সোনাদিয়া দ্বীপ ভ্রমণ শেষ পর্ব

কামাল উদ্দিন ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০, রবিবার, ০৪:২৯:৩৯অপরাহ্ন ভ্রমণ ১২ মন্তব্য

“সোনাদিয়া” কক্সবাজার জেলার মহেশখালি উপজেলার একটি সুন্দর দ্বীপ। এই দ্বীপটির আয়তন প্রায় ৭ বর্গ কিমি.। কক্সবাজার জেলা সদর থেকে প্রায় ১৫ কিমি উত্তর-পশ্চিমে এবং মহেশখালি দ্বীপের দক্ষিনে সোনাদিয়া দ্বীপটি অবস্থিত। একটি খাল দ্বারা এটি মহেশখালি দ্বীপ থেকে বিছিন্ন হয়েছে। তিন দিকে সমুদ্র সৈকত, সাগর লতায় ঢাকা বালিয়াড়ি, কেয়া- নিশিন্দার ঝোপ, ছোট-বড় খাল বিশিষ্ট প্যারাবন এবং বিচিত্র প্রজাতির জলাচর পাখি দ্বীপটিকে করেছে অনন্য বৈশিষ্ট্যমন্ডিত। এটি জীববৈচিত্রের দ্বীপ নামেও পরিচিতি এবং এ দ্বীপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য পিপাসুদের জন্য অন্যতম পর্যটন স্থান। তবে সরকার ইদানিং সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্র বন্দর সহ বড় বড় প্রকল্পের পরিকল্পনা করছে, যা এখানকার জীব বৈচিত্রের জন্য হুমকী স্বরূপ।

সোনাদিয়া দ্বীপে পর্যটকদের থাকার জন্য কোনো আবাসিক হোটেল নেই। খাওয়ারও তেমন কোনো নির্দিষ্ট ব্যবস্থা নেই। স্থানীয় লোকজনকে টাকা দিলে তারা খাওয়ার ব্যবস্থা করে থাকে। আর সোনাদিয়া দ্বীপে রাত্রি যাপনের ক্ষেত্রেও ভরসা সেই স্থানীয় বাসিন্দারাই। তবে তাবু করেও ওখানে থাকা যায়, সেক্ষেত্রে স্থানীয়দের পাহাড়ার ব্যবস্থাটা অবশ্যই বাঞ্চনীয়।

সোনাদিয়া দ্বীপের মানব বসতির ইতিহাস মাত্র ১০০-১২৫ বছরের। দ্বীপটি ২টি পাড়ায় বিভক্ত। পূর্ব ও পশ্চিম পাড়া। দ্বীপের মোট জনবসতি প্রায় ২০০০ জন। পূর্ব পাড়ায় তুলনামূলকভাবে জনবসতি বেশী। মাছ ধরা এবং মাছ শুকানো, চিংড়ি ও মাছের পোনা আহরন দ্বীপের মানুষের প্রধান পেশা। কিছু মানুষ ইঞ্জিন চালিত নৌকা ও কাঠের সাধারন নৌকা এবং উহা চালানোর সহকারী হিসাবে কাজ করেও জীবিকা নির্বাহ করে। চারিদিকে নোনা পানি বেষ্টিত হওয়ায় এই দ্বীপে তেমন কোন খাদ্য শষ্য উৎপাদন করা সম্ভব হয় না। দৈনন্দিন প্রয়োজনাদি জিনিস পত্র সব মহেশখালি থেকে ক্রয় করে আনতে হয়।

এই দ্বীপে ২টি মসজিদ, ১টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১টি সাইক্লোন সেন্টার, আনুমানিক ১২টি গভীর নলকূপ রয়েছে।


(২/৩) সোনাদিয়ায় প্রচুর গরু মহিষ পালন করা হয়, কিন্তু এসবের মালিক দ্বীপবাসি নয়। বাহিরের প্রভাবশালীরা।


(৪) ধান আবাদের চেষ্টাটাও সেখানে লক্ষনীয় কিন্তু বেলে মাটি আর লবন পানিতে খুব একটা সুবিধে করতে পারছে বলে মনে হয় না।


(৫) এটাও সোনাদিয়ার একটা বাড়ি।


(৬) সোনাদিয়ায় দুদিনের রোদে আমাদের সবার চামড়া পুড়ে গিয়েছিল। তাই ফেরার আগে পোড়া ঘায়ে লবনের ছিটা দিয়ে নিচ্ছিলাম 🙂


(৭) বালিতে পা ডুবিয়ে সাগর দেখার মজাই আলাদা।


(৮) শেষ দিনে সোনাদিয়ার জল স্থল আমাদের হাঁসি মুখেই বিদায় জানিয়েছিলো।


(৯) ছোট মানুষের লম্বা ছবি তুলেছিলাম সোনাদিয়ায়।


(১০) লাল কাকড়ার বাহিনী লেফট রাইট করছে সাগরের বালুকা বেলায়।


(১১) লাকরি সংগ্রহ করে নিয়ে যাচ্ছে একজন স্থানীয় অধিবাসি।


(১২/১৩) শেষ দিন রাতে ছিল কাকড়া আর ইলিশের বারবিকিউ।


(১৪) রাতে এতোসব মজাদার খাবারের পর সাগরের গর্জন শুনতে শুনতে ঝাউ বনের ভেতর তাবুতে নিদ্রা যাওার কোন তুলনাই হয় না। আর মজাটা আরো বাড়িয়ে দিয়েছিল শেষ রাতে হওয়া বৃষ্টি।


(১৫) ফেরার সময় ভাটা চলছিল, কিন্তু মালপত্র নেওয়ার জন্য আমাদের এটা চাই ই চাই।


(১৬) ফেরার আগে একটা ভ্রমণ বাংলাদেশের একটা সম্মিলিত ছবি।


(১৭) এবার ব্যগ গুছিয়ে ফেরার পালা।


(১৮) জেলেদের একটা নৌকা ঠেলে জলে নামাচ্ছে স্থানীয়রা।


(১৯) বিদায় সোনাদিয়া, আমার কোন দিন হয়তো দেখা হবে কিংবা হবে না। কিন্তু ক্ষণে ক্ষণেই হয়তো মনে পড়বে চমৎকার নির্জন এই দ্বীপটাকে। তবে আজকে পোষ্ট দিতে গিয়ে মনটাকে বেদনা বিধুর করে তুলেছে মাথায় গামছা বাধা লাল গেঞ্জি গায়ে দিয়ে আমাদের ট্রলারের হাল ধরে বসে থাকা বজলু ভাইয়ের জন্য। তিনি আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন না ফেরার দেশে। ভ্রমণ বাংলাদেশের যে কোন ট্যুরে উনিই সব থেকে আমাদের মাতিয়ে রাখতেন। বজলু ভাই যেখানেই থাকুক সব সময় ভালো থাকুক এই কামনা করছি।


(২০) বাঁকখালি নদির বাঁকে দেখা যাচ্ছে দুটি পথ, ডানের পথ ধরে আমরা চলে এলাম কক্সবাজারে।

0 Shares

১২টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ