চায়ের দোকানে নিয়মিত আড্ডা দেই ।বুঝতেই পারছেন দুনিয়ার সব সমস্যা ওখানে বসেই সমাধান করে ফেলি ।যেহেতু সবাই বেকার ছাত্র তাই গার্লফ্রেন্ড এর সাথে ফোনে কথা বলা আর কেউ কেউ টুকটাক রাজনীতি করা ছাড়া আর কারোই কোন কাজ নেই । আমরা প্রায় ১০/১২ জন চায়ের দোকানে নিয়মিত আড্ডা দেই । অনিয়মিত কিছু বন্ধু বা ছোটভাই/বড় ভাইও এখানে মাঝে মাঝে আসে । যে দোকানে আড্ডা দেই সেই দোকানদার কে আমরা সবাই আর্মি কাকা গোপনে কুক কখনও কখনও সাইদির জামাই বলে ডাকি । দোকানদার আমাদের সন্তান স্নেহে আকাম কুকাম করলে গালি দেয় আবার আমরাও মাঝে মাঝে গালি দেই । প্রায় ৩/৪ বছর আমাদের আড্ডা হচ্ছে এই দোকানে । বছরে একবার সবাই মিলে কাছাকাছি কোথাও একটা পিকনিকের আয়োজনও করি । যেহেতু চায়ের দোকান সেহেতু রাজনীতি,খেলাধুলা,মুভি,সমাজ,ধর্ম,রাজাকার,বিএনপি,জামাত,হরতাল,সেক্স কোনবিষয়ই আমাদের আলোচনার বাইরে না। এই আলোচনা করতে করতে মাঝে মাঝে হালকা/পাতলা(বাইরের কেউ দেখলে ভারিই ভাববে) ঝগড়া বা হাতাহাতিও হয় । তবে আমরা বেশ শান্তিতেই এই দোকানে আড্ডা দেই ।

চায়ের দোকানে সব ধরনের মানুষই আসে । আর যারা আসে তারা সাধারণত আমাদের কথাই শোনে এবং চা বা সিগারেট পান করে চুপচাপ চলে যায় । আবার অনেকে আমাদের সাথে যোগও দেয় । যেহেতু আমার আর বাবুর কথা বলার অভ্যাস বেশি তাই বাইরের কেউ আসলে আমাদের দুজনের সাথেই কথা বেশি হয় । তো যা দেখলাম আমাদের অঞ্চলের বেশির ভাগ মানুষেরই নাস্তিক কি এব্যাপারে সঠিক কোন ধারনা নেই । এদের কাছে নাস্তিক কোন এক ভীষণ দর্শন প্রাণী । যারা মানুষের ক্ষতি ছাড়া আর কিছুই করে না । আরেকটি বিসয় যা আমাকে সবচেয়ে বেশি অবাক করেছে তা হল বেশিরভাগ সাধারণ মুসলিমই জানে না ইহুদী একটা ধর্ম । তথ্য প্রমাণ সহ বলার পরও তারা মানতে চায় না।

সবচেয়ে ক্ষতিকর যে বিষয়টি লক্ষ্য করলাম তা হল মানুষ গুজবে বিশ্বাস করে বেশি । যেমন কোন ঘটনা নিয়ে একটা গুজব ছড়ানো হল । আমি তার বিপক্ষে তথ্য প্রমাণ যোগাড় করে তাদের দেখালাম । তখন তারা বলবে সব কিছু কি আর পেপারে আসে?? (ওরে গাধা পেপারে না আসলে কোথায় আসবে!!) যেমন মতিঝিলের হাউকাউয়ের পর আমরা এক বন্ধু বলে বসল কমপক্ষে দুই হাজার মানুষ মরছে(সে কিন্তু ছাগু/অশিক্ষিত না)।আমি বললাম তুই ক্যামনে জানলি?? সে বলল;এত মানুষ ছিল দুই হাজার না মরে পারেই না । আমি বললাম; পেপারে তো ১৬/১৭ জনের কথা আসছে(দুই হাজার শুনে এর কম বলতে লজ্জা লাগতেছিল)। ও বলল; সব খবর কি পেপারে আসে । আমি কইলাম;এত লাশ খাইল কে???। সে বলল;নতুন মেশিন বাইর হইছে যার মধ্যে লাশ দিলে পানি হইয়া যায় । আমি কইলাম;এখনও তো শুনি নাই,তুই জানলি ক্যামনে???। ও কইল;আমারে আমার এক ভাই কইছে । আমি কইলাম;তোর ভাই এক ভুদাই আর তুই তার চেয়ে বড় ভুদাই। ও কইল;তুই শালা আমার কোন কথা বিশ্বাস করিস না। আমি কইলাম;২০০০ হাজার লাশ গাড়িতে উঠাইয়া নিয়া গিয়া পানি বানাইছে এইডা আমি ক্যান ৭ বছরের পিচ্চিও বিশ্বাস করব না । সে কইল; আমার ওই ভাই কি মিছা কইছে?? আমি কইলাম ;ক্যামনে কমু । আমাদের কথোপকথনের মাঝে দুই একজন তার সাথে সহমত ও হইল। কিন্তু আমার গালি খাওয়ার ভয়ে জোর গলায় কেউ কিছু বলল না । এর মধ্যে আমাদের বুদ্ধিজীবী বলে বসল , হিটলার এরম একখান মেশিন বানাইছিল ইহুদিগে মারার জন্নি । আমি কইলাম, হিটলার বানাইছিল গ্যাস চেম্বার,যার মধ্যে ঢুকাইয়া গ্যাস ছাইড়া দিত । তখন আমার বন্ধুটি কইল,যখন ওইটা ছিল ,তখন এইটা বানাইতে অসুবিধা কি??? আমি পুরা বেকুব সাইজা গেলাম ।  

 আমার এই বন্ধুটি ম্যাথ এ অনার্স করছে । বেশ মুক্তমনাও । কিন্তু সে এরকম একটা ধারনা নিয়ে বশে আছে । দেখেন দেশের অবস্থা । ফেসবুক গুতাইয়া বা ব্লগে বিশাল বিশাল লেখা দিয়ে আসলে দেশের কত ভাগ মানুষকে আমরা সচেতন করতে পারছি???

0 Shares

২৪টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ