আমার প্রতি তোমার ভালবাসা দিন দিন কমে যাচ্ছে।

কে বলল? ধুর কি যে বলো,
আমি তোমাকে অনেক ভালবাসি।

সত্যি!

হ্যাঁ সত্যি।।

জানিনা সত্যি বলছো না মিথ্যা বলছো। তবে আমি
তোমাকে হারাতে চাইনা..

আর আমি কি তোমাকে হারাতে চাই?
আমি চাই তুমি শুধুই আমার হবে।

জানো আমার না কাল অপারেশন!

কাল?
কোই আগে বলনিতো?

কি করে বলবো বাসায় অনেক লোকজন। তাছাড়া কিছুদিন বাসার বাইরেও
যেতে পারিনা। আজকে তোমার সাথে ফোনে কথা বলছি তাও অনেক
রিক্সের মধ্যে। কেউ যদি দেখে ফেলে...

কেউ দেখে ফেললে কি?

বোঝনা কি?
মার দিবে।

আমার কথা বলবে, আমার সাথে কথা বলছো
বললেই তো সমস্যা সমাধান
হয়ে যায়।

এতো রাতে তোমার কথা বললে কি মনে করবে,
একবারও চিন্তা করেছো?

কি মনে করবে?
আমি এতো সব কেয়ার করিনা।।

আকাশ, তুমি আমার মামাতো ভাই।
কিন্ত তোমার আমার রিলেশনের
কথা আমাদের না শুধু, তোমার পরিবারেরও কেউই জানেনা।
একবারও চিন্তা করে দেখেছো তারা জানতে পারলে কি হবে?

শোন, নীলিমা! আমি তোমাকেই বিয়ে করবো। কে কি ভাবলো?
তাতে আমার কিছু যায় আসেনা।

হ্যাঁ বুঝলাম, এখন তোমার পাগলামি ছাড়ো।
আমার না ডান সাইডে খুব ব্যাথা করছে!

অ্যাপেন্ডিক্সের ব্যথা তো, একটু হবেই। একটু ধৈর্য ধরো সোনা।
কাল অপারেশন করলেই তো ঠিক হয়ে যাবে।

আমার না ভয় হচ্ছে আকাশ। যদি কিছু হয়ে যায়?
আমি যদি মারা যায়?

আরেকবার যদি এমন কথা বলো, তাহলে সত্যিই...

সত্যি কি?

সত্যি সত্যি তোমার গলা টিপে মেরে ফেলবো।।

মারোনা, আমিতো তোমার হাতেই মরতে চাই।

দেখো, এসব কথা আমার সামনে আর বলবেনা। আমি তোমার মুখ দিয়ে
দ্বিতীয়বার যেনো মরার কথা না শুনি। তোমাকে যদি মেরে ফেলি তাহলে
আমার কি হবে? আর আমি কখনই কি পারবো তোমায় মারতে?
তার আগে আমি নিজেই মরে যাবো।

হয়েছে হয়েছে বেশী ভালবাসা দেখানোর কোন দরকার নাই!
আগামীর জন্য কিছু জমা রেখে দাও। এখনই সব শেষ করে ফেললে
পরে করবে কি?

জানিনা কি করবো। তবে আমার শেষ নিঃশ্বাস থাকতে
আমি তোমায় ভালবাসবো।

এতো ভালোবাসো আমাকে?

হুম...অনেক।।

আচ্ছা আমি আর কথা বলতে পারছিনা। খুব কষ্ট হচ্ছে। তুমি এখন ঘুমাও।
কাল হাঁসপাতালে চলে এসো।

আচ্ছা। তুমি ঘুমিয়ে পড়ো।
আর কোন হসপিটালে নেবে?
নাম বলো?

সম্ভবত সিটি ক্লিনিকটায়,
সেখানের কথা বলছিলো আম্মু।

তোমার শাশুড়ি কোথায়?

সেতো আম্মুর সাথে ঘুমিয়ে পড়েছে। সন্ধ্যা থেকে আমাকে অনেক
সেবা যত্ন করেছে। তোমাকে এসব বলেই বা লাভ কি? তুমি কি
এসব খবর রাখো নাকি? লাইফে একটু সিরিয়াস কবে হবে বলতো?

হয়েছে, আর জ্ঞান দেয়ার দরকার নেই। তোমার কাছে শুনতে চাওয়াটাই
আমার ভুল হয়েছে। নাও এখন ঘুমাও,
গুড নাইট...

উচিৎ কথা বললেই তো খেপে যাবা জানতাম। ওকে ঘুমাও তুমিও,
সকাল সকাল চলে এসো প্লিজ!

আচ্ছা দেখা যাবে...।

পরের দিন...
হসপিটালে পৌছাতে পৌছাতে আকাশের সকাল ১১ টা বেজে গেলো।
ততক্ষণে নিলিমার অপরেশন হয়ে গেছে। আকাশ সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠছে।
নীলিমাকে রাখা হয়েছে দোতালার একটা ক্যাবিনে। সবাই রুমের বাইরে
দিয়ে হাঁটাহাঁটি করছে। আকাশকে দেখতে পেয়ে নীলিমার ছোট ভাই
নাদিম দৌড়ে এলো...

আরে আকাশ ভাইয়া, এতো দেরী করে আসছো? আপুর তো অপরেশন
হয়ে গেছে।

কখন হয়েছে, নাদিম?

এইতো আরো দুই ঘণ্টা আগে। জানো আকাশ ভাই,
আপুর না এখনো জ্ঞান ফেরেনি। আর অপরেশন থিয়েটরে ঢোকার
আগে আপু শুধু তোমাকে খুজতেছিলো।

কি বলে খুজছিলো?

শুধু বলছিলো, আকাশ কোই? আকাশ আসেনি?

আকাশ দৌড়িয়ে গেলো নীলিমার ক্যাবিনের দিকে। দরজার আড়াল থেকে
দাড়িয়ে দেখলো, নীলিমার মুখে অক্সিজেনের পাইপ লাগানো।
এখনো অচেতন অবস্থায় পড়ে আছে। আকাশ বাহিরে দাড়িয়ে পায়চারী করছিলো।
কিছুক্ষন পর নীলিমার জ্ঞান ফিরলো। জ্ঞান ফেরার সাথে সাথে নীলিমা চিল্লা-পাল্লা
শুরু করে দিলো। ব্যাথার যন্ত্রনায় ছট ফট করতে লাগলো।
আকাশ দৌড়িয়ে গেলো রুমের কাছে। আড়ালে দাড়িয়ে দাড়িয়ে দেখছিলো
নীলিমার ছট ফট করা। আর বুকের ভেতরটা আকাশের চুরমার হয়ে যাচ্ছিলো।
চিৎকার করে বলতে ইচ্ছা করছিলো আকাশের, এই তোরা কি দেখিস না??
আমার নিলা কেমন ছট ফট করছে? চিৎকার দিয়ে কাঁদতে ইচ্ছা হচ্ছিলো কিন্ত পারছিলো না আকাশ।
আড়ালে দাড়িয়ে শুধু নিরবে চোখের অশ্রু ঝরিয়ে যাচ্ছিলো। আর মনে মনে বলছিলো,
নিলা আজ হয়তো তোমার পাশে থাকতে পারিনি। কিন্ত এর পর থেকে জীবনের প্রতিটা মুহূর্ত আমি তোমার সাথে থাকবো। কখনো তোমাকে একা রেখে কোথাও যাবোনা। সুখে দুঃখে সব সময় তোমার পাশে রবো।

0 Shares

২২টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ