সুচিত্রা সেনের বাড়ি দখলমুক্ত

শিশির কনা ১৬ জুলাই ২০১৪, বুধবার, ০৯:২২:২৭অপরাহ্ন সমসাময়িক ২৭ মন্তব্য

বাংলা ছবির কিংবদন্তি নায়িকা সুচিত্রা সেনের পাবনার পৈত্রিক বাড়িটি অবশেষে দখলমুক্ত হয়েছে। উচ্চ আদালতের নির্দেশে জামায়াত নিয়ন্ত্রিত 'ইমাম গাযযালী ট্রাস্টের' কাছ থেকে আজ বুধবার দুপুরে বাড়িটি দখলে নিয়েছে জেলা প্রশাসন।

এ সময় ওই বাড়িতে অবৈধভাবে নির্মিত কিছু স্থাপনা ভেঙে ফেলা হয়। এর আগে ইমাম গাযযালী ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষ সেখানে থাকা তাদের সব আসবাবপত্র সরিয়ে নেয়।

১৯৫১ সালের মাঝামাঝিতে সুচিত্রা সেনের বাবা করূনাময় দাসগুপ্ত স্বপরিবারে পাড়ি জমান কলকাতায়। এরপর থেকে বাড়িটিতে সরকারি বিভিন্ন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা বসবাস করতেন।

গোপালপুর মৌজার এসএ-৯৯ খতিয়ানভুক্ত ৫৮৭-এসএ দাগের ০.২১২৫ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত সুচিত্রা সেনের এই পৈত্রিক ভিটা ১৯৮৭ সালে তৎকালীন জেলা প্রশাসক সাইদুর রহমানের সহযোগিতায় জামায়াত নেতা মাওলানা আব্দুস সুবাহানসহ অন্যান্যরা একসনা লিজ নেয়। পরে এখানে তারা 'ইমাম গাযযালী ইনস্টিটিউট' নামে কিন্ডারগার্টেন স্কুল গড়ে তোলে। সে সময় বাড়িটির মূল্যবান ফলজ ও বনজ বৃক্ষ কেটে ফেলে দখলকারীরা।

এরশাদ সরকারের পতনের পর থেকে এ বাড়িটি দখলমুক্ত করার দাবি জানিয়ে আসছে পাবনাবাসী। একই সঙ্গে বাড়িটিতে সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংগ্রহশালা প্রতিষ্ঠার দাবি জানায় স্থানীয়রা।

বিগত চারদলীয় জোট সরকারের আমলে ইমাম গাযযালী ইনস্টিটিউট ট্রাস্ট্রের নীতিনির্ধারক, জামায়াতের কতিপয় নেতা বাড়িটির স্থাপত্য শৈলীর মূল অবকাঠামো পরিবর্তন করে ফেলে। এমনকি বাড়িটির অধিকাংশ ছাদ ভেঙ্গে ঢেউটিনের চালা লাগান।

কয়েক বছর আগে সুচিত্রা সেন সংগ্রহশালা করার জন্য, স্থানীয় এবং জাতীয় পর্যায়ে জোরালো দাবির এক পর্যায়ে, 'সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদ' নামের একটি কমিটি গঠিত হয় পাবনায়। বাড়িটি দখলমুক্ত করার দাবিতে কমিটির সদস্যসহ পাবনার সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো আন্দোলন শুরু করে

এ দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৯ সালের ২২ জুন পাবনার অতিরিক্ত জেলা প্রাশসক (রাজস্ব) ইমাম গাযযালী ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষের একসনা লিজ বাতিল করেন। একই সঙ্গে ইমাম গাযযালী ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষকে ২০০৯ সালের ৮ জুলাইয়ের মধ্যে অর্পিত সম্পত্তির দখল ছেড়ে দেওয়ার জন্য নোটিশ দেওয়া হয়।

তবে নোটিশ পাওয়ার পর ইমাম গাযযালী ইনস্টিটিউটের কর্ণধার জামায়াত নেতারা বাড়িটি ছাড়তে অস্বীকৃতি জানান। জামায়াত নেতারা লিজ বাতিলের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আবেদন জানালে হাইকোর্ট লিজ বাতিলের ওপর স্থগিতাদেশ প্রদান করেন।

সর্বশেষ ২০১১ সালের ২৬ জুলাই এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে সুচিত্রা সেনের পৈত্রিক বাড়িটি সরকারের দখলে নেয়ার নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। আদালতের এ রায়ের বিরুদ্ধে দলখকারীরা সুপ্রিম কোর্টে আপিল করলে হাইকোর্টে সে আদেশের ওপর স্থগিতাদেশ প্রদান করেন আপিল বিভাগ। অবশেষে গত ৪ মে ইমাম গাযযালী ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষের লিভ টু আপিল খারিজ করে দিয়ে বাড়িটি সরকারের দখলে নিয়ে সেখানে সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংগ্রহশালা স্থাপনের নির্দেশ দেয় সর্বোচ্চ আদালত।


সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদ সাধারণ সম্পাদক ডা. রাম দুলাল ভৌমিক সমকালকে বলেন, পাবনাবাসীর দীর্ঘ প্রতিক্ষার অবসান হল। এই স্থানে সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংরক্ষণাগার বা আর্কাইভ গড়ে তোলা হবে।

লেখাটি নেয়া হয়েছে দৈনিক সমকাল পত্রিকার এই লিংক থেকে

0 Shares

২৭টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ