আশ্রিত যেন না হয় শেয়াল মগজ।

রিতু জাহান ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৭, সোমবার, ০৩:৫৬:২৭অপরাহ্ন একান্ত অনুভূতি ১৭ মন্তব্য

অনেক আগে অর্থাৎ আমার নানা দাদাদের সময়। তখন নাকি মুখে মুখেই জমি দান হয়ে যেতো। আবার জমি রদবদলও হতো। তাই দান করা জমি ও বদল করা জমি সেসব সূত্রে বসবাসকারিরাই জমির মালিক হয়ে যেতো একসময়।
আমার নানাও এরকমভাবে সরকার বাড়ির লোকদের ঘরতোলার জন্য কিছু ভিটে জমি দিয়েছিলেন, কারণ তাদের ঘর তোলার জন্য ভাল ভিটে জমি নেই। নানা বিনিময় দূরের কিছু ধানি জমি নিয়েছিলেন। তো সেই সরকার বাড়ির লোকরা প্রতিবেশি হিসেবে নানাদের বাড়ির কাছেই ঘর তুলে বসবাস করতে লাগলো। ছোটবেলায় ও বাড়ির পিচ্চিদের সাথে আমি খেলতাম। আমার একটাই মামা তার একটাই মেয়ে। সরকার বাড়ির ছেলের নজর পড়লো নানার অনেক জমি ও তার নাতির দিকে। কিন্তু মামা ও নানা আশ্রয় দাতা হিসেবে তাদের বাড়িতে মেয়ে বিয়ে দিতে চাইলেন না আশ্রিত বাড়ির ছেলের সাথে। যতোই অবস্থার পরিবর্তন হোক না কেন তারা এখানে আশ্রিত।
কিন্তু তারা হাল ছাড়লো না। অন্যপথ আশ্রয় নিলো। আমার মামাতো বোনের বিয়ের আগের দিন রাতে খুলনা থেকে গুন্ডা ভাড়া করে আনলো। এটা ১৯৯৬ সালের ঘটনা। সে মামলা এখনো রামপাল থানায় দাখিল করা আছে।
আমি তখন এস এস সির প্রস্তুতি নিচ্ছি। আমার বড় আপার বাচ্চা হবে। সাতমাস বাচ্চা পেটে। হঠাৎ হামলা টের পেয়ে কিয়াম মামা মোটামুটি বড় আমাদের দুই তিনজনকে ঐ বর্ষা ও হালকা শীত শীত রাতে কিছুদূর আমার দাদাবাড়িতে নিয়ে রওনা হলেন। তাও নানাবাড়ির কবরস্থানের পাশ দিয়ে হেঁটে যেতে হবে। কারণ, সামনে বড় রাস্তা দিয়ে গেলে ওদের মুখোমুখি হতে পারে। যেতে যেতে অন্ধকারে আমি এক ভাঙ্গা কবরে পড়ে গেলাম। কিয়াম মামা টেনে তুলে দেখে ভয়ে শক্ত হয়ে গেছি আমি।
যাইহোক কি করে দাদাবাড়ি পৌছাই তা মনে নেই।
এদিকে সরকারবাড়ির ছেলেও তার গুন্ডা বাহিনী নানাবাড়িতে হামলা করলো। বড় আপার পেটের উপর তারা বড় একটা দা ধরেছিল। মা তখন বলেছিল, আমরা কোন বাড়ির মানে আমার দাদাবাড়ির কথা। ওরা বড় আপাকে আর কিছু বলেনি। কাউকে কিছু না বলে নানাকে ধরে নিয়ে গেলো। যাওয়ার সময় রান্নাঘরে আগুন দিয়ে চলে গেছিল।
পরে সেই যে এসে আমার নানা বিছানায় পড়লো আর উঠলো না।
তার আশ্রিতরাই তাকে থাবা বসাইছিল।

0 Shares

১৭টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ