২১৫ বছর পরের বাংলার স্বাধীন সরকার

আরাফ কাশেমী ১৬ এপ্রিল ২০১৫, বৃহস্পতিবার, ১০:৫২:৪১অপরাহ্ন মুক্তিযুদ্ধ ৬ মন্তব্য

১৬ এপ্রিল সন্ধ্যায় বাংলাদেশের এক কর্মকর্তা কলকাতা প্রেসক্লাবে উপস্থিত হন৷তিনি বিদেশী ও ভারতীয় সাংবাদিক ও কূটনীতিকদের পরদিন সকাল ৬টায় প্রেসক্লাবে হাজির থাকতে বলেন৷ ভোর হতেই সাংবাদিক ও টেলিভিশন ক্যামেরাম্যানরা ভিড় করতে থাকেন।৬টা বাজতেই কয়েকশ সাংবাদিক হাজির হয়ে যান কলকাতা প্রেসক্লাবে৷কেউ কিছু আঁচ করতে পারেন না৷

 

 

যথা সময়ে বাংলাদেশের কর্মকর্তা প্রেসক্লাবে উপস্থিত হয়ে সাংবাদিকদের স্বাগত জানান৷ কোন কিছুর আভাস না দিয়ে শুধু বললেন,তাঁর গাড়ি অনুসরণ করতে৷অতি উত্‍সাহে সাংবাদিকরা বাংলাদেশের কর্মকর্তার গাড়ি অনুসরণ করতে থাকেন নিজেদের গাড়িতে বসে৷তারা তখনও জানতেন না বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের ঐতিহাসিক ঘটনার নিউজ কভার করতে যাচ্ছেন৷গাড়ি বহর কলকাতা মহানগর পেরিয়ে কৃষণনগরের পথে এগুতে থাকে৷ তারপর সীমান্তের দিকে এগিয়ে যায়,এক সময় গাড়ির বহর সীমান্ত পার হয়ে বাংলাদেশের ভেতর ঢুকে সবাই হাজির হলেন মেহেরপুর মহকুমার বৈদ্যনাথতলায়৷

 

 

প্রাক্তন জমিদারের বিশাল এক আম বাগান৷সেদিন থেকে দু’শো পনের বছর আগে ১৭৫৭ সালে পলাশীতে এমনি এক আম কাননে নবাব সিরাজুদ্দৌলার সাথে ইংরেজদের এক বিশ্বাস ঘাতকতাময় যুদ্ধে বাংলার স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হয়েছিল আর পলাশী হতে কিছু দূরে আরেক আম বাগানে ‘৭১-এর ১৭ এপ্রিল বাংলার স্বাধীনতার রক্তিম সূর্য উদিত হলো৷ মুজিবনগরে পৌছে সকলে জানতে পারলেন ব্যাপারটি।এক বিশাল আম বাগানে উত্‍সাহী জনতার ভিড় গাছের ডালে ডালে খালি গায়ে ছেলেরা বসে আছে উত্‍সাহ নিয়ে৷তারা কেউই কী জানতো এক ঐতিহাসিক ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে?

 

 

রাইফেল হাতে আম বাগানের চারিদিকে বিনিদ্র নিরাপত্তা তৈরি করে রেখেছে মুক্তিযোদ্ধারা৷সেদিন আকাশে ছিল পুঞ্জ পুঞ্জ মেঘের ভেলা, মৃদু বাতাসে দুলছিল গাছে গাছে আমের গুটি৷টিভি নেটওয়ার্কের ক্রু ও ফটো সাংবাদিকরা ব্যস্ত হয়ে পড়েন ছবি তুলতে৷সবাই ব্যস্ত এক্সক্লুসিড স্টোরির তথ্য সংগ্রহে মুহুমুহু জয়বাংলা স্লোগানে চারিদিকে মুখরিত৷ সর্বত্রই একই গুঞ্জন ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভাল বাসি৷অনুষ্ঠানকে আকর্ষণীয় করতে বাংলাদেশী কর্মকর্তাদের ব্যস্ততার শেষ ছিল না৷একেবারে অনাড়ম্বর বাঙ্গালী ঐতিহ্যেরঅনুষ্ঠান৷প্রবেশ পথে লেখা ছিল স্বাগতম৷ছোট্ট মঞ্চের ওপর সাজানো ছিল ৬ খানা চেয়ার৷আর সাংবাদিকদের বসার জন্য বাঁম পাশে সাজানো ছিল কয়েকখানা চেয়ার সবাই অপেক্ষাকরছেন ঐতিহাসিক মুহূর্তটির জন্য৷

11133667_10206652739423785_360253475082261985_n

বাংলাদেশ সময় ১১টা ৫০ মিনিটে পশ্চিম দিক হতে নেতারা আসলেন জিপে চড়ে৷ জনতা আকাশ কাঁপানো জয়বাংলা স্লোগান দিতে থাকে৷ মৃদুমন্দ বাতাসে আম গাছের পাতা ও গুটি দুলতে ছিল,যেন প্রকৃতিও স্বাধীন বাংলাদেশের নেতাদের বরণ করে নিল৷নেতাদের গার্ড অব অনার দিলেন মুক্তিবাহিনীর ১২জন যোদ্ধা৷ গার্ড পরিচালনা করেন তত্‍কালীন ঝিনাইদহের মহকুমা পুলিশ অফিসার (এসডিপিও) মাহবুবউদ্দিন আহমেদ৷নেতারা একে একে মঞ্চে উঠলেন৷প্রথমে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরম্নল ইসলাম তাঁর পিছনে তাজউদ্দিন আহমেদ,খোন্দকার মোশতাক আহমেদ,এএইচএম কামরম্নজ্জামান, ক্যাপ্টেন মনসুর আলি ও জেনারেল এমএজি ওসমানী৷

 

index12

নেতাদের আসন গ্রহণ পর্ব শেষ হলে অনুষ্ঠান সূচি ঘোষণা করলেন আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল মান্নান৷ পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করলো ছোট্ট এক কিশোর৷এরপর নতুন রাষ্ট্রের ঐতিহাসিক দলিল স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করেন তদানীনত্মন আওয়ামী সংসদীয় দলের চীফ হুইপ অধ্যাপক ইউসুফ আলী৷নতুন রাষ্ট্রের আদর্শ কী হবে,চলবে কীভাবে,তার লক্ষ্য কী,কার কি দায়িত্ব সব কিছুই বর্ণিত হলো ওই ঘোষণাপত্রে৷ঘোষণাপত্র পাঠশেষে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরম্নল ইসলাম,প্রধানমন্ত্রী পদে তাজউদ্দিন আহমেদ,পররাষ্ট্রমন্ত্রী পদে খোন্দকার মোশতাক আহমেদ,স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদে এ এইচএম কামরম্নজ্জামান ও অর্থমন্ত্রী পদে ক্যাপ্টেন মনসুর আলির নাম ঘোষণা করেন৷প্রধান সেনাপতি পদে কর্নেল এমএজি ওসমানী (পরে জেনারেল) এবং সেনা বাহিনীর চীফ অব জেনারেল স্টাফ পদে কর্নেল আব্দুর রবের নাম ঘোষণা করেন৷

 

 

গাওয়া হয় বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালবাসি’৷ এরপর শুর হয় শপথ গ্রহণ পর্ব৷শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন অধ্যাপক ইউসুফ আলী৷স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকারের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অনুপস্থিত ছিলেন৷সবারই মুখে মুখে ছিল তাঁর নাম৷সব কিছুই হলো মুজিবের নামে,বৈদ্যনাথতলার নতুন নামকরণ করা হয়েছে মুজিবনগর৷স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামেই এ নামকরণ।আমার নেতা তোমার নেতা শেখ মুজিব,শেখ মুজিব আর জয় বাংলা স্লোগানে ভারী হয়ে উঠলো আকাহ বাতাস.২১৫ বছর পড়ে ফিরে এলো বাংলার হারিয়ে ফেলা স্বাধীনতা।

 

0 Shares

৬টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ