয়ার
একটু না বেশিই কঠিন মনে হচ্ছে! তারপরও জানার সুযোগ পিছনের কথা। আমার মনে হয় ইতিহাস ভবিষ্যতের কথাই বলে। তবে অতীত যেনো আবার ফিরে না আসে এই আশাই রইলো।
কষ্টের কাজ তারপরও আপনার ভালো লাগাই উচিৎ। সবাই কিছু না কিছু অজানা জানতে পারছি।
ভালো থাকুন।
মৌনতা রিতু
ইতিহাস ও কবিতা আমার খুবই প্রিয়। ইতিহাস একটার সাথে একটার সাথে আর একটা জড়িত।
ইতিহাস হলো মজার এবং মর্মান্তিক এক সত্যি ঘটনা যা জানার আগ্রহ সবার।
শিপু ভাই
+++++
চলুক
মৌনতা রিতু
ধন্যবাদ ভাই। 🙂
রিফাত নওরিন
আপনার লিখাটি পড়ে অনেক কিছু জানতে পারলাম, তখনকার সমাজ ব্যাবস্থা পরিবর্তিত হওয়ায় আমরা আজ এতো সুন্দর বর্তমান পেয়েছি… ভালো লাগলো আপু !!!
মৌনতা রিতু
ধন্যবাদ আপু।
আসলেই খুব নির্মম ছিল সেই সব দিন।
ভাল থেকো। 🙂
নীহারিকা জান্নাত
কৃতদাস প্রথার কত অজানা দিক জানছি। অনেক কষ্ট করে সময় নিয়ে গুছিয়ে পোস্টগুলো দিচ্ছেন বলে অনেক অনেক ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা।
আরো জানার অপেক্ষায় রইলাম।
মৌনতা রিতু
জী ম্যাডাম। আফা মনি এরপর কি হোমওয়ার্ক :p
এই পর্বটির পুরো ক্রেডিট তোমার।
ভাল থেকো।
নীহারিকা জান্নাত
অনেক অনেক ধন্যবাদ 🙂
কত কিছু জানতে পারছি এই পর্বগুলো থেকে। কত কিছু যে জানার বাকি রয়ে গেলো!
মৌনতা রিতু
সত্যি অনেক কিছুই এখনো আমরা জানি না। এসব ভাবলে অবাকই হই।
ভাল থেকো। -{@
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
ক্রীতদাম বিষয়ে ইসলাম কখনিই সমর্থন করেনি তবে ইসলামের কিছু অনুসারি যারা রাজ্য ক্ষমতায় ছিলেন তাদের মনোরঞ্জনে বাইজি নামক কিছু নারীকে ক্রয় করে অন্দর মহলেই রাখতেন।অতিরিক্ত ভোগ বিলাসিতার জন্যই হয়তো মুসলিম সম্রাজ্যের পতন ঘটে।হেরেমের বিষয়টি জানতাম তবে আজ তা বিস্তারিত জানলাম।ধন্যবাদ সুন্দর একটি বিষয় বিস্তারিত ভাবে জানানো।
-{@
মৌনতা রিতু
হুম, ইসলাম কখনোই তা সমর্থন করেনি। এই বিষয়ে কিছু বিধিনিষেধ আছে।
এর জন্য বিস্তর আলোচনা দরকার। কথিত আছে ইসলামিক পরাশক্তি অটোমান সম্রাজ্যে সব থেকে বেশি নারী ক্রীতদাস ছিল। তবে হ্যাঁ, তখন হেরেমে একবার ঢুকে গেলে সেখানে তাদের পর্দার সহিতই রাখা হতো কিন্তু জীবন ছিল একপ্রকার বন্দীই।
নীলাঞ্জনা নীলা
শান্তসুন্দরী তোমাকে বাহবা দিতে হয়।
আরোও জানতে চাই। দেরী করে করে দিওনা প্লিজ। -{@
মৌনতা রিতু
ধন্যবাদ আপু। ওকে তাইলে প্রতিদিনই দিব।
ভাল থেকো। তোমার নতুন কবিতা মিস করছি। তবে আগে সুস্থ হও। (3 -{@
নীলাঞ্জনা নীলা
শান্তসুন্দরী সুস্থতা তো নিজের কাছে। আরে শোনো হাত দুটোকে পাত্তা দিতাম কম। তাই ওরা বললো দাঁড়া দেখাচ্ছি মজা! কিছুদিন বেশ ভাব নিয়ে থেকেছিলো। আমিও কি কম যাই? বললাম দেখি দে কতো ব্যথা দিবি।
তোমার জন্যে নতুন লেখা নিয়েই এলাম।
তুমি অনেক ভালো একটা মানুষ, সে কথা জানো? -{@ (3
মৌনতা রিতু
তুমি আমাকে ভালবাস বলেই এমন করে বলো।
শোনো নিজের এমন অযত্ন করবে তো, আড়ি নিব।
মিষ্টি জিন
দারুন একটা পোষ্ট । স্লেভ শব্দটা কিভাবে আসলো জানলাম। ক্রীতদাস/ দাসী নিয়ে করা কিছু মুভি দেখেছিলাম অনেক দিন আগে। বেশ আগ্রহ আঁছে আমার এ ব্যাপারে।
অটোম্যান দের সমন্ধে জানলাম সুলতান সোলেমান টিভি সিরিয়াল দেখে। আশ্চয্য হয়ে যাই অটোম্যান রাজা মুসলিম হয়েও বিয়ে করে না।ক্রীতদাসীর রাখা তাদের নিয়ম। এবং ক্রীতদাসীর গর্ভের সন্তান ই পরবতী রাজা হয়। অথচ মোঘল সাম্রাজ্যে রাজার ঔরোসকৃত দাসীর সন্তান পিতৃ পরিচয় ই পেত না।
মৌনতা রিতু
এই বিষয়গুলোও দিব ভাবছি আপু এই পর্বগুলোর মধ্যেই।
সত্যি আপু, কি অদ্ভুদই না ছিল আমাদের ইতিহাস।
ভাল থেকো। -{@ (3
মিষ্টি জিন
হ্যা ইতিহাস আসলেই অনেক অদ্ভুত ছিল। আমরা ওনাদের চাইতে অনেক সভ্য।
জিসান শা ইকরাম
এসব ইতিহাস তেমন জানা ছিল না,
ইতিহাসের এই অধ্যায়কে সবার সামনে তুলে ধরার জন্য ধন্যবাদ তোমাকে।
প্রতি পোষ্টে পূর্বের লেখার লিংকটা দিয়ে দিলে ভাল হয়,
এতে আগ্রহীরা এক পোষ্টেই সব পাবেন।
শুভ কামনা।
মৌনতা রিতু
ধন্যবাদ ভাইয়া। 🙂
সঞ্জয় কুমার
মোট কত পর্ব আসতে পারে ? অনেক তথ্য বহুল নির্মম ইতিহাস ।
মৌনতা রিতু
পনেরো বিশ পর্ব হয়ত। হুম, আসলেই নির্মম ইতিহাস। ভাল থাকবেন। পাশে থাকবেন।