নিশিকাব্যের পুত্র

অয়োময় অবান্তর ৩ ডিসেম্বর ২০১৬, শনিবার, ১২:২৮:০৪পূর্বাহ্ন গল্প ১৬ মন্তব্য

মায়ের মৃত্যু আমি চোখে দেখি নি। কলেজ হোস্টেল থেকে যখন বাসায় ফিরছিলাম তখন আমি অনুতাপে দগ্ধ হচ্ছি। মায়ের সাথে একটা দূরত্ব ছিল। তবুও আমি আমার মাকে ভালবাসি।
আমার মা অসম্ভব রূপবতী ছিলেন। তার আত্মীয়দের কখনো দেখিনি আমি। শুধু এক মহিলা আসত মায়ের কাছে। মা তাকে খালা ডাকত। খালা একা আসত না। তার সাথে সবসময় কিছু লোক আসত। আমার বয়স যখন ৭ তখন আমি হোস্টেলে চলে যাই। বছরে ৩-৪ বার দেখা হত মায়ের সাথে। মা নিজে আসত আমার সাথে দেখা করতে। মাঝে মাঝে দেখা করতাম। বেশির ভাগ সময়েই আমার সাথে দেখা না করে মাকে চলে যেতে হত।
মা ভয়ংকর জীবন বেছে নিয়েছিলেন। আমার মা দরিদ্র ছিলেন। তার পুরো পরিবারটাই দরিদ্র। দু'বেলা খাবার সামর্থ্যও এই পরিবারের ছিল না। আমি জন্মের পর আবার বাবাকে দেখিনি। স্কুল, কলেজ সবখানে শুধু মায়ের নাম ব্যবহার করতাম। আমার ভীষণ লজ্জা হত।
হয়ত আমি আজকে রাস্তায় পড়ে থাকতাম। কিংবা জন্মই নিতাম না। আমার মা তা হতে দেননি। তার সবটুকু ভালবাসা আমার উপর ঢেলে দিয়েছিলেন। তিনি হয়ত অন্য আর দশটা মায়ের মতো ছিলেন না। তবুও তিনি মা ছিলেন। আমার মা ছিলেন।
মায়ের লাশ বাসার বারান্দায় পড়ে ছিল। ঢাকা থেকে কুমিল্লা যেতে তখন বেশ সময় লাগত। কেউ আমার মায়ের প্রতি সামান্যতম সহানুভূতি দেখায়নি। মায়ের খালা শুধু আমাকে টেলিগ্রাম করেছিল।
মা তো মা ই হয়। মা সব জায়গায়, সব পরিবেশেই মা।
শরীর ও মন আলাদা। শরীর দূষিত হলেই মন দূষিত হয় না। তবে মন দূষিত হলে শরীর দূষিত হয়। আমার মায়ের মন পরিশুদ্ধ ছিল। তার ভালবাসা তাকে ফেরত দিতে পারিনি। তবে তিনি উআমার প্রতি যে অসীম ভালবাসা দেখিয়েছেন তার বিনিময়ে হলেও যেন তিনি তারাদের দেশে ভাল থাকে।
ভাল থেকো মা।

0 Shares

১৬টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ