‪#‎লন্ডনের‬ মনু মিয়া....

ডাক্তারের কাছ থেকে আসলাম !লন্ডনে ডাক্তারা কিছুটা আজব প্রাণী, বয়েসে যারা তরুণ তাদেরকে কোন ঔষুধ দেয় না,বলবে প্যারাসিটামল খাও ৭২ ঘন্টা পড়ে ঠিক হয়ে যাবে |যত বারই ডাক্তারের কাছে যাই, কম বেশ উনারা সবাই প্রায় সমান কথা বলেন | যদিও সারা বছরে একবার বা দুবার করে মনে হয়, ডাক্তারে যাই | এমন বছর আছে সারা বছরও ডাক্তারে যেতে হয় নাই, স্থানীয় NHS থেকে বাসায় চিঠি এসেছে; আমি কি এই ঠিকানায় এখনও আছি কিনা ??? সব সময় সুস্থ থাকাটা মহান আল্লাহ-পাকের অনেক বড় নিয়ামত |

আসলেই যে খুব অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম, সেটা হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করতে পেরেছিলাম |এক বার মনে হয়েছিল, মনেহয়, না ফেরার দুনিয়াতে চলে যাচ্ছি ; রাত তখন ৪টা একটুও ঘুমাতে পারিনি সারা রাত খুবই অস্বস্তিকর অবস্থায় কেটে ছিল |

‪#‎আমার‬ আম্মা অনেক সাহসী নারী, যেকোন বিপদে উনি সাহস দিতে পারেন,আমি যখনি কোন সমস্যা পড়ি, এই বয়েসেও সবার আগে মাকে ফোন দেই |

‪#‎বিলেতে‬ যখন প্রথম আসি একে বারেই শুন্য থেকে খুবই বৈরী পরিবেশে যাপিত জীবন শুরু করতে হয়েছিল,অনেকের সাথে যোগাযোগ করতে পারিনি,ব্যক্তিগত অবস্থান তৈরী করা নিয়ে খুবই ব্যস্ত ছিলাম; কেউ এক পাউন্ড দিও সাহায্য করে নাই ; শুধু আমার মা ধৈর্য্য আর সাহস দিয়েছেন প্রতিটা ক্ষেত্রেই |মাত্র কয়েক বছরেই প্রাণ পণ চেষ্ঠায় ঘুরে দাড়িয়েছি | বেচে থাকলে,হত যে পথে হাটতেছি,এক পাউন্ড -১০০ পাউন্ড,
১ হাজার পাউন্ড আমার কাছে হবে শুধু মাত্র সংখ্যা |

বাড়ি -গাড়ি -ব্যবসা সব কিছুই নিজের করে নিতে পারলেও,আইনি জটিলতায় মা বাবাকে এখানে আনতে পারতেছি না ;এটা এই মুহুর্তের সবচেয়ে বড় দুঃখ ||

‪#‎ভাবলাম‬ যদি চল যাই, মাকে একটা ফোন দেই, কখনও এই সময়ে আম্মাকে ফোন দেও হয় না; আব্বা ফোনটা ধরলেন, প্রথমেই বলেন কি হয়েছে; এত রাতে? ঘুমাস নাই ? দাড়া তুর আম্মাকে দিছি ; আম্মাকে বললাম, আম্মা আমার খুবই জ্বর ; এর চেয়ে বেশি আর কিছুই বলতেও পারছিলাম না | আম্মা সাথে সাথেই বলেন, তর এত সকালের ফোন পেয়েই বুঝতে পেরেছি কোন সমস্যা ? ভয় পাইস না,আমি নামাজ পড়ে আল্লাহ কাছে দোয়া করব কমে যাবে |আর কিছুই বলতে পারিনি; আমি আসলেই খুবই অতিরিক্ত দুর্বল হয়ে পড়ছিলাম |আমার কেন জানি ভয় হচ্ছিল ; চার কালিমা পড়েও ফেলেছি ; কিছুদিন আগে সুস্থ -সবল আমার এক বন্ধু মারা যাবার পর, মৃত্য নিয়ে আমি অনেক ভাবি | পৃথিবীতে সব চেয়ে সত্য আমাদের সবাইকে একদিন মরতে হবে, তবে আমি ঈমানের সাথে যে কোন সময় মরতে প্রস্তুত|আমি বিশ্বাস করি, মৃত্যটা হবে খুবই শান্তির |

কিছুদিন আগে আমার খুবই ঘনিষ্ট একবন্ধু এভাবেই না ফেরার দুনিয়ায় চলে যান ; সময় না পাওয়ায় উনাকে নিয়ে লিখতে পারি নাই | ভদ্র লোকের নাম ছিল মনু ভাই, সবাই
উনাকে মুন নাম ডাকতেন |

উনি ম্যানচেস্টারের রয়টন এলাকায় থাকতেন |উনি বয়েসে আমার অনেক বড় কিন্তু ঘনিষ্ট বন্ধু ছিলেন |উনি বিলেত এসেছিলেন অনেক ছোট বয়েসে | এখানে স্কুল কলেজ পড়েছিলেন |

পারিবারিক কিছু জটিলতার কারণে উনি একা -একা থাকতেন উনার বিশাল বাড়িতে | মাঝে মাঝে গভীর রাতে আমি,হীরা ভাই,জালাল ভাই,হেলাল ভাই,আমাদের আরেক বন্ধু রসডেলের বাঙালি লেবার পার্টির কাউন্সিলর আলী ভাইSyed Ali Ahmed উনার বাসায় আড্ডা দিতাম ;কার্ড খেলতাম (২৯) | উনি আমাদের জন্য নিজেই চা -নাস্তা তৈরী করতেন |জানেন,আমার ভাবতেও অনেক কষ্ট হচ্ছে মনু ভাই আমাদের মাঝে নাই | উনি খেলায় সব সময় আমার পাটনার থাকতেন | আহারে -আমরা উইন করলে, উনার কি যে আনন্দ !! উনি বলতেন ভাই, আমি আরেক কাপ চা আপনার জন্য বানাছি ,দাড়ান || এখন এগুলো শুধুই স্মৃতি | মনু ভাই চিন্তা -চেতনায় প্রগতিশীল একজন ধার্মিক মানুষ ছিলেন |

ব্যক্তিগত ভাবে উনি আমাকে খুবই সম্মান করতেন,উনার ধারণা ছিল আমি নাকি অনেক কিছুর খবর রাখি !!আমি উনার বয়েসে অনেক ছোট হবার পরেও কখনও না ধরে ডাকেন নাই , সব সময় ভাই বলে ডাকতেন |

এখনও রয়টন দিয়ে গেলে উনার বাড়ির দিকে থাকাই ; মহান আল্লাহ পাক প্রিয় মনু ভাইকে শান্তি রাখবেন, এই দোয়া সব সময় করি |

মনু ভাই ইয়াং থাকতে বিলেতকে কেমন দেখে ছিলেন, প্রায়ই আমাদের বলতেন ; মৃত্যু সময় উনার বয়স হয়েছিল ৬০ এর কাছা-কাছি |উনি পাকিস্তান আমলে বিলেত এসেছিলেন ; তাই অনেক কিছুই জানতেন ; মজার ব্যাপার মৃত্যুর আগপর্যন্তও উনি খুবই হ্যান্ডস্যাম ছিলেন |ভাল ইংলিশ,ভাল বাংলায় কথা বলতে পারতেন |উনার বড় ছেলে ডাক্তার,আরেক ছেলে হাই স্কুলের শিক্ষক ;উনার মেয়েটাও কাউন্সিলে কাজ করে |কিন্তু পারিবারিক ভাবে খুবই অশান্তিকর একটা জীবন ছিল উনার, তাই জগত সংসার থেকে একটু একা-একা থাকতেন |

উনি প্রায়ই আমাদের সাথে আড্ডায় বলতেন, আমি আল্লাহের বাড়িতে গিয়ে মরতে চাই | আমরা তখন মজা করতাম | উনি প্রতি বছরই উমরা করতে সৌদি যেতেন ; আমাদের জন্য সৌদির খেজুর আনতেন | কিন্তু এবছর যে উনি একে বারেই চলে যাবেন ; এটা কল্পনাও করতে পারি নাই !সত্যি সত্যি সুস্থ-সবল মনু ভাই এবার ওমরা করতে গিয়ে সৌদিতে মদিনা শরীফে মারা যান |

‪#‎মনু‬ ভাই কে নিয়ে আর কোন দিন গভীর রাতে আড্ডা হবে না ; কার্ড খেলাও হবেনা | মনু ভাইয়ের অনেক ভাল পরামর্শ,দিক-নির্দেশনা হয়ত অনেক দিন বেছে থাকবে আমার চিন্তা -চেতনায় || শান্তিতে থাকেন মনু ভাই ||

0 Shares

৭টি মন্তব্য

  • মারজানা ফেরদৌস রুবা

    একজন প্রকৃত ভালো মানুষ ‘মনুভাই’র আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। আমরা মনেপ্রাণে যা চাই, ঈশ্বর আমাদের তাই দেন। মনুভাই যেভাবে মরতে চেয়েছিলেন আল্লাহ সেভাবেই তাঁর ইচ্ছা পূরণ করেছেন।
    আমার মা’র খুব ইচ্ছা ছিলো, শুক্রবারেই যেনো তাঁর মরন হয়, তেমনটাই হয়েছে। আর আখিরাতের জন্য কোন শাস্তি থাকুক, তা চাননি। চেয়েছিলেন দুনিয়াতেই যেনো সব ফায়সালা হয়ে যায়। মা বলে বলছি না, নিজের দেখা থেকে বলছি। প্রচণ্ড ধার্মিক, ক্ষমাশীল, ধৈর্যশীল, পরোপকারী, দুর্বলকে সহায়তাকারী, আর ন্যায়ের প্রশ্নে আপোষহীন ছিলেন। ছিলেন প্রগতিশীল মনোভাবাপন্ন। সেই মা, দশ বছর আগে বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে শুরু হলো তার একের পর এক শারীরিক সমস্যা। প্রথমেই এলারজী চরম যন্ত্রণা দেয়া শুরু করলো। এরপর গত চার বছর আগে লিভারসিরোসিস হয়ে এই এপ্রিলে ২৩ তারিখ (শুক্রবার) মৃত্যু বরণ করেন। শেষদিকে অনেক কষ্ট হয়েছিলো আর প্রতি শুক্রবারে (সেন্স কাজ করলে) নিজেই সকালে গোসল করে প্রস্তুত হয়ে যেতেন। শেষমেশ আমরা সন্তানরাও সহ্য করতে না পেরে ‘খতমে ইউনুস’ পড়েছি।
    জানিনা পরপারে মা কেমন আছেন।
    আমি নিজেও আল্লাহ্‌র কাছে প্রার্থনা করতাম, যেনো মা এবং শ্বাশুড়ী’র জীবনের শেষ দিনগুলোর সবচেয়ে দুর্বল সময়টিতে তাদের মাতৃস্নেহে সেবা দিতে পারি, যেমন করে তাঁরা আমাদের লালনপালন করেছিলেন। আল্লাহ্‌ আমার সে ইচ্ছা পূরণ করেছে। শুকরিয়া আল্লাহ্‌র দরবারে।
    তাই বলছি, মানুশ যা চায়, আল্লাহ্‌ তাঁকে তাই দেন। প্রয়োজন কায়মনোবাক্যে প্রার্থনা।
    ভালো থাকবেন সকলে।

  • নীলাঞ্জনা নীলা

    মনু ভাইয়ের আত্মা শান্তি লাভ করুক।
    তবে আমি আবার মৃত্যু নিয়ে ভাবিনা। কেন জানিনা হাজার বিপদেও ভেঙ্গে পড়িনি আজ অব্দি।
    মৃত্যু আসবেই, তা নিয়ে ভেবে সময় নষ্ট করার কোনো মানে হয়না, এটাই আমার মত।

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ