হেমন্তের কাক ডাকা ভোরে,
অর্গলিত দূর্বাঘাসে নিমজ্জিত শিশির ঘুমঘোরে।
সেজেছে হৈমন্তী নববধূর সাজে,
ললাটে টিপ তার কাজল ঢাকা চোখের মাঝে।

বেঁধেছে সে আমায় মায়ার আঁচলে,
লাল টিপের অন্তরালে।
হিমেল পরশে রাতের অভিসারে,
ফুটেছে ফুল কত কাননে কাননে।

জানো হৈমন্তী তোমাকে দেখার অপেক্ষায় কত কোকিল বসন্ত পেরিয়েছি। কিন্তু আজও দুচোখ ভরে দেখতে পায়নি তোমায়।
স্নিগ্ধ শরৎ অবসান হয়েছে,কাশফুলের গা নুয়ে পড়েছে।
একে একে কত প্রহর সূর্যের মত করে অস্তগামী হয়েছে।
আজকাল কবিরা অন্য ঋতু নিয়ে অনায়াসে কত কবিতা লিখে যায়,করে কত বন্দনা।
জানো অন্যান্য ঋতু গুলো আমার কাছে ভালো লাগে কিন্তু শরৎ অবসানের পর তোমাকে ঘিরে আমার রাঙ্গামাটির আলোক ছোঁয়া ভালোবাসা।
হৈমন্তী অমিয় শিশিরসিক্ত শিশিরজলে কার্তিকের ফসল ভরা মাঠেঘাটে ফুলের গায়ে উড়ছে মৌমাছি।
নির্যাস স্পর্শতার আবেশে ফুটছে গোলাপ তোমার আগমনী বন্দনার ডাহুক ডাকা কলরবে।
হৈমন্তী আজ হতে গায়ে চাদর ডেকে নাও। ধীরে ধীরে হেমন্তের কুয়াশা চারদিকে কালোছায়া দিয়ে ডেকে আছে। তাড়াতাড়ি উঠে পড়ো দেখে নাও পূর্ব আকাশের ভানু ধীরে ধীরে উদয় হচ্ছে। প্রভাতের সদ্যফোটা সোনার বরণ ফুল শিশিরভেজা ভোরে হেসে হেসে গন্ধের আবরণ ছড়িয়ে দিচ্ছে চারদিকে।
ফুলের প্রতিটি পাপড়িতে শিশিরস্নাত আবরণে আবরিত হচ্ছে ফুলের কুসুম কলি। সদ্যফোটা ফুলের কলি থেকে মৌমাছি রেণু নিয়ে যাচ্ছে যুগল বন্দন করে। তার সাথে ফুলের গায়ে যখন প্রজাপতির ডানা উড়ে তখনি আমার মন উতারিয়া করে দেয়।
হৈমন্তী যেইদিন তোমার দুটি চঞ্চল আঁখি চাদর দিয়ে ডেকে রেখেছিলে সেইদিন হতে তোমার পিছুপিছু ছুটেছিলাম তোমার দুটি চঞ্চল আঁখি দেখার জন্য।

আঁখি দিয়ে আঁখির সুধা পিয়ে,
রাখিব তোমায় হৃদয়ের অনুভবে।

কার্তিকার সুশোভিত ধানের ঘ্রাণে,
মন মেতেছে তোমার ভেজা চুলের গন্ধে।

যদিও পুরনো অনেক তুমি,
তোমার লাল বাহারি টিপে আঁখি দিয়ে আঁখি উঁকি।

হৈমন্তী তোমার হৃদয়ে অনেক ভালোবাসা আছে।
যে ভালোবাসিতে জানে,সে ভালোবাসবেই। তাই আমি তোমায় অনেক ভালোবাসি। জানি তুমি আমার হৃদয়ের ভালোবাসাটুকুকে রিক্ত করে দিবে না। আমার এমন প্রার্থনাটুকু যেন তোমার হৃদয়ে একটু শক্ত করিয়া নির্মাণ করে। এ মিনতি তোমার কাছে বহে।
হৈমন্তী জানো তোমার জন্য একখানা চিঠি লিখতে বসেছি চাদর দিয়ে মুখ মুড়িয়ে। বিষণ ঠান্ডা,হাত থেকে কলম কষে পড়ছে,তবুও তোমার জন্য আমার এই চিঠিখানা লিখতে বন্ধ করিনি। এমন হাঁড় কাপানো শরীর দেখে পূর্ব আকাশের ভানু হাসছে।
কুয়াশা ভেজা রাস্তা,হেমন্তের মধ্যদুপুরে তুমি বিহীন পুরো শহর একদম আমার কাছে ফাঁকা। শীতের এমন দুপুরে,মনভরে তোমার কন্ঠে শুনতে চাই রবীন্দ্রসংগীত।

কেন যে আজ পূর্ব আকাশের ভানুর আলোকবর্তিকা আমার গায়ের উপর প্রলেপ হচ্ছে না। সবটুকু আলোকর্বতিকা কুয়াশার আবরণে ডাকা ঘাসের উপর প্রলেপন হচ্ছে।

জানো হৈমন্তী,
তুমিহীনতা আমার এক দুরারোগ্য ব্যাধির নাম,
কত নক্ষত্র পেরিয়ে তোমায় দিলাম অজস্র ডাকনাম।
শেষ বিকেলের আবছা আলোতে তুমি নেই।
হেমন্তের শিউলী কুড়ানো ভোরে তুমি নেই।

আঁখি দিয়ে তোমার আঁখি খুঁজি,
রাতমালিকার কবিতার আঁড়ালে তোমায় ডাকি।

এসো এসো প্রিয় হেমন্তের আলোকবন্ধনে,
যজ্ঞের আহুতিতে মধুময় মধুক্ষণে।

হৈমন্তী জানো ভানু মামার উপর রাগান্বিত হয়ে এমন শীতদুপুরে প্রদীপ শিখা প্রজ্জলন করে তোমার জন্য চিঠিখানা যখন পুনরায় লিখতে বসি তখনি পূর্ব আকাশের প্রভাতের ধমকা হাওয়া আমার প্রদীপ শিখা নিভিয়ে দিয়ে,আমার চিঠিখানা উড়িয়ে নিয়েছে।
হৈমন্তী এ কেমন অভিশাপ তোমাকে চিঠি খানা প্রেরণ না করতেই পূর্ব আকাশের ধমকা হাওয়া এসেই উড়ে নিয়েছে আমার চিঠি খানা।
হৈমন্তী তোমার কাছে আমার ভালোবাসার চিঠি পুরোপুরিভাবে লিখে দিতে পারলাম না।
ঐ পূর্ব আকাশের ধমকা হাওয়া আমার চিঠিখানা যদি তোমার কাছে পৌঁছে দেয় তাহলে হৈমন্তী তোমার জন্য আমার ভালোবাসার অর্ধাংশ লেখনী পূর্ণাংশ করে নিও। হৈমন্তী যদি কোনদিন তোমার সাথে দেখা হয় তখনি দুজন একসাথে ধূলা মাখিয়া,হাওয়ায় উড়িয়া,শিশিরে ভিজে,রোদের আবরণে আবরিত হয়ে ঐ পল্লী গাঁয়ের দীঘির পারের খেজুর গাছের তলায় দুজনি বসে ভালোবাসার ছন্দ মিলাবো।
হৈমন্তী তোমায় খুঁজে পাইনি বলেই আজ তুমি এতোই অভিমানী।

নিকষ আঁধার রজনী,
স্বপ্নে তোমার ললাট চুমি।

নেই অনুভূতি,
অন্তরে আছো তুমি।
অপার নির্জন অমাবস্যা রাত,
পার্থিব মায়ার বন্ধনে বাড়িয়েছি যতবার হাত।

হোক না সে বাস্তবে,
হোক না সে স্বপ্নে।
তুমি আছো অন্তর আত্মায়,
হৃদয়ে থেকো তুমি নিশিদিন ভালোবাসায়।

হেমন্ত বন্দনার হিমেল পরশে,
খুঁজি তোমায় আমি হৈমন্তী রূপে।

হৈমন্তী আমার দেহ যদি কোনদিন হয়ে যায় নিথর, সেইদিন আমার নিথর দেহ দূরে ফেলে দিওনা।
আমার নিথর দেহ একস্থানে রেখে দুটি হাত মুঠো করে ধরে নিবো হৈমন্তী তবুও তোমায় অনেক ভালোবাসি।

0 Shares

১৭টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ