ক্রীতদাস নির্মম এক ইতিহাস পর্ব -৩

রিতু জাহান ১ মার্চ ২০১৭, বুধবার, ১১:০২:৩৭পূর্বাহ্ন বিবিধ ২৭ মন্তব্য

১০ শতকের দিকে জার্মানরা পূর্ব দিকে তাদের রাজ্য বিস্তার করতে থাকলে এত অধিসংখ্যক স্লাভে Slav নাগরিকদের ধরে ক্রীতদাস বানানো হয় যে তাদের নামেই ক্রীতদাসদের নাম হয়ে যায় স্লেভ Slave। একই সময়ে কৃষ্ণসাগর অঞ্চলে ক্রীতদাসদের চালান দেওয়া হয়ে দাঁড়ায় রাশিয়ার একটি বড় আয়ের পথ এবং এর ওপর রাশিয়ার অর্থনীতি অনেক ক্ষেত্রেই নির্ভর করে।
ভূমধ্যসাগরের দক্ষিণে আরব রাজবংশগুলো সমুদ্রতীরবর্তী অঞ্চলে ক্রীতদাস আফ্রিকান ক্রীতদাস ব্যবসায় উদ্দিপনা এনে দেয়। ৭০০ সালের দিকে সাহারা অঞ্চলে জাউইলা শহরে আফ্রিকান ক্রীতদাসদের বিক্রি করে দেওয়া হতো মুসলমানদের নিকট, যা পরবর্তীতে স্পেন থেকে পারস্য পর্যন্ত বিস্তৃতি লাভ করে।
ইসলাম ধর্ম নারী-পুরুষের অধিকারের ব্যাপারে খুব উদার হলেও ক্রীতদাস প্রথার বিরুদ্ধে যায়নি বরং এর বৈধতাই দিয়েছিল। তবে এটা ও ঠিক ইসলাম ধর্মে নারী ক্রীতদাসদের সাথে যথার্থ আচরনের নির্দেশ দেয়। কিন্তু আমরা ইতিহাস পড়লে দেখি বিশেষ করে অটোমান সম্রাজ্য, এবং আরবের অন্যান্য সম্রাজ্যে হেরেমে নারীদের কিনে নেওয়া হতো এই প্রথাতেই। সেই সব নারী ক্রীতদাসদের বিভিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে হেরেমে প্রবেশ করানো হতো। অনেক রাজকর্মচারী এই সব নারীদের বিবস্ত্র অবস্থায়, তার শরীরের বিভিন্ন স্পর্শকাতর স্থানে স্পর্শ করে তাদের পরীক্ষা করে দেখা হতো। পরীক্ষায় পাশ করলে তবেই তাদের হেরেমে যায়গা হতো নতুবা অন্য যায়গা পাঠিয়ে দেওয়া হতো। ইসলাম ধর্মে তখন কোনো মুসলিমকে নারীকে দাস হিসেবে হেরেমে রাখার নিয়ম ছিল না।
মামলুক রাজবংশ একসময় ক্রীতদাস ছিল তারা ১২৫০ সালে সুলতানকে অপসারন করে নিজেরাই মধ্যপ্রাচ্য শাসন করে। তারা প্রায় ৩০০ বৎসরের অধিক সময় ধরে শাসন করে। ৯ শতকে আব্বাসিদ অর্থাৎ আব্বাসীয় খলিফারা আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিবের বংশধর ছিলেন। তিনি ছিলেন মুহাম্মদ (সা) এর সর্বকনিষ্ঠ চাচাদের অন্যতম। মুহাম্মদ (সা) এর সাথে নিকটাত্মীয়তার কারণে তারা উমাইয়াদের হটিয়ে নিজেদের রাসুলের প্রকৃত উত্তরসুরি হিসেবে দাবি করে মামলুকরা এই সম্রাজ্যে অত্যান্ত দৃঢ়ভাবে ক্ষমতায় বসে। পরে ১৬ শতকে অটোমান অর্থাৎ সালতানাতের প্রতিষ্ঠাতা প্রথম উসমানের নাম থেকে উসমানীয় বা অটোমান নামটি এসেছে। একইভাবে রাজবংশকে উসমানীয় রাজবংশ বা অটোমান রাজবংশ বলা হয়। তুর্কি ভাষায় সাম্রাজ্যকে বলা হত দেভলেতি আলিয়া উসমানিয়া[১৩] বা উসমানলি দেভলেতি[১৪] বলা হত। আধুনিক তুর্কি ভাষায় উসমানলি ইম্পারাতুরলুগু বা উসমানলি দেভলেতি বলা হয়। মামলুকরা অটোমানদের নিকট পরাজিত হলেও স্বল্প সময়ের মধ্যেই আবারো নিজেদেরকে গুছিয়ে নিয়ে রাজ্য পরিচালনা করে। যাইহোক এই মামলুকরা ক্ষমতায় বসার পর আর ক্রীতদাস ছিল না। মামলুকরা নিজেদের মধ্যে ছাড়া অন্য কোনো গোত্রে বৈবাহিক সম্পর্কে জড়াতো না। এভাবে তারা তাদের নিজেদের শক্তিকে আরো দৃঢ় করে।
মধ্যযুগের প্রথম দিকে গোলযোগের সুযোগ নিয়ে ঘেরাও দিয়ে ইউরোপের অধিবাসীদেরকে ধরে নিয়ে ক্রীতদাস হিসেবে বিক্রি করতো। খ্রিস্টীয় ধর্মীয় নেতা সেন্ট প্যাট্রিককে এ রাম ঘেরাও করে ধরে নিয়ে ক্রীতদাস হিসেবে বিক্রয় করা হয়। কারন তিনি আয়ারল্যান্ডে করোটিকাস সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ব্যাপ্টিস্ট খ্রিস্টানদের ধরে নিয়ে গিয়ে ক্রীতদাস হিসেবে বিক্রয় না করার জন্য সম্রাটকে করোটিকাস এর সেনাবাহিনীর নিকট চিঠি দিয়েছিল।
৮ম-১১ শতক পর্যন্ত ভাইকিং জলদস্যুদের বিস্তৃতি ছিল ইউরোপ, এশিয়া, ও উত্তর আটলান্টিক দ্বীপগুলোতে। আমরা ছাত্র জীবনে অনেকেই জিপসী শব্দটি শুনেছি। ভাইকিংরা যাযাবর বা জিপসী জাতি নামে পরিচিত। ভাইকিংরা সুযোগ পেলেই ইউরোপ আক্রমন করে লোকজন ধরে নিয়ে বিক্রি করত। ভাইকিংরা কিছু মানুষকে তাদের নিজেদের কাজের জন্য এবং অন্যদের কিছু বাইজেন্টাইন ও মুসলিম এলাকার ক্রীতদাস বাজারে বিক্রি করে দিত। ১১ শতকে ভাইকিংরা তাদের ক্রীতদাস ব্যাবসা গুটিয়ে বিভিন্ন টেরাটরিতে বসতি স্থাপন করে এক সময় তাদের সাথে মিশে যায়।
১০ শতকে জান্জি বিদ্রোহের কারনে আরব বিশ্বে আফ্রিকান ক্রীতদাস ব্যবহার করা কমতে থাকলে ক্রীতদাস ব্যাবসায় কিছুটা ভাটা পড়ে।
এই ক্রীতদাস প্রথা বন্ধ করতে আফ্রিকানদের করতে হয়েছে অনেক সংগ্রাম।
চলবে,,,,,,,,,,
এই পর্বগুলো লিখতে আমাকে সাহায্য করছে, আশরাফ উল ময়েজ এর' অটোমান সম্রাজ্যের নারীরা, ক্রীতদাস ইতিহাস, এছাড়া মোঘল সম্রাজ্যের পতন, উইকিপিডিয়া থেকে নেওয়া তথ্য।

ক্রীতদাস নির্মম এক ইতিহাস-২

0 Shares

২৭টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ