ফিলিপ আইল্যান্ড। দ্বীপ শুনলেই চোখে ভাসে বরিশালের দূর্গাসাগর। দারুচিনির স্বপ্ন দ্বীপ, যে দ্বীপে যেতে হয় গুটি গুটি পায়ে হেঁটে কিংবা ডুব সাঁতারে।
ফিলিপ আইল্যান্ডে সাঁতরে কিংবা ছইতোলা নৌকায় করে যেতে হয়নি। তিনদিকে সমুদ্র দিয়ে ঘেরা অসাধারন এই দ্বীপটির একদিকে সাঁপের মতো এঁকেবেঁকে গেছে সরু পথ। সে পথ ধরে যেতে যেতে শুরুতেই পৌঁছুলাম ছোটোখাটো এক চিড়িয়াখানায়, কনসারভেশন সেন্টার। তবে বেশিরভাগ অস্ট্রেলিয়ার বন্যপ্রানীকেই রাখা হয়েছে এখানে। ক্যাঙ্গারুকে নিজের হাতে খাবার খাওয়ানো, আর হাতের মধ্যে কুটুস কুটুস অনুভূতি বেশ উপভোগ্য। এক মা ক্যাঙ্গারুর থলের মধ্যে বাচ্চা ক্যাংগারু দেখতে পেয়ে দুই বছরের পিচ্চিরও সেকি লাফানো! ইমু, কোয়ালা, ময়ূর, ডিঙ্গো, কাকাতুয়া সহ আরো অনেক পশুপাখিগুলোকে খাঁচায় আঁটকে রাখা হয়নি এখানে। ঘুরে বেড়াচ্ছে মানুষের মধ্যেই।
বেশ খানিক এখানে কাঁটিয়ে লাঞ্চ সেরে আরেক স্পটের উদ্দ্যেশ্যে যাত্রা।
উলামাই বীচ।
অপুর্ব সুন্দর এই সৈকতে এসে দেখলাম সমুদ্রের স্রোত। এর আগে বেশ কএকটা বীচে গেলেও শুধুমাত্র স্পীডবোটের ঢেউ ছাড়া তেমন স্রোতই দেখিনি। উন্মাদ উত্তাল সমুদ্রকে স্রোত ছাড়া কী মানায়!! আচমকা বিশাল এক স্রোত আসতে দেখে বালির ভেতর পা ডুবাতে ডুবাতে দে দৌঁড়। একদম হুমড়ি খেয়ে বালির মধ্যে উপুড় হয়ে পড়ে গেলেও স্রোতকে হারিয়ে দিয়েছি এই আনন্দে হো হো করে অনেক্ষন হাসলাম। স্রোত আর পা ভেজানোর সেই খেলা থেকে ছেলেকে অই জায়গা থেকে ফিরিয়ে আনতে কী কষ্ট হয়েছে তা লিখলে মহাকাব্য হবে, তাই বাদ।
এরপরের স্পট চকলেট ফ্যাক্টরি। এ যেন চকলেট স্বর্গ। সেলফে সেলফে সাজানো শোপীচ, তাও চকলেট দিয়ে বানানো। ওয়াটারফলের মতো চকলেটফল দেখা। হট চিলি চকলেটের স্বাদ এখনো জিহবায় টের পাই। ফ্রি ফ্রি চকলেট স্যাম্পল, আর চকলেট শট খেয়ে আরেক গন্তব্যের উদ্দ্যেশ্যে যাত্রা।
নবিস। যেতে যেতে সমুদ্রের দুপাশে ক্যাঙ্গারু আর কী যেন এক পাখি, যার নামটা ভুলে গেছি। মিনি চিড়িয়াখানায় এতো এতো ক্যাঙ্গারু দেখেও সমুদ্রের পাশে ড্যাব ড্যাব করে আমাদের দিকে তাকিয়ে থাকা ক্যাঙ্গারু দেখার জন্য গাড়ির সবাই হুমড়ি খেয়ে পড়লো। সময়, পরিবেশ সবকিছুতেই সৌন্দর্য্যেরই রদবদল হয়। আর বন্দীত্বের মধ্যে যে কোন আনন্দ নেই তা যেন আরেকবার উপলব্ধি করলাম। নবিস জায়গাটার সৌন্দর্য্য বর্ননা করবার মতো শব্দ নেই আমার কাছে। শব্দ ছাড়া কিছু বলা যায় কী?
সব শেষ আকর্ষণ, পেঙ্গুইন প্যারেড। এওয়ার্ড উইনিং এই স্পটে এসে বিস্মিত হয়েছি। সন্ধার শেষ আলোতে সমুদ্রের ঢেউ এর গর্জন, হাজার হাজার মানুষের নীরব উপস্থিতি অদ্ভুত, অদ্ভুত। ঠিক আলো শেষ হবার আগে আগে সমুদ্রের ভেতর থেকে উঠে আসে শতশত ছোট্ট ছোট্ট পেঙ্গুইন। প্যারেড করতে করতে তারা ঘরে ফেরে। মাইল মেইল এলাকা জুড়ে বানানো হয়েছে ওদের জন্য ঘর। আর তার উপর দিয়ে কাঠের পুল দর্শনার্থিদের জন্য। ছোট ছোট গর্তের ভেতর দিয়ে তাদের হেলেদুলে হেঁটে যেতে দেখা আর বলে ওঠা সোওওওও কিউট। পুয়াঙ্গুইনের ছবি তোলা বারন ছিলো। ক্যামেরার ফ্লাশে ওরা অন্ধ হয়ে যায়। যেহেতু আলো চলে গেলেই ওরা বেরিয়ে আসে, তাই ক্যামেরা ইউজ সম্পূর্ন বন্ধ ছিলো। সামনে দিয়ে দুইজন আজদেহা ম্যাডাম ঘুরঘুর করছিলো, ছবি তো দুরের কথা মোবাইল বলে কিছু আছে তাইতো ভুলে গিয়েছিলাম।
এক ভীষন অনুভূতি নিয়ে রাতের পথ দেখতে দেখতে ফিরে আসা।
সালাম আর্থার ফিলিপ, সালাম ফিলিপ আইল্যান্ড।
অঃকঃ প্রথম ও শেষ দুটি ছবি গুগল থেকে নেয়া, আর বাকীগুলো স্বপ্নে পাওয়া।
২৪টি মন্তব্য
ইঞ্জা
আর কোথাও যাই আর না যাই, আপনার ওখানে বেড়াতে যাবো আপু, এমন সুন্দর জায়গা দেখার লোভ সামলাতে পারছিনা। 😀
শুন্য শুন্যালয়
নিশ্চয়ই ভাইয়া, আগাম দাওয়াত রইলো। বেশি করে গিফট টিফট সহ আমার বাড়ি চলে আসেন 😀
ইঞ্জা
😮 গিফট।
😀 মাথা খারাপ?
শুন্য শুন্যালয়
জ্বি ভাইয়া মাথা খারাপ। গিফট পাইলে মাথা ঠান্ডা হইবেক 😀
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
দারুণ সব ছবি৴৴৴ \|/ \|/ \|/ :c :c :c
শুন্য শুন্যালয়
অনেক ধন্যবাদ মনির ভাইয়া। 🙂
জিসান শা ইকরাম
ছবি দেখতে দেখতে আর লেখা পড়তে পড়তে স্মৃতি কাতর হয়ে পড়লাম,
ফিলিপ আইল্যান্ড ট্যুরকে লেখা ও ছবির মাঝে বাস্তব করে দিলেন, স্বপ্ন আর রইল কই?
অসাধারন লাগলো।
একটু লজ্জিত ভাবেই জানাচ্ছি যে, আমিও একদা এই ফিলিপ আইল্যান্ডে গিয়েছিলাম,
আলসেমির কারনে আসলে পোস্ট দেয়া হয়নি,
কত দেশ, কত স্থান যে দেখলাম এই জীবনে, এ নিয়ে লিখতেই পারলাম না কিছু।
আলসেমি কিভাবে কাটান যায়, বুদ্ধি দিয়েন তো 🙂
শুন্য শুন্যালয়
আপনি ফিলিপ আইল্যান্ডে গিয়েছিলেন? 😮 আমার কিন্তু খুব রাগ হয় ছবি সব ল্যাপটপে কেউ জমিয়ে রাখলে। না হয় আপনার মতো দেশে বিদেশে ঘুরে বেড়াতে পারিনা, তাই বলে ছবিও দেখাবেন না। দেখেন তো কত পয়সা খরচ করে যেতে হলো। আপনি পোস্ট দিলেতো আর যাওয়া লাগতো না।
তা সেই ছবিগুলো কী এতোদিন বাচ্চাকাচ্চা দিয়েছে? দেখেন তো সিন্দুক খুলে। আলসে তো আমার খুবই অপছন্দ, এদের গায়ে চোঁচরা গুড়া দিতে মন চায়, দিমুনি? 😀
স্মৃতি আপার কাতরতা খানিক ঝেড়েঝুড়ে ফেলুন দেখি। দেরি হলেও সমস্যা নেই, লিখে ফেলেন। পোস্ট পড়ুম, গ্যারান্টি। বিফলে পোস্ট ফেরত 🙂
জিসান শা ইকরাম
হ্যা গিয়েছিলাম তো,
বাচ্চা দেবে কি! ছবিই মুছে গিয়েছে অনেক ভুলে 🙁
লিখবো ভাবছি এখন হতে, যদিও আপনার মত এত ভাল ছবি আর কথা দিয়ে সাজানো অসম্ভব আমার জন্য।
শুভ কামনা।
শুন্য শুন্যালয়
ভাবুন, ভাবনা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। ভালো থাকুন।
নীলাঞ্জনা নীলা
জীবনে কোথাও যাওয়া হবে কিনা জানিনা! তবে অষ্ট্রেলিয়া একবার যাবোই। স্বপ্নের কতোগুলো দেশ আছে, জায়গা আছে। অষ্ট্রেলিয়া তার মধ্যে একটা জায়গা।
শুন্য আপু কেন জানি মনে হয় তোমার সাথে অষ্ট্রেলিয়াতে দেখা হবে আমার।
আজ আমার মনটা উড়ে বেড়াচ্ছে কতো কতো জায়গায়! এমন সময়েই তোমার এই লেখাটি, ভিঁজিয়ে দিলে আবেগের রুমালটা।
তোমার এই পোষ্ট খুউব বেশী ভালো লেগেছে।
ভালো থেকো আপু। -{@
শুন্য শুন্যালয়
আমারো মনে হচ্ছে তোমার সাথে অস্ট্রেলিয়া দেখা হবে। তুমি না আসতে চেয়েছিলে? কবে আসবে? কোথায় কোথায় যাবো লিস্ট করবো? পয়সা কিন্তু সব তুমি দিবা 😀 আমারতো চাকরী নাই, জানোই। 🙁
মন তোমার বসলো কবে? পাংখা বেশি বড় হইলে উড়তেই থাকবে, ঠেকান যাইবে না।
পোস্ট ভালো লাগলেও ভালো লাগার কিছুই প্রকাশ করতে পারিনি। এতো সুন্দর সব জায়গা। আরো আরো অনেককিছু দেখার আছে এখানে। যা সময়ের অভাবে দেখতে পারিনি। তুমি এলে দেখা হবে আবার। চইলা আসো।
নীলাঞ্জনা নীলা
একদিন আসবোই। ছেলেটা ইউনিভার্সিটি যাক। তারপর কাজে ব্যস্ত হবো, ছুটি নেবো। আর যাবো। বাপ্রে টিকিটের যা দাম! আমি জানো চিপার ফ্লাইট লিঙ্কটা সেভ করে রেখেছি। শুধু অষ্ট্রেলিয়ার জন্য। 🙂
তুমি লিস্ট করে রাখো। সত্যি বলছি আসবোই। -{@
শুন্য শুন্যালয়
হুম টিকিটের দামের জন্য দেশেও যেতে পারিনা নীলাপু 🙁 এসো নীলাপু, ভালো লাগবে অস্ট্রেলিয়া। ভালো থেকো।
নীলাঞ্জনা নীলা
অস্ট্রেলিয়ার জন্য বিশাল গ্রুপ আছে আমার। জানো আমি গেলে একান্ত প্রিয় কয়েকজন মানুষও আমার সাথে যাবে। বাসা ছোট হলেও সমস্যা নেই। ফ্লোরে ঘুমাবো। আর তোমাকে রাখবো কিচেনে। :p শুধু রান্না করবে। 😀 আর আমি প্রথম বাবুর সাথে বসে খেলা করবো। আর গল্প। \|/
শুন্য শুন্যালয়
আমি কিচেনে? 😮 তোমার রেসিপির পোস্টগুলো হুদাই এদ্দিন গিলছি নাকি? কোমরে বেল্ট বেঁধে সব রান্নার পরীক্ষা নেবো। নেট থেকে ডাউনলোড করে পোস্ট দেবার মজা বুঝবা এইবার।
অস্ট্রেলিয়ার জন্য বিশাল গ্রুপ রেডি করছো, ঘটনা কী? কিছু কিডন্যাপ করবা নাকি? 😀
মোঃ মজিবর রহমান
দারুন ছবি সাথে বর্ণনা মন ভুলিয়ে আনে প্রকৃতির রাজ্য কত সুন্দর ও মনোরম দৃশ্য। আপনার চোখে দেখে নিলাম অপার সুন্দর দ্রিশ্যগুলি।
শুন্য শুন্যালয়
প্রকৃতি সত্যিই সুন্দর। বেঁচে থাকতে ইচ্ছে করে তাই অনেক অনেকদিন। ভালো থাকুন মজিবর ভাইয়া।
মোঃ মজিবর রহমান
সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছায় যতদিন রই
আবু খায়ের আনিছ
দ্যা আইসল্যান্ড উইথ বেয়ার গ্রিলস বা বেয়ার গ্রিলস এর অনুষ্ঠানগুলো আমার ভালো লাগে, দেখিও প্রায় সময়। এখন তোমার দেওয়া ছবি দেখে মনে হচ্ছে, ঐ ব্যাটার মত সারভাইব করার চেয়ে এই সৌন্দর্যের মাঝে মরে গেলেও শান্তি।
শুন্য শুন্যালয়
আমি দেখিনি অনুষ্ঠানগুলো। সুন্দর?দেখতে হয় তাহলে। আসলেই অনেক সুন্দর জায়গা আনিছ ভাইয়া। এসব জায়গায় কএকদিন স্টে করে দেখলে পুরোপুরি সৌন্দর্য্ নেয়া যায়। দেখবো আবার যেতে পারি কিনা। আমাদের পার্বত্য চট্টগ্রাম, এর চাইতেও সুন্দর বলে মনে করে আমি, যদিও দুচোখ মেলে দেখা হয়নি। ছবি দেখেই শান্তি। ভালো থেকো আনিছ ভাইয়া।
সিকদার
খুব সুন্দর স্থান ।আপনার পোস্টের সাথে আমারও যেন বেড়ানো হয়ে গেল ।
শুন্য শুন্যালয়
হ্যাঁ সুন্দর জায়গাটা। আপনি তো বিনা পয়সায় ঘুরে এলেন। 🙂 ভালো থাকুন।
কামাল উদ্দিন
ইচ্ছে করে এমন স্বর্গ দেখতে এখনি বেড়িয়ে পড়ি…….ভালোলাগা ভালোলাগা এবং ভালোলাগা।