ছাদ বাগান -লাল শাক/ডাটা শাক চাষ

শাহরিন ৭ জুলাই ২০১৯, রবিবার, ০৩:১১:১০পূর্বাহ্ন অন্যান্য ২০ মন্তব্য

শাক সবজি আমাদের খাদ্য তালিকার অন্যতম একটি উপাদান। শিশু থেকে বৃদ্ধ বয়সী সবাই শাক খায় কেউ পছন্দে কেউ প্রয়োজনের কারনে খায়। । আমার ছোট বেলা থেকেই বাগান করার শখ ছিল অনেক কারণ বশত সেটা সম্ভব হয়নি। লেখা পড়া চাকরি সব মিলিয়ে সময় হয়নি। গত বছর দুই হলো চেষ্টা শুরু করেছি।  অল্প জায়গাতে ২/৪ বার ব্যার্থ হয়েও সবজি চাষ করে সফল হয়েছি। বিভিন্ন ধরনের সব্জীর মধ্যে আজ লাল/ডাটা শাক ছাদে চাষ করার অভিজ্ঞতা শেয়ার করবো। লাল আর ডাটা শাক চাষ করার পদ্ধতি একই রকম তাই একসাথে লিখলাম।

শুরুতেই বলে নিচ্ছি এটা আমার নিজস্ব অভিজ্ঞতা থেকে লেখা তাই আমি যেভাবে চাষ করেছি সেটাই বর্ননা করবো।

লাল শাকের জাত/ ধরনঃ

গুগলে বিভিন্ন জাতের নাম শুনলেও বীজ গুলোর দোকানে আমি সব ধরনের বীজ দেখিনি। আলতা পেটি, রক্ত জবা, রক্ত রাংগা, পিংক কুইন আর বারি ১ এর বীজ প্রায় সব জায়গাতে পাওয়া যায়। সব চেয়ে বেশী পাওয়া যায় বারি১।  ১৯৯৬ সাল থেকে এই জাতের চাষ শুরু হয়েছে বাংলাদেশে। বর্তমানে বারি ১ ই বেশী চাষ হয়।

চাষের সময়ঃ

বছরের শুরু দিক লাল শাক চাষের সময়। কিন্তু শীতের সময় লাল শাকের ফলন ভাল হয়। এগুলো কৃষি গবেষক দের পরামর্শ তবে ছাদে সারা বছরই চাষ করা যায়। শুধু যখন সিজন না তখন একটু বেশি যত্ন নিতে হয়।

মাটি তৈরীঃ

যাদের আশেপাশে মাটি পাওয়া যায় তারা যদি এটেল মাটি হয় তবে এটেল মাটির সাথে ৩০ ভাগ বালি, আর ৩০ ভাগ ছাই মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারবেন। ১০ ইঞ্চি টবের চার টব পরিমান মাটি নিতে হবে।  আর মাটি তৈরীর সময় ৭/৮ টি টি এস পি সার এর দানা, ৭/৮ টি ইউরিয়া সার আর ১০ মুঠ জৈব সার মিশাতে হবে। মিশিয়ে ২/৩ দিন রেখে দিতে হবে আর সাথে প্রতিদিন হাত দিয়ে মাটি গুলো ঝুরঝুরে করে দিতে হবে। রাসায়নিক সার ছাড়াও লাল শাক ফলন ভালো হয় কিন্তু আমার মতে সেটা জমিতে। ছাদে যেহেতু মাটি কম এর কারনে মাটি শুকিয়ে যায় ফলে গাছ খাদ্যরস কম পায়। তাই গাছে সার দিলে গাছ গুলো সতেজ থাকে আর ফলন ভালো হয়।

চাষের বেড তৈরীঃ

সাধারণত ৪/৫ ইঞ্চি মাটিতেই লাল/ ডাটা শাক চাষ করা যায়।  কিন্তু আমি একটু বেশি পরিমানের মাটি নিয়েছিলাম ৭/৮ ইঞ্চির মত। প্লাস্টিকের ট্রের উপরে পেপার বিছাতে হবে, যেন পানি দেয়ার সময় সব পানি পরে না যায় বা মাটিও ধুয়ে না যায়। ট্রে  তে মাটি গুলো বিছিয়ে ঝুরঝুরে করে নিয়ে বীজ গুলো হাল্কা হাতে ছড়িয়ে দিয়ে দিতে হবে। একটি কাঠীর কাহায্যে মাটি গুলো অর্ধেক ইঞ্চি  উপর নীচ করে দিতে হবে। এছাড়াও অনেকে ছাদে মোটা পলিথিন বিছিয়ে বেড এর চারিদিক একটু উচু করে বাউন্ডারি দিয়ে বেড বানিয়ে নিতে পারেন।

মাটির বিকল্প হিসাবে কোকোপিট এর ও অনেক ব্যবহার হচ্ছে। কোকোপিট নারকেলের খোসা দিয়ে তৈরী। এটা ব্যাবহার করতে চাইলে ৫০ ভাগ কোকোপিট ৩০ ভাগ বেলে মাটি আর ২০ ভাগ জৈব সার মিশিয়ে বেড বানাতে পারেন।

পরিচর্যাঃ

বীজ বপনের পরে প্রতিদিন ১ বেলা অল্প পরিমানের পানি দিতে হবে। আর মাটি ভেজা থাকলে পানি দেয়ার দরকার নেই। যখন ১ সপ্তাহের মধ্যে চারা বের হবে। ওই সময় গাছের আগাছা পরিষ্কার করে দিতে হবে।

নতুন পাতা বের হলে একটি নেট দিয়ে ঢেকে দিতে হবে নয়তো পাখি পাতা গুলো খেয়ে ফেলে। আর অনেক সময় মাটিতে ছত্রাকের আক্রমণের কারনে গাছের গোড়া পচে যায় তাই পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা ঠিক মতো হচ্ছে কিনা খেয়াল রাখতে হবে।

যদি কোন পোকা আক্রমণ করে তবে নিম বাতা বেটে তরল করে স্প্রে করতে পারেন। আর পিপড়ার আক্রমণ করলে বেড এর চারপাশে নিম পাতার রস মাটির নিচে দিতে পারেন। গাছের গোড়া থেকে ৫/৭ সেঃ মিঃ দূরে দিতে হবে।

সপ্তাহে ১ বার আগাছা পরিষ্কার করতে হবে। আগাছা থাকলে গাছের বৃদ্ধি তে সমস্যা হয়।

শাক তোলার সময়ঃ

শাক লাগানোর ৩০ থেকে ৪০ দিন পরে তা খাওয়ার উপযুক্ত হয়। তবে কেউ চাইলে ২৫ দিন পরেও তুলতে পারে।

আমি দুই একদিন খাওয়া যাবে সে পরিমানের উদ্দেশ্যে করেই চাষ করেছি।  এর জন্য সর্ব প্রথম বাজার থেকে ভাল মানের লাল আর ডাটা শাকের বীজ সংগ্রহ করেছিলাম। সব ধরনের শাক বা সব্জীর জন্য ঝুরঝুরে মাটির দরকার হয়। ঢাকায় থাকার সুবাদে মাটি সংরক্ষণ করা কষ্টদায়ক ছিল তাই নার্সারি থেকে মাটি সংগ্রহ করেছিলাম।

বিঃদ্রঃ আমি লাল শাক লাগানোর ৭ দিন পরে একই বেড এ ডাটা শাকের বীজ বপন করেছিলাম। লালা শাক উঠানোর পরে ডাটা শাক ভালো ভাবেই হয়েছিল। আর ডাটা শাক কিছু উঠিয়ে কিছু রেখে দিয়েছিলাম ডাটা হওয়ার জন্য। সেটিও ভালো ভাবেই হয়েছে। আমি নিজ অভিজ্ঞতা থেকেই সব লিখলাম কারো অন্য কোন পদ্ধতি জানা থাকলে শেয়ার করার অনুরোধ রইলো।

গাছের প্রতি যত্নশীল হোন গাছ আপনার প্রতি যত্নশীল হবে।

 

0 Shares

২০টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ