The Great Indian Kitchen : মুভি রিভিউ

পুষ্পিতা আনন্দিতা ২৮ জানুয়ারি ২০২১, বৃহস্পতিবার, ০১:৫৩:৩৩অপরাহ্ন মুভি রিভিউ ৭ মন্তব্য

বিভাগ মুভি রিভিউ হলেও এটি প্রথাগত মুভি রিভিউ নয়। মুভিটি দেখার পরে আমার যা মনে এসেছে তাই লিখছি। মুভিটি মাস্ট ওয়াচ, দেখা উচিত সবার।
=================================================================
খুব সিম্পল একটা মুভি দিয়ে কি করে এতো স্ট্রং একটা মেসেজ দেওয়া যায় তার উদাহরণ এই মুভি। শুধুমাত্র রান্নাঘরের ঘটনা আর চিত্র দিয়ে কি করে পুরো সমাজটার মুখে চড় দেওয়া যায় তার উদাহরণ এই মুভি। কি নেই এখানে! প্রতিটা দৃশ্যে একটা করে মেসেজ। ওই শ্বশুর যে নিজে সকালে উঠে ব্রাশটা আনার জন্য বউয়ের উপরে ডিপেন্ড করে, বাইরে যাবার সময় যার জুতাটা এগিয়ে দিতে হয়। একের পর এক রান্না হচ্ছে, বাড়ির পুরুষগুলো খাচ্ছে সেই ছুঁড়ে দেওয়া এঁটো, এ যেন পুরুষতন্ত্রের  আবর্জনা। রান্না,খাওয়া, নোংরা রান্নাঘর আর সেখানে সেই মেয়েটা এই বারবার দেখতে দেখতে আমার নিজেরই মনে হয়েছে টিভিটা ভেঙে ফেলি! অসহ্য লেগেছে, কেমন যে লেগেছে বোঝাতে পারব না।

পরিবারে কি পরিমাণ চূড়ান্ত হিউমিলিয়েশনের মধ্যে দিয়ে মেয়েদের যেতে হয় বা হতো তা আছে এই মুভিতে। আবার বলতে আইসেন না যে এখন এসব হয়না, খুব হয় শুধু আপনি দেখতে পাননা। যেটুকু হয়না কারণ মেয়েরা প্রতিবাদ করে, নইলে খুব হতো। স্বামীর সাথে একই বিছানায় শুয়ে স্বামী যখন লাইট বন্ধ করতে বলল, মেয়েটা বলল এভাবে সেক্সে তার কষ্ট হয়। হাজবেন্ড কি পারে না সেক্সের আগে ফোরপ্লে করতে! উত্তরে হাজবেন্ড কি বলে সেইটা দেখেন মুভিতে। দেখলেই বুঝবেন নারীবাদীরা যৌন স্বাধীনতার কথা কেন বলে! আপনারাতো খালি ভাবেন যৌন স্বাধীনতা মানে খালি আজ এরসাথে কাল ওরসাথে শুয়ে পরা। এই মুভি আপনাদের প্রশ্নের উত্তর। নারীবাদীদের যারা বেশ্যা বলেন আপনাদের ভাইয়েরা আছে এই মুভিতে যারা এক ফেমিনিস্টের বাইক পুড়িয়েছ দিলো কারণ সে পিরিয়ডের মধ্যে মন্দিরে যেতে চেয়েছিলো। দেখেন তো আপনাদের সাথে মিল আছে কিনা।

এই পুরা মুভিটা একটা মেসেজ। লাস্টে যখন মেয়েটা কিচেনের নোংরা জল স্বামীর গায়ে ছুঁড়ে দিলো তখন বুঝবেন কেন আপনারা নারীবাদীদের পছন্দ করেন না। শেষে যখন ভাইটা এসে বোনের কাছে জল চায় হোন চিৎকার করে ওঠে ‘তুই নিজে নিতে পারিস না?’

এই সিনেমা নিয়ে আমি কি বলব! এই একটা মুভি আমাকে কতোকিছু মনে করিয়ে দিয়েছে। এই মুভি দেখতে বসে আমার মনে পরেছে আমার পরিচিত সেই আত্মীয়র কথা যে ঘুম থেকে উঠে বউকে ডাকতো পায়ের সামনে স্যান্ডেল এগিয়ে দেবার জন্য, মনে পরলো সেই সব আমার বিগত প্রজন্মের মায়েদের কথা যারা শতশত বছর ধরে রান্নাঘরেই জীবন পার করে দিয়েছেন, সেই সব নারী এবং পুরুষ যারা বলেন ‘নারীবাদের কি দরকার, মানবতাবাদ হলেই চলবে’ - আপনারা কতো ভন্ড তার উত্তর এই মুভি,  অথবা সেইসব পুরুষ পিরিয়ড নিয়ে ট্রল করে যারা, সেইসব মেয়েদের জীবন যারা পিরিয়ডের সময় অশুচি হয়ে যায়, ফেবুতে দেখা এমন অনেক তথাকথিত প্রগতিশীল যারা নারীবাদীদের মনে মনে বেশ্যা বলে গালি দেয় অথবা তোমরা যাদের নারীবাদ নিয়ে খুব সমস্যা তোমাদের কথা খুব মনে পড়ে গেলো। এই মুভি তোমাদের আয়নার সামনে দাঁড় করাবে, তোমরা বুঝতে পারবা আজকের একটা প্রতিবাদী মেয়ের নারীবাদ নিয়ে কেন তোমার খুব লাগে। তুমি তোমার বাবা দাদাকে যে সুবিধা ভোগ করতে দেখেছ সেইটা যখন পাবা না তখন তো লাগবেই।

এই মুভি দেখলে বোঝা যাবে আজকের এই প্রতিবাদী নারীর পিছনে আছে সেই সব নারী যারা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে ধীরে ধীরে ওই কিচেনে বসেই নীরব বিপ্লব করে গেছেন। আমার সেইসব মায়েদের প্রণাম যাদের জন্য আজকের এই আমি।

মাস্ট ওয়াচ মুভি, অন্তত সব মেয়েরা দেখুক। নাম গ্রেট ইন্ডিয়ান কিচেন হলেও এইটা পুরা উপমহাদেশের মেয়েদের গল্প। সবরীমালা মন্দিরে মেয়েদের ঢোকার ইস্যুটা এখানে আছে বলে সেনসিটিভ এই অযুহাতে নেটফ্লিক্স এমাজাম বা অন্যান্য টিভি চ্যানেল এই মুভি রিলিজ করতে ডিনাই করেছিলো। এরপর এটা একটা মালায়লাম ওটিটি প্লাটফর্মে রিলিজ হয়। আমাদের উপমহাদেশে কেন কুলি নাম্বার ওয়ানের মতো ট্র্যাস মুভি রিলিজ হয় তার প্রমাণ এই ঘটনা।

Imbd রেটিং- ৮.৫/১০
আমার রেটিং- ১০/১০

পুষ্পিতা আনন্দিতা
নিউইয়র্ক ।

0 Shares

৭টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ