সপ্তদশ শতকে মুঘল সম্রাট শাহজাহান তার প্রয়াত স্ত্রী আরজুমান্দ বানু বা (যিনি মুমতাজ নামে পরিচিত) বেগম মুমতাজ মহলের স্মৃতির উদ্দেশে ১৬৫ একর জমির উপর গড়ে তোলেন রাজকীয় একটি সমাধিস্তম্ভ। যা বিশ্বে সপ্তম আশ্চর্য হয়ে আগ্রায় তাজমহল নামে আজও মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে।

আমার প্রয়াত বাবা মরহুম মোহাম্মদ হোসনে চৌধুরী তাঁর প্রিয়তমা স্ত্রী (আমাদের মা) সৈয়দা আনোয়ারা চৌধুরীর নামে ১৯৫৮ সালে তৎকালীন ঢাকার প্রাণকেন্দ্র আজিমপুরে মাটির ঘর সহ ৫ কাঠা জমি খরিদ করেন। যাহা আনোয়ারা মহল নামে পরিচিত। আমাদের সকলের জন্ম এই বাড়িতেই।

বাবার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আমরা আজিমপুরের বাড়িতে বড় হই। সেই সময় বাড়িটিতে ৩ কামড়া সহ বড় একটি মাটির ঘর ছিলো। সামনে বড় একটা উঠান ছিলো। দুটি নারিকেল গাছ, একটি গাব গাছ, একটি আম গাছ ও সুপেয় পানির জন্য গভীর একটি কুয়া বা এন্দেরা বা আঞ্চলিক ভাষায় ইন্ধিরা ছিলো। এন্দেরার পাশে আম গাছের নীচে বাবা বাঁশের বেড়া দিয়ে দুটি ঘর তুলেছিলেন। প্রতিটি ঘরের ভাড়া ছিল দুই টাকা পঞ্চাশ পয়সা।

বর্তমানে কুয়া তেমন দেখা না গেলেও এক সময় গ্রামবাংলার প্রায় সব জায়গায় স্বচ্ছ পানির জন্য কুয়ার ব্যবহার ছিল। বালতি বা কলসের গলায় দড়ি বেঁধে কুয়ার মধ্যে ফেলে দিয়ে টেনে টেনে পানি তুলতে হতো। রশি পানিতে পঁচে গেলে এক সময় রশি ছিঁড়ে বালতি কুয়ার ভিতর ডুবে যেত। জাহাজের নোঙরের মতন তিনটি কাঁটাযুক্ত আঙ্কটা দিয়ে সেই বালতি তোলা হতো।

পানি পান ও রান্নাসহ বিভিন্ন কাজে মানুষ কুয়ার পানি ব্যবহার করত। কিন্তু গ্রামবাংলার প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী কুয়াগুলো কালের আবর্তে হারিয়ে গেছে। পরিবর্তিত সময়ে কুয়ার ব্যবহার এখন নেই বললেই চলে। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের কারণে এর কদর কমে এখন প্রায় শূন্যের কোঠায়। ব্রিটিশ শাসনামলের পর সারাদেশের গ্রামে-গঞ্জে, হাট-বাজারে, ইউনিয়ন-মহল্লা সহ প্রতিটি ঘর-বাড়িতে এন্দেরা (কুয়া) খনন করা হয়। কালের বিবর্তনে সেগুলোর অধিকাংশই এখন আর দেখা যায় না। আধুনিক যুগের ছোঁয়া লাগায় বর্তমানে প্রতিটি গ্রাম, পাড়া, মহল্লা কিংবা বাড়িতে বাড়িতে সরকারি সহায়তার পাশাপাশি ব্যক্তি উদ্যোগে টিউবওয়েল স্থাপন করা হয়। ফলে কুয়ার ব্যবহার কমে যায়।

গ্রামের কোন কোন ঘর-বাড়িতে এন্দেরা (কুয়া) থাকলেও সেগুলোর বেশিরভাগ ব্যবহারে অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এখন আর মানুষ এন্দেরার (কুয়ার) পানি ব্যবহার করতে চায় না। চিকিৎসা শাস্ত্রে আধুনিক ছোঁয়া বা উন্নত হওয়ায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেন, এক সময় সমাজের মানুষ অসচেতন ছিল। তাই তারা নদী-নালা, খাল-বিল, পুকুরের পানি পান করত। এতে গ্রামাঞ্চলের মানুষ নানা পানিবাহিত রোগে ভুগত। কিন্তু এখন টিউবওয়েলের বা ওয়াসার পানি ব্যবহারের ফলে এ সমস্যার সমাধান হচ্ছে। ফলে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী কুয়ার ব্যবহার কমে যাচ্ছে।

প্রশ্নঃ
===
আসলেই কি তাই?
বর্তমান উন্নয়ন ব্যাবস্থায় রাজধানীবাসী বা শহরবাসী কি সুপেয় পানি পান করে সুস্থ্য আছেন?

আমরা কি পানি বাহিত রোগগুলি থেকে মুক্ত হতে পেরেছি?

ওয়াসা বা শহরের পানি সরবরাহকারী সেবামূলক প্রতিষ্ঠানগুলি কি আমাদের স্বাস্থ্যের প্রতি সচেতন?

বর্তমানে টিউবওয়েলের পানি কি স্বাস্থ্যকর? পানির পিএইচ-৭ পাওয়া যাবে কি?

নাকি নামে মাত্র সুপেয় পানি সরবরাহ করে প্রতিষ্ঠান গুলি ফায়দা লুটছে?
সবাইকে ধন্যবাদ।

0 Shares

২২টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ