আমি আমার গ্রামে গিয়েছিলাম। গ্রামের পাশ দিয়ে একটা নদী বয়ে গেছে। সে নদীর ধার দিয়ে শেষ বিকেলে হাঁটতে হাঁটতে পশ্চিমদিকে এগুলেই সন্ধ্যায় সূর্যাস্ত দেখা যায়।

একদিন আমি নদীর পাশ দিয়ে হাঁটতে বেরিয়েছি। হঠাৎ করে দেখলাম একটা ছেলে বড়শি দিয়ে নদীতে মাছ ধরছে। ছেলেটার বয়স ১২/১৩ বছর হবে। আমি তার পাশে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ তার মাছ ধরা দেখলাম। একটা মজার ব্যাপার লক্ষ্য করলাম, তার বড়শিতে মাছ ধরা দিচ্ছে ঠিকই কিন্তু ছেলেটা মাছগুলো আবার নদীতে ছেড়ে দিচ্ছে। তার মাছের খলইটার দিকে উঁকি দিয়ে দেখলাম সেটাও খালি।

বিষয়টা আমার কাছে কিছুটা অবাক লাগল। তাই পশ্চিমদিকে আর না এগিয়ে তার পাশে বসে তার মাছ ধরা দেখতে লাগলাম। আরও অবাক হলাম যখন আমি তার সাথে কথা বলতে চাইলাম কিন্তু সে আমার সাথে কোনরকম কথা বলল না। ইশারা দিয়ে বুঝিয়ে দিল কথা না বলে চুপ করে বসে থাকতে। ভাল করে খেয়াল করে দেখলাম সে মাছ ধরছে খুব ধ্যান মগ্ন হয়ে। তার মাছ ধরাটা দেখে মনে হচ্ছে সে ধ্যান করছে।

সন্ধ্যার সাথে সাথে তার মাছ ধরা শেষ হল। সে বড়শি গুছিয়ে নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল- বলেন এখন কি বলবেন?

আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম তুমি কি প্রতিদিন এখানে মাছ ধরতে আস?
সে বলল- হ্যাঁ, প্রায় প্রতিদিনই আসি।

আচ্ছা তুমি যদি মাছ ধরতেই আস তাহলে তোমার মাছের খলই খালি কেন? তুমি তোমার বড়শিতে মাছে ধরা পড়লে সে মাছ ছেড়ে দিচ্চ্ছ কেন?

সে বলল – আমি মাছ ধরতে আসি ঠিকই, তবে রুই কাতলা বা বোয়াল গোছের মাছ ধরতে এখানে আসিনা; আমি আসি তিমি মাছ ধরতে।
তিমি মাছের স্বপ্ন নিয়ে আমি নদীতে বড়শি ফেলি। তাই মাছগুলিকে আবার নদীতে ছেড়ে দেই। আমি জানি একদিন আমার বড়শিতে তিমি মাছ ধরা দেবে।

এই বলে আমাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে হনহন করে সে সূর্যাস্তের দিকে হাঁটা শুরু করল। ততক্ষণে সূর্য পশ্চিম আকাশে ডুবুডুবু করছে। সেদিকে তাকিয়ে মনে হচ্ছিলো সূর্য ছেলেটার হাতের ঈশারার অপেক্ষা করছে, ছেলেটা হাতের ঈশারা করলেই টুপ করে সূর্যটা ডুবে যাবে।

ছবিঃ নেট থেকে নেয়া

0 Shares

২৫টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ